ইয়াহিয়া খানের ভাষণ সম্পর্কে ছাত্রসমাজের বক্তব্য

<02.106.488-491>

শিরোনামইয়াহিয়া খানের ভাষণ সম্পর্কে ছাত্রসমাজের বক্তব্য

সূত্রছাত্রসমাজ (তিনটি বৃহৎ ছাত্রদল)

তারিখনভেম্বর,১৯৬৯

 

১১দফার সংগ্রাম চলবেই

ইয়াহিয়া খানের ভাষণ সম্পর্কে ছাত্রসমাজের অভিমত

জনগণের সংগ্রাম,শহীদের রক্তস্রোত,মাতার অশ্রুধারা,ছাত্র-শ্রমিক-রাজনৈতিক কর্মীদের নির্যাতন ভোগ ও দেশপ্রেমিকের কঠোর সাধনা বৃথা যায় নাই।বৃথা যায় নাই বিগত গণুভ্যত্থান ও এগারো দফার ঐতিহাসিক সংগ্রাম।গণ-অভ্যুত্থানের পটভূমিকায় দ্বিতীয়বারের জন্য সামরিক শাসন বলবৎ করা হইলেও গণদাবীর নিকট পরাভূত হইতে হইতেছে সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ,একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থ রক্ষাকারী প্রতিক্রিয়াশীল কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীকে। দেশে পুণরায় পার্লামেন্টারী গণতন্ত্রের শাসন প্রবর্তনের জন্য এক ইয়াহিয়া খান কে।ইহাতে গণ-সংগ্রামের এক বিরাট বিজয় সূচিত হইয়াছে।”এক লোক এক ভোট” নীতির ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ভিত্তি ঘোষিত হওয়ায় পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্যমূলক সংখ্যাসাম্য নীতিরও অবসান ঘটিল এবং জনসংখ্যার ভিত্তিই সকল ক্ষেত্রে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করিল। পশ্চিম পাকিস্তানে প্রতিক্রিয়াশীল এক ইউনিট ভাঙ্গিয়া দেওয়ার ঘোষণাও সারা দেশের গণতন্ত্রকামী ও স্বায়ত্তশাসনকামী জনগণের আর একটি বিরাট বিজয়।প্রতিক্রিয়াশীল ও দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীগুলো ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র পুণরায় চালু করার যে আবদার করিতেছিল,জনমতের চাপে তাহাদের ঐ আবদারও ভাসিয়া গিয়াছে।পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ যে রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বারবার বঞ্চিত হইয়াছে উহাও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে পুণরায় স্বীকৃতি দিতে হয়েছে।কিন্তু ইহার দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের প্রাণের দাবীর ন্যায্যতার ভিত্তি স্বীকৃত হইলেও মূলত যে স্বায়ত্তশাসনের জন্য ১৯৬৬ সালের ৭ জুনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম,১৯৬৮ সালে শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী করা হইয়াছিল এবং ১৯৬৯ সালের ঐতিহাসিক ১১ দফার দাবীতে পৃথিবী বিখ্যাত সে গণ-অভুত্থান হইল সেই স্বায়ত্তশাসন পূর্ব বাংলার মানুষ এখনও পায় নাই।তথাপি ইহার দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বায়ত্তশাসনের দাবীর ন্যায্যতার ভিত্তি স্বীকৃত হইয়াছে।দেশে রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা শুরু করিতে দেওয়ার জন্য যে দাবী উঠিয়াছিল উহার পরিপ্রেক্ষিতে ১ জানুয়ারি হইতে জনসভা,মিছিল,ধর্মঘটের অধিকার ফিরাইয়া দেওয়ার কথাও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঘোষণা করিয়াছেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণের মাধ্যমে যে সকল ঘোষণা দেওয়া হইয়াছে উহাতে এই সকল প্রশ্নে গণসংগ্রাম ও গণতন্ত্রকামী স্বায়ত্তশাসনকামী জনগণের বিজয় সূচিত হইয়াছে,ইহাতে কোন সন্দেহ নাই।

অবিলম্বে মার্শাল প্রত্যাহার কর

কিন্তু জনগণের দাবী হইল এই যে,দেশ হইতে অবিলম্বে সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হউক এবং পূর্ণ ব্যক্তিস্বাধীনতা মৌলিক অধিকার ফিরাইয়া দেওয়া হউকএকই সঙ্গে বিনাবিচারে আটক দেশপ্রেমিক বৃদ্ধ জননেতা মণি সিং সহ সকল রাজবন্দী রাজনৈতিক কারণে সামরিক আইনে সাজাপ্রাপ্ত আটক সকল বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হউক এবং রাজনৈতিক কারণে জারীকৃত মামলা,সামরিক আইনের মামলা,ঘোষিত সাজা,গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রভৃতি অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হউক এই ভাবে পরিপূর্ণ মুক্তি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে অবাধ ও নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়া পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে- ইহাই জনগণ ও ছাত্রসমাজ আশা করিয়াছিল। কেননা , বিশ্ববাসী যেন একথা ভাবিবার অবকাশ না পায় যে পাকিস্তানের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মার্শাল ল’ রাখিতে হয়।তাই আমাদের দেশের ও জনগণের মর্যাদা রক্ষার জন্যও ইহা প্রয়োজন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সরকার কেন এই দাবী পূরন করিলেন না,উহা আমরা বুঝিতে অক্ষম। তাই মার্শাল ল’ প্রত্যাহার,ব্যক্তিস্বাধীনতা কায়েম,রাজনৈতিক কারণে জারীকৃত মামলা, সামতিক মামলা ও গ্রেফতারী পরোয়ানা প্রত্যাহার এবং সকল রাজবন্দীর আমরা অবিলম্বে মুক্তি দাবী করিতেছি।

 

নির্বাচনের সঙ্গে শাসন ক্ষমতা জনপ্রতিনিধিদের হাতে দাও

ছাত্রসমাজ ও জনগণ ইহাও আশা করিয়াছিল যে,দেশে ৫ অক্টোবরের পূর্বে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে ও নির্বাচনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের শাসনভার এবং শাসনতন্ত্র রচনার সার্বভৌম ক্ষমতা নির্বাচিত পরিষদ তথা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে আস্থার সহিত অর্পণ করা হইবে।কিন্তু এই আশাও পরিপূর্ণ ভাবে বাস্তবায়িত হয় নাই।যেভাবে সবকিছু ঘোষণা করা হইয়াছে অনুরূপভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইলে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত দেশে সামরিক শাসন বলবৎ থাকিয়া যাইবে এবং ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সৃষ্টি করিয়া জাতীয় পরিষদ ১২০ দিনের মধ্যে শাসনতন্ত্র প্রণয়নে ব্যর্থ হইলে সামরিক শাসনের মেয়াদ আরও অনির্দিষ্টকালের কালের জন্য বৃদ্ধি পাইবে।শাসনতন্ত্র প্রণয়নের সুনির্দিষ্ট সময় সীমা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তাক আমরা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি।কিন্তু সামরিক শাসন দেশে বলবৎ থাকিলেও কায়েমী স্বার্থবাদীদের ষড়যন্ত্রের ফলে ১২০ দিনের মধ্যে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ব্যর্থ হইতে বসিলে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সামরিক আইনের মেয়াদ যেন আর বৃদ্ধি না পায় এই লক্ষ্য হইতে তাড়াতাড়ি করিয়া শাসনতান্ত্রিক বিষয়ে যথেষ্ট গুরুত্ব না দিয়াই গোঁজামিলের পথে চলিয়া যাইতে পারেন।ইহার ফল ভবিষ্যতের জন্য হইবে খুবই মারাত্মক।কাজেই আমরা যেন মনে করি যে নির্বাচনের সাথে সাথে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতেই শাসনভার অর্পণ করা দরকার।

 

ব্যাখ্যা প্রয়োজন

পূর্ব পাকিস্তান তথা বিভিন্ন প্রদেশসমূহের স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তাঁহার ভাষণে কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারাধীন কী কী বিষয় থাকিবে তাহা সুস্পষ্টভাবে কিছু না বলায় আমরা ইহাই মনে করিতেছি যে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদে পরিপূর্ণ স্বাধীনভাবে সহজ সংখ্যাধিক্যের ভোটে স্বায়ত্তশাসন সহ সকল শাসনতান্ত্রিক সমস্যার সমাধান করিবেন ইহাই আশা করেন। ‘এক লোক এক ভোট’ যেমন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নির্বাচনের গণতান্ত্রিক ভিত্তি,নতুন ভাবে দেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের সময়ে সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে উহা গ্রহণ করাও তেমনই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গণতান্ত্রিক পদ্ধতি।কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তাঁহার ভাষণে প্রথমতঃ তিনি শাসনতন্ত্রের একটি বিশেষ পবিত্র দলিল হিসাবে বর্ণনা করিয়া জাতীয় পরিষদে শাসনতন্ত্র গ্রহণের জন্য বিশেষ ভোট পদ্ধতি কী হইবে উহা স্থির করার দায়িত্ব জাতীয় পরিষদের উপরই ন্যাস্ত করিয়াছেন।ইহার দ্বারা তিনি সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পদ্ধতির পরিবর্তনের প্রতি ইঙ্গিত করিয়াছেন বলিয়াই অনুমান করার অবকাশ আছে।দ্বিতীয়তঃ জাতীয় পরিষদের শাসনতন্ত্র গৃহীত হইবার পর উহা প্রেসিডেন্ট কর্তৃক অনুমোদিত হইবার কথাও বলা।এই অনুমোদন দানের বিষয়টি রাষ্ট্র প্রধান হিসাবে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষরদানের ব্যাপার মাত্র কিনা উহা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে। তৃতীয়তঃ স্বায়ত্তশাসন বিশেষত পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে বলিতে গিয়া প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অর্থ (——) এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপারে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতার ভাগ বন্টনের কথা বলিয়াছেন ও এইভাবে রাষ্ট্রীয় সংহতি রক্ষার গুরুত্ব ব্যক্ত করিয়াছেন।স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে ছাত্রসমাজের বক্তব্য ঐতিহাসিক ১১ দফা দাবীতে বর্ণনা করা হইয়াছে, কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে যাহা বলিয়াছেন জাতীয় পরিষদের সামনে উহা একটি শাসনতান্ত্রিক ভিত্তি হিসাবে থাকিবে কিনা তাহাও সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন আছে বলিয়া আমরা মনে করি।এই প্রসঙ্গে আমাদের অভিমত ও দাবী হইলে যেঃ-

 

তিনটি দাবী

(ক) জাতীয় পরিষদের সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে শাসনতন্ত্র গ্রহণের গণতান্ত্রিক ভিত্তি পূর্বাহ্নে ঘোষণা করা প্রয়োজন।অন্যথায় এই সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতীয় পরিষদে যে বিতর্কের সূচনা হইবে উহাতে অযথা সময় নষ্ট হইবে,ফলে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী কর্তৃক ষড়যন্ত্র সৃষ্টির সুযোগ বৃদ্ধি পাইবে এবং এইভাবে ১২০ দিনের সময় সীমার মধ্যে শাসনতন্ত্র রচনার কাজ অসম্ভব হইয়া উঠিবে।

 

(খ) জাতীয় পরিষদ কর্তৃক শাসনতন্ত্র রচনার পর প্রেসিডেন্টের অনুমোদন দানের বিষয়টিকে একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাপার হিসাবে পূর্বাহ্নেই ঘোষণা দিতে হইবে।

 

(গ) প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন সহ সহল বিষয়ে শাসনতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে পূর্ণ সার্বভৌম ক্ষমতা জাতীয় পরিষদের উপর ন্যস্ত করিতে হইবে ও এই সম্পর্কেও পূর্বাহ্নেই ঘোষণা দিতে হইবে।তবে এক ইউনিট বাতিল ও ‘এক লোক এক ভোট নীতি’ পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র প্রভৃতি সর্বজনস্বীকৃত নীতিসমূহ শাসনতন্ত্রের অন্তর্ভূক্ত যে ৩১ মার্চের পূর্বেই নির্বাচনের সাময়িক আইনগত কাঠামো সম্পর্কে সরকার কর্তৃক যে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা ঘোষণা করা হইয়াছে,এই আইনগত ভিত্তির মধ্যে উল্লেখিত তিনটি বিষয় অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।

 

আইনগত কাঠামো দ্রুত ঘোষণা কর

এই সকল কারণে নির্বাচনের আইনগত কাঠামো দ্রুত ঘোষণার জন্যও আমরা দাবী জানাইতেছি।

 

পশ্চিমে কয়টি প্রদেশ হইবে?

ইহা শুভলক্ষণ যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলিষ্ঠতার সহিত এক ইউনিট ভাঙ্গিয়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়াছেন।যদিও নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই এই ইউনিট বাতিল করিবার আশা করেন। কিন্তু এক ইউনিট উঠিয়া গেলে চারটি সাবেক প্রদেশ পুণর্জীবিত করা হইবে,নাকি পশ্চিম পাকিস্তানে প্রদেশের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় হ্রাস বৃদ্ধি করা হইবে,সে বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কিছু বলা হয় নাই। এই বিষয়ে অবিলম্বে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেওয়া প্রয়োজন বলিয়া আমরা মনে করি। কেননা পশ্চিম পাকিস্তানে প্রদেশের সংখ্যা হ্রাস বৃদ্ধি করা হইলে বিভেদ ও বিদ্বেষ সৃষ্টি এবং ইহার ফলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ার আশংকা আছে যে, পরিশেষে নির্বাচন নস্যাৎ করার পুরাতন ষড়যন্ত্র আবার মাথাচাড়া দিয়া উঠিতে পারে।

 

বেসামরিক আইনে দেশ শাসন কর

পহেলা জানুয়ারী হইতে রাজনৈতিক তৎপরতার সুযোগ দানের ঘোষণা দেওয়া হইয়াছে। আমরা মনে করি যে,১ জানুয়ারী হইতে সামরিক আইন তুলিয়া নেওয়া উচিত।ইহার ফলে শাসনব্যবস্থায় শুণ্যতা সৃষ্টির অবকাশ নাই।কারণ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান স্বয়ং ঘোষণা করিয়াছেন যে,সামরিক ও বেসামরিক এই দুই ভাবেই দেশ বর্তমানে শাসিত হইতেছে।কাজেই সামরিক আইন প্রত্যাহার করিয়া ১ জানুয়ারী হইতে বেসামরিক আইনের বর্তমান ভিত্তিতে রাষ্ট্রকার্য পরিচালনার জন্য আমরা দাবী জানাইতেছি।

 

আত্মসন্তুষ্টির অবকাশ নাই

পরিশেষে আমরা আমাদের দেশের গণতন্ত্রকামী,স্বায়ত্তশাসনকামী ছাত্রসমাজ,শ্রমিক,কৃষক,মধ্যবিত্ত তথা জনগণের নিকট ও সকল গণতান্ত্রিক শক্তির নিকট আবেদন জানাইয়া বলিতে চাই যে,প্রেসিডেন্টের ঘোষণার মাধ্যমে গণদাবীর কতকগুলি বিজয় সূচিত হইলেও আত্ম-সন্তুষ্টির কোন অবকাশ নাই।

 

ইহা সকলেরই জানা আছে যে আমাদের দেশে গণতন্ত্র বিকাশে ও বাঙলা সহ বিভিন্ন ভাষাভাষী জাতির জাতীয় অধিকার লাভের বিরূধে দেশী বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীল কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী গত ২২ বৎসরব্যাপী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিয়া আসিতেছে এবং দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হইতে দেয় নাই।এই প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত ষড়যন্ত্র চালাইয়া যাইবে, ইহাতে কোন সন্দেহ নাই। কাজেই নির্বাচন পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং পূর্ব বাঙলা সহ সকল ভাষাভাষী জাতির পূর্ণ প্রকৃত স্বায়ত্তশাসন অর্জনের জন্য আজ আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকিতে হইবে আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি করিতে হইবেঅন্যথায় বর্তমান বিজয়সমূহও পুণরায় নস্যাৎ হইবার আশংকা আছে  তদুপরি দেশে উগ্র দক্ষিনপন্থী ও উগ্র হঠকারী বামপন্থীগণ কর্তৃক পুণরায় নির্বাচন বানচালের সুযোগ সৃষ্টি করিয়া দেওয়ার বিপদ এখনও আছে।এক্ষেত্রে আমরা সুস্পষ্টভাবে একথা ঘোষণা করিতে চাই যে,শুধু নির্বাচন পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র অর্জন করিলেই জনগণের জীবনের সকল সমস্যার সমাধান হইয়া যাইবে, কথা আমরা মনে করি না সাম্রাজ্যবাদ,সামন্তবাদ একচেটিয়া পুঁজির উচ্ছেদ,দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র কায়েম,বাঙ্গালী সহ সকল জাতির পূর্ণ জাতীয় স্বাধীকার প্রতিষ্ঠা এবং ছাত্রশ্রমিক অন্যান্য মেহনতী মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের মধ্য দিয়াই দেশ মুক্তির পথে যাইতে পারে

 

১১ দফার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ থাকুন

কাজেই আমরা জনগণ এবং গণতান্ত্রিক শক্তির নিকট আহবান জানাইতেছি যে,দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীল কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর চক্রান্ত ও উগ্র-দক্ষিন এবং উগ্র বামের বিপদের বিরূদ্ধে ১১ দফার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হউন এবং গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বর্তমানে অগ্রসর করিবার মধ্য দিয়া সাম্রাজ্যবাদ,সামন্তবাদ ও একচেটিয়া পুঁজির শোষণ শাসন উচ্ছেদ করুন ।

 

 বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন-

১।শামসুদ্দোহা,সভাপতি,পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়িন

২।নূরুল ইসলাম,সাধারণ সম্পাদক,ঐ

৩।তোফায়েল আহমেদ,সভাপতি,পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ

৪।আবদুর,সাধারণ সম্পাদক,ঐ

৫।ইব্রাহিম খলীল,সভাপতি,জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন

৬।খায়রুল ইসলাম,সাধারণ সম্পাদক,ঐ ।

Scroll to Top