মুজিবনগর স্বরাষ্ট্রদপ্তর থেকে পুলিশের উদ্যেশ্যেপ্রচারিত একটি নির্দেশ নামা

শিরোনাম উৎস তারিখ
৮৫। মুজিবনগর স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে পুলিশদের উদ্দেশ্যে প্রচারিত একটি নির্দেশ নামা মুজিবনগর স্বরাষ্ট্র দফতর …, ১৯৭১

 

 

কম্পাইল্ড বাইঃ Rashed Islam

<১১, ৮৫, ৫৮১- ৫৮২>

 

মুজিবনগর

স্বরাষ্ট্র দফতর

বাংলাদেশ সরকার

 

বাংলাদেশের বীর পুলিশ ভাইয়েরা,

 

সাড়ে সাত কোটি নিরস্ত্র বাঙ্গালী আজ মরিয়া হয়ে ইয়াহিয়া খানের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আমরা বাংলাদেশের সন্তান, আমরা বাঙ্গালী, আমরা বাংলাদেশের পুলিশ, আমরা মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করারর দায়িত্ব আমাদের।

 

অতীত এবং বিগত ২৫শে মার্চ থেকে পাকফৌজ বাংলাদেশে যে নিধনযজ্ঞ ও ববর্রতা চালিয়েছে তার নজীর ইতিহাসে নেই।সোনার বাংলা আজ প্রেতপুরী।সেখানে এখন কবরের মান্তি বিরাজ করছে। এই হত্যাযজ্ঞের প্রথম শিকার হয়েছিল বাংলার পুলিশ বাহিনী। রাজারবাগ, চট্রগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, কুমিল্লা ও অন্যান্য জেলা সমূহের পুলিশ বাহিনীকে কিভাবে মেশিনগানের গুলিতে ও বোমার আঘাতে হত্যা করা হয়েছে তার করুণ দৃশ্য আমরা কোনদিন ভূলতে পারব না।

 

আপনার স্বচক্ষে দেখেছেন নারীহত্যা, নারীধর্ষণ, শিশু-ছাত্র-শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী ও শিল্পী হত্যার বীভৎস দৃশ্য। হারিয়েছে আমরা প্রিয়জন, আত্মীয়-স্বজন। বেদনাক্লিষ্ট জীবনের সব সঞ্চয় ও সম্বল। ধ্বংসের ঢেউ শহর, বন্দর ছাড়িয়ে এখন পৌঁছেছে গ্রামে-গ্রামান্তরে।রাস্তাঘাটে হাটে মাঠে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে নিরীহ বাঙ্গালী পুলিশ বাহিনীকে, ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে তার পরিবারকে দুঃখের অতল সাগরে। এই গণহত্যা ও ধ্বংসের তুলনা ইতিহাসে মেলে না।

 

তাই আজ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলেছে স্বাধীন বাংলার মাটিতে পাকফৌজকে দাঁড়াতে দেব না। পশ্চিম পাক ফৌজের সর্বশেষ প্রাণিটি বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত না হওয়া পর্যন্ত আমরা সংগ্রাম চালিয়ে যাব।

 

হালকা অস্ত্র নিয়ে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী মেশিনগান, ট্যাংক ও বোমার মুখে যে বীরত্ব দেখিয়েছে তা কখনওও ভুলা যায় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে পুলিশের ত্যাগ ও অবদান ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।

 

বাংলাদেশের পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য পুলিশ  কর্তাদের কে মেশিনগানের মুখে রেখে বাধ্য করা হয়েছে একথা ঘোষণা করতে- যেন বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী ইয়াহিয়ার জঙ্গি শাসকদের কাজ যোগদান করেন। মুক্তিফৌজের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে আঘাত হানার জন্যই এই হীন প্রচেষ্টা। এই ঘোষণা বা ডাকে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী সাড়া  নানা কৌশলে পুলিশ বাহিনীকে একবারে নিশ্চিহ করে ফেলাই পাকফৌজের উদ্দেশ্য-এই কথা ভুলে গেলে চলবে না।একবার ভেবে দেখুন কেন পাকফৌজ আমাদের সহকর্মী পুলিশ ভাইদেরকে অকাতরে নৃশ্ংস্যভাবে হত্যা করছে-কেন তারা বাংলাদেশের পুলিশ লাইন পুড়িয়ে জ্বালিয়ে ধ্বংষ করেছে-কেন হাজার হাজার পুলিশকে দেশছাড়া করেছে।জঙ্গি সরকার অস্ত্রের শক্তিতে শক্তিশালী এবং সেই শক্তির দাপটে ইয়াহিয়া সরকার আমারদের নিশ্চিহ করা প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই শত্রু সরকারের সাথে সহযোগিতা করা বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

 

আমরা পুলিশ আমরা অস্ত্র চালনা জানি।বাংলাদেশের এই মূর্হুতে আমাদের অনেক কিছু করবার আছে।আমরা শত্রু শিবিরে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে যাব না-শত্রুর কাছে মাথানত করবো না।তাদের সংগে সহযোগিতা করার আহবানে আমরা সাড়া দেব না।বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করার সংগ্রামে প্রাণ দেব।আমরা জানি যারা শত্রুর সংগে হাত মিলিয়ে চলেছেন-বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতা তাদেরকে কোনদিন ক্ষমা করবে না।পুলিশের সংগে যারা অফিসের কাজ করছেন তাদের প্রতিও আমাদের এই একই আবেদন।

 

পুলিশ ভাইয়েরা যারা সীমান্তের ওপারে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তারা ৯নং সার্কাস এভিনিউ, কলিকাতায়(বাংলাদেশের মিশন) অথবা সুবিধামত মুজিবনগরে পুলিশ সদর দপ্তরের সংগে যোগাযোগ স্থাপন করবেন।

 

আমরা একথাই মনে রাখবো যে- আমরা বাংলাদেশের সন্তান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম-আমদের বাঁচার সংগ্রাম।আমরা লড়ছি সত্যের জন্য, ন্যায়ের জন্য।এই সংগ্রামে আমরা জয়ী হবই।

 

 

 

স্বা/-জয় বাংলা

আব্দুল খালেক

Scroll to Top