ভৈরবে হত্যাকাণ্ড

৫৪। ভৈরবে হত্যাকাণ্ড (৪৫১)

সূত্র – সংবাদ, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২

ভৈরবে একদিনেই ৪শ’ লোককে গুলি করা হয়েছে

।। নিজস্ব সংবাদদাতা প্রেরিত ।।

১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে ১৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ৯ মাসে বর্বর পাকবাহিনীর দস্যুরা বাংলাদেশের অন্যতম নদী বন্দর ভৈরবে ত্রাস এবং বিভীষিকার রাজত্ব চালিয়েছিল। হানাদাররা হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, ভৈরব এবং আশুগঞ্জ এলাকার শত শত মাকে করেছে বিধবা, সন্তানহারা অনাথ, আবার অনেক পিতাকে করেছে স্ত্রীহারা, সন্তানহারা।

       গত ১৫ই এপ্রিল পাকবাহিনীর ছত্রী সেনারা ভৈরবের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় চারশত নিরপরাধ লোককে গুলি করে হত্যা করেছে।

       এছাড়া ভৈরব ব্রীজের কাছে রেললাইনের উপর দাঁড় করিয়ে পঁচিশ জনকে গুলি করে মেরেছে। মেজর ইফতেখার ধরে নিয়ে গিয়েছে ভৈরবের ব্যবসায়ী, শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি জনাব মতিউর রহমানকে। ধরে নিয়ে গিয়েছে ভৈরব পৌরসভার সহসভাপতি মসলন্দ আলীকে এবং ভৈরব ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব হাফিজউদ্দিন মিয়াকে।

       বাঁচাতে পারেনি প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক শ্রীমোহনবাঁশি, কলেজের ছাত্র লোকমান, স্কুলের ছাত্র সেলিম, নীরব সমাজকর্মী সাত্তার, পথের ভিখারী আওয়াল এবং মুজিব বাহিনীর তরুণ যোদ্ধা ফরহাদ আলী, আখতার মিয়াকে দস্যু জল্লাদ বাহিনীর হাত থেকে। জল্লাদ ইয়াহিয়ার খান সেনারা ভৈরব ব্রীজের নিকট চলন্ত রেলগাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের ধরে নিয়ে যায় নিকটস্থ রেল কলোনীতে। সেখানে যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে বেয়নেটের আঘাতে তাদের বুক চিরে হত্যা করে মেঘনার প্রবল স্রোতে ভাসিয়ে দেয়।

       গত মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে বর্বর মেজর ইফতেখার বাজিতপুর এবং নিকলী থাকার প্রায় দেড়শত লোককে ধরে এনে তাদের মধ্য থেকে প্রায় ৩৫ জন স্ত্রীলোকের উপর পাশবিক অত্যাচার চালায় এবং বাকী লোকদের আশুগঞ্জের মেঘনার চরে গুলি করে হত্যা করে। গত ১৫ই এপ্রিল থেকে ২২শে এপ্রিল পর্যন্ত একটানা সাতদিন ধরে বর্বর পাক বাহিনীর দস্যুরা ভৈরবের রাণীর বাজার, চক বাজার, মরিচ পট্টি, কলেজ রোড, মসজিদ রোড, মিউনিসিপ্যাল অফিস রোড, রসুন বাজার, মুড়ি পট্টি, বাতাসা পট্টি, সিনেমা রোড বলতে গেলে বন্দরের সর্বত্র আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে কোটি কোটি টাকার মালসহ শত শত গোলা-গুদাম এবং দালানকোঠা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ভৈরব বাজার এখন সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।

Scroll to Top