মার্চ’৭১- এর অনুষ্ঠিত ইয়াহিয়া-মুজিব বৈঠক সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন

<2.228.835-844>
বাংলাদেশের জন্য মধ্যস্ততা: একজন অংশগ্রহণকারী মতামত

রেহনিয়ান সোবহান (Rehnian Sobhan)

পাকিস্তানের বর্তমান সঙ্কটের মধ্যে নেতৃস্থানীয় ঘটনা বিশ্লেষণে একটি কেন্দ্রিয় প্রশ্ন হলঃ  পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে একটি নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সদিচ্ছার অস্তিত্ব কি সত্যিই ছিল? শেখ মুজিবুর রহমানের একজন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, আলোচনার ক্রম বিশ্লেষণ করে জোর দিয়ে বলেন যে আওয়ামী লীগের সামনে একটি বড় সমস্যা ছিল প্রেসিডেন্ট এবং তাদের প্রতিনিধিরা অথবা জনাব ভুট্টোর পিপিপি কেউই আলোচনায় নিজেদের অবস্থান উল্লেখ করতে রাজি হয় নি। তবুও ২৩ মার্চ এর মধ্যে  শেখ মুজিব এর উপদেষ্টাদের কছে মনে হয় যে আইনগত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান করা হয়েছে; তারা একটি সন্তোষজনক সেশন এর জন্য অপেক্ষা করছিলেন, এবং তারপর প্রেসিডেন্ট এবং তার মধ্যস্থতাকারীরা ঢাকা ত্যাগ করে। জেনারেলরা এবং জনাব ভুট্টো পশ্চিম পাকিস্তান জোট গড়ে তুলতে সময় নেয়ার হয়েছে হাজির হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ , আওয়ামী লীগের প্রস্তাব আলোচনা “একটি বিশদ হেঁয়ালি” ছিল।

বিবাদমান ব্যাখ্যা

পাকিস্তান এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের মধ্যে ঘটনাচক্র আজ পাকিস্তানের শাসক সামরিক নেতাদের উদ্দেশ্য এবং সিদ্ধান্ত দ্বারা নির্ধারিত হতে যাচ্ছে। তাদের সম্ভাব্য কার্যক্রম বিচার করতে হলে তাকাতে হবে পাকিস্তানে ঘটা ঘটনাগুলোর দিকে  যেগুলো ২৫শে মার্চ এবং তার পরবর্তী ঘটনাগুলোর জন্য দায়ী।

পাকিস্তানের বাইরে এটি ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর আওয়ামী লীগের উপর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার চড়াও হওয়ার সিদ্ধান্তের কারণ ছিল ২৫শে মার্চের পূর্বে ঢাকায় সমঝোতায় ভাঙ্গন ঘটা। ২৬শে মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সরাসরি সম্প্রচার এতে জ্বালানি দিয়েছিল। কিন্তু ৬ মে তারিখে পাকিস্তান সরকারের পরবর্তী সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মুজিব দ্বারা বিচ্ছিন্নতাবাদ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন যেটি ২৬শে মার্চের জন্য একটি পরিকল্পনা ছিল ও বাংলার সৈন্য বিদ্রোহ এবং ভারতীয় সমর্থন দ্বারা সমর্থিত। এই পরবর্তী ব্যাখ্যা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ২৬শে মার্চের সম্প্রচারে অক্ষত ছিল এবং একটি বিলম্বিত অনুচিন্তা হয়েছে বলে মনে হয়; কোন নির্লিপ্ত পর্যবেক্ষক এই গল্পকে বিশ্বাসযোগ্যতা দিতে এগিয়ে আসে নি।

কি ঘটেছিল?  ব্যাক্তিগত পর্যবেক্ষন থেকে টুকরা টুকরা ঘটনাগুলোকে জোড়া দেয়া যায়, কিন্তু মোটিভ ব্যাখ্যা করা খুব কঠিন। তাই ঘটনাবলীকে সরলরৈখিক রাখতে জোর দিতে হবে, যদিও বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনাকে উপেক্ষা করা কঠিন হবে। 

 

 

প্রথম ধাপের আলোচনা

ঢাকায় মধ্য জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এবং শেখ মুজিবের মধ্যে সংবিধান নিয়ে প্রথম ধাপে আলোচনা হয়। এটা আশা করা অয়েছিল যে রাষ্ট্রপতি এই পর্যায়ে “পাকিস্তানের ঐক্য এবং অখন্ডতা” নিয়ে তার নিজস্ব ব্যাখ্যা প্রদান করবেন এবং   আওয়ামী লীগের ছয় দফা কর্মসূচির বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে সন্দেহ থাকলে তার ইংগিত দিবেন। এটা প্রত্যাশিত ছিল “সামরিক স্বার্থে” ঘোষণা করা হবে যে প্রেসিডেন্ট পরিষ্কারভাবে  ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ইচ্ছুক ছিলেন। প্রেসিডেন্টের লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার যেটি ব্রিটেনের সংসদীয় বিতর্কে উদাহরণ হিসেবে এসেছে, সেটি যে উল্লেখযোগ্যভাবে একটি অস্পষ্ট ডকুমেন্ট তা সকলেই সকলভাবে বুঝতে পারে। প্রেসিডেন্ট পক্ষপাতদুষ্ট যা একটি সংবিধান গ্রহণ করবে না এটা ছিল পাকিস্তানের ঐক্য ও অখণ্ডতা  যা নির্বাচনের পুরো ইস্যু যার জন্য লড়াই হচ্ছে, পাকিস্তানের অস্তিত্বের জন্য নয় এবং যার ব্যাখ্যা উপর জাতিসত্তার  বিস্তৃত গ্রহণযোগ্যতা ছিল। LFO নিছক প্রাসঙ্গিক ছিল কারণ এটা রাষ্ট্রপতি তার কাছে উপস্থাপিত যে কোনো সংবিধানে  ভেটো দেয়ার অধিকার  নির্দেশ করে। তার LFO তে ভেটোর বিষয় অনুল্লেখিত তাই এটা তার LFO মধ্যে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে অকথিত রেখে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হয় ।

এই সকল প্রত্যাশার বিপরীতে, মুজিবের সাথে শুরুর দিকের আলোচনায়, ইয়াহিয়ার কোন ইতিবাচক মতামত ছিল না। তার সহযোগী হিসেবে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদা ছয় দফা নিয়ে আওয়ামী লীগ টীমের বিশ্লেষণ সতর্কতার সাথে শোনেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ যথাযথভাবে হোমওয়ার্ক করেছে কিনা এবং বুঝতে পারেন যে উপদেষ্টারা  টীমকে আইনগত ও অর্থনৈতিক বিষয় ভালভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে।  তিনি জানতেন যে, আওয়ামী লীগ উপদেষ্টারা ছয় দফার ভিত্তিতে সংবিধানের ড্রাফট তৈরির কাজ এক বছর আগেই শুরু করেছে এবং দলের জন্য দর কষাকষির ও তাদের প্রভাবের বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করেছে।

এই সেশনের শেষে ছয় দফা পাকিস্তানের একতার জন্য ক্ষতিকর নয় এই মর্মে প্রেসিডেন্টকে সন্তুষ্ট মনে হয়েছিল কিন্তু পরামর্শ দিয়েছিলেন যে ক্ষমতা হস্তান্তর দ্রুত হওয়ার জন্য জনাব ভুট্টোর সাথে ঐক্যমতে পৌছাতে হবে। বিদায়কালে তিনি মুজিবকে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অবিচিত করেন।

 

প্রেসিডেন্টের জনাব ভুট্টোর সাথে আলোচনা

আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে যে জনাব ভুট্টোর রেফারেন্স দেওয়ার মাধ্যমে ভুট্টোকে দিয়ে প্রেসিডেন্ট তার না জানানো মতামত জানাবেন। ঢাকা হতে ইয়াহিয়া লারকানাতে ভুট্টোর বাড়িতে যায়, যেখানে তারা লম্বা সময় আলোচনা করে; ভুট্টোর ঢাকা সফর দেরি হওয়ায় মনে করা হচ্ছিল প্রকৃত “পশ্চিম পাকিস্তানী স্বার্থ” নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা হচ্ছে।

আমি কয়েক সপ্তাহ আগে  পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়েছিলাম বিভিন্ন পিপিপি নেতাদের সাথে আলোচনার জন্য যারা পিপিপি সংস্করণের সংবিধান তৈরির সাথে যুক্ত ছিল। তারা সকলেই আইনজীবী। সেই টীমে অর্থনীতিদিদের সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে কম ছিল। আলোচনা সফল হয়েছে কারণ তারা ছয় দফার উপর তাদের সন্দেহগুলো উপস্থাপন করেছে। কিন্তু তারা নিশ্চিত করেছে যে পিপিপি পৃথক কোন প্রস্তাবনার উপর হোমওয়ার্ক করেনি এবং প্রকৃতপক্ষে ঐ টীমের বিভিন্ন সদস্যের ছয় দফার বিষয়ে আপত্তির ধরন ও কারণ ভিন্ন। এটা ধারনা করা হয়েছিল যে যখন পিপিপি ঢাকায় আলোচনার জন্য আসবে তারা নিজস্ব অবস্থানে থেকে দর কষাকষির জন্য একটা পৃথক ড্রাফট নিয়ে আসবে।

 

 

অবস্থান অনুসন্ধানে সনাক্ত

ভুট্টো জানুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি সরাসরি মুজিবের সাথে সেশন করেন, এবং তারপর তার “সাংবিধানিক দল ” তাদের আওয়ামী লীগের মুখোমুখি হয়। আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে পিপিপি এখনো তাদের খসড়া প্রস্তুত করতে পারেনি, এবং ছয় দফা নীরিক্ষণ হয়েছে যেমনটা ইয়াহিয়া তাদের আগে সম্পন্ন করেছে। এটি দর কষাকষিকে অসম্ভব করে তোলে কারণ দর কষাকষি ছিল বিকল্প অবস্থানের উপর ভিত্তি করে এবং তাদের মধ্যকার দুরত্বের সেতুবন্ধনের লক্ষ্যে।

আলোচনার ব্যাখ্যামূলক বর্ননা এবং ঢাকায় ৩০ জানুয়ারিতে প্রেসকে দেয়া মন্তব্যে আরো বাস্তবসম্মত দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রয়োজন ঝাপসা হয়ে যায়। তিনি বলেন যে কোন অচলাবস্থা ছিল না এবং আরো বলেন, “২৩ বছর ধরে চলা সমস্যা আপনি ৩ দিনে সমাধান করতে পারেন না”। তিনি যোগ করেন যে, তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে পরামর্শদান চালিয়ে যাবেন এবং তারপর ঐক্য খোজার চেষ্টা এবং আওয়ামী লীগের সাথে আলোচনা আবার শুরু করবেন এবং সেজন্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার পূর্বে শুরু হবে না। তিনি বলেন, বিভিন্ন যে ইস্যুগুলোতে এর মধ্যে সমঝোতা হয়েছে সেগুলোর জন্য অধিবেশনে যোগ দেয়ার প্রয়োজন নেই কারণ আলোচনা অধিবেশন চলাকালীন সময়েও চলতে পারে।

ভুট্টোর বয়কট

৩১ জানুয়ারি ঢাকা এয়ারপোর্টে তিনি বলে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। সমঝোতার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। তিনি পুনর্ব্যাক্ত করেন যে অধিবেশনের সময়ও নেতৃবৃন্দ আলোচনা চালিয়ে যাবে এবং উল্লেখ করেন যে সংসদীয় কমটির ব্যাবস্থা একটি প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি। আমি মনে করি এই সকল মন্তব্য এম বি নকভীর মত (৪) ভ্রান্তিকর, কারণ এই আলোচনাগুলোর ভাগ্য আগে থেকেই নির্ধারন করা ছিল পূর্ববর্তী তিক্ততা বিনিময়ের কারণে। আওয়ামী লীগ ভুট্টোর জনসম্মুখের বিবৃতিগুলো গুরুত্বের সাথে নেয় নি। যখন ১৫ ফেব্রুয়ারি, ইয়াহিয়ার সাথে মিটিং এর ৩ দিন পূর্বে ভুট্টো পরিষদ বর্জনের ঘোষণা দেয়, আওয়ামী লীগ এর সাথে পূর্ববর্তী আলোচনার কোন সম্পর্ক খুজে পায় নি, বরং এটকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার ইয়াহিয়া অথবা তার জেনারেলদের একটা অংশের সাথে করা ষড়যন্ত্র মনে করে।

জেনারেলদের আচরণ

এটা জানা যায় যে কমপক্ষে দুইজন জেনারেল, মেজর জেনারেল উমর, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং মেজর জেনারেক আকবর, ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের প্রধানের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ফিরে আসা নিয়ে সন্দেহ ছিল, বিশেষত যদি বাঙ্গালীদের উদয় ঘটে। ইয়াহিয়া অথবা তার সহযোগী পীরজাদা পরিকল্পিত ভাবে অন্য কিছু করছিল নাকি “বাজপাখিদের” সাথে জোট করার জন্য চাপের মধ্যে ছিল তা বিতর্কিত। উমর এবং আকবর জনাব রিজভী, কেন্দ্রিয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান এবং নওয়াব কিজালবাশ, ইয়াহিয়ার কেবিনেটের একজন পাঞ্জাবী মন্ত্রীর সাথে লক্ষ্যনীয়ভাবে দলের অনুগত ভূমিকা পালন করে, কায়য়ুম খানের মুসলিম লীগের সমর্থনে। 

 

 

তাদের মুজিব এবং ভুট্টোকে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্য নির্বাচনের ফলাফলের জন্য ভেস্তে যায়, যা আকবরের সার্ভিসের একেবারে শেষপ্রান্তে ভুলভাবে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল – তারা সমর্থন ভুট্টোর দিকে দেয়া শুরু করে কারণ পশ্চিম পাকিস্তান মুজিবের বিরুদ্ধে এক জোট হচ্ছিল। তাদের দলানুগত্যের পরিষ্কার প্রমাণ আসে ঘাউস খান বিজেনজো, বেলুচিস্তান হতে আসা জাতীয় পরিষদের সদস্য, ওয়ালি খান , উত্তর পশ্চিম ফ্রন্টিয়ারের MNA এবং ন্যাপের প্রেসিডেন্ট, মিয়া মুমতাজ দৌলতানা, পাঞ্জাবের MNA এবং মুসলিম লীগের কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট এবং সরদার শওকত হায়াত, পাঞ্জাবের MNA এবং পাঞ্জাব মুসলিম লীগের কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট হতে; তারা প্রত্যেকেই  উমরের সাক্ষাতের কথা জানান যেখানে তিনি তাদের ভুট্টোর জাতীয় পরিষদ বয়কটের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে বলেন। তাদের একজন জানান উমর দাবি করেছে সে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার হয়ে কথা বলছে, যিনি পশ্চিম পাকিস্তানকে উজবের বিরুদ্ধে একত্রিত করতে চেয়েছিলেন, বস্তুত বয়কটের উদ্দেশ্য ছিল এরকম।

বয়কটের উদ্দেশ্য সফল হয়েছিল কিনা পরিষ্কার নয়। কারো মতে এটা ছিল ভুট্টোর জন্য পশ্চিম পাকিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ করতে সময়ক্ষেপণ। পাঠানদের সাথে আলোচনার সময় ওয়ালি খান দাবি করেন তিনি ভুট্টোকে বলেছেন তার দল মুজিবকে জাতীয় পরিষদে সমর্থন দিবে এবং একই রকম বার্তা ভুট্টো পশ্চিম অংশে তার সাথে যোগাযোগ থাকা অন্য নেতাদের কাছ থেকেও পাচ্ছিলেন। এন্টি-পিপিপি পার্টিগুলো কেন্দ্রে জোট নিয়ে দর কষাকষি শুরু করলে মুজিবের সাংবিধানিক ড্রাফটের জন্য প্রয়োজনীয় দুই তৃতীয়াংশ মেজরিটির নিশ্চয়তা ততই আরো বাড়তে থাকে। কেন্দ্রের ক্ষমতা হতে বাদ পড়ার সম্ভাবনায় ভুট্টোর নিজের দলে বিভাজন বাড়তে থাকে, আবার সিন্দের একদল সুবিধাবাদী জমিদার যারা তার জনপ্রিয়তাকে গ্রহণ করে বলতে থাকে ক্ষমতা থেকে বাদ দেয়া হলে তারা র‍্যাংক মানবে না। যখন ভুট্টো পরিষদকে “কসাইখানা” বলে অবিহিত করে সম্ভবত তিনি পশ্চিমের যথেষ্ট সমর্থন দ্বারা দুই তৃতীয়াংশ মেজরিটির মাধ্যমে সংবিধান দ্বারা ইয়াহিয়াকে প্রতিহত করার যে ভয় জেনারেলদের ছিল সেটি ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন যে তার জন্য LFO এর অধীনে ভেটো প্রয়োগ করা কঠিন হয়ে যাবে। এই জন্য পশ্চিম অংশে ভুট্টোর জন্য সমর্থন যোগাড় করতে সময় দরকার ছিল, যিনি মুজিবের বিপরীতে পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থের পক্ষের মুখপাত্র হসেবে আনির্ভুত হন।

মুজিব যদি তাঁর ছয় দফা সংশোধিত না করে তবে এরূপ প্রতিকূলতা গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তনকে ব্যাহত করবে। এটা কঠিন শুধু এই কারণেই নয় যে মুজিব মাথ একটা কারণ নিয়ে ভয়াবহ ভাবে যুদ্ধ করেছে, ইয়াহিয়া অথবা ভুট্টো গ্রহনযোগ্য ও সংগতিপূর্ণ কিছু নিয়ে আসতে ব্যার্থ হয়েছে এটিও একটি কারণ। সকল কার্ড টেবিলে নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনার জন্য মুজিবের কাছে কিছুটা ছাড় চাওয়া উচিত ছিল। তার পরিবর্তে ভুট্টোকে একটি পাবলিক সংকট ঘটানোর প্ররোচনা দেয়া হয়েছিল যেটি কোন বাঙালি নেতা বুঝতে পারেনি যে তার অবস্থান পূর্ব পাকিস্তানে নেমে গেছে। এটি নির্দেশ করে যে গণতন্ত্র প্রত্যাবর্তনের ধারনা বাজপাখিদের পরিপন্থী যে ভুট্টো ১৫ ফেব্রুয়ারি নিছক যে প্রথ পদক্ষেপ গ্রহন করেন সেটি ২৫শে মার্চ গণহত্যার মাধ্যমে শেষ হয়।

 

শেখ মুজিবের প্রতিক্রিয়া

পশ্চিমে ভুট্টোর ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়া অবস্থান রক্ষা করতে ইয়াহিয়া ১ মার্চ সিদ্ধান্ত নেয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করলে নির্বাচন সফল্ভাবে সম্পন্ন হবার পর থেকে বাংলার সুপ্ত ভয় সামনে চলে আসে যে জেনারেলরা কখনোই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ইচ্ছুক না। 

 

অধিবেশন মুলতবি করা মানে বাংলার বাংলার ক্ষমতার অংশকে মুলতবি করা যেখানে তারা মনে করে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ক্ষমতার ৫৫ ভাগ শেয়ার তাদের দেয়া উচিত। জনগণ  মনে করে ২৩ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পশ্চিম দ্বারা ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা হয়েছে, এটাই শেষ সুযোগ। মুজিবের অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি জনমানুষের আকাশচুম্বী সমর্থনের পেছনে রয়েছে ২৩ বছরের সম্মিলিত আবেগ, যা এর অভূতপূর্ব মাত্রা ব্যাখ্যা করে। যখন পুলিশ এবং সরকারি চাকুরীজীবীরা মুজিবের সমর্থনে শপথ নেয় তখন বোঝা যায় যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে এবং এটি ঘটেছে ইয়াহিয়ার সিদ্ধান্তের এক সপ্তাহের মধ্যে।

পরবর্তী তিনি সপ্তাহ মুজিবের বাসভবন বাংলাদেশের তথা বাঙালি সচিবদের সচিবালয়ে পরিণত হল, আজ পর্যন্ত যারা ঢাকা অথবা ইসলামাবাদে কাজ করেছে তারাও স্বেচ্ছায় মুজিবের প্রতি তাদের সমর্থন জানায়। এরকম শূন্যতার মুখে আওয়ামী লীগ বাধ্য হয় সামাজিক নৈরাজ্য এবং অর্থনৈতিক ধ্বস ঠেকাতে সম্পূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনের পরিবর্তে নির্দিষ্ট কিছু প্রসাশনিক কার্যক্রম চালু করতে। এই পর্যায়ে পুলিশ অফিসাররা আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজেদের নিয়োজিত করে।  জেলা প্রসাশকরা প্রদেশকে সঠিকভাবে চালানোর জন্য আওয়ামী লীগ সংগ্রাম পরিষদের (প্রতিরোধ কমিটি) সাথে পারস্পারিক সহযোগিতা শুরু করে। ব্যাবসায়িরা লাইন ধরে মুজিবকে সমর্থন জানায় এবং তাদের বহুবিধ সমস্যার কথা জানায়। এটা শুধুমাত্র শহরের চেহারা ছিল না, অবস্থা আরো পরিষ্কার হয়ে উঠল যখন গ্রামবাসীরা ক্যান্টন্মেন্টের রাস্তা কেটে, ট্রাক আটকিয়ে পাঞ্জাবি সেনাদের ফেরি পারাপারে বাধা সৃষ্টি করে। যে কোন পর্যবেক্ষকের কাছেই এটা পরিষ্কার যে এটা যে ইয়াহিয়ার পুনর্দখলের জন্য একটি পূর্ণ মাপের যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত রিট বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আবার কখনো চালাতে পারবে না। এই ২৫ দিনের সেনাবাহিনী দ্বারা ব্যাপক এবং বাছবিচারহীন হত্যাকান্ডের অভিজ্ঞতা থেকে এটা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়ে ওঠে যে প্রতিটি বাঙালি একটি সম্ভাব্য শত্রু ছিল এবং সে সব ঐতিহ্যবাহী আনুগত্য ইসলামাবাদের শাসন যন্ত্রের সন্দেহভাজন ছিল।

আওয়ামী লীগের উপর চাপ

জনগণের প্রতিক্রিয়ার চাপ মুজিবকে ইয়াহিয়ার মতই বিস্মিত করে। মুজিব  বর্তমান পরিস্থিতিতে বুঝতে পেরেছিলেন যে ১ মার্চের আগের পর্যায়ে ফিরে যেয়ে পরিষদের আহ্বান জানানোর সম্ভাবনা কম। তাঁর দাবি ছিল সামরিক আইনের সমাপ্ত ও জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর যা বাস্তবতার নিরিখে অনেক কম সম্ভাবনাময়।  ইয়াহিয়ার ক্ষমতা বজায় রাখার দুইদিনের অসফল চেষ্টার পর লেফট্যানেন্ট জেনারেল ইয়াকুব, সেনা প্রধান এবং ১ মার্চ হতে প্রদেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ সেনাদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এডমিরাল আহসান, সাবেক গভর্নর, পরিষদের অধিবেশনে স্থগিত বিরুদ্ধে তার অজুহাত প্রত্যাখ্যান করে অব্যাহতিপ্রাপ্ত হতে বলেছিলেন।

ইয়াকুব নিজে কোন ঘুঘু ছিল না, তার কিছু ঐতিহাহিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তিনি জেনারেলদের মধ্যে স্কলার ছিলেন, তিনি তিন মাসের মধ্যে ছিল বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা আলোচনা করার জন্য বাংলা ভাষায়  যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেন। তিনি দেখলেন যে দমনে কাজ হয় না। তার রিপোর্ট অবহেলিত ছিল এবং তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান দ্বারা প্রতিস্থাপিত হন, যার অত্যন্ত তৎপর হিসেবে খ্যাতি ছিল শিয়ালকোটের 1965 সালের যুদ্ধে তার কমান্ড থেকে এবং Rann of Kutch অপারেশনের সময়। একজন র‍্যাংকার, যার উত্থান ঘটেছিল আইয়ুবের সময়ে বেলুচ আদিবাসীদের সাথে শান্তি স্থাপনের সময় এবং তার এই নিয়োগদানকে কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে দেখা হয়। জানা য্য যে, এর প্রতিবাদে ইয়াকুব কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন এবং আর্মি তার সবথেকে বিশিষ্ট জেনারেলকে সামরিক আইনে বিচার করবে কিনা তাই নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে।

 

ইয়াকুবের সরানোকে সামাল দেওয়ার জন্য সেনাঘাটিগুলোতে অবিরত সেনা সরবরাহ করা হয়। ইয়াহিয়া ৫ মার্চের ভাষণে ভুট্টোকে সংকটের জন্য সামান্যতম দায়ী না করে সব দোষ মুজিবের উপর চাপিয়ে আরো উস্কানি দেন। তার ২৫ শে মার্চ পরিষদ পুনরায় শুরু করার প্রস্তাবকে বিলম্বিত ও অপর্যাপ্ত এবং পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়। এজন্য অনেকে মনে করেছিল মুজিব তার ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন কারণ ইয়াহিয়ার তার পূর্বের সিদ্ধান্তগুলোর ফলাফলের ব্যাপারে কোন আগ্রহই ছিল না। ৭ই মার্চে এরকম কিছু হলে একশনে যাওয়ার জন্য সেনাবাহিনী পুরাপুরি প্রস্তুত ছিল।

মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন এরকম কিছু ঘটলে বাঙ্গালিদের উপর ভয়াবহ হত্যাকান্ড হবে, এবং এর দায়ভার নিতে আগ্রহী ছিলেন না। তাঁর পাকিস্তানের আলোচনার দরজা খোলা রেখে অসহযোগ আন্দোলনে থাকার সিদ্ধান্ত ছিল জনতার চাপ ও আর্মির চাপের মধ্যে একটা সমতা। এখানে কোন সন্দেহ নাই যে ১ থেকে ৭ মার্চের মধ্যে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার জন্য উনার উপরে অনেক চাপ ছিল, বিশেষ করে চাপ বৃদ্ধি পায় ৬ মার্চ ইয়াহিয়ার ভাষণের পর। কিন্তু ৭ই মার্চ বিকাল পর্যন্ত তিনি এই চাপ ভালভাবে সামলান এবং পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে তাঁর দলকে আলোচনা করাতে রাজি করান। পরবর্তী পরামর্শ হল যে তিনি তাঁর দলে চরম্পন্থী অংশের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন যার এই ফ্যাক্টগুলার সাথে কোন সম্পর্ক নাই এবং এই পয়েন্টকে উপেক্ষা করা যায় কারণ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো ৭ই মার্চের আগেই মিটিয়ে ফেলা হয়, যার পর দলের মধ্যে বাস্তব বিষয়গুলোতে মুজিবের অবস্থান হয়ে ওঠে অবিসংবাদিত। যখন ছাত্র নেতারা একসাথে হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে ঢাকা ত্যাগকারী পশ্চিম পাকিস্তানীদের কাস্টমসে তল্লাশি করা হবে মুজিব চার ঘন্টার মধ্যে এটি তুলে নেয়ার ব্যাবস্থা করেন। এটি ছিল তাঁর কর্তৃত্বের অবিসংবাদিত প্রকৃতি যা তাঁকে সমর্থ করেছিল স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে এই সময়ে প্রদেশের আইন শৃঙ্খলা ধরে রাখতে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এটি কোন সাধারণ অর্জন নয়। যেকোন বিপ্লব দেখার জন্য  ঢাকায় অবস্থানকারী বিদেশী সাংবাদিকরা এটা নিশ্চিত করতে পারবে।

আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্টের আগমন

UDI এর উস্কানিকে অস্বীকার কিংবা আইন শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়া, ইয়াহিয়াকে মনে হয়েছিল এগুলোকে আলোচনার অপশন হিহেবে এনেছে। জেনারেল পীরজাদা এবং উমার এর সাথে তিনি ১৫ মার্চ ঢাকা পৌছান। এটি জানা গিয়েছিল যে জান্তার আরো কিছু সদস্য গোপনে এসেছে এবং ক্যান্টনমেন্টে লোকচক্ষুর আড়ালে অবস্থা করছে।

ইয়াহিয়া পৌছানোর এক দিনের মধ্যেই মুজিবের সাথে আলোচনা শুরু করে। আলোচনার টেবিলে উজিবের চারটি দাবি ছিল, এগুলো হঃ

১। সামরিক আইন উঠিয়ে নেয়া।

২। জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর।

৩। সৈন্যদের ক্যান্টনমেন্টে সরিয়ে নেয়া এবং সৈন্য সংখ্যা না বাড়ানো।

৪। ২ ও ৩ মার্চে আর্মির গুলিবর্ষন নিয়ে তদন্ত করা।

 

 

 

ইয়াহিয়া ৪ নম্বর দাবীটি মেনে নিলেন। বাকি তিনটি দাবী আসলে বাংলাদেশের ডি ফ্যাক্টো অবস্থার বৈধ বা আইনগত স্বীকৃতি বিষয়ে ছিল। সেনাবাহিনী ব্যারাকে ছিল, ক্ষমতা ছিল নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে এবং সামরিক শাসন বা মার্শাল ল জারী ছিল না। ইয়াহিয়া মূলত প্রাথমিক ভাবে সব দাবীগুলোই নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছিলেন। ইয়াহিয়ার এরকম ছাড় দেয়ার প্রবণতা দেখেই জনাব ভুট্টো পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে পৃথক শাসন ক্ষমতা প্রদানের দাবী তুলেছিলেন এবং এর মাধ্যমে তিনি মুজিবের পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলার অধিকার উপেক্ষা করে দ্বি-জাতি ধারণাতেই স্পষ্টত জোর দেন। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে তিনি সে অঞ্চলে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দাবী করেন। এ প্রস্তাবকে পাঠান ও বালুচরা দারুণভাবে প্রত্যাখ্যান করে। তারা যুক্তি তুলে ধরেছিল যে, পশ্চিম পাকিস্তানকে এক ইউনিট হিসেবে সীমাবদ্ধ করে দিলে ভুট্টো শুধু পাঞ্জাব আর সিন্ধের পক্ষেই কথা বলবেন।

 

 

এরকম পরস্পরবিরোধী দাবীর মুখে মুজিব কেন্দ্রে জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিরোধিতার সম্মুখীন হন। নীতিগতভাবে যে জোট তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল, তিনি তাতে সম্মত ছিলেন না। কারণ সে জোটে তাঁর দলের আসন সংখ্যা ১৬৭ আর পিপিপি’র মাত্র ৮৭। এ অচলাবস্থার নিরসন ঘটে এ পরিকল্পনার মাধ্যমে যে, প্রদেশগুলোতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে এবং অন্তর্বর্তী কালের জন্য ইয়াহিয়া কেন্দ্রে থাকবেন।

 

আইনগত প্রয়োগবিধিসমূহ

 

সামরিক শাসন তুলে নেয়ার ব্যাপারে আইনী দিকগুলো দেখার জন্য বিচারপতি কর্ণেলিয়াসকে বলা হয়েছিল। তিনি প্রথমে পরামর্শ দেন যে, চুক্তির বৈধতা দেয়ার জন্য সামরিক শাসন বলবৎ থাকতে হবে, নতুবা এক সাংবিধানিক শূণ্যতার সৃষ্টি হবে। এটাকে মুজিব নিছক আইনী বিধি হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন যে, ইয়াহিয়া ও তিনি যেখানে সামরিক শাসন তুলে নেয়ার জন্য এক প্রাথমিক সিদ্ধান্তে এসেছেন, সেখানে কর্ণেলিয়াসের দায়িত্ব আইনী বাধা দাঁড় করানো নয়, বরং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য একে আইনগত ভিত্তি দেয়া। এখান থেকে মুক্তির পথ দেখান পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী জনাব এ,কে, ব্রোহী। তিনি স্বউদ্যোগে ঢাকা আসেন এবং নিজ তাগিদে উভয় দলের সাথে আলোচনা করে স্বপ্রণোদিত হয়ে এক সমাধান দেন।  তিনি ভারতীয় ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাক্ট (Indian Independence Act)–এর নজির ব্যবহার করা করার পরামর্শ দেন, যার অধীনে এক সাধারণ ঘোষণার (Act of Proclamation) দ্বারা রাণী দুই সার্বভৌম রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এই ঘোষণা রাষ্ট্র দুটি নিজস্ব সংবিধান প্রণয়ন না করা পর্যন্ত সকল শাসনতান্ত্রিক বিধিকে আইনগত বৈধতা দিয়েছিল। ব্রোহী যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন যে একই উপায়ে ইয়াহিয়া একটা ঘোষণা দ্বারা এই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন এবং এটাই বিধানসভা একটা সংবিধান প্রণয়ন না করা পর্যন্ত আইনী ভিত্তি দিতে পারবে।

 

 

এই ব্যাখ্যাটি ইয়াহিয়া ও কর্ণেলিয়াস উভয়েই গ্রহণ করেন এবং এটাকে প্রাথমিক পর্যায়ে সংলাপ থেকে বাদ দেয়া হয়। এরপরই দেখা গেল যে, মুসলিম লীগের দৌলতানা এবং পিপলস’ পার্টির মাহমুদ আলী কাসুরী পুণরায় আইনগত শূণ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন যে, ঘোষণাকে বৈধতা দিতে এবং সামরিক শাসন থেকে ফিরে এসে সার্বভৌমত্বকে মেনে নিতে সংসদ ডাকা উচিত। যখন দৌলতানা মুজিবের কাছে এটা পেশ করেন, এটা প্রথমে বাতিল করা হয়েছিল। কারণ, প্রথমত এটা মীমাংসা হয়ে গিয়েছিল এবং দ্বিতীয়ত ঘোষণাকে সংসদ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়াটা শুধু সামরিক শাসনকেই দীর্ঘায়িত করবে। একইসাথে আবার যে সময়ে কিনা অস্থিরতার মাত্রা প্রতিদিনই বাড়ছে, তখন সংসদ সদস্যরা আরো কাল ক্ষেপন করবেন কিংবা ঘোষণা নিয়ে আরো বিতর্ক হবে – এগুলোতে সে সময়ে জাতির ধৈর্যচ্যুতির সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠছিল।

 

 

 

 

এটা আশ্চর্যের ব্যাপার যে, যেখানে ইয়াহিয়ার নিজের দলই আইনী ব্যাপারটাকে ফয়সালা করে ফেলেছিল এবং এরপরে অন্যান্য আলাদা ইস্যুগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল, সেখানে ইয়াহিয়া এই মীমাংসিত বিষয়টাকে মুজিবের বিশ্বাসঘাতক অভিপ্রায়ের চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করেন। অথচ বিষয়টি ছিল নিশ্চিতভাবেই শুধু আইনজ্ঞদের নিছক এক আনুষ্ঠানিকতা মাত্র এবং কেবল আইনগত প্রয়োগের পার্থক্যের কারণে জাতি বিভক্ত হয়ে যাবার চিন্তাও ছিল নিতান্তই বাতুলতা।

 

আওয়ামী লীগের দৃষ্টিকোণ

 

মুজিবের শর্তগুলো ছিল মূলত শুধু সামরিক আইন তুলে নেয়া এবং সংসদের দ্বারা নতুন সংবিধান প্রণয়নের মধ্যকার অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য প্রযোজ্য। যদিও এটা নিশ্চিত ছিল না যে ঐ অন্তর্বর্তীকালীন সময়টুকু আসলে কতখানি, কিন্তু এটা নিশ্চিতভাবেই প্রশ্নাতীত ছিল যে, এর মাধ্যমে দীর্ঘ সময়ের জন্য জাতি সংসদের দ্বারাই পরিচালিত হবে – যে সংসদ সংবিধান দ্বারা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে সংহত করবে। এ পর্যায়ে উভয় দলই এ ব্যাপারে একমত হয় যে, এ দলিলের মূলভিত্তি হিসেবে ‘ছয় দফা’ ব্যবহৃত হতে পারে। 

 

ইয়াহিয়া তখন যুক্তি দিয়েছিলেন যে, যখন কেন্দ্রের সাথে বাংলার সম্পর্কের ব্যাখ্যা দিয়ে ‘ছয় দফা’ পেশ করা হয়েছিল, তার প্রয়োগ হলে পশ্চিমে যথেষ্ট জটিলতা সৃষ্টি করত। এর সুবিধা সবসময় আওয়ামী লীগ ভোগ করত যাদের ‘ছয় দফা’ ছিল – দেশের অদ্ভুত ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে, এক নীতির আওতায় দুই ভিন্ন অর্থনীতির প্রস্তাব। পশ্চিম পাকিস্তানে পৃথক নীতির ব্যাপারে ইয়াহিয়ার প্রস্তাব মুজিব তাৎক্ষণিকভাবেই মেনে নিয়েছিলেন, কারণ সেখানে তাঁর দলের কোন আসন না থাকার ফলে তা নিয়ে আপত্তি তোলার কোন ক্ষমতা তাঁর ছিল না।

 

ইয়াহিয়া যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, পশ্চিমের বিভিন্ন প্রদেশগুলোতে আন্তঃপ্রাদেশিক সম্পর্ক উন্নয়ন করে এক-ইউনিট অঞ্চল (post-One Unit region) হিসেবে একসাথে মিলে কাজ করার জন্য তৈরি হতে পশ্চিম পাকিস্তানের আরো সময় দরকার। তাঁর যুক্তিতে এ উদ্দেশ্যে আগে কখনো কোন দল এখানে কাজ করেনি। তিনি পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিম দুই শাখার জন্য সংসদের পৃথক অধিবেশনের প্রস্তাব করেন যাতে পূর্ব শাখার কোন বিরোধিতা ছাড়াই পশ্চিমে এ কাজটি সমাধা হয়ে যায়। পুরো প্রস্তাবটিই ছিল আসলে ভুট্টোকে সুযোগ দেয়ার জন্য যিনি সর্বদাই এ আশঙ্কায় থাকতেন যে, মুজিব ছোটছোট দলগুলোর সাথে জোট বেঁধে তাঁকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলবেন। ভুট্টো চাইছিলেন যে, পশ্চিমে তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করবেন এবং ইয়াহিয়া এটাই মুজিবের কাছ থেকে নিশ্চিত করে দিবেন।

 

 

কিন্তু প্রস্তাবে রাজী হওয়ার ফলে, পশ্চিমে মুজিবের যে শক্তিশালী সমর্থন ছিল তা শিথিল হয়ে পড়ে,, যা পরবর্তীকালে ভূট্টোর বয়কট সিদ্ধান্তকে দৃঢ় করে এবং ফলস্বরূপ যখন ইয়াহিয়া তাঁর সামরিক কার্যক্রম শুরু করেন, মুজিব পশ্চিমে নিজেকে বন্ধুহীন অবস্থায় দেখতে পান। পৃথক দুই অধিবেশনের পরিকল্পনার মাধ্যমে মুজিব বিশৃঙ্খলাকে যৌক্তিক করতে চেয়েছিলেন বলে যদি কেউ ধারণা করেন, তাহলে এ ব্যাপারে মনে রাখা ভাল যে – সংসদে আওয়ামী লীগের শুধুমাত্র পরিষ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠতাই ছিল না, বরং সংসদে নেয়া যে কোন সিদ্ধান্তে সে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ভোট পাওয়ার ক্ষমতা রাখত।

 

রাজনীতি থেকে অর্থনীতি

 

ক্ষমতা হস্তান্তরের রাজনৈতিক ও আইনগত ভিত্তির প্রক্রিয়াটা একবার তৈরি হয়ে গেলে তার অব্যবহিত পরই প্রশ্ন উঠত কেন্দ্র ও প্রদেশগুলোতে অন্তর্বর্তী সময়ে ক্ষমতার বন্টন নিয়ে। উভয় দল এ বিষয়ে সম্মত হয়েছিল যে, পরিচালনার নীতিমালা সংবিধানের সর্বশেষ রূপ থেকে খুব বেশি ভিন্ন হবে না, যা কিনা ছয় দফা ভিত্তিতে প্রণীত হবে বলেই প্রত্যাশিত ছিল। যেহেতু অর্থনীতিই ছিল এখানে মুখ্য বিষয়, রাষ্ট্রপতির প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এম,এম, আহমেদকে নিয়ে আসা হয়েছিল।

 

 

 

 

 

 

আওয়ামী লীগ পুনরায় ‘ডি ফ্যাক্টো’ (নিয়মনীতিতে পড়ুক বা না পড়ুক, করতে হবে এমন অবস্থা)পরিস্থিতিটা মূল্যায়নের দাবী তোলে। সে সময়ে রপ্তানি আয় এবং রাজস্ব আদায় বাংলাদেশ একাউন্টে পরিশোধিত হচ্ছিল। এম,এম,আহমেদ এসব ক্ষমতার আনুষ্ঠানিকতায় কোন অসুবিধা দেখলেন না। বরং তিনি প্রদেশগুলোকে নিজস্ব বাণিজ্য নীতি প্রণয়নের অধিকার এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের অর্থনীতির জন্য প্রদেশগুলোতে নিজস্ব রিজার্ভ ব্যাংক স্থাপনের অধিকার দিতে সুপারিশ করেন। মার্চের ২৩ তারিখে তাঁদের শেষ বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের কাছে দেয়া সুপারিশে সংশোধনী হিসেবে তিনি প্রস্তাব করেনঃ

 

 

 

(১) যে, যেহেতু আলোচনায় এবং নতুন রিজার্ভ ব্যাংক স্থাপনে সময় লেগে যাবে, ঢাকাস্থ স্টেট ব্যাংক সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষে এই ভূমিকা রাখতে পারে ; আঞ্চলিক মুদ্রানীতিতে তাতে সাংঘর্ষিক কিছু হলে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান তাতে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা রাখবে।

 

(২) যে, কেন্দ্রকে রাজস্ব এবং বৈদেশিক মুদ্রা প্রদানে বিদ্যমান ব্যবস্থা বহাল থাকবে।

 

(৩) যে, বিদেশি সাহায্যের জন্য যৌথ প্রতিনিধিবর্গ দাতাদের কাছে যাবে ; এ দলের নেতৃত্ব চুক্তি মোতাবেক বাঙ্গালিদের নেতৃত্বেও হতে পারে এবং/অথবা আগে থেকে পূর্বনির্ধারিত ফর্মূলা অনুযায়ী ভাগ হয়ে যেতেও পারে ; একবার দাতাদের সাহায্য মঞ্জুর হয়ে গেলে তা প্রদেশগুলো নিজেদের ভেতর চুক্তি দ্বারা বণ্টন করে নিতে পারবে।

 

এ সুপারিশগুলো তাঁর প্রস্তাবের আবহটাকে ব্যাখ্যা দেয়। তাঁর সংশোধনীতে ব্যবহৃত শব্দগুলোতে কোথাও কোথাও একটু শিথিলতা দেখা যাচ্ছিল, তাই আওয়ামী লীগের উপদেষ্টারা সেগুলোকে জোরদার করেন এবং ব্যাখ্যাগুলোকে পরিষ্কার করে দেন। তাঁর অন্যান্য সংশোধনীগুলো গৃহীত হয়। ২৫ মার্চ থেকে সামনের দিনগুলোর যে কোন সময়ে আসতে পারা ক্ষমতা হস্তান্তরের যৌথ ঘোষণার বাধা দানের মত কোন কিছুই এরপর আর বাকি ছিল না।

 

এটি লক্ষ্য করার মত যে, অন্তর্বর্তী সময়ে পশ্চিমের সকল আন্তঃপ্রদেশীয় বিষয়গুলো তখন কেন্দ্রের কাছে চলে গিয়েছিল, যেমনটি একদা করা হয়েছিল এক-ইউনিট লুপ্ত করার মাধ্যমে। এটি এবং বাকি প্রস্তাবগুলোও শুধু মধ্যবর্তী সময়ের জন্যই করা হয়েছিল। একবার পশ্চিমারা (তাদের প্রদেশগুলো নিয়ে) ভিন্ন ভিন্ন বৈঠকে নিজেদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করবে, তারপর পূর্ব ও পশ্চিম দুই শাখা একত্রে যৌথ অধিবেশনে বসবে সংবিধান প্রণয়নের জন্য।

 

আলাপ আলোচনা স্থগিত

 

এটা স্পষ্ট যে এই আলোচনায় কোন অচলাবস্থা ছিল না, এবং প্রকৃতপক্ষে চুক্তির সকল খুঁটিনাটি বিষয়েও ঐকমত্য হয়ে গিয়েছিল। এম,এম,আহমেদ দাবী করেন যে এটাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য এবং সে অনুসারেই তিনি মার্চের ২৫ তারিখ করাচির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন। যেহেতু জনাব আহমেদই ছিলেন মুখ্য মধ্যস্থতাকারী, নিজের প্রস্তাবের বাস্তবায়নটা দেখে যাওয়ার জন্য থেকে যাওয়াই তাঁর উচিত ছিল। তাঁর ঢাকা ত্যাগকে আওয়ামী লীগ সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের প্রমাণ হিসেবে ধরে নেয়।

 

প্রকৃতপক্ষে ২৩ মার্চের সংসদ অধিবেশনটাই ছিল শেষ সেশন। কিন্তু শেষ অধিবেশনের জন্য পীরজাদাকে অনেকবার বলা হলেও তিনি নিরুত্তর থাকেন। ইয়াহিয়া তখনো আলোচনার টেবিলে নিজের দৃঢ় ইচ্ছা, প্রস্তাব কিংবা তাঁর আর কোন শর্ত আছে কিনা কিছুই বলেন নি। যেমনটি সবসময় হয়ে এসেছিল যে, আওয়ামী লীগই অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধানের খসড়া নিয়ে তর্ক করে এসেছে, তেমন ভাবেই তারা হাতের সব কার্ড টেবিলে খেলে ফেলেছিল। পক্ষান্তরে ইয়াহিয়া আর তাঁর জান্তার মনের আসল উদ্দেশ্য কী, সে ব্যাপারে সারা দুনিয়া তখনো অন্ধকারে।

 

 

 

 

ভুট্টো তাঁর দল নিয়ে ঢাকায় আসলেন এবং রাষ্ট্রপতির দলের সাথে আলাদা বৈঠক করছিলেন। এটা শুধু আওয়ামী লীগকে ধারণা দেয়ার জন্য যে, এখনো ইয়াহিয়ার হাতে কিছু বিষয় আলোচনার বাকি আছে আর তাতে ভুট্টোর ভূমিকাও, অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে, ছিল সিদ্ধান্তমূলক। যেহেতু রাষ্ট্রপতি সব সক্রিয় ভাবে চালাচ্ছিলেন, ভুট্টোর বিবৃতি এমন কোন শঙ্কা জাগায়নি যে, তিনি মীমাংসার বিপক্ষে অবস্থান নিবেন।

 

ঢাকায় রাষ্ট্রপতি ভবনে দুই দল যখন বৈঠকে ব্যস্ত, ইয়াহিয়া নিজে তখন ক্যান্টনমেন্টে তাঁর জেনারেলদের সাথে বৈঠক করছিলেন। এ সময় সেনাবাহিনী হঠাৎ করে চট্টগ্রামে তৎপরতা বাড়িয়ে দেয় এবং সিদ্ধান্ত নেয় জাহাজ থেকে গোলাবারুদ খালাসের, যে জাহাজটি অসহযোগ আন্দোলনের কারণে ১৭ দিন ধরে নিশ্চল হয়ে পড়েছিল।

 

২৫ মার্চ রাত ১১টায় ঢাকায় সেনাবাহিনী তৎপরতা শুরু করে। এর কয়েক ঘণ্টা পূর্বেই ইয়াহিয়া আকাশপথে করাচি চলে গিয়েছিলেন। আলোচনার স্থলে যুদ্ধ শুরু হয়। অথচ তখনো সব শেষ হয়ে যায়নি। কারণ যে মীমাংসিত চুক্তিটির বলে এমনকি সেই দিন পর্যন্ত পাকিস্তানকে একত্রিত রাখা যেত, সেটা ছিল জেনারেলদের কাছে, এবং তা পুরোপুরি উপেক্ষিত হয়েছিল। 

 

পাদটীকাঃ

১/ ডন, মার্চ ২৭,১৯৭১

২/ ডন, মে ৭, ১৯৭১

৩/ স্যার ফ্রেডেরিক, বেনেট, হ্যানসারড-এর বক্তৃতা , মে ১৪,১৯৭১

৪/ নাকভি, এম,ডি “ওয়েস্ট পাকিস্তান’স স্ট্রাগল ফর পাওয়ার”, সাউথ এশিয়ান রিভিউ, ভলিউম ৪, সংখ্যা ৩, এপ্রিল,১৯৭১

৫/ সেক ফোরাম। মার্চ ১ জে এবং ২, ১৯৭১

লেখক

রেহমান সোবহান, শেখ মুজিবের প্রধান উপদেষ্টাদের অন্যতম। তিনি এপ্রিলের প্রথম পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে ছিলেন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক (রিডার)এবং চতুর্থ পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনায় সরকারের অর্থনীতিবিদ প্যানেলের একজন সদস্য। তিনি শেখ মুজিবের সাংবিধানিক ও অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি ফোরামের সম্পাদকও ছিলেন।

.

 

 

শেষ কথা

  • আমরা চাইলে প্রোফেশনাল কাউকে দিয়ে এই দলিলপত্র কম্পাইল/অনুবাদ করাতে পারতাম। কিংবা স্ক্যান করে ওসিআর-এর সাহায্যে দলিলপত্রকে ইউনিকোডে কনভার্ট পারতাম। কিন্তু আমরা সেই কাজ করবো না। আমরা চাই যে এই প্রজন্ম নিজে কম্পাইল করে/অনুবাদ করে ধীরে ধীরে শিখতে শিখতে নিজেদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে তুলুক। কাজ থেকেই চেতনার জন্ম, কথা থেকে নয়।
  • পাঠকালে বানান কিংবা অন্য যে কোন ইস্যুতে যে কোন ভুল-ভ্রান্তি চোখে পড়লে সাথে সাথে আমাদের ফেসবুক পেইজে একটি মেসেজ দিয়ে জানাবেন। ভালো/মন্দ যে কোন ধরণের পরামর্শ অত্যন্ত আনন্দের সাথে গৃহীত হবে এবং আপনাকে অত্যন্ত দ্রুত আমাদের ফেসবুক পেজ থেকে থেকে লাইভ চ্যাটের মতো রিপ্লাই দেয়া হবে। কারণ আমাদের ফেসবুক পেজটি একই সাথে দেশ এবং বিদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে এডমিন প্যানেলের কেউ না কেউ সারাক্ষণই অনলাইনে আপনার ফিডব্যাকের অপেক্ষায় আছেন। আমাদের ফেসবুক পেজের লিংকঃ

https://www.facebook.com/muktizuddho1971

  • প্রকল্পটি নতুনদের জন্য সদা উন্মুক্ত। অর্থাৎ আপনি যদি আমাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র নিয়ে কাজ করতে চান, তবে আমাদের ফেসবুক পেজে একটা মেসেজ পাঠিয়ে আপনার আগ্রহের কথা জানালেই হবে। আমরা কিছুদিন পর আপনাকে আমাদের কর্মযজ্ঞের অংশ করে নিবো। কাজ বুঝিয়ে দেবো। দল-মত-ধর্ম-বর্ণ-পরিচয় নির্বিশেষে আমাদের এই উদ্যোগ। তাই সকলের শুভকামনা আমাদের কাম্য।
  • এটি কোন একক ব্যক্তি কিংবা একক গ্রুপের উপর নির্ভরশীল প্রোজেক্ট নয়। তাই স্পেসিফিক কেউ একজন থাকলে বা না থাকলে এই প্রোজেক্টের কিছুই যাবে-আসবে না। আগামীকাল তাজকিয়া ইসাবা নামক আইডিটি না থাকলে কিছুই আসে-যায় না। তাঁর জায়গায় অন্য কেউ কাজ করতে থাকবেন। আমাদের ফেসবুক পেজ থেকে কাজ চলতে থাকবে। ফেসবুক পেজ কোন কারণে বন্ধ হয়ে গেলে তা আবার নতুন করে খোলা হবে। কারণ আমাদের হাতে দলিলপত্র আছে। ডেডিকেটেড লেখকেরা আছেন। তাই এই প্রোজেক্টটা থেমে যাওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। এভাবেই প্রোজেক্টটাকে ডিজাইন করা হয়েছে। প্রকৃতি শূণ্য স্থান পছন্দ করে না। আমরাও না। আমরা প্রকৃতির অংশ। আপনিও, তাই না?

 

-মাউ

Scroll to Top