১০৭। জুলাই হানাদার বাহিনীর শাস্তিদানের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করুণ

রাশেদুজ্জামান রণ

<৬,১০৭,১৭৮>

শিরোনামঃ হানাদার বাহিনীর শাস্তিদানের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করুন

সংবাদপত্রঃ সোনার বাংলা ১ম বর্ষঃ ৪র্থ সংখ্যা

তারিখঃ জুলাই(?), ১৯৭১
.

                           হানাদার বাহিনীর শাস্তিদানের জন্য
                               ট্রাইব্যুনাল গঠন করুন
                                কে, জি মুস্তফা প্রদত্ত

সাড়ে সাত কোটি মানুষের আবাসভূমি “স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ” বিশ্বের মানচিত্রে একটা নতুন রাষ্ট্র হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্বের বিবেকসম্পন্ন জাতিসমূহের নিকট বাংলাদেশ স্বীকৃতি লাভ করেছে। শুধুমাত্র সাম্যবাদ, সমাজবাদের ধারক, চীনের মানুষের নিকটই বাংলাদেশের ঘটনাসমূহ কোনো আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে নাই।
.

গণপ্রজাতন্ত্রের ধ্বজা ধরে বিশ্ব মানবতার চিরশত্রু সাম্রাজ্যবাদের এক নম্বর পাণ্ডা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এবং তিব্বত গ্রাসকারী পররাজ্যলোভী গণতন্ত্রের দুশমন চীন একাধারে বাঙালী নিধন যজ্ঞে সাহায্য সহযোগিতা করে সাধ্যমত নিজের দেশের ধনসম্পদ ও অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে কুখ্যাত পাকিস্তান সরকারকে শক্তিশালী করে তুলেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চারমাস অতিক্রম করে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে এসে হাজির হয়েছে। আর সঙ্গে সঙ্গে এই সাফল্যের সংবাদে টনক নড়েছে আমেরিকা, চীন ও রাশিয়ার। বন্ধ করে দিয়েছে পাকিস্তান সরকারকে সর্বপ্রকার সাহায্য ও সহানুভূতি, জিকির তুলেছে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক সমাধান চাই। কিন্তু এই জিকিরে কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ স্তিমিত হবে? হতে পারেনা। যাদের অদৃশ্য হাতের কারসাজিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পাগল ১০ লক্ষ নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষ পশ্চিমা বেনিয়া গোষ্ঠীর প্রতিভূ খান সেনাদের হাতে প্রাণ দিয়ে বাংলার শস্য-শ্যামল প্রান্তরকে রক্তে রঞ্জিত করে তুলেছে এবং তাদেরই প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলা জাতীয় লীগ প্রধান জনাব আতাউর রহমান খান এখনও খান সেনাদের অন্ধকার কারাগারে নিক্ষিপ্ত। আর ষাট লক্ষাধিক মানুষ প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বন্ধুরাষ্ট্র ভারতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের অনুপস্থিতিতেই তাদের নামে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে চরম শাস্তিদানের ব্যবস্থা করে বিশ্বের কলঙ্কজনক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে খান প্রতিভূ গোষ্ঠী। এমনকি বাঙালীদের নয়নমনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জনাব আতাউর রহমান খানের জন্যও বিচারের ট্রাইব্যুনাল গঠন করার খবর আমরা পেয়েছি। তাই প্রতিটি বাঙালী মানুষই আতঙ্কে শিউরে উঠেন এই ট্রাইব্যুনাল গঠনের সংবাদ শুনে। বিশ্বের বিবেকসম্পন্ন রাষ্ট্রসমূহ নির্বাক দৃষ্টিতে ইয়াহিয়া খানের এই নাটকীয় ঘটনার দিকে তাকিয়ে আছে। কখন কি ঘটবে, তা বলা মুশকিল।
.

তাই এই সমস্ত হানাদার বাহিনীর কুখ্যাত সামরিক কর্মকর্তাদের শাস্তি বিধানের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে একটি বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশের মুক্তাঞ্চলে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে হানাদার বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিচার করে, উপযুক্ত প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য আমরা স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আবেদন জানাই।

Scroll to Top