মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ও নেতৃবৃন্দের প্রতি আমেরিকান্থ ইস্ট পাকিস্তান লীগের সভাপতির আবেদন

<৪,১৩০,২৩৯-১৪০>

অনুবাদকঃ নিগার সুলতানা

শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৩০। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ও নেতৃবৃন্দের প্রতি আমেরিকান্থ ইস্ট পাকিস্তান লীগের সভাপতির আবেদন ইস্ট পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকার প্রচারপত্র এপ্রিল, ১৯৭১

 

                        আমেরিকাস্থ পূর্ব পাকিস্তান লীগ

             ২৬৬৭ ব্রডওয়ে, নিউইয়র্ক এ ওয়াই ১০০২৫’’

 

জনাব,

        আমেরিকা এই অবস্থায় হাত গুটিয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারে না যখন, পাকিস্তান থেকে গণতান্ত্রিক অগ্রগতিকে সমূলে উৎপাটনের জন্য ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের ৭৫ মিলিয়ন লোক নিষ্ঠুর ভাবে অবদমিত হচ্ছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে বামপন্থি চীনের ঘনিষ্ঠতা বিবেচনা করে, আমাদের সাথে ভারতের প্রায় ভংগুর সম্পর্ক জোড়া লাগানোর গুরুত্ব বিবেচনা করে শুধু মাত্র দক্ষিণ এশিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্নে এবং বামপন্থীদের বিপক্ষে অবামপন্থীদের শক্তিকে একটা স্থিতিশীল অবস্থায় দাড় করানোর জন্য আমরা পূর্ব পাকিস্তানকে তাদের নিজস্ব লক্ষে পৌঁছানোর সংগ্রামকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি।  

 

     ২৫ শে মার্চ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র উপর সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য জাহাজগুলো করাচীতে সরিয়ে নিচ্ছে এই অজুহাতে যে, চিটাগাং বন্দর ঘঘনবসতি পূর্ণ, যখন গোলাবারুদ বহনকারী জাহাজগুলো অবিরত সেখানে মাল খালাস করছে। তারা বাকি পৃথিবীর সাথে পূর্ব পাকিস্তানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক রেডক্রস বিমানগুলোও পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণ সহায়তা আনার অনুমতি পায়নি। বিদেশী সংবাদদাতাদেরও  পূর্ব পাকিস্তান থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিদেশীরা, আমেরিকানদের সহ যেই ইন্টারভিউ দিয়েছে পূর্ব পাকিস্তান থেকে চলে যাওয়ার পর, নিশ্চিত করেছে নিরীহ নাগরিকদের উপর গণহারে হত্যা, ধর্ষণ ও লুন্ঠন চলছে। 

 

  এশিয়ায় আমেরিকার অবস্থান ঘনীভূত করার জন্য এবং পৃথিবী ও আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য, অবিলম্বে রক্তক্ষয় বন্ধে আমরা আমাদের নিজেদের প্রভাব ব্যবহার করব। আমরা তা সরাসরি যুক্ত হওয়ার ঝুঁকি ছাড়াই করতে পারি।  

 

পশ্চিম পাকিস্তানের ঘাটতি অর্থনীতি প্রচন্ডভাবে নির্ভরশীল ক) একটি উপনিবেশ ও বাজার হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানকে ক্রমাগত শোষণ খ) বৈদেশিক সাহায্য, বিশেষত আমেরিকা থেকে প্রাপ্ত সাহায্যের উপর। পূর্ব পাকিস্তানের সচেতন জনসাধারণ পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থ সুবিধার জন্য তাদের সম্পদের শোষণ অস্বীকার করছে। পশ্চিম পাকিস্তানের আর্চিল পর্বত, তারপর বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভর করতে হয়। এটা ছাড়া,  এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক অপারেশন টিকিয়ে রাখতে পারবে না। 

 

     নৈতিক বিবেচনা থেকে বেশ দূরে,  এটা আমেরিকানদের স্বার্থ পশ্চিম পাকিস্তানের উপর চাপ প্রয়োগ করছে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে  পশ্চিম পাকিস্তানের আর্মি দ্বারা  দমনমূলক ব্যবস্থা বন্ধে। যদি এই কাজ না করা হয়, গেরিলা যুদ্ধ চলতে থাকবে। ফলে, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান উভয়ের রাজনৈতিক শক্তির মৌলবাদী এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীল অবস্থার ক্ষতি হবে। 

 

      পদক্ষেপ এবং দ্রুততম পদক্ষেপ প্রয়োজন,  যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের এই কৌশলগত অংশে অবস্থান ও মর্যাদা বজায় রাখতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নলিখিত পদক্ষেপ বরাবর চলা উচিৎ : 

 

(১) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পাইপলাইনসহ সব ধরনের মেডিক্যাল, সামরিক ও অর্থনৈতিক সরবরাহ বন্ধ করা উচিৎ যতক্ষণ না পূর্ব পাকিস্তান থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করছে।

 

 (২) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান সরকারকে চাপ দিবে দখলদারিত্বের এলাকায় দুস্থ পাকিস্তানিদের সাহায্যার্থে আন্তর্জাতিক ত্রাণ তৎপরতার অনুমতি দিতে। যদি প্রয়োজন হয়, ভারত সরকারের সহযোগীতায়, স্বাধীন এলাকাগুলোতে ত্রাণ সহায়তা বাংলাদেশের নবগঠিত সরকারের মাধ্যমে প্রদান করা যেতে পারে।

 

(৩) পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের গণতান্ত্রিকভাবে প্রকাশের ইচ্ছা অনুসারে,  যত দ্রুত সম্ভব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নব গঠিত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেবে।

 

(৪) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একজন জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকের পূর্ব পাকিস্তানে মিশনে যাওয়ার পরিকল্পনা সমর্থন করবে এবং যথাযথ ব্যবস্থার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের কাছে পরিস্থিতির উপর প্রতিবেদন পেশ করবে।

                                                                        আপনার অনুগত,

পক্ষে

কাজী এস। আহমেদ

সভাপতি, আমেরিকাস্থ পূর্ব পাকিস্তান

Scroll to Top