প্রতিবেদনঃ ডাঃ মাহবুবুল আলম

শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৪) ৭নং সেক্টরে সংঘটিত যুদ্ধের আরও বিবরণ   ১৯৭১

 

একটি অপারেশনঃ ডাঃ মাহবুবুল আলম, এমবিবিএস, বিপি

৩০/১০/১৯৭৯

১৪ই আগস্ট, ১৯৭১ সন। রাজশাহীর দক্ষিণাঞ্চল বন্যাকবলিত। পদ্মা নদীর দুই কূল ভেসে গেছে। যেদিকে চোখ যায় মনে হয় যেন একটি সাগর, তারই মাঝে চোখে পড়ে দু-একটি গ্রাম। বহু গৃহপালিত পশু ভেসে যাচ্ছে আর নদীর দু’পাশের লোকজন প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে ঠাঁই পেতে চেষ্টা করছে তারই ঘরের চালে বসে অনাহারে-উপবাসে। সেই দিনটিতেই পাকবাহিনী ঢাকঢোল পিটিয়ে উদযাপন করতে চাইছে ১৪ই আগষ্ট, স্বাধীনতা দিবস। আর তার সাথে যোগ দিয়েছে তাদেরই পদলেহনকারী কিছু সংখ্যক আলবদর বাহিনীর লোক। চাঁপাইনওয়াবগঞ্জ শহরের লোকজনকে জড়ো করা হয়েছে পাকসেনাদের মহত্ত্বের প্রশংসা করতে, বিকেলে টাউন হলে সম্বর্ধনা সভা ডেকে। আর্মি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক প্রধান অতিথি। জাঁকজমক পরিবেশে সবকিছুর পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এদিকে ফরিদপুরে বি-ও-পি তে সকাল ৭টায় সেদিন প্রায় এক কোম্পানী মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত করেছেন মেজর গিয়াস (বর্তমানে বিগ্রেডিয়ার) পদ্মা ও মহানন্দা নদীর মাঝামাঝি এ বি-অ-পিসহ আরো চার বি-ও-পি জুড়ে প্রায় দুইশত বর্গমাইল এলাকা ২৬শে মার্চের পর থেকেই মুক্ত ছিল। পাকবাহিনী বহু চেষ্টার পরও এর কোনটি অধিকার করতে পারেনি স্বাধীনতার পূর্বমূহূর্ত পর্যন্ত। ৮৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে মনোনীত করা হল অপারেশনের জন্য। বি-ও-পি’র ভিতরে পাকা মেঝেতে সুন্দর একটা নকশা পূর্ব থেকে বানানো ছিল-যার আশেপাশে সকলকে বসানো হল। সেদিন প্রত্যেকটি মুক্তিযোদ্ধার চোখেমুখে ছিল জিঘাংসা আর দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ের চিহ্ন।

নকশার উপর শত্রুর ঘাঁটি আর অবস্থান সম্বন্ধে একে একে বুঝিয়ে দিলেন মেজর গিয়াস। শত্রুর অবস্থান ছিল তখন নিম্নরূপঃ

ক) একটি ইনফ্যানট্রি ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার নওয়াবগঞ্জ ও তার সাথে একটি কোম্পানী, যারা নওয়াব গঞ্জ শহরের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে সি-এ-এফ’র সাথে নিয়োজিত ছিল।

খ) হরিপুর পুলের উপর দুই সেকশনের কিছু বেশী লোক পাহারা দিচ্ছিল। ২২০ ফুট লম্বা এ ব্রিজটি নওয়াবগঞ্জ থেকে দুই হাজার গজের কিছু বেশী দূরে রাজশাহী-নওয়াবগঞ্জ রাজপথের উপর অবস্থিত।

গ) আমনুরা রেলওয়ে স্টেশনে ছিল সেনাবাহিনীর একটা প্লাটুন, আরক এক প্লাটুন ছিল নওয়াবগঞ্জ স্টেশনে। এই প্লাটুনদ্বয়ের কাছে একটা ইঞ্জিন ও দুটি করে বগি থাকত এবং বিশেষ করে রাত্রে তারা আমনুরা ও নওয়াবগঞ্জের সাথে পেট্রোলিং করে বেড়াত।

এছাড়া এক প্লাটুন আর্মি ও সি-এ-এফ’এর গার্ডও ছিল, যারা নওয়াবগঞ্জের অদূরে নওয়াগঞ্জ-আমনুরা রেললাইনের উপর দুটি পুল বিদিলপুর নামক জায়গায় পাহারা দিচ্ছিল।

এই ৮৬জন মুক্তিযোদ্ধাকে বাছাই করলেন মেজর গিয়াস নিজে। তিনি তাদের তিনটি ভাগে ভাগ করলেন। ঘোষণা করলেন যে তিনি নিজে সেই অপারেশন পরিচালনা করবেন। কিংবদন্তী নায়ক মেজর গিয়াসের নাম রাজশাহীর লোকের মুখে মুখে। তিনি নিজে অপারেশন পরিচালনা করছেন শুনে সকলে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলো।

ক) এক নম্বর গ্রুপে বিশজন লোক দেওয়া হলো-যার কমান্ডার সুবেদার ইসমাইলকে করা হয়। তার কাছে দেওয়া হল তিনটি মাঝারি মর্টার আর ৯০টি বোমা। কাজ দেওয়া হল নওয়াবগঞ্জ শহরে ১৪ই আগষ্ট রাত দশটা এগারটা পর্যন্ত গোলাবর্ষণ করা।

খ) দুই নম্বর গ্রুপে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে দেওয়া হল। কমান্ডার নিযুক্ত হলেন সুবেদার আমিরুজ্জামান। মেজর স্বয়ং এই গ্রুপের সাথে রাইলেন-তিন গ্রুপের পরিচালনা করবেন ওয়ারলেসের সাহায্যে। কাজ দেওয়া হল হরিপুর পুলের উপর হামলা করা এবং প্রহরারত হানাদার বাহিনীর লোকদেরকে হত্যা অথবা বন্দী করে পুলটিকে উড়িয়ে দেওয়া, যাতে করে নওয়াবগঞ্জ আর রাজশাহীর মধ্যেকার একমাত্র সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

গ) তৃতীয় গ্রুপের কমান্ডার ছিলেন নায়েক সুবেদার আমানউল্লাহ, যাকে দেওয়া হয়েছিল ৩১ জন মুক্তিযোদ্ধা। কাজ দেওয়া হয়েছিল বিদিলপুর রেলওয়ে উড়িয়ে দেওয়ার।

ছয়খানা নৌকা যোগাড় করা হয়েছিল আগে থেকে। আমাদের নৌকার কান্ডারী ৫৯ বছর বয়স্ক হুরমত আলী। সাধা ধবধবে লম্বা দাড়ি-চুলের অধিকারী এই বৃদ্ধের মাথায় ছিল গোল একখানি টুপি। কপালে দেখা যাচ্ছিল সুস্পষ্ট কাল দাগ, এবাদতের চিহ্ন। ছয়টি নৌকায় সকলে গিয়ে উঠলাম। মনে হচ্ছিল যেন আমরা সাগর পাড়ি দিচ্ছি অথৈ জলের মাঝে। হুরমত আলী রওনা হওয়ার আগে কি যেন বিড় বিড় করে পড়ল, তারপর মোনাজাত করল। সকাল ন’টার সময় আমরা গন্তব্যস্থানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। হুরমত আলীর নৌকা সকলের আগের ছিল, তাতে ছিলেন মেজর গিয়াস নিজে। সব মিলে ১৭ মাইল রাস্তা অতিক্রম করতে হবে। নৌকার পাল উঠাতেই নৌকার গতিবেগ চার থেকে পাঁচ মাইলে পৌঁছাল।

সন্ধ্যা হতে না হতেই টারগেটের দু’মাইলের মধ্যে পৌঁছান গেল। কিন্তু সবচেয়ে বন্ধুর আর ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই দুই মাইল রাস্তা। যেতে হচ্ছে মহানন্দার ছোট্ট উপনদী-শাখানদী ধরে। আগে থেকে জানা ছিল মিরজাফরের বংশধরদের বেশকিছু লোক এ অঞ্চলে এসেছে, যারা আলবদর আর রাজাকারের মুখোশ পরে এতদঞ্চলে অবস্থান করছে। বহু কষ্টে আরও এক মাইল পথ অতিক্রম করতে আরও দেড় ঘন্টা সময় লেগে গেল। এক মাইল রাস্তা আরও যেতে হবে। তখন সাড়ে সাতটা। সাড়ে দশ ঘন্টা কেটে গেছে নৌকায়। হঠাত হুরমত আলী ইশারা দিল সকলকে থামতে। আমার কাছে এসে ফিস ফিস করে বলল যে, সে রাস্তাটা যেন হারিয়ে ফেলেছে। সব কটা নৌকায় হঠাত ফিসফিস শব্দ বেড়ে উঠল আর নীরব গুঞ্জন ভেসে এল। পাশের একটা গ্রামে কিছু হারিকেনের আলো চোখে পড়ল। মেজর গিয়াস হুরমত আলীকে নিয়ে সেই গ্রামে উঠলেন এবং সেখান থেকে একটা ছেলেকে নিয়ে পুনরায় গন্তব্য স্থানের দিকে দৃষ্টি রেখে রওনা হলেন। ভীত সন্ত্রস্ত গ্রাম থেকে উঠানো ছেলেটি নৌকায় উঠে সেদিন এতগুলি মুক্তিযোদ্ধাকে দেখে কেঁদে ফেলেছিল। ভেবেছিল বুঝিবা তার জীবনের অবসান ঘটাবার জন্য তাকে নেওয়া হচ্ছিল।

হরিপুরের পুল থেকে ছয়শত গজ পেছনে রাত ৯টায় রাজশাহী-নওয়াবগঞ্জ সড়কের উপর এক নম্বর ও দুই নম্বর গ্রুপকে অবতরণ করতে আদেশ দিলেন মেজর গিয়াস। তিন নম্বর গ্রুপকে পাঠান হল বিদিলপুর রেলওয়ে পুলের উদ্দেশ্যে দুটো নৌকা করে। বন্যায় ডুবন্ত রাস্তার উপর দিয়েই নৌকা দুইটি অতিক্রম করে গেল। এক নম্বর গ্রুপকে অবতরণ ক্ষেত্রে ডিফেন্স লাগাতে বলে দুই নম্বর গ্রুপ দুই ভাবে বিভক্ত হয়ে পুলের দিকে অগ্রসর হল সড়কের ডান ও বাঁইয়ের কিনারা ধরে। আকাশে চাঁদ ছিল না তবে তারকারাশির মিটিমিটি আলো বন্যার পানিতে পড়ে পরিবেশকে বেশ আলোকিত করে তুলেছিল। প্রায় একশত গজের মধ্যে পৌঁছাতেই আধো আলো আর ছায়ার মাঝে মনে হল কারা যেন তড়িৎ গতিতে পুলের পাশে পজিশন নিচ্ছে। আর একটু অগ্রসর হতেই শত্রুপক্ষের একজন চেঁচিয়ে উঠল ‘হল্ট’ ‘হ্যান্ডস আপ’। নায়েক মিহনাজউদ্দিন, সম্মুখবর্তী সেকশন এর কমান্ডার, তারই জবাবে আমগাছের আড়াল থেকে উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠল, “তেরে বাপ আয়া, শালা সারেন্ডার কর”। একথা শেষ হতে না হতেই শত্রুপক্ষ পুলের উপর থেকে একটা এল-এম-জি ও তিন-চারটা রাইফেল থেকে গুলি চালালো আমাদের প্লাটুনের উপর কালবিলম্ব না করে। আমাদের প্লাটুন ঝাঁপিয়ে পড়ল দুশমনদের উপর। পেছন থেকে আমাদের মেশিনগান সহায়তা করে চলল। পুল দখলে এসে গেল কয়েক মিনিটের মধ্যে, দুশমন অনুধাবন করার আগেই দু’জন শত্রুসেনা মারা গেল। দু’জন ঝাঁপ দিয়ে নদীতে পড়ে পালিয়ে গেল। একজন আহত হল এবং বাকী ১১জনকে বন্দী করা হল। আমাদের পক্ষের একজন নিহত ও একজন আহত হয়।

পুল কব্জা করার সাথে এক নম্বর প্লাটুনটি পুলের উপর দিয়ে নওয়াবগঞ্জের দিকে দ্রুত ধাবিত হল। নওয়াবগঞ্জ শহর থেকে মাত্র এক হাজার গজ দূরে রাস্তার পাশেই তারা মর্টারের জন্য স্থান বেছে নিল আর শহরের উপর শুরু হল গোলাবর্ষন। শত্রুপক্ষ কোনদিন এত নিকটে আমাদেরকে আশা করেনি। হানাদার বাহিনীর জন্য মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান নাকি সে সময় বেশ জমে উঠেছিল টাউন হলে আলবদর বাহিনীর বদৌলতে। প্রথম গোলা টাউন হলের নিকটে পড়ার সাথে সাথে প্রধান অতিথিসহ তাদের চেলা-চামুন্ডা হলঘর ছেড়ে দে ছুট- এই বুঝি শহর মুক্তিবাহিনীর কবলে গেল। যখন এদিক থেকে গোলাবর্ষণ চলছিল তখন সব কয়েকটি দুশমনের অবস্থান থেকে গোলাগুলি আসছিল। তৃতীয় গ্রুপটি তাদের অবস্থান পর্যন্ত পৌঁছুবার আগেই দুশমন তাদের মেশিনগান আর রাইফেল থেকে গুলি ছোড়া শুরু করল। তৃতীয় গ্রুপটি পুল দখল করতে পারেনি। এদিকে দু’নম্বর গ্রুপটি পুল উড়াবার কাজ করেই চলছে। ‘ডিপ মাইন’ ও প্রেশার চার্জ দিতে হবে। পুলের গোড়ার অংশ ৫ ফুট পরিমাণ খুঁড়তে হল ‘ডিপ মাইন’ চার্জ বসাবার জন্য। আমাদের প্রয়োজন ছিল সাড়ে চারশত পাউন্ড এক্সপ্লোসিভের। আমাদের কাছে ছিল যে সময় তিনশত জিলাটিন এক্সপ্লোসিভ যেগুলো সাধারনত খনিজ পদার্থের মাইন। ফিল্ডে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ছয়টি পুরাতন ধরনের ব্রিটিশ এ্যান্টি ট্যাংক মাইন সাথে আনতে বলেছিলেন মেজর সাহেব। সেগুলো জুড়ে দিয়ে পুলের এবেট্মেন্ট উড়াবার জন্য চার্জ তৈরী করতে বললেন মোট ২৪০ পাউন্ড এক্সপ্লোসিভ দিয়ে। উপরে অনুমান একশত দস পাউন্ড এক্সপ্লোসিভ দিয়ে প্রেশার চার্জ লাগান হল। মাটি ভরে দিয়ে ডিপ মাইন চার্জ আর পুলের উপর প্রেশার চার্জ লাগিয়ে রিং মেন সার্কিট বানান হল কর্ডেক্স-এর সাহায্যে। এদিকে মর্টার প্লাটুনের কয়েকজন ফেরত এসে পড়েছে। পুলের উপর উঠে পুলটা শেষ বারের মত দেখে নিলেন আমাদের অধিনায়ক মেজর গিয়াস। বন্যার পানি পুলের উপর ছুঁই ছুঁই করছে, আর স্রোতের গতিবেগ জোরে বয়ে যাচ্ছিল। নওয়াবগঞ্জের দিক থেকে কিছু মর্টার আর মেশিনগানের গুলি পুলের দিকে আসছিল। এক সময় আমরা সন্ত্রস্ত্র হয়ে পড়েছিলাম যখন দু’তিনটি গাড়ির রাজশাহীর দিকে থেকে আসতে দেখতে পেলাম রাজপথ ধরে, কিন্তু কিছু দূর আসতে যেন গাড়ীর বাতিগুলি থেমে গেল। তারপর বুঝতে পেলাম যে রাস্তা এক মাইল পেছনে জলমগ্ন হয়ে আছে যার ফলে গাড়ী আর বেশিদুর এগুতে পারেনি। ওরা রাস্তার পেট্রোলিং-এ বেরিয়েছিল সম্ভবত।

রাত ঠিক বারটা বেজে পাঁচ মিনিট। সকলকে প্রায় ছয় শত গজ দূরে নৌকায় বসতে হল কানে হাত চেপে ফিউজে আগুন লাগাতে বললেন অধিনায়ক। পেছনে দৌড়িয়ে এসে ৫০০ গজ দূরে রাস্তার পাশে বসে পড়লাম, মেজর গিয়াস ও সুবেদার আমিরুজ্জামান। গগনবিদারী আওয়াজে যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সে আওয়াজের সাথে সাথে বেশ কয়েকটি গ্রামের লোক ঘুম থেকে চিৎকার করে উঠল, ভাবল হয়ত কেয়ামত এল বুঝি। বেশ কয়েক সেকেন্ড লেগে গেল আকাশে উত্থিত ইট, কংকর পাথর নেমে আসতে। আনন্দের উচ্ছ্বাসে সকলে দৌড়িয়ে গেলে পুলের অবস্থা দেখতে। পুল আর দেখা যাচ্ছে না-দেখা যাচ্ছিল অপর অংশের অর্ধেকটা দূরে কাত হয়ে পড়া অবস্থায়। স্রোতের টানে ইত্যবসরে ছোট নদীটার এপারের অংশ পুলের ভিত্তিপ্রস্তর থেকে আরো ১০/১৫ ফুট বেড়ে গেছে । আমরা নৌকায় উঠে আরো একটু পেছনে চলে এলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে রেলওয়ে পুল উড়াবার তৃতীয় গ্রুপও আমাদের সাথে যোগ দিল। তারা কৃতকার্য হতে পারেনি তাদের উদ্দেশ্যে। কিন্তু শত্রুর যে ক্ষতি করতে পেরেছে তা আরেক মজার কাহিনী।

শত্রুর যে দুটি প্লাটুন একটা আমনুরা ও অপরটি নওয়াবগঞ্জে ছিল, সে দুটি প্লান্টুনই গোলাগুলির আওয়াজ শুনে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে রেলের ইঞ্জিন আর বগি নিয়ে রওয়ানা দিল, তাদের পেট্রোল করার রাস্তায়। পুলের কাছে আমনুরা হতে আগত পেট্রোলটি পৌঁছাতেই কিছু গুলির আওয়াজ পেল। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় ইঞ্জিনও এসে পৌঁছাল। শত্রুপক্ষ মনে করেছিল হয়তোবা নওয়াবগঞ্জ মুক্তিবাহিনী দখল করে নিয়েছে আর তাদেরই লোকজন সম্ভবতঃ সম্মুখের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি বেশি কিছুক্ষন চললো। সুযোগ বুঝে সেই ফাঁকে কেটে পড়ল আমাদের তৃতীয় গ্রুপটি। নিজেদের গুলিতে সেইদিন দুশমনের ৬ জন নিহত হয় আর ৭ জন আহত হয় সেই স্থানেই।

সেই অপারেশনে আমরা আমাদের একজন প্রিয় সিপাইকে হারাই ও দু’জন মুক্তিযোদ্ধা গুরুতররূপে আহত হয়। যদিও অতি সাধারণ কিন্তু দুর্গম শত্রুর এলাকার ভিতর অপারেশন করা সহজসাধ্য ব্যাপার ছিল না। এটাও সম্ভব হত না যদি না জাতি হিসাবে বেঁচে থাকার অদম্য স্পৃহা আর জাগ্রত মনুষ্যত্ববোধ, আত্মবিশ্বাস আর অপরাজয়কে জয় করে প্রমাণ করার অভিলাষ থাকতো।

**প্রকল্প সংগৃহীত দলিলপত্র থেকে সংগৃহীত

Scroll to Top