যুদ্ধপরিস্থিতি সংক্রান্ত জনৈক মুক্তিযোদ্ধার চিঠি

শিরোনাম উৎস তারিখ
৬৩। যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে জনৈক মুক্তিযোদ্ধার চিঠি ১১ নং সেক্টরের দলিলপত্র ২৯ নভেম্বর, ১৯৭১

 

কম্পাইল্ড বাইঃ Rashed Islam

<১১, ৬৩, ৫২৪ >

 

ধান/১/গ/(১)

ধান/১/গ/(২)

বড় ভাই,

 

ছালাম পর সমাচার এই গত ১৯শে নভেম্বর বৃহস্পতিবার ভোর বেলায় ৭০ জনের একদল বদর বাহিনী আমরা যে গ্রাম দুইটিতে ছিলাম সেই গ্রাম ঘেরাও করিয়া বাড়ীঘর অগ্নিসংযোগ করিতে থাকে। ইহাতে আমরা নিরুপায় হইয়া ৯ জন একত্রিত হইয়া ফাইট দিতে বাধ্য হই। ফাইট এ শত্রুপক্ষের একজন গুরুতররূপে আহত হয়। এবং তাহারা পিছু হঠতে বাধ্য হয়। এই সুযোগে গ্রামন্তরে আশ্রয় লইতে সমর্থ হই। দুঃখের বিষয় একটি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস হইয়া গিয়াছে। তার পরদিনই অর্থ্যাৎ ২২শে নভেম্বর আমাদের করিয়র আসার পথে লালিতবাড়ী বাজারে শত্রুর হাতে ধরা পড়ে। করিয়র অতি কৌশলে তার কাগজপত্র গুলি লুকাইয়া ফেলে। তার কাছে মাত্র ৬০০ টাকা পায়। অনেক মারধোর করিয়াও কোনরূপ গোপন তথ্য না পাইয়া ১০০ টাকা রাখিয়া ছাড়িয়া দেয়।

 

সিরাজ নামে আমাদের যে ছেলেটি সারেন্ডার করিয়াছে সে আমাদের নামধামসহ সমস্ত গোপন তথ্য প্রকাশ করিয়া দেয়। এবং আমাদের ধরাইয়া দেবার চেষ্টায় ছিল। অবশেষে সে বদর বাহিনী গ্রাম ঘেরাও করে এবং পুড়াইয়া দেয়। গ্রামটি পোড়ানোর ফলে অন্যান্য গ্রামে বিরাট আতঙ্কের সৃষ্টি হইয়াছে যাহার ফলে আমরা কাজ করিতে পাড়িতেছি না। থানা কমিটি গঠণ আপাতত সম্ভব নয়। লালিতবাড়ী বাজারস্থ ক্যাম্পে অপারেশন না হইলে আমাদের এখানে থাকাই সম্ভব নয়। জিনিসগুলির অতিসত্বর ব্যবস্থা করিবেন।

 

তারপর করিয়রকে আমরা প্রথম তারিখে ১৫টাকা, দ্বিতীয় তারিখে ৩০টাকা এবং তৃতীয় তারিখে ৩৫টাকা দিয়েছিলাম। কিন্ত আপনারা কত দিয়াছেন তাহা জানান নাই। আমরা আর এভাবে করিয়রকে টাকা দিতে পারিব না। যাহা দিতে হয় আপনারা ওখান হইতে দিবেন। আপনার কত টাকা তরিয়া দিবেন তাহা লিখিয়া জানাইবেন। আর বিশেষ কিছু লিখলাম ন। আগামীতে আপনাদের কুশল কামনা করিয়া এখানেই বিদায় নিলাম।

 

ইতি

আপনার ছোট ভাই

 

বিঃ দ্রঃ আমাদের থানা সম্বন্ধে আপনাদের জানার বাকী নাই। প্রতি গ্রামে দালালে ভরা। পিস্তল ছাড়া কাজ করা খুবই কঠিন হইয়া পড়িয়াছে। পিস্তল অবশ্যই পাঠাবেন।

Scroll to Top