প্রতিবেদনঃ মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান

<৯, ১৬.৪, ৪৬৪-৪৭৪>

আফসার ব্যাটালিয়ন

 

ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানার নিভৃত পল্লী মল্লিকবাড়ী গ্রামে একটি মাত্র রাইফেল নিয়ে মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ সাহেব পার্টি গঠন করেন। পাকবাহিনী ও দুষ্কৃতিকারীগণের সাথে লড়াই করে মেজর আফছার সাহেব শত্রুদেরকে সমুচিত শিক্ষা দিয়েছেন এবং তিনি তার পার্টি নিয়ে শত্রুপক্ষের নিকট থেকে আড়াই হাজারেরও অধিক রাইফেল, ব্রেটাগান, রকেট লান্সার, স্টেনগান, এমএমজি ইত্যাদি উদ্ধার করেন। তার দ্বারা পরিচালিত বাহিনীতে সর্বমোট প্রায় সাড়ে চার হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল।

 

মেজর আফছার সাহেবের পৃষ্ঠপোষকতায় আফছার ব্যাটালিয়নের তরফ থেকে সাপ্তাহিক জাগ্রত বাংলা পত্রিকা যাবতীয় সংবাদ পরিবেশন করে মুক্তিকামী মানব মনে প্রেরণা জুগিয়েছে।

 

আফছার ব্যাটালিয়নের তরফ থেকে রোগাক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং বিপর্যস্ত মানুষের চিকিৎসার জন্য ১৩ জন ডাক্তার ও ৩ জন নার্স সমন্বয়ে একটি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল স্থাপিত হয়েছিল মেজর আফছার সাহেবের প্রচেষ্টায়। আফছার ব্যাটালিয়ন কর্তৃক মুক্ত এলাকার সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিল। এই শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে আফছার ব্যাটালিয়ন তাদের দ্বারা মুক্ত এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখেছে।

 

মেজর আফছার সাহেব কর্তৃক পরিচালিত মুক্তিবাহিনীকে সেনাবাহিনীর নিয়মানুযায়ী মোট ২৫টি কোম্পানী অর্থাৎ ৫টি ব্যাটালিয়নে ভাগ করা হয়। প্রত্যেক কোম্পানীতে ৩টি প্লাটুন, প্রত্যেক প্লাটুনে ৩টি সেকশন এবং প্রত্যেক সেকশনে ১৫ জন করে মুক্তিসেনা ছিল। প্রকাশ থাকে যে হাসপাতাল, পত্রিকা অফিস এবং বার্তা বিভাগের মুক্তিযোদ্ধারা কোম্পানীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।

 

ময়মনসিংহ সদর (দক্ষিণ) ও ঢাকা সদর (উত্তর) সেক্টরের সমস্ত মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আফছার ব্যাটালিয়ন গঠিত হয়েছিল। আফছার ব্যাটালিয়নের কৃতিত্বের কথা এ পুস্তকে তুলে ধরা হয়েছে। আফছার ব্যাটালিয়নের প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাই এই কৃতিত্বের অংশীদার।

 

স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্ষীবাহিনী এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। রক্ষীবাহিনীর অক্লান্ত পরিশ্রম, অকৃত্রিম সেবাযত্ন এবং অসীম ভালোবাসার উপর ভিত্তি করেই আফছার ব্যাটালিয়ন সফলতার চরম শিখরে আরোহণ করতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে বাটাজুর, কচিন, ডাকাতিয়া, পাঁচগাঁও, কাওলামারী, রাজৈ, ফুলবাড়িয়া, আমিরাবাড়ী, নারাঙ্গী, বড়ইদ, দক্ষিণ ফুলবাড়িয়া ও কালিয়াকৈর এলাকার রক্ষীবাহিনী স্বাধীনতা সংগ্রামে যে ভূমিকা পালন করেছে তা মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

 

…পাকবাহিনী কর্তৃক হামলার প্রথমাবস্থায় মুক্তিকামী বাঙালি নওজোয়ানগণ (প্রাক্তন ই পি আর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট, পুলিশ বাহিনী, আনসার, মুজাহিদ, ও অন্যান্যরা)। বীরবিক্রমে পাল্টা আক্রমণ চালান, কিন্তু পাকবাহিনীর মত সুসংগঠিত বর্বর বাহিনীর সাথে টিকে ওঠা সম্ভব না হওয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহনের জন্য বন্ধু রাষ্ট্রে আশ্রয় নেন।

 

মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য জীবন-মরণ পণ করে অগণিত বাঙালি নওজোয়ান ওপার বাংলার সামরিক শিক্ষা গ্রহণ শুরু করে। মেজর আফছারউদ্দিন আহমেদ সাহেব ওপার বাংলায় পাড়ি না জমিয়ে দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিবাহিনী গঠন করেন, বর্বর বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করে এক বিরাট এলাকা মুক্ত করেন। একই সময়ে টাঙ্গাইল জেলার কাদের সিদ্দিকী সাহেবও দেশের অভ্যন্তরে পার্টি গঠন করেন এবং এক বিরাট এলাকা মুক্ত করার প্রয়াস পান।

 

…ওপার বাংলা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে আসার বেশ কিছুদিন আগেই পাকবাহিনীর নিকট থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছিনিয়ে এনে মেজর আফছার উদ্দিন তাঁর পরিচালিত মুক্তিদলকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলেন। তিনি ১৯৭১ সনের জুন মাসে ভালুকা থানার ভাওয়ালিয়া বাজু এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে একটানা ৪৮ ঘণ্টা সম্মুখযুদ্ধ করে এক রেকর্ড সৃষ্টি করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি অগণিত সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। তাঁর অসীম কর্মদক্ষতার গুণে তিনি একটি রাইফেল থেকে শুরু করে প্রায় সাড়ে চার হাজারেরও অধিক মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিবাহিনী ভেঙ্গে দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেন।

 

তিনি শপথ করেছিলেন- ‘দেশকে শত্রুমুক্ত না করা পর্যন্ত অস্ত্র ত্যাগ করবো না আমার যদি মৃত্যু হয় তাহলে যেন মুক্ত এলাকাতেই হয়।’ বর্বর বাহিনী শত চেষ্টা করেও আফছার ব্যাটালিয়ন কর্তৃক মুক্ত এলাকায় প্রবেশ করতে পারে নি। আফছার সাহেব শপথ করেছিলেন- ‘জীবিত থাকতে মুক্ত এলাকায় শত্রুদেরকে প্রবেশ করতে দেব না।’ তাঁর শপথ অক্ষরে অক্ষরে রক্ষা করেছেন। তিনি তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা সাপ্তাহিক ‘জাগ্রত বাংলা’য় তাঁর বাহিনী কর্তৃক মুক্ত এলাকার মানচিত্র অংকন করে সমস্ত বাংলাদেশ, ওপার বাংলা ও পাক বাহিনীর অনেক ঘাঁটিতেও বিতরণ করেছেন। তিনি ১৯৭১ সনের আগস্ট মাসের মাঝামাঝিতে আগরতলা যেয়ে লেঃ কর্নেল নুরুজ্জামান সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করেন। লেঃ কর্নেল নুরুজ্জামান সাহেব বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কিছু অস্ত্র ও অসীম উৎসাহ উদ্দিপনা দিয়ে বিশেষভাবে উপকৃত করেন।

 

ময়মনসিংহ সদর (দক্ষিণ) সেক্টরের মুক্তিবাহিনী অধিনায়ক মেজর আফছার উদ্দিন আহমেদের গঠিত ব্যাটালিয়নের স্বাধীনতা সংগ্রামের কার্যাবলীঃ-

 

২৩-৪-১৯৭১> ময়মনসিংহ জিলার ভালুকা থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মল্লিকবাড়ী ইউনিয়ন কাউন্সিল সদস্য জনাব আফছার আহমেদ মাতৃভূমিকে পশ্চিমাদের কবল হতে শোষণমুক্ত করার উদ্দেশ্যে ভালুকা থানার রাজৈর গ্রামের বিশিষ্ট আওয়ামীলীগ কর্মী মোঃ আব্দুল হামিদ সাহেবের নিকট থেকে একটি রাইফেল ও ৩০ রাউণ্ড গুলি নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করার সিদ্ধান্ত করেন।

 

২৪-৪-১৯৭১> প্রাক্তন ই পি আর বাহিনীর ফেলে যাওয়া ৭টি রাইফেল এবং উপরোক্ত আব্দুল হামিদ সাহেবের নিকট থেকে সংগ্রহ করা ১টি রাইফেল মোট ৮টি রাইফেল নিয়ে জনাব আফছারউদ্দিন আহমেদ সাহেবের নেতৃত্বে মল্লিকবাড়ী এলাকায়

১। মোঃ আমজাদ হোসেন

২। মোঃ আবদুল খালেক

৩। শ্রীনারায়ণ চন্দ্র পাল

৪। মোঃ আবদুল বারেক মিয়া

৫। মোঃ আবদুল মান্নান

৬। শ্রী-অনীলচন্দ্র সাংমা ও

৭। ছমির উদ্দিন মিয়ার সহযোগিতায় সর্বপ্রথম মুক্তিবাহিনী গঠন করা হয়। মোঃ আবদুল মান্নান ভাওয়ালিয়া বাজু যুদ্ধে এবং শ্রী অনীলচন্দ্র সাংমা ডুমনিঘাট যুদ্ধে নিহত হন।

 

মুক্তিবাহিনী গঠনে সক্রিয়ভাবে যারা সাহায্য করেছেন তাঁরা হলেন মোঃ জবান আলী ফকির, ডাঃ হাফিজউদ্দিন আহমেদ, মোঃ আবদুল রাজ্জাক, মোঃ আবদুল হামিদ, মোঃ মোসলেম মিয়া, বাবু প্রেম অধিকারী এবং মোঃ হাফিজুর রহমান। উক্ত পার্টি ভালুকা, গফরগাঁও, ফুলবাড়ীয়া, ত্রিশাল, কোতোয়ালী, শ্রীপুর, কালিয়াকৈর বাশাইল, কালিহাতি, মির্জাপুর এবং মুক্তাগাছা ইত্যাদি এলাকায় কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পরিচালিত জনাব আফছারউদ্দিন আহমেদ নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবার জন্য শপথগ্রহণ করেন।

 

২৬-৪-১৯৭১> বিভিন্ন স্থানে হানা দিয়ে ঢাকাতে ও দুষ্কৃতিকারীদের নিকট থেকে অস্ত্র উদ্ধার কার্য শুরু করা হয়। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই মোট ২৫টি রাইফেল বিভিন্ন উপায়ে সংগ্রহ করা হয়।

 

২-৫-১৯৭১> অধিনায়ক আফছারউদ্দিন আহমেদ সাহেবের নেতৃত্বে ভালুকা থানা হেডকোয়ার্টার আক্রমণ করা হয় এবং সেখান থেকে ১০টি রাইফেল এবং ১৫৫০ রাউণ্ড গুলি ও ৩০টি বেয়নেট উদ্ধার করা হয়।

 

১২-৫-১৯৭১> টাঙ্গাইল জেলার বল্লা এলাকায় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী সাহেবের সঙ্গে অধিনায়ক আফছার সাহেব একটি কোম্পানী নিয়ে বল্লা আক্রমণ করেন। উক্ত যুদ্ধে ৫১ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং বহুসংখ্যক আহত হয়।

 

২০-৫-১৯৭১> ভালুকা থানার বাইন্দা গ্রামের কুখ্যাত ডাকাত, লুণ্ঠনকারী ও পাক বাহিনীর দালাল ইছহাক খানের হত্যা করা হয়।

 

২১-৫-১৯৭১> এই দিনে ভালুকা থানা আক্রমণ করে ২টি ব্রেটাগান, ১০টি রাইফেল এবং এক বাক্সগুলি উদ্ধার করা হয়।

 

২২-৫-১৯৭১> অধিনায়ক আফছার সাহেবের নেতৃত্বে গফরগাঁও থানার কাওরাইদ রেল স্টেশনের উত্তর পার্শ্বস্থিত গ্রাম গয়েশপুর থেকে মুক্তিসেনা নুরুল ইসলামের সহায়তায় ২টি চাইনীজ রাইফেল এবং ৬ বাক্স গুলি উদ্ধার করা হয়।

 

০২-০৬-১৯৭১> বিভিন্ন স্থানে হানা দিয়ে ডাকাত ও দুষ্কৃতিকারীদের নিকট থেকে মোট ১১টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।

 

২৩-৬-১৯৭১> ভালুকা থানার পোনাশাইল এলাকার একদল মুক্তিসেনা টহল দেওয়াকালীন সময়ে একখানা সন্দেহজনক নৌকা আটক করা হয়। উক্ত নৌকা তল্লাশী করে ৫টি রাইফেল ও ৪ বাক্স গুলিসহ ৫ জন পুলিশ ধরা হয়। উক্ত পুলিশের নিকট থেকে অনেক গোপন তথ্য জানা সম্ভব হয়। তারা মুক্তিবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে।

 

২৫-০৬-১৯৭১> পনের শতাধিক পাক সেনার একটি দল তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে ভালুকা ঘাঁটি করার উদ্দেশ্যে গফরগাঁও থেকে ভালুকা রওয়ানা হয়। পাক সেনাদের এই সুসজ্জিত বাহিনী ভালুকা যাওয়ার সময় অধিনায়ক আফছার সাহেব ৪২ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সকাল ৮ ঘটিকায় ভাওয়ালিয়া বাজু বাজারের ঘাটে তাদের রাস্তা রোধ করেন এবং যুদ্ধ শুরু হয়। পাকসেনারা অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। মুক্তিসেনারা মাত্র ২ টি এল এম জি (হালকা মেশিনগান) ও ৩৭ টি রাইফেল নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। অবিরাম ৩৫ ঘণ্টা যুদ্ধ চলার পর পাকবাহিনী অগ্রসর হতে না পারায় মুক্তিসেনাদের পিছন দিকে পাক সেনাদের সাহায্যের জন্য হেলিকপ্টার দ্বারা কয়েকবারে ৩ শতাধিক পাকসেনা অবতরণ করানো হয়। এই যুদ্ধ মোট ৪৮ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এতে ১৯৫ জন পাকসেনা নিহত ও বহুসংখ্যক আহত হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিসেনা আঃ মান্নান শহীদ হন এবং ৩জন মুক্তিসেনা আহত হন।

 

২৮-৬-১৯৭১> অধিনায়ক আফছারউদ্দিন সাহেব নিজেই রাত্রি ৩ ঘটিকায় ভালুকা থানায় গ্রেনেড আক্রমণ চালিয়ে ১৭ জন পাকসেনাকে নিহত ও কয়েকজনকে আহত করেন।

 

১৭-৭-১৯৭১> মেজর আফছারউদ্দিন আহমেদ সাহেবের নেতৃত্বে গফরগাঁও থানার দেউলপাড়া এলাকায় পাক সেনাদের একটি টহলদারী ট্রেনের উপর মুক্তিসেনারা আক্রমণ চালায়। ফলে ৭ জন পাক সেনা নিহত ও কয়েকজন আহত হয়।

 

১৯-৭-১৯৭১ ভালুকা থানার হরিরবাড়ী এলাকায় সিস্টোর বাজারে আফছার সাহেবের নেতৃত্বে রাত্রি ৩ টা ২০ মিনিটে পাকসেনাদের ঘাঁটি আক্রমণ করা হয়। ফলে ২৩ জন পাকসেনা নিহত ও ৯ জন আহত হয়। রাত্রের আক্রমনে তারা ভীত হয়ে পরের দিন ত্যাগ করে পলায়ন করে।

 

২৫-৭-৭১> অধিনায়ক আফছার সাহেব নিজে একদল মুক্তিসেনা নিয়ে অতর্কিত মল্লিকবাড়ী ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়ে রাত্রি ৪ টা ২০ মিনিটে পাকসেনাদের ১৬ জনকে নিহত ও কয়েকজনকে আহত করেন।

 

২৬-৭-১৯৭১> মল্লিকবাড়ী পাকবাহিনীর ঘাঁটিতে মুক্তিযোদ্ধারা রাত্রি ২ ঘটিকায় গেরিলা পদ্ধতিতে গ্রেনেড চার্জ করে পাকসেনাদের ৪ জনকে নিহত ও ৩ জনকে গুরুতরভাবে আহত করেন। একই দিন অন্য একদল মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা জেলার শ্রীপুর থানার মাওয়া গ্রামের কুখ্যাত ডাকাত ও দালাল হাবিবুর রহমান (এম ইউ সি) এবং হামিদ ফকিরকে হত্যা করেন।

 

২৯-৭-১৯৭১> আফছার ব্যাটালিয়নের কোম্পানী কমান্ডার চাঁন মিয়ার দলের হাতে পাকবাহিনীর ৩ জন গুপ্তচর পারুলদীয়া বাজারে ধরা পড়ে ও তাদেরকে হত্যা করা হয়। অধিনায়ক আফছার সাহেব ১লা আগস্ট তারিখে অন্য একদল মুক্তিসেনা নিয়ে ভালুকা থানার ভয়াবহ খেয়াঘাটে পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে ৯ জন পাকসেনাকে হত্যা করেন।

 

০৩-৮-১৯৭১> প্লাটুন কমান্ডার হাফিজুর রহমান, মোঃ আইয়ুব আলী এবং সেকশন কমান্ডার আবদুল করিমের নেতৃত্বে একদল মুক্তিসেনা ত্রিশাল থানার কানিহারী গ্রামে একদল রাজাকারের উপর আক্রমণ চালিয়ে একটি রিভলবার ও কয়েক রাউণ্ড গুলি উদ্ধার করেন। ঐদিন রাত্রে প্লাটুন কমান্ডার হাফিজুর রহমান একজন মুক্তিসেনা সাথে নিয়ে গেরিলা পদ্ধতিতে কালীরবাজার স্কুলের ছাত্র ফোরকানউদ্দিন আহমেদ, কাঁঠাল গ্রামের মোঃ আবু তাহের, মহসীন, শামছুল হক, জালাল, টুকু ও সুন্দর আলীর সহায়তায় কালীরবাজার হাই স্কুল ল্যাবরেটরী থেকে কিছু হাত বোমা, এসিড, বারুদ ইত্যাদি উদ্ধার করেন। একই দিন প্লাটুন কমান্ডার আইয়ুব আলী সাহেব অন্য কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সাথে নিয়ে কাঁঠাল গ্রামে হানা দিয়ে ২ জন দুষ্কৃতিকারীকে গ্রেফতার করেন।

 

০৪-৮-১৯৭১> পাকবাহিনী ভালুকা থানার ডাকাতিয়া বাজার এবং গ্রামের বাড়িঘর লুটপাট করে ফিরবার পথে অধিনায়ক আফছার সাহেবের নেতৃত্বে ২ দল মুক্তিসেনা পাকসেনাদের পিছন ও বাম দিক থেকে আক্রমণ চালায়। ফলে পাকবাহিনী ৩০ জন সেনা নিহত ও আহত হয়। লুট করা সমস্ত মালপত্র মুক্তিসেনাদের হস্তগত হয়। একটি ব্যারোমিটারও পাওয়া যায়। মেজর আফছার সাহেবের নির্দেশে গফরগাঁও থানার কুখ্যাত ডাকাত ও রাজাকার কমান্ডার গাওয়াকে মুক্তিবাহিনীর কোম্পানী কমান্ডার চাঁন মিয়ার নেতৃত্বে তার নিজ বাড়ির গ্রেফতার ও পরে হত্যা করা হয়।

 

০৯-৮-১৯৭১> অধিনায়ক আফছার সাহেব নিজেই কোম্পানী কমান্ডার মোমতাজউদ্দিন ও অল্প কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বিকাল ৫ ঘটিকায় মল্লিকবাড়ী ঘাঁটি আক্রমণ করেন এবং ১৪ জন পাকসেনা, ৪ জন রাজাকারকে নিহত ও কয়েকজনকে আহত করেন।

 

১০-৮-১৯৭১> সকালে পাকবাহিনীর একটি দল মল্লিকবাড়ী বাজার থেকে ভালুকা যাওয়ার জন্যে খেয়াঘাটে এসে নৌকায় চড়লে অধিনায়ক আফছার সাহেবের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা পাকসেনাদলকে আক্রমণ করেন। ফলে ১৪ জন পাকসেনা এবং ২ জন নৌকার মাঝি নিহত হয়। মল্লিকবাড়ী বাজারে ২৪ জন খানসেনা নিহত ও কয়েকজন আহত হয়।

 

১২-৮-১৯৭১> মল্লিকবাড়ী বাজারের ঘাট আক্রমণ চালিয়ে ১১ জন পাকসেনা ও ২ জন রাজাকার হত্যা করা হয়।

 

১৩-৮-১৯৭১> অধিনায়ক আফছার সাহেবের নেতৃত্বে মল্লিকবাড়ী বাজারে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ২৬ জন রাজাকার ও ২ জন পাক সেনাকে হত্যা করা হয়।

 

১৪-৮-১৯৭১> মেজর আফছার সাহেবের নির্দেশে প্লাটুন কমান্ডার আইয়ুব আলী ও সেকশন কমান্ডার আমজাত হোসেনের দল কর্তৃক ভরাডুবা গ্রামের হজরত আলী নামে একজন রাজাকার ধৃত ও নিহত হয়। অধিনায়ক আফছার সাহেবের নেতৃত্বে মল্লিকবাড়ী ঘাঁটি আক্রমণ করা হয়। ফলে ৭ জন রাজাকার নিহত ও কয়েকজন আহত হয় এবং ৩ টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়। এই দিন সন্ধ্যায় অধিনায়ক আফছার সাহেব হাকিম সাহেবকে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করে ওপার বাংলায় রওয়ানা হন।

 

১৫-৮-১৯৭১> একদল মুক্তিযোদ্ধা কর্তৃক ভায়াবহ ঘাটে পাকবাহিনী একটি দলের সাথে অবিরাম ৪ ঘণ্টা গুলি বিনিময়ের ফলে ১৯ জন রাজাকার নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়। উক্ত রাজাকারদের নিকট থেকে ৪ টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।

 

২৬-০৮-১৯৭১> মেজর আফছার সাহেবের নির্দেশে প্লাটুন কমান্ডার আইয়ুব আলীর নেতৃত্বে একদল মুকিসেনা ভালুকা থানার ভায়াবহ এলাকা দিয়ে অগ্রসর হয়ে মল্লিকবাড়ী ঘাঁটি আক্রমণ করেন। ফলে পাকসেনাদের ৮ জন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়।

 

২৭-৮-১৯৭১> ভালুকা থানার বাটাজুর এলাকায় পাকসেনাদের একজন গুপ্তচর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হাকিম সাহেবের দলভুক্ত প্লাটুন কমান্ডার নারায়ণচন্দ্র পালের হাতে ধরা পড়ে, তাঁকে পরে হত্যা করা হয়।

 

২৮-৮-১৯৭১> ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হাকিম সাহেবের নেতৃত্বে প্লাটুন কমান্ডার ফজলুল হক বেগ, নুরুল ইসলাম ও হাফিজুর রহমান তাদের দলের মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ঢাকা জেলার কালিয়াকৈর থানার শালদাহপাড়া এলাকায় হানা দেন। এই হামলায় পাকবাহিনীর কুখ্যাত দালাল ও রাজাকার সাহেব গ্রেফতার হয় ও তাকে হত্যা করা হয়। অনেক লুটের মাল উদ্ধার করা হয় এবং এই সমস্ত মালামাল তাদের প্রকৃত মালিক ও গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

 

২৯-৮-১৯৭১> প্লাটুন কমান্ডার কাছিমউদ্দিন তার দল নিয়ে মল্লিকবাড়ী ঘাঁটিতে গেরিলা আক্রমণ চালান, ফলে পাকসেনাদের ৪ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়।

 

০১-৯-১৯৭১> প্লাটুন আইয়ুব আলী ও সেকশন কমান্ডার আমজাদ হোসেন মিলিতভাবে মল্লিকবাড়ী ঘাঁটি আক্রমণ করেন, ফলে ১২ জন রাজাকার নিহত ও কয়েকজন আহত হয়।

 

০২-৯-১৯৭১> প্লাটুন কমান্ডার কাছিমউদ্দিন তার দল নিয়ে ভালুকা পাকসেনাদের ঘাঁটিতে গেরিলা আক্রমণ চালান। ফলে ২ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়।

 

০৩-৯-১৯৭১> সেকশন কমান্ডার আমজাদ হোসেন ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ভালুকা থানার ভরাডুবা গ্রামে একদল রাজাকারের উপর আক্রমণ করেন। ফলে ৫ জন রাজাকার নিহত হয়।

 

০৪-৯-১৯৭১> এই তারিখে বিকাল ৩ ঘটিকায় ভালুকা থেকে ভরাডুবা ও মেদুয়ালী এলাকায় ২ শতাধিক রাজাকার ও পাকবাহিনীর একটি দল বাজার ও বাড়ি ঘর লুট করে এবং বাংলাদেশ সরকারের সমর্থক ৭৬ জন লোককে গ্রেফতার করে তাদের মাথায় লুট করা মালের বোঝা চাপিয়ে ভালুকায় ফিরতে থাকে। এক খবর পেয়ে প্লাটুন কমান্ডার মোঃ হাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন, দিলদার আহমেদ, মোঃ আবদুল মোতালেব, মনিরউদ্দিন ও আবদুল মান্নানসহ মোট ১৪ জন মুক্তিসেনা নিয়ে ৪ মাইল রাস্তা দৌড়ে যেয়ে ভাণ্ডার গ্রামের সীমান্তে পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। আক্রমণের ফলে ১২ জন রাজাকার নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। গ্রেফতারকৃত সমস্ত লোক ও লুট করা জিনিসপত্র ফেলে পাকসেনারা ভালুকা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পাকসেনাদের নিকট থেকে ১০ টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।

 

১০-৯-১৯৭১> পাকবাহিনীর একটি দল ভালুকা ঘাঁটির পাকসেনাদের খাদ্য সম্ভার বড় বড় ৫টি নৌকা বোঝাই করে ভালুকা আসার পথে কোম্পানী কমান্ডার চাঁন মিয়া তার দল নিয়ে ঝালপাজা গ্রামে আক্রমণ করেন। যুদ্ধে ৪ জন পাকসেনা নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। নৌকাসহ ৫৭০ মণ আটা ও ২০ মণ চিনি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। উক্ত আটা ও চিনি রাজৈ ইউনিয়নের গরীব দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

 

১৩-৯-১৯৭১> অধিনায়ক মেজর আফছার সাহেবের ব্যাটালিয়নের কোম্পানী কমান্ডার আবুল কাশেম একটি কোম্পানী ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসার পথে রায়ের গ্রামে এলাকায় এক স্কুলে রাত্রি যাপন করেন। গ্রাম্য রাজাকার ও দালালরা খবর দেওয়ার ফলে ত্রিশাল ও গফরগাঁও ঘাঁটি থেকে পাকবাহিনী ভোর রাত্রে তিন দিক থেকে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা যুদ্ধের পর কাশেম সাহেবের দল কর্তৃক ১৬ জন পাকসেনা ও ৫ জন রাজাকার নিহত হয়। এই যুদ্ধে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

 

১৫-৯-৭১> প্লাটুন কমান্ডার আইয়ুব আলী, দিলদার আহমেদ, হাফিজুর রহমান, মোঃ আবুল কাশেম যথাক্রমে কুমারঘাট, মুচারঘাট, বান্দিয়া ও নিমুরী এলাকায় দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা যাবৎ পাকসেনাদের সাথে যুদ্ধ করেন। ফলে ৫ জন রাজাকার নিহত ও কয়েকজন আহত হয়।

 

১৮-৯-১৯৭১> কোম্পানী কমান্ডার মোমতাজউদ্দিন খানের নেতৃত্বে বান্দিয়া এলাকায় চার ঘন্টা যাবৎ পাকবাহিনীর সাথে গুলি বিনিময় হয়। ফলে ১২ জন রাজাকার নিহত হয়।

 

১৯-৯-১৯৭১> ভালুকা থানার রাজৈ গ্রাম এলাকায় পাক বাহিনী লুট করতে আসলে কোম্পানী কমান্ডার চাঁন মিয়া তারাদল নিয়ে আক্রমণ করেন। ফলে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয় ও কয়েকজন আহত হয়। ২ ঘন্টা গুলি বিনিময়ের পর পাকসেনারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। একই দিন ভালুকা থানার পোনাশাইল এলাকায় কোম্পানী কমান্ডার চাঁন মিয়ার একটি প্লাটুনের সহিত একদল রাজাকার ও পাকসেনাদের এক ঘন্টাকাল গুলি বিনিময় হয়। এই যুদ্ধে দুই জন পাক সেনা নিহত হয়।

২১-৯-১৯৭১> সকাল ৯ ঘটিকায় ভালুকা ঘাঁটি থেকে প্রায় চার শতাধিক রাজাকার পাক বাহিনীর একটি দল ৪ ভাগ হয়ে বড়াইদ এলাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। বড়াইদ গ্রামে আফছার ব্যাটালিয়নের কোম্পানী হেডকোয়ার্টার ছিলো। পাক বাহিনীর আসার খবর পেয়ে কোম্পানী কমান্ডার মোমতাজউদ্দিন খান, প্লাটুন কমান্ডার সামছুদ্দিন, মনির উদ্দিন, মোঃ মোতালিব মাস্টার ও হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পাক বাহিনীর ৪টি রাস্তা প্রতিরোধ করে। দীর্ঘ ৪ ঘন্টা গুলি বিনিময়ের পর পাকবাহিনী ফিরে যেতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে ১৪ জন পাক সেনা নিহত হয় ও কয়েকজন আহত হয়। তারা অনেক লুটের মাল ফেলে যায়। উক্ত মাল প্রকৃত মালিকদের ফেরত দেওয়া হয়।

 

২৪-৯-১৯৭১> পাকসেনাদের একটি দল মল্লিকবাড়ী এলাকায় লুট করতে আসলে অধিনায়ক সাহেবের দলের প্লাটুন কমান্ডার নাজিমউদ্দিন ও হাবিলদার আবদুল মোতালেব পাক বাহিনীর উপর অতর্কিত আক্রমণ করেন। এতে ২ জন পাকসেনা ও ৩ জন রাজাকার নিহত হয়। ২৬শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় অধিনায়ক আফছার উদ্দিন আহমেদ ওপার বাংলা থেকে মেজর পদে উন্নিত হয়ে দেশে ফিরে আসেন। ২৭ তারিখ সকাল ৮ ঘটিকায় তিনি নিজে কোম্পানীর কমান্ডার নাজিমউদ্দিন ও তার দলসহ মল্লিকবাড়ী পাক ঘাঁটি আক্রমণ করেন। এতে ৫ জন পাকসেনা ও ৪ জন রাজাকার নিহত হয়।

 

২৯-৯-১৯৭১> রাত্রি ২ ঘটিকায় কোম্পানী কমান্ডার আবুল কাসেম এবং প্লাটুন মনিরউদ্দিন কয়েকজন মুক্তিসেনা নিয়ে ভালুকা ঘাঁটিতে গেরিলা আক্রমণ চালান। ফলে ৪ জন পাকসেনা ৩ জন রাজাকার নিহত হয় এবং কয়েকজন আহত হয়।

 

১লা অক্টোবর ভোর ৪ ঘটিকায় ভালুকা, কাশীগঞ্জ ও ত্রিশাল থেকে পাক বাহিনীর তিনটি দল একযোগে বাইন্দা ও বড়াইদা এলাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। কোম্পানী কমান্ডার কাশেম সাহেবের নেতৃত্বে কমান্ডার কছিম উদ্দিন, মনির উদ্দিন ও হাফিজুর রহমান তাদের পথরোধ করেন। ১৭ ঘন্টাকাল স্থায়ী এই যুদ্ধে মোট ৭১ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয় এবং বহুসংখ্যক আহত হয়। ৩ অক্টোবর মল্লিকবাড়ী ঘাঁটি থেকে পাক বাহিনীর একটি দল ভালুকা থানার তালাব এলাকায় লুট করার সময় অধিনায়ক আফছার সাহেব ও কোম্পানী কমান্ডার মোমতাজ উদ্দিন খান একদল মুক্তিসেনাসহ ঝাঁপিয়ে পড়েন। ফলে ৪ জন পাকসেনা ও ২২ জন রাজাকার নিহত ও ৩ জন আহত হয়।

 

৫-১০-১৯৭১> ভালুকা ঘাঁটি হতে পাকবাহিনীর একটি দল বিরুনিয়া ও মেদিলা গ্রাম লুট করতে আসলে কোম্পানী কমান্ডার মোমতাজ উদ্দিন, প্লাটুন কমান্ডার মজিবুর রহমান ও মোঃ নুরুল ইসলাম পাক বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। ২ ঘন্টা গুলি বিনিময়ের পর ৯ জন রাজাকার নিহত ও ৫ জন আহত হয়।

 

৭ অক্টোবর মেজর আফছার সাহেব স্বয়ং একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে রাত্রি ৮-৪৫ মিনিটে মল্লিকবাড়ী ঘাঁটি আক্রমণ করেন। ২ ঘন্টাকাল গুলি বিনিময়ের পর ১৯ জন পাকসেনা ও ১৪ জন রাজাকার নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। পরদিন পাকবাহিনীর একটি দল পোনাশাইল এলাকার বাগেরপাড়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকলে মুক্তিসেনারা অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এতে ৮ জন রাজাকার নিহত ৩ জন রাজাকার আহত হয়। একই দিন কোম্পানী কমান্ডার চাঁন মিয়া তার দল নিয়ে গফরগাঁও থানার এক রাজাকার ক্যাম্পে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ৪টি রাইফেল এবং ১২ শত রাউণ্ড গুলি উদ্ধার করে। এছাড়া ৯ জন রাজাকার নিহত হয়।

 

৯-১০-১৯৭১> কোম্পানী কমান্ডার হাকিম সাহেব তার কোম্পানীর প্লাটুন কমান্ডার দিলদার আহমেদ, শ্রী নারায়ণচন্দ্র পাল ও তমিজউদ্দিন আহমেদ এবং ৯০ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ ঢাকা জেলার কালিয়াকৈর ঘাঁটি আক্রমণ করেন। পাকসেনারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। রাজাকারগণ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সেখানেই মারা যায়। মোট ৩৪ জন রাজাকার ও ১২ জন পাকসেনা খতম হয়।

 

১০ অক্টোবর মল্লিকবাড়ী ঘাঁটি থেকে ৫০ জন পাকসেনা ও ৩৫০ জনের একটি রাজাকার দল চানপুর গ্রামে লুটতরাজ আরম্ভ করে। এই খবর পেয়ে মেজর আফছার মাত্র ১৫ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। দীর্ঘ ১০ ঘন্টা স্থায়ী এই যুদ্ধে ৫ জন পাকসেনা ও ৭ জন রাজাকার নিহত হয়। পাকবাহিনীর গুলিতে মুক্তিসেনা অনিলচন্দ্র সাংমা মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া একজন পুরুষ, একজন নারী এবং একটি ছেলেকে পাকবাহিনী পলায়নের সময় গুলি করে হত্যা করে। ঐ দিন দিবাগত রাত্রে সেকশন কমান্ডার আবদুল হালিম তার দল নিয়ে ধলা-গফরগাঁও রেল লাইনের চারিপাড়া পুলে পাহারারত রাজাকারদের উপর আক্রমণ চালান। এতে ১৪ জন রাজাকার আহত ও ৪ জন নিহত হয়। রাজাকারগণ ৫ শত রাউণ্ড গুলি ফেলে পালিয়ে গেলে তা মুক্তি সেনাদের হস্তগত হয়।

 

১৩-১০-১৯৭১> ভালুকা থেকে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের একটি দল মেদুয়ারী গ্রামের সরকার বাড়িতে ক্যাম্প করে। একদল মুক্তিসেনা তাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। প্রায় আড়াই ঘন্টা গুলি বিনিময়ের পর পাক বাহিনীর ৮ জন নিহত হয় এবং অন্যরা পালিয়ে যায়।

 

১৫-১০-১৯৭১> আফছার ব্যাটালিয়নের কোম্পানী কমান্ডার মোঃ চাঁন মিয়া তার দলসহ মশাখালী রেল স্টেশনের দক্ষিনে করচঙ্গীর পুলের ধারে পাকবাহিনীর সাথে দীর্ঘ ৫ ঘন্টা গুলি বিনিময়ের পর পুলের বাঙ্কারে পৌঁছতে সক্ষম হন। পর পর নয়টি গ্রেনেড চার্জ করে বাঙ্কারগুলি দখল করা হয়। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক দ্বারা পুলটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। পুল ধ্বংস করার পর মশাখালি স্টেশনে আক্রমণ চালানো হয়। এতে একজন দারোগাসহ ১৫ জন রাজাকার ও পাকসেনা নিহত হয়। ১৩টি রাইফেল সহ ১২ জন রাজাকার চাঁন মিয়ার নিকট আত্মসমর্পণ করে। একই দিন দিবাগত রাত্রে উক্ত কোম্পানী কমান্ডার তার দলসহ অন্য একটি অভিযান চালিয়ে প্রায় ২০০ গজ রেলপথ নষ্ট করে দেন। মাইন বিস্ফোরণে মুক্তিসেনা আঃ মান্নান শহীদ হন।

 

১৬-১০-১৯৭১> বিকাল ৪-৩০ মিনিটে কোম্পানী কমান্ডার মোঃ চাঁন মিয়া তার দলসহ গফরগাঁও থানার শীলা নদীর পুলে পাকসেনাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালান। এতে পাকসেনাদের ৪ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়। একই দিন দিবাগত রাত্রে করচঙ্গী পুলের দক্ষিণে পাচগড়িয়া পুলে পাহারারত রাজাকারদের উপর আক্রমণ করেন। রাজাকার দল পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পুলটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। ৭ জন রাজাকার অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে।

 

২২-১০-১৯৭১> মশাখালি রেল স্টেশনের পশ্চিমে শীলা নদীর পাড়ে পাকসেনাদের উপর মুক্তিসেনারা অতর্কিত আক্রমণ করেন। ৫ জন রাজাকার ও একজন পাকসেনা নিহত হয়। আত্মসমর্পণকারী ৪ জন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে এই যুদ্ধে শাহাদাৎ বরণ করেন। দীর্ঘ তিন ঘন্টা যুদ্ধ করার পর পাক বাহিনী ফিরে যেতে বাধ্য হয়।

 

২৪-১০-১৯৭১> ভালুকা থানার বিরুনিয়া গ্রামে পাকসেনারা লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ আরম্ভ করলে অধিনায়ক আফছার সাহেব চাঁন মিয়া কোম্পানীর মুক্তিসেনাদের নিয়ে পাকবাহিনীকে আক্রমণ করেন। ২ ঘন্টা গুলি বিনিময়ের পর ৫ জন পাকসেনা আহত হয়। ২৬ অক্টোবর- প্লাটুন কমান্ডার আবদুল হালিম কাশীগঞ্জে পাকসেনাদের ঘাঁটি আক্রমণ করেন। পাকসেনারা উপায় না দেখে অয়ারলেস মারফত তাদের অন্যান্য ঘাঁটিতে সাহায্য চায়। ভালুকা, আছিম, ত্রিশাল এবং গফরগাঁও থেকে পাকসেনারা কাশীগঞ্জে আসতে থাকে। কোম্পানী কমান্ডার মনিরউদ্দিন মিলিতভাবে তাদের দলের জোয়ানদের নিয়ে এ স্থানে যুদ্ধ আরম্ভ করে। কাশীগঞ্জের মাহু ভূঞাসহ মোট ৬৫ জন রাজাকার নিহত এবং অস্ত্রশস্ত্র সহ ১৭ গ্রেপ্তার করা হয়। ঘাঁটি সম্পূর্ণরূপে মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে এবং মোট ৫২টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।

 

২৮-১০-১৯৭১> মেজর আফছার সাহেবের নির্দেশে কোম্পানী হাকিম ঢাকা জেলার কালিয়াকৈর থানার কচিঘাটা এলাকায় পাক বাহিনীর উপর আক্রমণ করে। দীর্ঘ ১৫ ঘন্টার যুদ্ধে ৫২ জন পাকসেনা নিহত হয়।

 

৩০-১০-১৯৭১> অধিনায়ক আফছার সাহেব নিজেই একদল মুক্তিসেনাসহ ঢাকা জেলার কালিয়াকৈর থানার ফুলবাড়িয়া এলাকায় পাকসেনাদের উপর হামলা করেন। এতে ৭ জন পাকসেনা নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। মুক্তিসেনারা মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুল সম্পূর্ণ দখল করে দেয়।

 

৩১-১০-১৯৭১> অধিনায়ক আফছার সাহেব কোম্পানী কমান্ডার মোমতাজউদ্দিন খান, সিরাজুল হক, হালিমউদ্দিন এবং তাদের জোয়ানদের নিয়ে গফরগাঁও থানার রসুলপুরে (আমলীতলা) রাজাকারঘাঁটি আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধে মোট ৬৮ জন রাজাকার নিহত হয়। ৬৫টি রাইফেল, একটি স্টেনগান ও ৩ বাক্স গুলি উদ্ধার করা হয়। ঘাঁটিখানা মুক্তিসেনাদের দখলে আসে। এই যুদ্ধে অসীম সাহসী যোদ্ধা মোমতাজউদ্দিন খান শহীদ হন।

 

৯-১১-১৯৭১> মেজর আফছার সাহেব নিজে কোম্পানী কমান্ডার সামছউদ্দিন আহমেদ, ফয়েজউদ্দিন ও মোতালেব হাবিলদার এবং মুক্তিসেনাদের নিয়ে মল্লিকবাড়ি ঘাঁটি আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধে ৩৩ জন পাকসেনা ও ৬ জন রাজাকার নিহত হয়। পাকবাহিনী ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় এবং ঘাঁটিটি মুক্তিসেনাদের আয়ত্তে আসে।

 

১০-১১-১৯৭১> কোম্পানী কমান্ডার চাঁন মিয়া রাজৈ এলাকায় পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ চালিয়ে পাকসেনাদেরকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেন এবং একটি রাইফেল ও ৪৪ রাউণ্ড গুলিসহ একজন রাজাকারকে গ্রেপ্তার করেন। ১১ নভেম্বরে অধিনায়ক আফছার সাহেব কমান্ডার চাঁন মিয়া, সিরাজুল হক ও দুলু একত্রিত হয়ে ভালুকায় পাকঘাঁটি আক্রমণ করেন। দীর্ঘ ৮ ঘন্টার যুদ্ধে ৯ জন পাকসেনা ও ৭ জন রাজাকার নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়। পরদিন ভালুকা থানার চান্দের আটি গ্রামে একদল পাকসেনা লুট করতে গেলে কোম্পানী কমান্ডার চাঁন মিয়া তার দল নিয়ে পাকসেনাদের উপর আক্রমণ করেন। ১১ ঘন্টার এই যুদ্ধে ১১ জন পাকসেনা ও ৯ জন রাজাকার নিহত হয় ও কয়েকজন আহত হয়। মুক্তিবাহিনীর প্লাটুন কমান্ডার সমশের আলীসহ ৫ জন মুক্তিসেনা শহীদ হন।

 

১৩-১১-১৯৭১> কোম্পানী কমান্ডার ফজলুল ওয়াহাব ও চাঁন মিয়ার পরিচালনায় ভালুকা থানা ও ভাওয়ালিয়া বাজু এলাকায় পাকসেনাদের উপর আক্রমণ চালানো হয়। ৩ জন পাকসেনা ও কয়েকজন রাজাকার আহত হয়।

 

১৫ নভেম্বর পাকবাহিনী ও রাজাকার বাহিনী প্রায় ৪ শতাধিক সৈন্য ধানশুর গ্রামে ঢুকে অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ করতে থাকে। মেজর আফছার সাহেবের পরিচালনায় তিনদিক থেকে পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ করা হয়। এই যুদ্ধে পাকবাহিনী ও রাজাকার সমন্বয়ে ৩৪ জন নিহত হয়। মুক্তিসেনা জহির উদ্দিন শহীদ হন।

 

০২-১২-১৯৭১> কোম্পানী কমান্ডার মোছলেহ উদ্দিন আহমেদ, প্লাটুন কমান্ডার এমদাদুল হক ও নাজিম উদ্দিন খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ধানশুর ও কাটালী গ্রামের বড় রাস্তায় পাক বাহিনীর উপর আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধে ১৪ জন পাকসেনা ও ১৩ জন রাজাকার নিহত হয়। একই দিন মশাখালি ও কাওরাইদ থেকে পাকবাহিনী রাজৈ গ্রামে লুট করতে আসলে কোম্পানী কমান্ডার চাঁন মিয়া প্লাটুন কমান্ডার মজিবর রহমান ও নজরুল ইসলাম মুক্তিবাহিনীর দল নিয়ে পাকসেনাদের উপর গুলি চালান। এই যুদ্ধে একজন পাকসেনা নিহত হয়। ৩ ডিসেম্বর প্লাটুন কমান্ডার আবুল হাশিম ও কোম্পানী কমান্ডার ফজলুল ওয়াহাবের নেতৃত্বে ভালুকা থানার ভাওয়ালিয়া বাজু এলাকায় পাকবাহিনীর উপর আক্রমণ করা হয়। এতে ৩ জন পাকসেনা ও ২৭ জন রাজাকার নিহত হয়। একজন রাজাকার তার নিজ দলের কমান্ডার ও আরো একজন রাজাকারকে হত্যা করে ৩টি রাইফেলসহ মুক্তিবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে।

 

০৪-১২-১৯৭১> ভালুকা থানার চাপড়াবাড়ী এলাকায় রাজাকারদের উপর আক্রমণ চালিয়ে ৩ জন রাজাকার হত্যা করা হয়। একই দিন কোম্পানী কমান্ডার মোছলেহ উদ্দিন আহমেদ ও প্লাটুন কমান্ডার গিয়াসউদ্দিন আহমেদ একদল মুক্তিসেনা নিয়ে কাঠালী ও বাশিল এলাকায় পাক বাহিনীর উপর আক্রমণ করেন। ৭ জন পাকসেনা ও ১০ জন রাজাকার নিহত ও কয়েকজন আহত হয় সেদিনের যুদ্ধে।

 

০৬-১২-১৯৭১> বিকাল ৪ ঘটিকায় ঢাকা জেলার কালিয়াকৈর হতে ৪টি ট্রাক ভর্তি হয়ে পাকসেনারা যাওয়ার সময় কোম্পানী কমান্ডার হাকিম সাহেব, প্লাটুন কমান্ডার দিলদার আহমেদ ও নারায়ণচন্দ্র পালের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত আক্রমণ করেন। এই হামলায় ২৭ জন পাকসেনা নিহত ও ৪ জন গুরুতররূপে আহত হয়। তিনটি ট্রাক সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

 

০৭-১২-১৯৭১> মেজর আফছার সাহেব ও কোম্পানী কমান্ডার ফজলুল ওয়াহাব তিনটি কোম্পানীসহ পাকসৈন্যদের ভালুকা ঘাঁটি আক্রমণ করেন। ২ জন পাকসেনা ও ৩০ জন রাজাকার নিহত হয় এই যুদ্ধে। ৩০ ঘন্টাকাল ধরে যুদ্ধ চলার পর পাকবাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ফলে ভালুকা ঘাঁটি সম্পূর্ণরূপে মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। ৮ ডিসেম্বর পলায়নরত পাকফৌজের পিছু ধাওয়া করে মেজর আফছার ও কোম্পানী কমান্ডার ফজলুল ওয়াহাব গফরগাঁও থানার ভারইল গ্রামের নিকটবর্তী স্থানে পাক সেনাদের ঘেরাও এবং আক্রমন করেন। এখানে তিনজন পাকসেনা ও পাঁচ জন রাজাকার নিহত হয়। পরের দিন মেজর আফছার মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গফরগাঁও থানা হেডকোয়ার্টার দখল করেন এবং অনেক অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেন।

 

১০-১২-১৯৭১> গফরগাঁও থানার নতুন অফিস ইনচার্জ হাফিজুর রহমান, কোম্পানী কমান্ডার ফজলুল ওয়াহাব, কোম্পানী কমান্ডার নাজিমউদ্দিন খান ও প্লাটুন কমান্ডার আবদুল বারী মাষ্টার সাহেবের নেতৃত্বে ত্রিশালে পাকবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করা হয়। পাকসেনারা রাজাকারদের সাথে ছলনা করে পালিয়ে যায়। রাজাকাররা অন্য উপায় না দেখে বাধ্য হয়ে ১০৬টি রাইফেলসহ আত্মসমর্পণ করে। ত্রিশাল ঘাঁটি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়।

 

১৪-১২-১৯৭১> ময়মনসিংহ শহর থেকে পলায়নরত প্রায় ১০০ জন পাকসেনার একটি দল ভালুকা থানার পাড়াগাঁও এলাকার এক গভীর জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। মেজর আফছার সাহেবের তৃতীয় ছেলে সেকশন কমান্ডার নাজিমউদ্দিন কিছুসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা মিলে উক্ত পাক সেনাদেরকে আক্রমণ করে। দুই ঘন্টা তুমুল যুদ্ধের পর নাজিমউদ্দিন আহত হয়।

 

১৫ ডিসেম্বর মেজর আফছার উদ্দিন তার দলের কোম্পানী কমান্ডার কুদ্দুছ খান, গিয়াসউদ্দিন ও কোম্পানী কমান্ডার নাজিমউদ্দিনের সঙ্গে মিলিত হয়ে আক্রমণ করে উক্ত পলায়নরত পাকবাহিনীকে। মেজর সাহেব পাকবাহিনীর উপর তুমুল আক্রমণ চালিয়ে ৪০ জনকে হত্যা করেন এবং ১৮ জনকে অস্ত্রসহ জীবন্ত ধরে ফেলেন। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে ১৭ ডিসেম্বর তিনি ঢাকা পৌঁছেন। কুর্মিটোলা ঘাঁটির নিকট পাকবাহিনীর ২ জন সৈন্য মারা যায়। বাকী মৃত সৈন্যদের নিয়ে মেজর আফছার ক্যান্টমেন্টে পৌঁছতে সক্ষম হন।

 

আফছার ব্যাটালিয়নের মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকাঃ

 

অধিনায়ক- মেজর আফছারউদ্দিন আহমেদ

সহকারী অধিনায়ক- মোমতাজউদ্দিন খান (শহীদ), নাজিমউদ্দিন (শহীদ), আবদুল হাকিম, আবুল কাশেম এবং হাফিজুর রহমান।

এ্যাডজুট্যান্ট- এএমএম মোছলেহ উদ্দিন আহমেদ বিএ

সিকিউরিটি অফিসার- মোঃ আখতার হোসাইন মণ্ডল

সহ-সিকিউরিটি অফিসার- মোঃ আঃ হামিদ (গফরগাঁও)

কোয়াটার মাস্টার- ডাঃ হাফিজউদ্দিন আহমেদ, একেএম আছাদুজ্জামান, মোঃ মোছলেহ উদ্দিন (ডাকাতিয়া), নুরুল আমিন, মোঃ ফজলুল হক বেগ, এসএস ওমর আলী, মোঃ আবদুল গফুর মাস্টার, মোছলেহ উদ্দিন (রসুলপুর), মোঃ আবদুল মোতালিব এবং সুবেদার মেজর সুলতান আহমেদ।

অফিস ইনচার্জ- মোঃ হাফিজুর রহমান জেসিও

এ্যাডজুট্যান্ট- মোঃ আঃ মোতালেব হাবিলদার

একাউন্ট ক্লার্ক- মোঃ আবুল কাশেম

সহকারী ক্লার্ক- মোঃ নরুল আমিন

ডিসপাচ ক্লার্ক- মোঃ আব্দুল খালেক

সহকারী ক্লার্ক- মোঃ শাহজাহান চৌধুরী

ষ্টেট ক্লার্ক- মোঃ জামালউদ্দিন

সহকারী ক্লার্ক- মোঃ আলী আকবর

রেকর্ড ক্লার্ক- এফএম আবুল কাশেম

সহকারী ক্লার্ক- নুরুল হুদা চৌধুরী (দুলু)

বিএইচএম- মোঃ আবুল কাশেম (বখুরা), গফরগাঁও

অডিটর- মোঃ আঃ সবুর, বি, কম

 

উপদেষ্টা পরিষদঃ

১। মেজর আফছার উদ্দিন- অধিনায়ক

২। ডাঃ ওয়াইজউদ্দিন আহমেদ- মেডিক্যাল অফিসার

৩। মোঃ হাফিজুর রহমান- অফিস ইনচার্জ

৪। মোঃ আবদুল হাকিম- কোম্পানী কমান্ডার

৫। হাফিজউদ্দিন আহমেদ- সম্পাদক, জাগ্রত বাংলা

৬। আক্তার হোসাইন মণ্ডল- সিকিউরিটি অফিসার

৭। মোঃ ফজলুল হক বেগ- কোম্পানী কমান্ডার

৮। মোঃ আবদুল জলিল- কোয়াটার মাস্টার

৯। মোঃ আনছারউদ্দিন মাস্টার- কোম্পানী কমান্ডার এবং

১০। মোঃ ফজলুল ওয়াহাব

 

বিচার বিভাগঃ

১। মেজর আফছারউদ্দিন- অধিনায়ক

২। মোঃ সিরাজুল হক- কোম্পানী কমান্ডার

৩। আইয়ুব আলী- কোম্পানী কমান্ডার

৪। আখতার হোসাইন মণ্ডল- সিকিউরিটি অফিসার

৫। মোঃ হাফিজুর রহমান- অফিস ইনচার্জ

৬। মোঃ চাঁন মিয়া- কোম্পানী কমান্ডার

৭। আঃ হাকিম- কোম্পানী কমান্ডার

৮। আবুল কাশেম- সহকারী অধিনায়ক

৯। সামছউদ্দিন- কোম্পানী কমান্ডার

১০। এ, এন, এম মোছলেহউদ্দিন আহমেদ- এডজুট্যান্ট

 

শাসন বিভাগঃ

১। মেজর আফছার উদ্দিন আহমেদ

২। মোঃ আবদুল হাকিম

৩। আনছারউদ্দিন মাস্টার

৪। হাফিজুর রহমান

৫। আবুল কাশেম

৬। আব্দুল জলিল

৭। ফজলুল হক বেগ

৮। আখতার হোসাইন মণ্ডল

৯। চাঁন মিয়া

১০। ফজলুল ওয়াহাব

 

কোম্পানী কমান্ডার ও সহকারী কমান্ডারবৃন্দ

 

১ম ব্যাটালিয়ন

 

কোম্পানী কমান্ডার                                         সহকারী কমান্ডার

 

‘এ’> মোঃ চাঁন মিয়া                                        মোঃ কাজিমউদ্দিন

‘বি’> মোঃ আবদুল কুদ্দুছ খান                      মোঃ মজিবুর রহমান

‘সি’> মোঃ আইয়ুব আলী                                  মোঃ আঃ বারী মাস্টার

‘ডি’> মোঃ আঃ হাকিম                              মোঃ ছিদ্দিক হোসাইন

‘ই’> মোঃ আনছারউদ্দিন মাস্টার                          মোঃ সিরাজুল হক

 

২য় ব্যাটালিয়ন

 

‘এ’> শামছউদ্দিন আহমেদ                                মোঃ মুজিবর রহমান

‘বি’> মোঃ কাছিমউদ্দিন                             মোঃ আঃ হালিম

‘সি’> মোঃ নাজিমউদ্দিন                             মোঃ হাসমত আলী

‘ডি’> মোঃ ফয়েজউদ্দিন                             মোঃ জবান আলী

‘ই’> মোঃ আঃ মজিদ                                মোঃ আবুল কাশেম (ফুলপুর)

 

৩য় ব্যাটালিয়ন

 

‘এ’> বশিরউদ্দিন আহমেদ                                 তমিজউদ্দিন আহমেদ

‘বি’> মোঃ ফজলুল ওয়াহাব                                মোঃ আইয়ুব আলী

‘সি’> মোঃ ওয়াহেদ আলী                                  মোঃ হাতেম আলী খান

‘ডি’> মোঃ নুরুল ইসলাম                                  মোঃ আঃ ছাত্তার

‘ই’> মোঃ ফজলুল হক বেগ                        মোঃ সিরাজুল হক (কাঠালী)

 

৪র্থ ব্যাটালিয়ন

 

‘এ’> মোঃ শামসুর রহমাম                                 মোঃ আঃ রশিদ

‘বি’> মোঃ সিরাজুল হক (গফরগাঁও)                            মোঃ খোরশেদ আলম

‘সি’> এমদাদুল হক (দুলু)                         মোঃ সিরাজুল হক (কাচিনা)

‘ডি’> মোঃ আঃ রাজ্জাক               মোঃ আনছারউদ্দিন মুন্সী (গফরগাঁও)

‘ই’> মোঃ খলিরুর রহমান                                 মোঃ নজরুল ইসলাম

 

 

৫ম ব্যাটালিয়ন

 

‘এ’> মোঃ আলাউদ্দিন আহমেদ                     মোঃ আঃ কাশেম (বোকাইনগর)

‘বি’> গিয়াসউদ্দিন আহমদ                          মোঃ সিরাজুল হক (রায়মনি)

‘সি’> মোঃ আঃ করিম পাঠান                       আঃ মান্নান (আমিরাবাড়ী)

‘ডি’> মোঃ এসএম শামসুল হক (খোকন)        মোঃ নুরুল আমীন খান

‘ই’> মোঃ আঃ ছামাদ                                মোঃ আঃ মোতালেব খান

Scroll to Top