সিনেটর হ্যারিসকে লিখিত ওয়াশিংটন দূতাবাসের সেক্রেটারীর চিঠি

৭.১৩.৩৬-৩৯

শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৩। সিনেটর হ্যারিসকে লিখিত ওয়াশিংটন দুতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারির চিঠি পাকিস্তান দূতাবাসের দলিলপত্র ১৪ এপ্রিল, ১৯৭১

 

পাকিস্তান দুতাবাস

২৩১৫ ম্যাসাচুসেটস এভিনিউ, এন ডাব্লিউ

ওয়াশিংটন ডিসি, ২০০০৮

এপ্রিল ১৪, ১৯৭১

 

প্রিয় সিনেটর হ্যারিস,

        এপ্রিল ১, ১৯৭১ এর প্রকাশিত সিনেটসভা নথিতে আপনার বক্তব্য সম্পর্কে অবগত হয়েছি। আমরা দুঃখিত বোধ করছি যে আপনি আপনার বক্তব্য প্রদানের আগে বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা করার কোন সুযোগ আমাদের দেননি, যেখানে আমরা অন্তত আপনাকে আপনার প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে সাহায্য করতে পারতাম। যাইহোক, আমি আশা করি এ পত্রের মাধ্যমে অনেক বিষয় সম্পর্কে আপনার ধারনা সুস্পষ্ট হবে।

 

        আপনি বলেছেন যে পাকিস্তানি সরকার বিদেশি সাংবাদিকদের অত্যন্ত হেয়পূর্ণ ভাবে বহিষ্কার করে দেয় যেন পাকিস্তানি সেনারা বিঘ্নহীন ভাবে মানুষ হত্যা চালিয়ে যেতে পারে। আমি আপনাকে জানাতে চাই যে বিদেশি সাংবাদিক এবং আমেরিকান দুতাবাস থেকে দেশটির নাগরিক ও দুতাবাসে কর্মরত নাগরিকদের ফেরত পাঠানো কোন অপমানজনক উদ্দেশ্য নয়, বরং তাদের জীবনের নিরাপত্তা প্রদানের উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস এবং ইভেনিং স্টার সংবাদে পাঠানো এক বার্তায় পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে তাদের ম্যানেজিং এডিটরকে অবগত করেন। রাষ্ট্রদূত আরো বলেন যে  বিগত সপ্তাহে যখন ইয়াহিয়া-মুজিব এর মধ্যকার সমঝোতা আলোচনা সভা বিফল হয় তখন পাকিস্তানি সেনাদেরকে ঢাকায় অবস্থানকারী সন্ত্রাসী দলগুলো যারা লম্বা সময় ধরে পূর্বপাকিস্তানের শান্তিপ্রিয় নাগরিক, বিশেষত উর্দুভাষী নাগরিকদের উপর অত্যাচার এবং হত্যাকর্ম চালিয়ে আসছিল, তাদের দমন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হয়। আমাদের প্রশাসন মনে করে যে এমন সময় বিদেশি সাংবাদিকদেরকে উক্ত এলাকায় অবস্থান তাদের নিজেদের জীবনের জন্যই বিপদজনক ছিল। এমতাবস্থায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিদেশি সাংবাদিকদের ঢাকার রাস্তায় ঘুরে তথ্যসংগ্রহ করার অনুমতি প্রদান করার কোন প্রশ্নই আসেনা। আপনি অবশ্যই একমত হবেন যে, সরকারের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র প্রতিরোধ একটি বাস্তব এবং আকাংখিত সিদ্ধান্ত ছিল।

 

        এই মুল উদ্দেশ্যের পাশাপাশি আমি আরো একটি বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যা হয়তো আপনার চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। আমাদের বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও কোন আমেরিকান সংবাদপত্রই পাকিস্তানে তাদের সংবাদদাতা প্রতিনিধি অফিস স্থাপন করতে চায়নি। আমরা কখনই আমেরিকান সংবাদমাধ্যমগুলোকে এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝাতে সক্ষম হইনি। অন্যদিকে সকল সংবাদদাতা অফিসগুলোই নয়া দিল্লী থেকে কাজ করছে, এবং আপনি অবশ্যই অবগত আছেন যে উক্ত দেশটি অতীতে কখনই আমাদের প্রতি তেমন সহযোগিতাপূর্ণ আচরন করেনি, এবং বর্তমানেও করছেনা। সংবাদদাতারা অবশ্যই মানুষ এবং তাদের পরিবেশিত সংবাদে অবশ্যই তারা তাদের আশেপাশে যেসব কথা শুনে আসছিলেন তার প্রভাব পড়েছে। অতিপ্রাসঙ্গিকভাবেই আমি আপনাকে গত বছর নভেম্বরে ঘটে যাওয়া পূর্ব পাকিস্তানে সাইক্লোন বিষয়ক পরিবেশিত সংবাদের উদাহরন দিতে চাই, যা ছিল মুল ঘটনার চেয়ে অনেক বেশি সংবেদনশীলতা উদ্রেককারী এবং স্পর্শকাতর। কেউই একবারের জন্য উল্লেখ ও করেনি যে অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা স্বত্বেও কত দ্রুত আমরা এ সমস্যা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করেছিলাম। কেউ এই বিষয়টি লিপিবদ্ধ করেনি যে সমগ্র পূর্ববাংলা স্থানীয় প্রশাসন, যেখানে একজন ও পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মকর্তা নেই, (গভর্নরও পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন), নিজেরাই সম্পূর্ণভাবে এই সাইক্লোনের ত্রান বিতরনের কাজে নিযুক্ত ছিল। অথচ, বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি একচ্ছত্রভাবে অভিযোগ তুলে গেছে এবং ঢাকা হোটেল এর বিলাসবহহুল লবিতে বসে থেকে তারা একই সংবাদ পুনরাবৃত্তি করে গেছে। আপনাদের দেশের দাতাসংস্থাগুলো এবং অন্যান্য সংবাদ পত্রের সম্পাদকদের চিঠির মাধ্যমে আমরা বারবার এ ভুল সংশোধনের অনুরোধ জানিয়ে এসেছি। 

 

        আপনারা বললেন যে, আপনারা কিছুই জানেন না, আবার একি সাথে এও বলেন যে কিছু তথ্য আপনাদের হাতে আছে, যা অবশ্যই সত্যি। আমি এ বিষয়ে আর বিশেষ কিছু বলতে চাইনা, তবে এ বিষয়ে প্রতিবাদ না করলেই নয় যে আপনি অপ্রতিষ্ঠিত এবং অনির্ভরশীল সংবাদসুত্র থেকে প্রাপ্ত সংবাদ উল্লেখ করে সিনেট সভায় জানিয়েছেন যে, নির্দিষ্ট তথ্যদাতাদের সাহায্যে সুপরিকল্পিতভাবে পূর্বপাকিস্তানি বুদ্ধিজিবি নেতাদের খুজে বের করে মৃত্যুদণ্ড দাওয়া হচ্ছে। পাকিস্তানি সরকার বারবার এ বিষয়টি বলে আসছে যে তাদের পাঠানো সেনাবাহিনীকে কোন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পাকিস্তানের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন সংবাদসুত্র যেমন নয়া দিল্লী হতে এধরনের ভিত্তিহীন সংবাদ রেডিও মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে যেন একটির পর একটি অতিনাটকীয় আবহ তৈরি করা যায়। দয়াকরে এই চিঠির সাথে সংযুক্ত নয়া দিল্লীর একটি প্রধান সংবাদপত্রের ৩১ মার্চে প্রকাশিত প্রথম পাতার সংবাদের ফটোকপিটি লক্ষ্য করবেন। এটি সারা পৃথিবী জানে যে, ঐ তারিখে বা অন্য কোন তারিখে ঢাকা কোন তথাকথিত মুক্তিবাহিনি দ্বারা দখলকৃত হয়নি এবং পাকিস্তানি সরকার প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা থেকে অন্য কোথাও স্থাপিত করেনি। দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে যে, এধরনের মিথ্যা সংবাদ শুধুমাত্র ভারত সংবাদমাধ্যম নয়, বরং উক্ত দেশটিতে অবস্থানকারী বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যম প্রচার করে যাচ্ছে এবং এধরনের মিথ্যা সংবাদের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে ধারনা করা হচ্ছে। একই রকম ভাবে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রচার করে যাচ্ছে যে কমপক্ষে দশ হাজার পূর্বপাকিস্তানি আমাদের আর্মিদের হাতে নিহত হয়েছে। উক্ত সংবাদটির গুজব ছড়িয়ে যাওয়ার পর সংখ্যাটি শুধু বেড়েই যাচ্ছে, এবং গত ১২ই এপ্রিলের ওয়াশিংটন ডেইলি এর সংবাদে দেখা যায় যে সংখ্যাটি এখন দশ লক্ষাধিকে পৌছে গেছে।

 

        জনাব সিনেটর আপনি দাবি করেছেন যে আমেরিকান কর্তৃপক্ষ যেন পাকিস্তানে সামরিক এবং আর্থিক সাহায্য প্রদান বন্ধ করে দেয়। আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে আমেরিকান সামরিক সাহায্য সেই ১৯৬৫ সালেই স্থগিত করা হয়েছিল, যখন আমরা ভারতীয় শক্তির চাপিয়ে দাওয়া একটি রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলাম। যুক্তরাষ্ট্র (আমাদের মিত্রবাহিনীর তিনবার অনুরোধ করা স্বত্বেও) সকল ধরনের সামরিক সাহায্য বন্ধ করে দেয়, এমনকি সেইসব সাহায্যের ক্ষেত্রেও এই সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য করে, যার জন্য আমরা নির্দিষ্ট মুল্য পরিশোধ করেছিলাম। এই সিধান্ত শুধুমাত্র রণক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান পুরোপুরি বদলে দেয়, এবং তা শুধু আমাদের সেনাবাহিনী নয়, সাধারন দেশপ্রেমিক মানুষদের অবদানকে অস্বীকার করে আমাদের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসে। আপনার সরকার অবশ্যই অবগত আছে যে ভারত ধ্বংসাত্মক অস্ত্র নির্মাণের বিপুল পরিমান ক্ষমতা অর্জন করেছে, এবং কিছু ক্ষেত্রে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। (বর্তমানে ভারত যুদ্ধবিমান, ট্যাঙ্ক, যুদ্ধজাহাজ এবং প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ নিজেরাই তৈরি করতে সক্ষম)। এছারাও তাদের আছে রাশিয়াসহ বিভিন্ন পশ্চিম ইউরোপিয়ান দেশের অস্ত্রসরবরাহের মাধ্যম। ১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নেয়া সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের কারন হয়েছিল। আপনার নিশ্চয়ই স্মরণ আছে যে এক পর্যায়ে জনাব কুশ্চেভ আমাদেরকে হুমকি প্রদান করেছিল যে যদি আমরা পাকিস্তানে অবস্থানকারী যুক্তরাষ্ট্রীয় ঘাটিগুলি থেকে কোন আমেরিকান ইউ-২ বিমান উড্ডয়ন করতে দেই, তবে তারা আমাদের দেশে রকেট হামলা চালাবে। আমরা তাদের হুমকিস্বত্বেও পিছিয়ে যাইনি।

 

        আমি আপনাকে বর্তমানে পূর্বপাকিস্তানে উদ্ভুত রাজনৈতিক সঙ্কটের বিষয়ে জানাতে চাই। পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে অন্যতম একটি দল আওয়ামীলীগ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে যোগদানের উদ্দেশ্যে এমন একটি প্লাটফর্মে নির্বাচন করে যা পূর্বে ছিলনা এবং তারা অকস্মাৎই নির্বাচনের পূর্বে এটি পরিবর্তন করে। উক্ত প্লাটফর্ম সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তানের আদর্শ হতে বিচ্ছিন্ন এবং তাদের ম্যান্ডেট ছিল নির্বাচকমণ্ডলীর অনুমোদনবিহীন। দলের শীর্ষ জান্তারাও লম্বা সময় ধরে গোপনে অস্ত্র সংগ্রহ করে আসছিল, যেন তারা তাদের শিষ্যদের মাধ্যমে দেশে একটি অরাজকতার সৃষ্টি করতে পারে এবং অবাঙ্গালিদের নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর এসকল অবাংগালি মুসলিমগণ ভারত থেকে পূর্বপাকিস্তানে অবস্থান শুরু করে এবং গত ২৩ বছর ধরে তারা শান্তিপূর্ণ ভাবেই এইস্থানে বসবাস করে আসছে। এমতাবস্থায় আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার খাতিরে সামরিক বাহিনীর কঠোর উদ্যোগ নাওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিলনা। কোন অবস্থাতেই কোন দেশের সরকার দেশটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে দেখেও চুপচাপ বসে থাকতে পারেনা, যেখানে তাদের শতসহস্রাধিক নাগরিকের জীবন বিনাদোষে চরম হুমকির সম্মুখীন। বিষয়টি অবশ্যই দেশের সামরিকবাহিনীর তত্ত্বাবধানের অন্তর্গত এবং তারা শুধুমাত্র তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

 

        আমার সন্দেহ যে আপনার দেশে বিপুল পরিমান সংবেদনশীলতা এই কারনে উদ্ভুত হয়েছে যে আপনার আওয়ামীলীগ এর আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত নন, বরং আপনারা ভেবে যাচ্ছেন যে দলটি শুধুমাত্র প্রাদেশিক সরকারের আরো বেশি স্বায়ত্তশাসনই দাবি করে আসছে, যা অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রাদেশিক সরকার ব্যাবস্থার মতই। বিষয়টি অবশ্যই তা নয়। আওয়ামীলীগ নেতা মুজিবর রহমান তার আলাপ-আলোচনার শেষাংশে পাকিস্তানি রাষ্টপতির কাছে একটি আলাদা দেশ এবং সার্বভৌমত্ব দাবি করেন, এবং একি সাথে হুমকি দেন যে তা না করলে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে। রাষ্ট্রপতি যথেষ্ট ধৈর্যধারন করেন এবং পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথেও আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকেন যেন একটি সর্বাত্মক রাজনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে জাতীয় অধিবেশন আহবান করা এবং দেশটির সংবিধান রচনা করার লক্ষ্য অর্জিত হয়। এধরনের একটি চুক্তি পূর্ব পাকিস্তানকে যেকোন জোটের অধীনেই একটি পরিমেয় পরিমান স্বায়ত্তশাসনের এখতিয়ার প্রদান করত। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, শেষ আলোচনায় এটি ভালভাবে স্পষ্ট হয় যে আওয়ামীলীগ এর লক্ষ্য তা না হয়ে বরং অখণ্ড পাকিস্তানের বিভাজন ছিল। এমতাবস্থায় দেশটির ঐক্য এবং অখণ্ডতা অক্ষুন্ন রাখাটাই মুল বিবেচ্য ছিল। রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান তার এক বার্তায় রাষ্ট্রপতি পডগরনিকে জানানঃ

 

        “কোন সরকারেরই দেশের সার্বভৌমত্ব এবং প্রাদেশিক ঐক্যতে আঘাত হানে এমন কোন ক্ষতিকর শক্তিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা কিংবা আপোষে তাদের ছেড়ে দাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আওয়ামীলীগ এর কাছে পাকিস্তানের জনগন দেশ বিভাজনের ম্যান্ডেট দেয়নি, তারা প্রতিবেশি  শত্রুভাবাপন্ন একটি দেশের  পৃষ্ঠপোষকতায় অরাজকতার সৃষ্টি করতে চেয়েছিল যা দেশটির অখন্ডতাকে ক্ষতিগ্রস্থ করত। এমন একটি পরিস্থিতিতে যখন আইনের শাসন সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরেছিল, সাধারন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছিল, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, খুন-রাহাজানি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছিল, তখন সরকারের কাছে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সোচ্চার হতেই হয়েছে। সরকারের নেওয়া উদ্যোগসমুহ পূর্ব পাকিস্তানী বিশাল জনপদের জানমাল রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই গৃহীত হয়েছে যারা আওয়ামীলীগের কিছু নেতাদের ফ্যাসিস্ট মনোভাবের সাথে একমত নয়।”

 

        আমেরিকান সংবাদমাধ্যম পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্ব এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি আর্থিক শোষণ এরও অভিযোগ আনে। এই অভি্যোগের ক্ষেত্রেও মুল ঘটনার থেকে আবেগীয় সংবেদনশিলতাই বেশি দায়ী, কেননা যদি বর্তমান বছরগুলির দিকে খেয়াল করেন, তবে দেখবেন আমাদের দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রবর্তিত হচ্ছে এবং দুরভাগ্যজনকভাবে মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রবর্তনের সময়টুকুতে কিছু ভুলত্রুটি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যদি শিল্পবানিজ্যে একটি প্রদেশ আরেকটি থেকে দ্রুত এগিয়ে যায়, তার মানে এই নয় যে প্রবৃদ্ধিশীল প্রদেশটি অপর প্রদেশকে শোষন করে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং আইনী সংস্থায় বরাবরি পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধির অংশগ্রহন উল্লেখযোগ্য হারে ছিল। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে, ২৪ বছরের এই সংক্ষিপ্ত শাসনামলে আমরা দুইজন পাকিস্তানি রাষ্ট্রপতি (নাজিমুদ্দিন এবং ইস্কান্দার মির্জা) এবং তিনজন প্রধানমন্ত্রী (নাজিমুদ্দিন, মোহাম্মদ আলি এবং সোহরাওয়ারদী) পেয়েছি যারা পূর্ব পাকিস্তানি ছিলেন। তারা কোনভাবেই কম দেশপ্রেমিক ছিলেন না, এবং পুরো শাসনামলে তারা কখনই রাষ্ট্রের বিভাজন চাননি।

 

        পূর্ব এবং পশ্চিম দুই প্রদেশ ই একটি অনুন্নয়নশীল দরিদ্র রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে যাত্রা শুরু করে। বিদেশি সাহায্য এবং আমাদের নিজেদের চেষ্টায় আমরা যখন একটি কর্মঠ রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে যাচ্ছি, তখন কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতিবিদ খেয়ালী দাবিদাওয়া করে আমাদের অধপতন সুনির্দিষ্ট করতে চাচ্ছে। অথচ তাদেরকে একটি অখন্ড রাষ্ট্রের সংবিধান রচনার রূপরেখা তৈরি করতে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের জনগন নির্বাচন করেছিল। আমরা অবশ্যই গণতন্ত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতার অক্ষুন্নতা, সকলের স্বাধীনতা ও কর্মপ্রচেষ্টার প্রতি সম্মান দেখাতে বদ্ধপরিকর, এবং যত যা কিছুই হোক না কেন আমরা এই সম্মান বজায় রাখব।

 

নিবেদনে,

আপনার একান্ত

এস ডি

এফ এস এন কুতুব

ফার্স্ট সেক্রেটারি

(তথ্য বিভাগ)

মাননীয়

ফ্রেড আর হ্যারিস

কক্ষ নং- ২৫৪

পুরাতন সিনেট কার্যালয় ভবন

ওয়াশিংটন ডিসি, ২০৫১০।

Scroll to Top