কূটনীতিকদের পাকিস্তানী পক্ষ ত্যাগ

              শিরোনাম        সূত্র       তারিখ
৭৮। কূটনীতিকদের পাকিস্তানী পক্ষ     ত্যাগ নিউইয়র্ক টাইমস  ৫ আগস্ট, ১৯৭১

 

Nishat Oni

<১৪, ৭৮, ১৯৪-১৯৫>

 

দি নিউইয়র্ক টাইমস, বৃহস্পতিবার, ৫ আগস্ট, ১৯৭১

১৪ পাকিস্তানী সাহায্যের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশন শেষ

ইয়াহিয়া সরকারের অপরাধের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীদের অভিযোগকিছু

আশ্রয় প্রার্থনা

বেঞ্জামিন ওয়েলেস

বিশেষ প্রতিনিধি নিউইয়র্ক টাইমস

 

ওয়াশিংটন, ৪ আগস্ট- ১৪ পাকিস্তানী কূটনীতিক যার সবাই বাঙ্গালী, আজ এখানের দূতাবাসে পদত্যাগ করেছে বা জাতিসংঘের মিশন থেকে তাদের কৃতকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে  ‘মানবতা বিরোধী দুর্নীতি’ নামে, যা পূর্ব পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মাদ ইয়াহিয়া খানের সরকার করেছে।

 

জাতিসংঘের অভিবাসন ও নাগরিকতা প্রদানকারীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, পদত্যাগকারী কয়েকজন পাকিস্তানী কূটনীতিক এদেশের রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকার জন্য আবেদন করেছে।

 

মুখপাত্র বলেছেন স্টেট ডিপার্টমেন্ট কূটনীতিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাকবে। যদিও স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র এ ব্যপারে কোন মন্তব্য করেননি, কিন্তু এটা ইঙ্গিত দেয় যে বাঙ্গালী কূটনীতিকদের উপর কংগ্রেসের শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে যা হয়তো তাদের এখানে থাকার অনুমতি দেবে। 

 

এ এম এ মুহিথ, পাকিস্তানী দূতাবাসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ও দলের নেতা জাতীয় প্রেস ক্লাবের একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তিনি ও তার সহকর্মীরা পাকিস্তান সরকারের ‘সভ্য আচরণ বিরোধী ও মানবতা বিরোধী দুর্নীতি’ তে আর চুপ থাকবেনা।

 

দলটি ঘোষণা করেছে তারা তাদের আনুগত্য ‘বাংলাদেশ সরকার’ বা ‘বাঙ্গালী জাতি’ তে স্থানান্তর করবে যা ‘পাকিস্তানের হয়ে থাকা’ বেশিরভাগ মানুষের ‘আশা ও বিশ্বাস’ তুলে ধরে।

 

পাকিস্তান আর্মি গত মার্চে পূর্ব পাকিস্তানে ক্রাশ আন্দোলন করে। যার কিছু কিছু আন্দোলনের নেতারা পরবর্তীতে বাংলাদেশের জন্য স্বাধীনতা প্রচার করে এবং পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানকারী সেনাদের বিরুদ্ধে গেরিলা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

 

পূর্ব পাকিস্তান যা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ভারত অঞ্চলের উপর দিয়ে ১০০০ মাইল দূরে বিভক্ত, যেখানে সাত কোটি বিশ লক্ষ মানুষের বাস যাদের বেশীরভাগই বাঙ্গালী। পশ্চিম পাকিস্তানে পাঁচ কোটি পঞ্চাশ লক্ষ মানুষ যাদের বেশীরভাগই পাঞ্জাবি ও পাঠান।

এই পদত্যাগে পাকিস্তানী দূতাবাসের কর্মী কমে অর্ধেক হবে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের তালিকা অনুযায়ী ১০ জন কূটনীতিকদের মধ্যে ছয় জন পদত্যাগ করেছে।

 

নৃশংসতার অভিযোগ

 

জনাব মুহিথ ঘোষণা করেছেন, পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালীরা সেনাদের নির্যাতনের শিকার। তিনি বলেন, গ্রামবাসী নির্যাতিত হয়েছে, মহিলারা অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার আর যুবকরা শিকার হয়েছে ‘বায়োনেট ও মৃত্যুর’।

 

“শুধুমাত্র একটি সন্ত্রাসী এলাকাই প্রতিষ্ঠিত হয়নি, দিন দিন এটা তিব্র হচ্ছে”। জনাব মুহিথ বলেন, “বাঙ্গালির প্রশ্নে ইয়াহিয়ার চূড়ান্ত জবাব বাংলার খাদ্য ঘাটতিতে যুক্ত হওয়া অশুভ মাত্রাকে অস্বীকার করছে। ধারণার বাইরে একটি দুর্ভিক্ষ বাংলাদেশের জন্য হুমকি দিচ্ছে, যেটা হলে এখানের কম হলেও ত্রিশ শতাংশ জনগন খাদ্য ঘাটতির স্বীকার হবে”।  

 

আজ যারা পদত্যাগ করেছেন তাদের মধ্যে ছিলেন এস এ করিম, জাতিসংঘের ডেপুটি স্থায়ী প্রতিনিধিত্বকারী; ই করিম, দূতাবাসের একজন মন্ত্রী যে অসুস্থতা রিপোর্ট করে; এ এম এস কিবরিয়া, শিক্ষা কাউন্সিলর; এ আর চৌধুরী, দূতাবাসের অর্থ ও হিসাব কর্মকর্তা এস এম আলি, তৃতীয় সচিব। 

 

সাহায্যে নিষেধাজ্ঞা

 

পদত্যাগকারী কূটনীতিকরা গতকালের প্রতিনিধির ঘরে জড় হয়, জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সেনাখাতে বিদেশী সাহায্যের প্রায় ৬.৯ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য পাকিস্তান ও গ্রীসে পরবর্তী দুইবছরে নিষেধাজ্ঞার ব্যপারে ভোট দিতে।

 

“এই মুহূর্তে পশ্চিম পাকিস্তানে অর্থনীতি ও সেনাখাতে কোন ধরণের সাহায্যের কোন প্রশ্নই ওঠেনা”, তারা বলেন। “এ ধরণের সাহায্য শুধু গনহত্যা স্থায়ী করতে ভূমিকা পালন করবে”।

 

কূটনীতিকদের সংবাদ সম্মেলনের  এক ঘণ্টার মধ্যে প্রেসিডেন্ট নিক্সন, স্টেট সেক্রেটারি উইলিয়াম পি রজার্স ও প্রেসিডেন্টের জাতীয় সিকিউরিটির উপদেষ্টা হেনরি এ কিসিঞ্জার একটি মিটিং এ পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন এবং ডিসিশন নেবার জন্য সিনেটে পাঠান। 

 

রজার্সের বৈঠক পরিকল্পনা

 

জনাব নিক্সন বলেছেন পূর্ব পাকিস্তানী শরণার্থীদের ত্রাণ সমস্যা ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। তিনি বললেন এটা পাকিস্তানের সাথে জাতিসংঘের কাজ করার সামর্থ্যকে ব্যাহত করতে পারে “যেমন বর্তমানে নির্দেশিত হয়েছে এটা খাদ্য সরবরাহ বিতরণ করতে ইচ্ছুক”।

পাকিস্তানে চলমান অর্থনৈতিক ত্রাণ ভারতীয় উপমহাদেশের “ঘটনাচক্রকে প্রভাবিত করছে”। জনাব নিক্সন ঘোষণা করেছেন, সেক্রেটারি রজার্স পরবর্তী সপ্তাহে জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশনার প্রিন্স সাদরুদ্দিন খান ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে জাতিসংঘে বৈঠক করবেন।

 

 

পাবলিকের চাপ নয় 

 

পূর্ব পাকিস্তানে কংগ্রেস ও পাবলিকের উঠতি চাপকে প্রত্যাখাত করায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নিন্দা করে জনাব নিক্সন ঘোষণা করেছেনঃ

 

“আমরা পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের পাবলিকের চাপের সাথে যুক্ত হবনা। সেটা হবে পুরোপুরি অনুৎপাদনশীল। এসব ব্যাপারগুলো আমরা শুধু ব্যক্তিগত চ্যানেলে আলোচনা করব”।

Scroll to Top