১৯৬২ সালের শাসনতন্ত্র সম্পর্কে প্রকাশিত সরকারি পুস্তিকা

<2.25.158-160>

 

সুচনাঃ “গণতন্ত্র” আব্রাহাম লিংকনের ভাষায়, জনগনের জন্য জনগনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জনগণের সরকার। এটা জনগণের মতামত ও ঐক্যমতের ভিত্তিতে সরকার গঠন করে, নাগরিকদের সুখ শান্তি ও উন্নতি  করার লক্ষ্যে কাজ করে এবং আইনের দৃষ্টিতে সবার মান সমান। যদিও এটা  সব সময় মুসলিম ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে বিরাজমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রতিফলিত হয় না। সকল গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার মুলে রয়েছে সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ব এবং সাম্যতার ইসলামীক চিন্তাধারা। এর বাহ্যিক অভিব্যাক্তিতে ইসলাম ব্যাক্তির বদলে সমাজের উপর গুরুত্ব আরোপ করে, যেটা যেকোন সাম্প্রদায়িক উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করা সংস্থার জন্য প্রথম পদক্ষেপ। একটি গুরুত্ব পূর্ণ গণতান্ত্রিক উপাদান যার সাক্ষী ইতিহাস তা হচ্ছে  অন্যান্য বিশ্বাসের উপরে ইসলামের সাধারন সহিষ্ণুতা । সূরার ঐশ্বরিক আদেশ যা শাসনকর্তাকে সাধারন মানুষের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে বাধ্য করে তা গণতান্ত্রিক সরকারের সাধারন তত্ত্ব গুলো নির্দিষ্ট করতে  যে কোন বড় ধর্মের একমাত্র প্রচেষ্টা। অবশেষে, সম্পূর্ণ সমাজের দ্বারা অনুষ্ঠিত মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি একটি ধর্মীয় পবিত্রতা দেয় যা ইজমা নীতিকে মুসলিম বিশ্বাসের  গণতান্ত্রিক সারাংশ উল্লেখ করে। অতএব,আজকের প্রেক্ষাপটে, ইসলামী হওয়ার প্রয়াস সমাজে তাদের রাজনৈতিক জীবনে নিজেদের প্রকাশ করতে পারে যা শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক ভিত্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হয়।  পাশ্চাত্যে গণতন্ত্র প্রাথমিক ভাবে কিছুটা অপূর্নাঙ্গ ভাবে আবির্ভূত হয় (যেহেতু এর ভিত্তি ছিল প্রচীন গ্রিসের রাজ্য গুলোতে দাসত্ব, যেখানে প্রত্যেক মুক্ত নাগরিক সরকার ব্যবস্থায় অংশ হতে পারতো । এসব তথাকথিত প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রগুলো ছিল সমমাতৃক রাজ্য শাসন যেখানে দাসদের অধিকার কখনো শাসক গোষ্ঠির সাথে সমান হয়নি। সমষ্টিগত এবং ব্যক্তি স্বার্থের সনাক্তকরণ যা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় একটি অভিব্যাক্তি খুঁজে পায় এবং গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার সারাংশ, তা অনুপস্থিত ছিল। এখন গণতন্ত্র যেরকম তা অধিকাংশেই গ্রেট বৃটেনের অবদান মনে করা হয়। সরকারের একটি ভিত্তি হিসাবে এটা শুধুমাত্র গত ১০০ বছরেই বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা পেয়েছে, কিন্তু বর্তমানে তা সরকারের একমাত্র ভিত্তি হিসাবে স্বীকৃত যা আসলেই মানুষকে স্বাধীন করে এবং গঠন মুলক দিকে চালিত করে। যদিও সরকারের গন্তান্ত্রিক ভিত্তিতে সমস্যা হল যদি কর্মরত মানুষজন গণতান্ত্রিক নীতিতে প্রশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ না হয়, সংগঠনের সফলতা নিশ্চিত করা কঠিন। গণতন্ত্র এমন কিছু নয় যা এক রাতে মানুষজন গ্রহন করেছে। বৃটিশরা যাদেরকে দীর্ঘস্থায়ী গণতান্ত্রিক সংগঠনের অগ্রগামী বলা হয় তা করতে ইংল্যান্ডের কণর্ধারদের ১২১৫ সালে ম্যাগনাকার্টা চুক্তির পরে সাতশ বছর সময় লেগেছে। ১৯২৮ সালে প্রথম একুশোর্ধ মেয়েদের ভোটের অধীকার দেওয়া হয়।  রাজনৈতিক সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিকাশের তুলনামুলক ধীর প্রক্রিয়া বৃটেনে গণতন্ত্রের সৃষ্টি করে। কিন্ত ঐতিহাসিক এই শিক্ষা অমান্য করে প্রায়শই অন্যত্র সফল হওয়া প্রথা প্রবর্তন করার প্ররোচনা দেখা যায়  যা আবশ্যম্ভাবী ভাবে ভিন্ন সামাজিক পরিবেশে খাপ খায় না, বা অন্য জাতির রাজনৈতিক প্রয়োজন মেটায় না। এধরনের অবস্থায় ধার করা রাজনৈতিক সংগঠন গুলো অকার্যকর নেতৃত্বের সুযোগ করে দেয় এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করে, রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা এবং দুর্নীতি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বিরুদ্ধাচরন করে এ অবস্থায় যদিনা পরিস্থিতি সামাল দিতে শক্তিশালি নেতৃত্বের আবির্ভাব না ঘটে তাহলে দির্ঘস্থায়ী কলহ অবধারিত হয়ে যায়। কিন্তু  যেইমাত্র সুদক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা আসে  তখনই একটি তুলনামূলক রাজনৈতিক ভাবে সচেতন  সম্প্রদায়ের উচিৎ সময় নষ্ট না করে উপযুক্ত রাজনৈতিক সংগঠন তৈরি করা। এগুলো এই আলোকে বলা যে, জাতির উদ্দেশ্যে তার প্রথম সম্প্রচারে মাননীয় রাষ্ট্রপতি স্পষ্ট ভাবেই বলেছেন তার একমাত্র অভিপ্রায় যতদ্রুত সম্ভব সাংবিধানিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

সামরিক শাসনের গত সাড়ে তিন বছরের কর্মপদ্ধতিকে এই লক্ষ্যের একটি সূচক বলা যায়। এতটাই, যে বিদেশী পর্যবেক্ষকরা পর্যন্ত মন্তব্য করেছেন সামরিক শাসনের অধীনে পাকিস্তান তথাকথিত অনেক গণতান্ত্রিক সরকার শাসিত দেশের চেয়ে বেশী গণতান্ত্রিক। এর কারণ খোঁজার জন্য খুব বেশী দূর যাওয়ার দরকার নেই। যদিও মনে করা হয়েছিল যে গণমাধ্যমের হাত পা বেঁধে ফেলা হবে এবং মত প্রকাশের সকল স্বাধীনতা হরণ করা হবে। কিন্তু, গণমাধ্যমের উপর নিতান্তই অপরিহার্য সামান্য কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল,তাও ক্ষেত্রবিশেষ। সরকারের কর্মধারায় ক্ষমতার যথেচ্ছ ব্যাবহার সুস্পষ্টভাবেই অনুপস্থিত ছিল এবং বিচারিক প্রক্রিয়াদি তার স্বাভাবিক গতিতেই পরিচালিত হচ্ছিল। প্রশাসন বেসামরিক কর্মকর্তাদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছিল এবং জনগণের ইস্যুতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ছিল নুন্যতম। এমনকি গত তিন বছরের গতিবিধি গণতন্ত্রের জন্য সুদূরতম হুমকি হয়েও দেখা দেয়নি। যে কারনে, পাকিস্তানে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে যুক্তরাজ্য সরকারের উপেক্ষা সত্ত্বেও, আইনের শাসনের প্রতি অটুট শ্রদ্ধা বিরাজ করেছে। জনগণ স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে সক্রিয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি অনুভব করেছে। আমাদের একটি তুলনামূলক উন্নত পেশাদার এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণী রয়েছে,যেটা প্রতিদিনই বাড়ছে। ইসলামে নিহিত সাম্যের বানী, পশ্চিমাদের দ্বারা শোষিত উদার মানবিকতা,  যা কিনা জনগনের শ্রেণী বিভেদের ভাবনা থেকে প্রতিকৃত, যার রাজনৈতিক রূপ পেতে পারে একমাত্র গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনকে সম্পূর্নভাবে পৃথক রাখা হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের উপর মানুষ সবসময়ই আস্থা ও শ্রদ্ধা বজায় রেখেছে- বিচার বিভাগ। স্পষ্ট মতপ্রকাশ, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের সুস্পষ্ট দায়িত্ব বিভাজন একটি গণতান্ত্রিক সরকারের চাহিদার দিকেই নির্দেশ করে। কিন্তু একটি সাংবিধানিক সরকারের সাফল্যের জন্য আমাদের অবশ্যই অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। নতুন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রচারের পূর্বে পূর্ববর্তী সংবিধানের ব্যার্থতার কারন অনুসন্ধান ও নতুন সংবিধানে সেগুলো পরিহার করা একান্ত জরুরী।

যুক্তরাজ্যে সংসদীয় সরকারের প্রসার

বর্তমানে বহুল প্রচলিত গণতন্ত্রের কাঠামোকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে- সংসদীয় গনতন্ত্র ও প্রেসিডেন্সিয়াল গনতন্ত্র। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত আমরা সংসদীয় গণতন্ত্রের সাথেই পরিচিত, যাকে মন্ত্রীপরিষদ পদ্ধতিও বলা হয়। এই পদ্ধতিতে আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল অথবা দলসমূহ থেকে নির্বাহী নির্বাচিত হন এবং ততক্ষন পর্যন্ত বহাল থাকেন যতক্ষন সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পুষ্ট থাকেন। ব্রিটিশ সংবিধান, যাকে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রসূতি বলা হয়, তাতে সংসদীয় গণতন্ত্রের তত্ত্ব ব্যাখ্যা নির্দেশ করা রয়েছে। এই পদ্ধতির ধীর বিকাশের অন্যতম মূল কারন ছিল বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র, যার শান্তিপূর্ণ অবসানের এবং সাধারনের মতের প্রতিফলনের একমাত্র উপায় গণতন্ত্র। একটু একটু করে সমস্ত ক্ষমতাই জনগনের প্রতিনিধিদের করায়ত্ত হয়। গোটা কাঠামোটি অত্যন্ত ধীরে আকৃতি লাভ করে। রাজার সাথে আলোচনার অধিকার উপভোগকারী শ্রেণী অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত এবং পরিবর্ধিত হয়েছে, যতক্ষণ না জনগনের সরকারের ধারনাটি মাথাচাড়া দেয়। বিংশ শতকে জনগনের শাসক নির্বাচনের ধারনাটি পূর্ণরূপে, শক্তিশালীভাবে এবং চূড়ান্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইংরেজ জনগনের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের বদলে ক্রম পরিবর্তনের অভ্যাসের প্রতিফলন হিসেবে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে রাজ পরিবারকে প্রতীকী ক্ষমতায় রেখে কার্যকরী ক্ষমতা জনগনের হস্তান্তর করা হয়। রাজা এবং মুকুটের মধ্যকার সম্পর্ক এতটাই নির্বিঘ্নে পরিচালিত হয় যে, সরকার কাঠামোয় আর কোন বড় পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা একেবারেই দূরীভূত হয়েছে। যুক্তরাজ্যে, সংসদীয় গণতন্ত্র অত্যন্ত সফল, যদিও আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে এর সাফল্য কিছু নির্দিষ্ট শর্তের উপর নির্ভর করে যেগুলো পাকিস্তান সহ আরও কিছু দেশ পূরন করতে সক্ষম নয়। বেশ কিছু প্রভাবকের উপর ইহা নির্ভর করে, যেগুলো অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে পরস্পরের সাথে সম্পৃক্ত এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক আচরণের মিশ্রনে তৈরি।

উদ্বুদ্ধ নির্বাচক মন্ডলী
 

উদাহরনস্বরূপ, জাতীয় নীতির বিভিন্ন বিষয়ে উদবুদ্ধ নির্বাচক মন্ডলী একটি মতামত গঠন করতে সক্ষম। শিক্ষা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে ৭৫ বছরের জন্য। গড় প্রাপ্ত বয়স্ক, যাদের মানসিক সমস্যা নেই………………….. যদি নীতিমালার বিষয়ে কোন মতামত তৈরীতে সক্ষম হন এবং অন্তত এমনতরো কিছু করতে সক্ষম হন যাতে তার ব্যক্তিত্বকে প্রভাবিত করতে পারে।.প্রত্যেক বাড়িতেই খবরের কাগজ রাখে, তাছাড়া প্রায় সকল বাড়িতেই একটি করে রেডিও অথবা টেলভিশন সেট আছে। অতএব জনগণ রাজনৈতিক বিভিন্ন প্রশ্নে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহন করতে সক্ষম।  

<2.25.161>

 

পর্যায়ক্রমিক বৃদ্ধি

শতাব্দী ধরে বৃদ্ধির পর সিস্টেমটি পূর্ণ পরিপক্বতা অর্জন করেছে। তার উপাদেয় এবং সংবেদনশীল প্রকৃতি এই যে,  নির্বাচকমণ্ডলী বা নেতাদের অদক্ষতা দ্বারা কোনো পশ্চাতৎপদটায় ভুগতে চায় না।

 

তথ্য গণমাধ্যমের ভূমিকা

সেখানে একটি সতর্ক এবং কণ্ঠ্য প্রেস আছে যা সকল স্তরের মানুষকে অবগত এবং  শিক্ষিত করে। খবরের কাগজ পাঠ ব্রিটেনে একটি জাতীয় অভ্যাস। অসংখ্য এবং ব্যাপকভিত্তিক সংবাদ ও মতামত প্রচারের চ্যানেল রয়েছে। নির্বাহীর জনসমক্ষে অসাদচরণের ব্যাপারে খুব সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।

 

দ্বিদলীয় ব্যবস্থা

দ্বিদলীয় ব্যবস্থা যা মূলত ইতিহাসের একটা দুর্ঘটনা, এর একটি অংশ দেশে রাজনৈতিক অভ্যাস গঠন করেছে। সংসদীয় প্রক্রিয়া তার ‘দক্ষতা ও জীবনীশক্তি অনেক হারাবে যদি এটা  দুই দলের বেশি দলের সাথে কাজ করে, যেমন হয়েছে ফ্রান্সে। তৃতীয় ফরাসি প্রজাতন্ত্রের সংবিধান (১৮৭০-১৯৪০), ১৮৭০ সালের ড্রাফট, ঘনিষ্ঠভাবে ব্রিটিশ মডেল অনুসরণ করে, কিন্তু বড় সংখ্যক গ্রুপের অস্তিত্ব থাকায় ফ্রেঞ্চ পার্লামেন্টে ব্রিটেনের মত একক দলের মন্ত্রণালয় থাকার সকল সম্ভাবনা অচল করে দিয়েছে। বিভিন্ন মেজরিটির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত জগাখিচুড়ি ক্যাবিনেটে একে অন্যের উপর চড়াও হয়। ফ্রান্সের সংসদীয় ইতিহাসের ৩য় এবং ৪র্থ প্রজাতন্ত্র ফ্যান্টম মন্ত্রণালয়ের একটি পরিদৃশ্য। এই কারণে সংসদীয় সরকার একজন ব্রিটিশ ও ফরাসি কাছে ভিন্ন জিনিষ বোঝায়।

 

জনমত

ব্রিটিশ নেতৃত্ব জনমতে খুবই সংবেদনশীল। এই সংবেদনশীলতার ইঙ্গিত ব্রিটিশ ইতিহাসে পরিষ্কারভাবে অনেকবার দেয়া হয়েছে। জনাব এমসি ডোনাল্ড সংসদে সুবিধাজনক সংখ্যা গরিষ্ঠতা থাকার পরও ১৯৩৪ সালে বেকারত্ব সহায়তা রেগুলেশন তৈরি করেছিলেন। জনাব ব্যাল্ডউইনকেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার পরও ১৯৩৫ সালের হাবশী সংকটে স্যার স্যামুয়েল হোয়ারেকে কুরবানী দিতে হয়েছিল। ১৯৪০ সালে জার্মান আক্রমণের বিরুদ্ধে নরওয়ে রক্ষার জন্য এবং পশ্চিম ইউরোপের  মধ্যে জার্মান সামরিক অনু প্রবেশের বিরুদ্ধে ব্যর্থ প্রচেষ্টা দ্বারা নিজেকে জাহির করার জন্য জন অভিমত সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার পতনেরকারণ হয়। সম্প্রতি হিসাবে ১৯৫৬ সালে স্যার এন্থনি ইডেন তাঁর সুয়েজ ভেঞ্চার পর পদত্যাগ করতে হয়েছিল

যদিও সেখানে  কোন আনুষ্ঠানিক ভোট হয় নি, জনগণের দৃঢ় এবং জবরদস্ত প্রতিকূল মতামত প্রধানমন্ত্রী  যেতে বাধ্য করে।

 

ব্রিটিশ মেজাজ

ব্রিটিশ মানুষের খাপ খাইয়ে নিতে এবং আপস করার একটি অসাধারণ ক্ষমতা আছে যা একটি ক্ষেত্র তৈরি করে দেয় যেখানে রাজনীতি সামাজিক উত্থান ছাড়াই চলতে পারে। লর্ড বেলফোর বলেছেন. “গণতন্ত্র মৌলিকভাবে একটি মানুষ এক সময়ে আগে থেকেই উপলব্ধি করতে পারে যে তারা

নিরাপদে চালককে এবং তাদের নিজেদের সংযমকে সহায়তা করতে পারে তাই বিপজ্জনক রাজনৈতিক সংঘাতের বিভক্তিতে তাদের অসুবিধা হয় না। বেশিরভাগ ব্রিটিশ মানুষের মধ্যে এই অভিযোজন ক্ষমতার অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয় ১৯৪৫-৫০সালে লেবার সরকারের কল্যাণমূলক আইনের মাধ্যমে। প্রোগ্রামটি সম্পত্তি বিষয়ে একটি ভার্চুয়াল বিপ্লব এবং রাজনৈতিক পণ্ডিতরা  যেমন লাস্কি (Laski) এর মতে এসব সংস্কারের চেষ্টা সমগ্র সিস্টেম সহজে ধ্বংস  করে দিতে পারে। কিন্তু সিস্টেম বেঁচে গেছে। পরিবর্তিত অবস্থায় অভিযোজনের এর ক্ষমতা খুব কম সমাজই দেখাতে পেরেছে।

<2.25.162>

সংবিধানের কনভেনশন

অবশেষে, সিস্টেম বুঝতে পেরেছে যে ক্ষমতাধারীরা সম্মানের একটি কোড অনুসরণ করে। এই অলিখিত কোড নজির ও রীতিনীতিতে নিহিত থাকে, সম্মিলিতভাবে সংবিধানের নিয়মাবলী বলা হয়। কনভেনশন আইন নয় এবং তা প্রত্যাখ্যাত হতে পারে যখন তারা পরিবর্তিত চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে পারে না। করণীয় এবং করণীয় নয় উভয় রাজনৈতিক আচরণে তারা অঙ্গীভূত এবং প্রায়ই এমন কিছু করতে সক্ষম যা আইনের কোন কোড পূরণ করতে সক্ষম নয়। যদিও আইনত প্রয়োগযোগ্য নয়,  তা সত্ত্বেও তাদের সক্ষমতা মোটামুটিভাবে  নিয়মিত সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের মত জোড়ালো। তারা জনগণকে সার্বভৌমত্ব নীতির উপাদান দেয়। রাজনীতিবিদরা তাদের মান্য করে, এমনকি যদি এটা তাদের অফিস এবং কর্তৃত্বহারা করে তা সত্ত্বেও। নিয়মাবলী কিছু এরূপ: সংসদ সদস্যদের তাদের দল যাই হোক না কেন প্রলোভন ত্যাগ করবেন না; কোন মন্ত্রী যদি সহকর্মীদের সাথে যথাযথ সমঝোতা করতে না পারেন তাহলে শক্তি বজায় রাখা সম্ভব হয় না; কোন মন্ত্রিপরিষদ একটি প্রতিকূল সংসদীয় ভোটের পরিণতি এড়াতে পারে না। এই ব্যবস্থায় বিরোধী দল সরকারের অংশ। এটা নিছক বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা নয়। এটা মতাদর্শ ও নেতৃত্বের মধ্যে একটি স্পষ্ট বিকল্প উপলব্ধ। একটি সরকার সারাদেশে যখন তার নিয়ন্ত্রণ হারায় এটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।

অন্যান্য দেশে ব্রিটিশ সংসদীয় ব্যর্থতা সহজে বোঝা যাবে যদি আমরা ব্রিটেনে তার সাফল্যের ফোয়ারার চিনতে পারি। সিস্টেম এত স্পর্শকাতর যে এটা অকেজো অবস্থার অধীনে বিকাশ লাভ করতে পারে না. পাকিস্তানে অনেক ফাঁদ এড়ানো যেত, এটি উপলব্ধি করার সময় এসেছে।

 

পাকিস্তান সংসদীয় সরকারের ব্যর্থতার

সাংবিধানিক সরকারের নতুন কোন রূপ তৈরি হবার পূর্বে প্রথমে কারণগুলা যাচাই করা জরুরী যেগুলো পাকিস্তানের সাংবিধানিক সরকারকে ১৯৫৬ এর সংবিধান বাতিল পর্যন্ত নিয়ে গেছে এবং নির্ধারন করতে হবে এতে সরকারের অবদান কতখানি।

সংসদীয় ব্যবস্থার কিছু বন্ধু জোর দিয়েছিল যে সংসদীয় সরকারের কোন ব্যর্থতা ছিল না  এবং শুধুমাত্র যখন ১৯৫৬ সালের সংবিধানে সাধারণ নির্বাচনের পর পূর্ণ ভাবে সূচনা হয়ে যেত। তাদের মতে, ব্যর্থতার কথা বলা অন্যায্য, এট একটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা যা তার সম্পূর্ণতা জারি করা হয় নি এবং সত্যিই বিচার ছাড়াই দাফন করা হয়েছে। এর কারণ একটি সন্দেহজনক ভাবনা যেটি হলো এই যে ১৯৫৬ সালের সংবিধান দেশকেএকটি সম্পূর্ন নতুন সিস্টেম দিয়েছেন । কিন্তু আসলে সেটি ঠিক নয়।

আগস্ট ১৯৪৭ সালে, যখন পাকিস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে অস্তিত্বে এসেছিল ভারত সরকার শাসন আইন ১৯৩৫ এর  একটি অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। এই অভিযোজিত আইন পাকিস্তান সরকারের একটি টাইপ যা সাধারণত রাজত্বগুলোতে সংসদীয় সরকারের সাংবিধানিক কাঠামো সাদৃশ্য। ১৯৫৬সালের সংবিধানে সাধারণত ১৯৩৫এর অভিযোজিত আইনের প্যাটার্ন অনুসরণ করে।

<2.25.163>

 

এটা গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা কিছুটা খর্ব করে প্রাদেশিক সরকারগুলোকে ব্যাপকতর ক্ষমতা দিয়েছে। এতে রাষ্ট্রীয় নীতি নির্দেশিকা মূলনীতির একটি বিশদ বিবৃতি অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং ইসলামি আইনের সাথে সাদৃশ্য রেখে দেশের আইনসংক্রান্ত  পরিকল্পিত বিধানকে ডিজাইন করা হয়েছে। কিন্তু এই সংবিধানের মৌলিকত্বকে গুরুত্বের দিক থেকে খুব বেশী বিবেচনা করা হয়নি। এটা সাংবিধানিক মৌলিক প্রকৃতি নিয়ে নতুন কিছু আনেনি। এমনকি তার ভাষা অনেকাংশে ‘অভিযোজিত অ্যাক্ট’ এর মত একই ছিল। এটি বিদ্যমান সংসদীয় প্রতিষ্ঠানকে অক্ষত রেখেছে।

সংসদ বা মন্ত্রিসভা সিস্টেম দ্বারা কি বোঝানো হয় একটি পরিষ্কার ছবি দিতে তার প্রধান বৈশিষ্ট্য নীচে দেয়া হলঃ

১) রাষ্ট্র প্রধান মূলত একটি আনুষ্ঠানিক পদ যদিও তিনি নির্বাহীগণের কার্যাদি অনুমোদন করেন -মন্ত্রীদের কর্মের  উপর তাঁর কতৃত্ব থাকে। তার বিচক্ষণতা, যদি থাকে, অত্যন্ত পরিস্থিতি দ্বারা সীমাবদ্ধ এবং সীমিত।

২) নির্বাহী মন্ত্রীদের একট গ্রুপ আছে যাএয়া ক্যাবিনেটে একটি ইউনিট হিসেবে কাজ করে।

(এই দুটি জিনিস অনুমান করা যায়, প্রথমত সেখানে সমষ্টিগত দায়িত্ব এবং দ্বিতীয়ত দলের এক লোক একটা উদীয়মান ভূমিকা পালন করে এবং একটি অধিনায়কের কাজ করে-ইনিই প্রধানমন্ত্রী)

৩) মন্ত্রীরা আইনসভার সদস্য।

৪) মন্ত্রীবর্গ হলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যরা।

(যদি কোয়ালিশন সরকার গঠন করা হয় তবে মেজরিটি দলের মন্ত্রী সংখ্যা বেশি থাকে)

৫)  মন্ত্রী পদে বহাল শুধুমাত্র যদি তারা পরিষদের আস্থা ধরে রাখেন।

৬) মন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে তার অধীনস্থ পোর্টফোলিওর জন্য দায়ী এবং তার সঠিক ক্রিয়ার জন্য ক্রমাগত পরিষদের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।

১৯৫৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পাকিস্তানের অপারেটিং সরকার ব্যবস্থায় এই প্যাটার্ন অনুসরণ করলে এটা স্পষ্ট হবে। এমনকি বিশেষ করে ১৯৫৩সাল থেকে ঘটনাগুলোতে দ্রুত নজরে বোলালে, এটা বেশ স্পষ্ট হবে যে এই প্যাটার্ন সফলভাবে কাজ করে নি। সংবিধান কমিশন একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে।

 

ব্যর্থতার কারণসমূহ

সংবিধান কমিশন  বিষদভাবে সংসদীয় সরকারের ব্যর্থতার প্রশ্ন পরীক্ষা করেছে। এটা প্রশ্নমালা এবং বড় সংখ্যক সাক্ষাত্কার দ্বারা পরিচালিত ছিল। কমিশনের কাছে পাওয়া মত অনুযায়ী সংসদীয় সরকারের ব্যর্থতার কারণসমূহ নিম্নরূপঃ

১) সঠিক নির্বাচন এবং প্রয়াত সংবিধানের পূর্ণতার অভাব।

২) মন্ত্রণালয় ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্র প্রধান দ্বারা সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের রাজ্যগুলার মধ্যে সরকারের কাজকর্মের সঙ্গে  অযাচিত হস্তক্ষেপ।

<2.25.164>

 

৩) নেতৃত্বের দুর্বলতার ফলে দলে সুপরিচালনা ও সুশৃঙ্খলতার অভাব, রাজনীতিবিদদের  চরিত্রগত দুর্লবতা এবং প্রশাসনে তাদের অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ।

 কমিশনের মতে, ব্যর্থতার প্রকৃত কারণ, বরং প্রথম দুই গ্রুপের তুলনায় শেষে উল্লিখিত গ্রুপের মতামতে পাওয়া যাবে। একটি গবেষণায় অক্টোবর ১৯৫৮ সালে সাংবিধানিক সরকারের চূড়ান্ত পতনের এই বিষয় প্রমাণিত হয়েছে।

১) সঠিক নির্বাচনের অভাবঃ এটা বলা যায় না যে পরিষদ নির্বাচিত করা হয় নি। প্রথম গণপরিষদ পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয়, এটি সংবিধান প্রণয়নের জন্য অভিপ্রেত ছিল। এটি ১৯৫৪ সালে বিলোপ করার পূর্ব পর্যন্ত দপ্তরে অব্যাহত ছিল, এবং পরোক্ষভাবে নির্বাচিত একটি দ্বিতীয় গণপরিষদে প্রাদেশিক আইনসভা এর জায়গা নেয়।  যেহেতু এই পরিষদের পর রাজ্যে নির্বাচন সংঘটিত হয়েছিল, এটাতে অনেক নতুন সদস্য ছিল, যারা সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে রাজ্যে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে অফিসে আসেন। কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্কদের ভিত্তিতে ভোটদান রাজ্যে সম্পদশালী অথবা ভিন্ন ধরনের জনপ্রতিনিধি আনতে পারেনি। জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ নির্বাচনের পর একই প্যাটার্ন নিঃসন্দেহে পুনরাবৃত্তি হয়ে যেত।

২) রাষ্ট্র প্রধান দ্বারা হস্তক্ষেপঃ এই সময়ের মধ্যে সংবিধান কমিশনের দৃশ্য এরকমই ছিল যদিও রাষ্ট্র প্রধান হস্তক্ষেপ করেছিলেন,  কারণে তিনি করতে পেরেছিলেন ক্ষমতায় থাকা দলগুলোর মধ্যে শৃঙ্খলা ও সংহতি অভাবের জন্য। তারা আরো উল্লেখ করে যে সংসদীয় সরকার সেই সকল দেশেই কার্যকর যেখানে সাংবিধানিক একনায়কতন্ত্র রয়েছে, যেখানে রাষ্ট্র প্রধান কোন দলের সদস্য নন অথবা নির্বাচিত কিন্তু অফিসে এসেছেন উত্তরাধিকার সূত্রে। রাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রধান প্রথমত, কিছু রাজনৈতিক পার্টি জন্যে, এবং দ্বিতীয়ত,  তিনি অফিসে আসেন কারণ জনগণের আস্থা তার সাথে থাকে। এই ক্ষেত্রে, যদি উভয় রাষ্ট্র প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব হন, তাদের মধ্যে সংঘাত অনিবার্য। ভারত, যেখানে সংসদীয় ব্যবস্থা বলবৎ হয়, “বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার পর থেকে সম্পূর্ণরূপে রাষ্ট্র প্রধান, এটা তাৎপর্যপূর্ণ  যে এমন প্রশ্ন উঠে এসেছে বর্তমান ভারতীয় সংবিধানের অধীনে, সার্বভৌম ইংল্যান্ডের চেয়ে তিনি বেশি ক্ষমতাবান কিনা। ” সরকার একটি সংসদীয় ব্যবস্থা, একটি রাজ্য নির্বাচিত প্রধান সবসময় পার্টি রাজনীতিতে ক্ষমতাশীল, যদি তিনি এরূপ নীচে নামেন এবং রাজনৈতিক দলগুলো তার হস্তক্ষেপ গ্রহন করে-এই ত্রুটি সিস্টেমের অংশ হয়ে যাবে।

৩) দলীয় শৃঙ্খলার অভাব ও রাজনীতিবিদদের চরিত্রের দুর্বলতাঃ ১৯৫৩থেকে ঘটনাবলী দ্রুত এক নজরে দেখলে দেখা যাবে যে এটা নেতৃত্বের এবং সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল দলের অভাব এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে চরিত্রগত অভাব এবং প্রশাসনে অযাচিত হস্তক্ষেপ যা পাকিস্তানে সাংবিধানিক সরকারের চূড়ান্ত ভাঙ্গনের জন্য দায়ী।

১৯৫৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর অব্যাহতি

অ) এটা একটি সুপরিচিত নিয়ম যে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো ছাড়া তার অফিসে হারাতে পারে না। এপ্রিল ১৯৫৩সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, তাঁর দলের অবিসংবাদিত কমান্ডে ছিলেন। তিনি তার বাজেট সংসদের অনুমোদন  এবং লাহোর ব্যাঘাতের পর পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অপসারণ নিশ্চিত করার ব্যাপারে সামান্য অসুবিধাজনক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন। তবুও রাষ্ট্র প্রধান তাকে অফিস  থেকে আচমকা ছুড়ে ফেলেন এবং সরকার প্রধান তার নিজের প্রার্থীকে সে জায়গায় বসান। নতুন প্রধানমন্ত্রী একটি অজানা মুখ ছিল। এই উচ্চতায় পৌছানোর পূর্বে ৫ বছর তিনি দেশে ছিলেন না। তবুও মুসলিম লীগ সংসদীয় দলের পরিকল্পনানুসারে তার “বরখাস্ত” মুহূর্ত পর্যন্ত বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দিয়েছিল,  এমনকি আলোচনার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া গভর্নর জেনারেলদের পছন্দ সমর্থন করেছিল। তারা সরকারের নতুন নেতা প্রত্যাখ্যান দ্বারা  গভর্নর জেনারেলের জন্য একটি বিশ্রী অবস্থা সৃষ্টি করতে পারতেন। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর কি পার্টি সমর্থন নিখাদভাবে ছিল, এটি অসম্ভব্ যে গভর্নর-জেনারেল এরকম কিছু না বুঝে করবে। এটা সত্য যে নতুন সংখ্যাগরিষ্ঠ মন্ত্রিসভা  পূর্ববর্তী প্রশাসন থেকে আনা  হয়েছিল এই ইঙ্গিত দিয়ে যে, গভর্নর জেনারেলের ক্যাবিনেটে বন্ধু ছিল  যারা তাদের নামমাত্র প্রধান বিরুদ্ধে তাকে দিয়ে পাশ করার জন্য প্রস্তুত ছিল।

গণপরিষদের বিলুপ্তি (১৯৫৪)

খ) প্রধান দলের অভ্যন্তরে বিভক্তি গভর্নর-জেনারেলকে টাড় ক্ষমতার আরেকটি এবং আরও নাটকীয় বিবৃতি প্রদানে সমর্থ করেছিল। এটি ছিল গণপরিষদ ভেঙে দেয়া যা অক্টোবর ১৯৫৪ সালে এসেছিল।  এটা  দলগুলোকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে এবং দেশেকে বিস্মিত করে দেয়। এটা  আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে মুসলিম লীগের দীর্ঘ আধিপত্য অবসান করে। লীগাররা এটা সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ ছিল, কিন্তু তারা যেটা বিশ্বাস করত যে গভর্নর-জেনারেল অংশ ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তার বিরুদ্ধে কোনো সংগঠিত পদক্ষেপ নেয় নি। এটা  কৌতুহলী যে, পাঞ্জাব ও সিন্ধু মধ্যে সংক্ষুব্ধ পক্ষের কয়েকজন সদস্যের গভর্নর-জেনারেল ধন্যবাদ ভোট দেয় এবং দেশের ত্রাণকর্তা হিসেবে তাকে প্রশংসিত করা হয়।

 

পশ্চিম পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী (১৯৫৬)

গ) সংহতির প্রাক্কালে পশ্চিম পাকিস্তানে  ভিন্ন পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়।  গভর্নর জেনারেল তার ব্যক্তিগত বন্ধু হওয়ার জন্য ইন্টিগ্রেটেড প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে সুরক্ষিত করার প্রচেষ্টাকারী হিসেবে পরিচিত ছিল। তিনি এতদুদ্দেশ্যে প্রচারণা চালান এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কিছু নেতা থেকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি পান। এটি সংসদীয় অনুশীলনের বিপরীত ছিল। একটি সংসদীয় ব্যবস্থায়, প্রথা রাষ্ট্র প্রধানকে তার রাজনৈতিক পছন্দগুলি তৈরীর এবং রাজনীতিবিদদের দাবী চেপে ধরা থেকে বিরত রাখে।

প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বেছে নেওয়ার অধিকার সাংবিধানিকভাবে প্রাদেশিক আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের উপর অর্পিত ছিল যা এখনো অস্তিত্ব নাই বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।   মুখ্যমন্ত্রী মনোনীত দলে  যোগদানের জন্য প্রস্তুত ছিল না যার উপর সরকারের সমর্থন ছিল। নেতা সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের খেয়ালী সদস্যদের দূরে সরিয়ে তার নিজের দল গঠন করেন। কৌশলটি কাজ করে কারণ এর কুশীলবেরা দলের মধ্যে তাদের ইচ্ছা পূর্ণ না হওয়ার অসন্তোষ নিয়ে অবগত ছিল এবং এই অবস্থা থেকে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির ব্যাপারে আত্নবিশ্বাসী ছিল। 

 

<2.25.166>

 

আরও কিছু অনিয়মসমূহঃ

(ঘ) সরকারের তৃণমূলের নেতারা যখনই তাদের ক্ষমতা বিপদাপন্ন বুঝতে পারে তখনই তারা সরকারের প্রাথমিক নীতিগুলো উপেক্ষা করে, এড়িয়ে যায় কিংবা বিরোধিতা করতে থাকে। উপ-নির্বাচনের প্রতিকূল ফলাফল নিয়ে প্রাদেশিক মন্ত্রী এত ভীত ছিলেন, যা থেকে ঠিক হয়, একটি কারণে অথবা কিছু বছরের জন্য আইনসভার ফাঁকা থাকা ৩৪ টি আসনের একটিতেও নির্বাচন হবে না। একই প্রদেশে, একজন গভর্নর একটি ক্ষুদ্র দলের নেতাদের দ্বারা সরকার গঠন করে পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে সাংবিধানিক ব্যবহারের গুণ হারায়। ফলশ্রুতিতে, মন্ত্রী আইনসভায় ক্ষমতাবিহীন হয়েছিল। কেবল একটি বিভাগের ফলাফলে এটি টিকে থাকতে পারে না। শাসনতন্ত্র প্রলম্বিত করার মাধ্যমে এটি বিরহিত হয়েছিল এবং গভর্নর বাজেট “নির্ধারণ”-এর পর তা পুনঃস্থাপিত হয়। একইভাবে, রাষ্ট্রপতির শাসন পশ্চিম পাকিস্তান প্রদেশে জারি করা হয়েছিল যখন সে তার প্রিয় দল দ্বারা বিপক্ষকে অবমাননা করার ইচ্ছা করে, যে দল কিনা প্রতিটা ক্ষেত্রে মৌলিক নীতি ভঙ্গ করেছে এবং সরকারের নিয়ন্ত্রন ধরে রাখতে পুরাতন সকল প্রতিশ্রুতি পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা করে।

বস্তুত, তাই, স্থগিত প্রতিষ্ঠান অথবা অনুরূপ কিছুর পোশাকি যুক্তিগুলো সমর্থনের পক্ষের মানুষ দুর্নীতির সমার্থক, সঠিক কাজ করা, দ্বিমুখী আচরন করে এবং সুশৃঙ্খল সরকারের অনুপস্থিতি। এমনকি আমাদের কিছু সংখ্যক যদি আমাদের জনগোষ্ঠীর জন্য গনতন্ত্র চর্চার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে এখনও পুরাতন রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনে তাদের বিশ্বাস রাখে, তাদের স্বপ্ন সত্যি হতে পারে কেবল ব্যস্ততাহীন এবং সহনশীল পৃথিবীতে যা শত বর্ষ না হলেও কয়েক দশক ধরে চলমান একটি শুদ্ধাশুদ্ধি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদেরকে পরিত্রানের জন্য কাজ করতে সুযোগ দিত। তার আগে সাংবিধানিক কমিশনের পাওয়া সকল প্রমাণের সতর্ক বিবেচনার পর এই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল যে,

“……………সংসদীয় ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে আমাদের, হয় এর বিশুদ্ধতা কিংবা পরিমার্জন প্রস্তাবের একটি বিশাল ঝুঁকি চলমান রাখতে হবে এবং আমরা মনে করি না এই অবস্থায় আমাদের এমন ঝুঁকির সামর্থ্য পাব।”

রাষ্ট্রপতিশাসিত পদ্ধতি

সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার বিকল্প হিসাবে গনতান্ত্রিক সরকারের অন্য একটি সুপরিচিত এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা হচ্ছে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি। সংসদীয় ব্যবস্থা সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত উদাহরণ হিসেবে উন্নিত হয় কেবল গ্রেট ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা, এখানকার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সর্বাপেক্ষা পুরাতন এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় উদাহরণ।

রাষ্ট্রপতি সরকার ব্যবস্থায়, উদাহরণস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক রীতিতে প্রধান কার্যনির্বাহী, আইনসভা ও বিচারকগণের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন থাকে। ক্ষমতার এই বণ্টন নির্ভর করে স্বতঃসিদ্ধতা, কেন্দ্রের নির্দেশনা, যা একটি সরকারে মানুষের উপর মানুষ দ্বারা শাসিত হওয়ায় এতে একটি বিশাল প্রতিবন্ধকতা লুকায়িত আছেঃ আপনাকে অবশ্যই প্রথমে শাসিতকে নিয়ন্ত্রন করায় সরকারকে সক্ষম করতে হবে এবং পরবর্তী দায়িত্ব নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা। নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা সরকারের এমনই দায়িত্ব যে এই ক্ষমতার বণ্টন এবং সংশ্লিষ্ট ভারসাম্যে প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়। রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার মূলনীতিগুলো নিম্নবর্ণীতঃ

 

<2.25.167>

 

 

(১) আইনসভার রাষ্ট্রপতি স্বাধীনভাবে নির্বাচিত হয় এবং নির্বাচকরা তাকে সরকারের কার্য নির্বাহী কাজগুলি করতে সরাসরি ক্ষমতা প্রদান করে।

(২) সে কার্যক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকবে এবং আইনসভার সে তার কোন রাজনৈতিক কৌশলের বিপক্ষের একটি বিরোধী ভোট দ্বারা অপসারিত হতে পারবে না কিন্তু বিশেষ অভিশংসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হতে পারে।

(৩) আইন সভা স্বাধীনভাবে নির্বাচিত হবে এবং কার্যক্ষেত্র একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য থাকবে।

(৪) সংসদীয় ব্যবস্থার ন্যায়আইনসভার কার্যসমূহ কার্য নির্বাহী স্বাধীনভাবে করবে এবং প্রধান নির্বাহী তা বিলুপ্ত করতে পারবেন না।

(৫) আইনসভা হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন তৈরির কমিটি এবং কোন প্রস্তাবনাই কমিটির ভোট আইন হিসেবে পরিগণিত হতে পারবে না।

(৬) আইনগুলোর ব্যাখ্যার দায়িত্ব বিচারকগণের এবং কার্য নির্বাহী তাদের নীতিমালার আলোকে লিখিত সংবিধানে রূপ দানের জন্য নির্দেশ করে।

কার্যত, কার্য নির্বাহী ও আইনসভার মধ্যকার ক্ষমতার একটি পূর্নাজ্ঞ বণ্টন ব্যবস্থার কার্যক্রমকে অসম্ভব করে তুলত, এবং সত্যিকার অর্থে, যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থায় ক্ষমতার প্রকৃত বণ্টন হয় না। কার্যত কিছু ক্ষমতার মিশ্রন হচ্ছিল এবং তিন স্তর বিশিষ্ট সরকারের “বিচারিক অধিকার” বিলম্বিত ও হ্রাস পাচ্ছিল।

গবেষণায় সংসদীয় সরকারের ব্যর্থতার কারণ পূর্বে আলোচনা হয়েছে, যা পুনরায় উল্লেখ করা হলঃ

(১) রাষ্ট্র প্রধান, প্রধান কার্য নির্বাহী ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার মতবিরোধ।

(২) দলীয় শৃঙ্খলার অভাব এবং রাজনীতিবিদদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরন বৃদ্ধি পায় এবং সরকারগুলো পতন হয়।

(৩) দিন দিন কার্য নির্বাহীকে প্রশাসনিক কাজ করতে আইনসভার সদস্যরা হস্তক্ষেপ করেরাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছিল।

এসব বলার পর সাংবিধানিক কমিশন প্রস্তাব করে যেঃ

আমাদের এমন একটি সরকার থাকা উচিৎ যেখানে কেবল মাত্র একজন সব কিছুর প্রধান থাকবেন, তার উপর একটি স্বাধীন আইনসভার সদস্যদের দ্বারা একটি কার্যকরী নিয়ন্ত্রনের চর্চা থাকবে, যা হোক, তাদের ব্যাক্তিগত রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রশাসনের কাজে গুরুতর হস্তক্ষেপ করা হবে না। এই ব্যবস্থা রাষ্ট্রপতি সরকার ব্যবস্থায় রয়েছে যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফল… সংসদীয় ব্যবস্থার সাথে এই ব্যবস্থার মূল পার্থক্য হচ্ছে যে, পরেরটিতে যখন কার্য নির্বাহী প্রধান তার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সাহায্যের উপর একক ভাবে প্রতিনিয়ত নির্ভরশীল, রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থার রাষ্ট্রপতি একই ভাবে জনগণের প্রতিনিধি যিনি কার্য পরিচালনার জন্য আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল নন। যদি আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান তার বিপক্ষে যায়, যদি তিনি অচলাবস্থা এড়িয়ে যেতে পারেন তিনি হয়ত থাকতে পারবেন, কিন্তু একজন প্রধানমন্ত্রী, তা তার অবস্থানে যতই শক্তিশালী হন না কেন, যদি প্রতিকূল কিছু ঘটে এবং তার দলের বেশীরভাগ লোক সমর্থন তুলে নেয় তবে একদিনের ভেতর কোন সত্যতা ছাড়া সহজেই তার আসন নাড়িয়ে দিতে পারে। দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যকে তার অবশ্যই সন্তুষ্ট রাখতে হবে না হলে তাদের আগের অনেক মন্ত্রীর মত তারা তাদের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বেন। যেসব ব্যক্তি বিবেচনাধীন সময়ে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তারা যদি তাদের সমর্থকদের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল না হতেন তাহলে তারা সঠিক পথেই ছিলেন বলে আমরা মনে করি।

<2.25.168-172>

 

এ থেকে দেখা যায় যে প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থা পাকিস্তানে বিরাজমান অবস্থার জন্য উপযুক্ত। কিন্তু প্রেসিডেন্সিয়াল সিস্টেম ব্যর্থ সংসদীয় সিস্টেমের একমাত্র বিকল্প হিসাবে চিন্তা করা যায় না। একটি জাতি যার শুধু একটি ঔপনিবেশিক অতীত আছে, যার প্রধান প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক্য ও সামাজিক সংস্কার ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি উচ্চাভিলাষী প্রোগ্রাম, এসব অবস্থা বিবেচনায় প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি বিশেষ সুবিধাজনক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

 

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ বিচারে, প্রথমবারের মত একদল মানুষকে একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে ঐক্য বদ্ধ করে তোলা খুবই কঠিন একটি কাজ। আমাদের ক্ষেত্রে দুই অংশের ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা এটি আরো তীব্র করেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের বর্তমান সরকারকে একটি জাতীয় ঐক্যের ধারণা লালন পালন করতে সক্ষম হয় এমন অবস্থা কার্যকর করতে হবে। সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে ম্যান্ডেট নিয়ে একজন ব্যক্তিকে সকল নির্বাহী কর্তৃত্ব দান করার দ্বারা এই নতুন সিস্টেম বাস্তবায়ন সম্ভব হতে পারে।

 

দ্বিতীয়ত, আমাদের রাজনৈতিক বৃদ্ধি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। একটি পৃথক নির্বাহী ও আইনসভার সঙ্গে প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থা দাঁড় করানো, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ার চেয়ে তুলনামূলক সহজ হবে। যেহেতু নির্বাহী আইনসভার কোন সরাসরি সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল নয়। তাই ক্ষমতা সন্ধানে পদ্ধতি পরিবর্তন করলেও তা হবে অর্থহীন। তাই রাজনৈতিকদলের ইচ্ছা অনিচ্ছায় সরকারের গঠন কিংবা পতন ঘটবে না। অন্যদিকে আইনসভা সদস্যরা ক্ষমতার পিছনে না দৌড়ে জাতীয় ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য তাদের নিজেদের আসল কাজের প্রতি অধিকতর দৃষ্টি দিতে উৎসাহী হবে।

 

তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শুধুমাত্র একটি কার্যকর নির্বাহী পরিষদ প্রয়োজন হবে তারা দিনের পর দিন যে কোন চাপ উপেক্ষা করে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে এবং গতিময়তা আর বলিষ্ঠতার সাথে অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে।

তারা কোন কায়েমী স্বার্থ বা কোন দলের চাপ বা তাদের প্রতি আনুগত্য দেখাবে না। সংক্ষেপে বলতে গেলে, এই নির্বাহী অংশ জাতির কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, যদিও তারা জনমতের প্রতি সংবেদনশীল হবে। এটা আইনসভা কর্তৃক অপ্রয়োজনীয় হয়রানি থেকে মুক্ত হতে হবে।

ভোটাধিকার:

প্রাচীন গ্রীসের শহরগুলোতে সরাসরি গণতন্ত্র পদ্ধতি ছিল, যেখানে প্রতিটি নাগরিক বিনামূল্যে পরামর্শ এবং সিদ্ধান্ত দিতে পারত। কিন্তু এটি শুধুমাত্র একটি ক্ষুদ্র ব্লক বা এলাকায় বসবাসরত ছোট সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্ভব। কিন্তু অপেক্ষাকৃত বৃহৎ জনগোষ্ঠী এবং এলাকার মাত্রার কথা আমলে নিলে আধুনিক রাষ্ট্র সৃষ্ট অসংখ্য জটিলতা এবং সরকারকের ক্রমবর্ধমান দায়বদ্ধতা সহ নানা কারণে, আধুনিক গণতান্ত্রিক জাতিকে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে, যেখানে নাগরিকরা বিশেষ যোগ্যতার অধিকারী কিছু ব্যক্তিকে বয়স, সাক্ষরতা, সম্পত্তি, ইত্যাদি, দেখে জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে সরকারের হয়ে কাজ করবে। আর নির্বাচনই হবে এই অনুমোদনের জন্য যথাযোগ্য পদ্ধতি।

 

নির্বাচিত করার ব্যাপারে প্রধান দুটি তত্ত্ব রয়েছে। একটি তত্ত্ব হলো, এটা নেত্রীস্থানীয় নাগরিকের স্বাভাবিক ও সহজাত অধিকার যদি না সে নিজের আচার বা অন্যান্য সুস্পষ্ট অনধিকার চর্চা করে নিজেকে অযোগ্য করে। অন্যটি হল, একটি সহজাত অধিকার নয় বরং একটি পাবলিক অফিসের কর্মচারীর মত জনগণের ভালোর জন্য কাজ করতে সক্ষম হবে বলে মনে করা যেতে পারে। সংবিধান কমিশনের মতে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যাবস্থায় আজকাল রাজনৈতিক বিজ্ঞানীরা দ্বিতীয়টিকেই যথার্য ও উপযুক্ত বলে গ্রহণ করেছেন। যাই ঘটুক না কেন, দেখা যাবে যে সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ধারণা রাজনৈতিকমঞ্চে একটি আপেক্ষিক নতুন দিক হিসাবে বিবেচিত হবে। প্রায় প্রতিটি দেশে ভোটাধিকার একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ,  ইংল্যান্ডে দেখা যাবে যে ভোটাধিকার সম্প্রসারণ শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে হাতে হাতে পৌঁছে গেছে।

 

 

শিক্ষার হার প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকার

সংবিধান কমিশন উল্লেখ করেন:

 

“আমাদের দেশে সাম্প্রতিক গণনা অনুযায়ী শিক্ষিতের শতকরা হার মাত্র পনের। এবং সে কারণে ইংল্যান্ডের সাথে তুলনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন হবেনা। খুব কম সংখ্যক ব্যক্তি আছেন যারা সংবাদপত্র পড়েন, এবং ভোটের প্রতি জনগণের উৎসাহ ও সচেতনতাও অনেক কম। সরকারের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সার্বজনীন ভোটাধিকারের পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশে অনুষ্ঠিত গত নির্বাচনে শুধুমাত্র ৩৭.২ শতাংশ ভোট পড়ে। পশ্চিম পাকিস্তানের সম্পর্কে এরকম তথ্য না থাকলেও এটা সহজেই অনুমেয় যে সেই সংখ্যাটাও এর চেয়ে বেশী হবে না।’’

 

এমতাবস্থায় দেখা যায় ভোটাধিকারে মানুষ যে সুযোগ পায় তা সঠিকভাবে তাদের ভালোর পক্ষে প্রতিফলন করতে তারা ব্যর্থ হয়। এমনকি যদি নির্বাচনের প্রক্রিয়া অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, প্রার্থীও তাদের সমর্থকরা এই নির্বাচনে সঠিকভাবে ভোটও দেয়, শুধুমাত্র ভোটারদের অজ্ঞতার কারণে এই পদ্ধতির সংবেদনশীলতা সঠিক মূল্যায়ন হবে না। এটা সুস্পষ্ট যে জাতীয় সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে এমন ব্যক্তির মতামত কখনই মঙ্গলজনক হবে না যে তার নিজের গ্রামের বাইরে কি ঘটছে সে ব্যাপারে কোন জ্ঞান রাখে না।

 

অতএব, সংবিধান কমিশন প্রস্তাব করেন, যেহেতু একটি মানসম্মত ভোটের প্রস্তুতি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, তাই বর্তমানে কিছু মৌলিক চাহিদার দিকে গুরুত্ব দিয়ে একটি ইলেক্টোরাল কলেজ এর আয়োজন করা যেতে পারে। তবে ভবিষ্যতের জন্য তারা পরামর্শ দেন যে ভোটাধিকার সেই সব নাগরিকদের থাকা উচিত যারা পাকিস্তানে নিম্নলিখিত যোগ্যতার অধিকারী-

(ক) পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষা অর্জন করেছে। যা তাদেরকে পড়তে এবং বুঝতে সাহায্য করবে প্রার্থীদের সম্পর্কে প্রকাশিত যোগ্যতা যাচাই করতে এবং তারা তাদের নিজ নিজ যথার্থতা হিসেবে তাদের নিজস্ব রায় দিতে সক্ষম হবে। অথবা –

(খ) যাদের যথেষ্ট সম্পত্তি আছে অথবা অংশীদারীত্ব আছে – এতে করে তারা তাদের জন্য উপযুক্ত প্রতিনিধি নির্বাচন করতে আগ্রহী হবে।

 

 

 

শিক্ষার হার সম্পত্তিযোগ্যতা:

 

খুব প্রায়ই দেখা যাবে যে, এই ধরনের যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষকে নিজেদের কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ হিসেবে বিবেচনা করা হয়না। এছাড়াও, শিক্ষিত এবং সম্পত্তিওয়ালা শ্রেণীর মানুষের চিন্তাধারার সাথে সাধারণ জনগণের মনোভাব মেলেনা। কিন্তু আমাদের মূল প্রয়াস হল সরকারকে এমন একটি রূপ দেয়া যাতে মানুষ বৃহৎভাবে উপকৃত হয় এবং তাদের মঙ্গল ও সুখ বৃদ্ধি পায়।

 

অবস্থা এমনও হবে যে তারা সহজেই বাস্তবে তাদের বিতর্কিত করবে এবং ক্ষমতার হস্তক্ষেপ করবে। সাক্ষরতাকে একটি আনুষ্ঠানিক তা হিসাবে নিয়া যেতে পারে এবং রাজনৈতিকদল এমন লোক যত বেশী থাকার ভিত্তিতে নিবন্ধন প্রাপ্ত হতে পারে। সম্পত্তিযোগ্যতা পরিমাপের জন্য সারাদেশে কিছু প্রমাণমাপের ইয়ার্ডস্টিক প্রয়োজন হবে। সাক্ষরতা পরীক্ষার ক্ষেত্রে মুখোমুখি অনুরূপ সমস্যার মত সমস্যার সম্মুখীন এখানেও হতে হবে।

 

 

 

মৌলিক গণতন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন:

 

অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থা সংবিধান কমিশন কর্তৃক প্রণীত প্রস্তাবনার চেয়ে ভালো। প্রথমতঃ, এটা সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের উপর ভিত্তি করে তৈরি। দ্বিতীয়ত, এতে সম্প্রদায়ের কল্যাণ ও সেবা দানে আগ্রহী মানুষ নির্বাচনের উপর একটি আলাদা উৎসাহ রাখে। প্রার্থীরা ব্যক্তিগত ভাবে ভোটারদের কাছে পরিচিত থাকে এবং এতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্য থেকে ভোটাররা পছন্দ করার সুযোগ পায়।

 

 

এই অবস্থার অধীনে যারা নির্বাচিত হয়ে আসে তারা অনেকটা উজ্জীবিত থাকে এবং দেখা যায় তারা ঐ সমাজের একজন উচ্চতর স্তরের মানুষ। এই সত্যটি মৌলিক গণতন্ত্রতে গত নির্বাচনে লক্ষ্য করা যায়। যে দেশে শিক্ষার হার ১৫ শতাংশ, ৮৪ ভাগের বেশী মানুষ যাদের নির্বাচিত করেছে তারা হয় নিম্নমধ্যবিত্ত বা সমাজের উচ্চস্তরের লোকজন। এ ধরনের নির্বাচিতরা অবশ্যই জাতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিতে যাবে এবং সরকারের কঠোরতর সমালোচক হবে যদি তারা মনে করে যে গৃহীত নীতি দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করছে – যা দেশের সাধারণ মানুষ যারা অল্পশিক্ষিত ও সংবাদ – তথ্য বঞ্চিত তাদের জন্য মঙ্গলজনক।

 

এখানে মনে রাখতে হবে, মৌলিক গণতন্ত্র চর্চা এখনো নতুন এবং অভিজ্ঞতাহীন প্রতিষ্ঠান। সেজন্য কিছু লোক এর গুরুত্ব উপলব্ধি করেনি এবং কিছু লোক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেনি। ফলাফল আরও খারাপ হতে পারত। ভবিষ্যত নির্বাচনের সময় এগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।

 

 

 

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমূহের উপর পরোক্ষ নির্বাচনের প্রভাব:

 

স্থানীয় সরকারের সঙ্গে পরোক্ষ নির্বাচনের সমন্বয়ের ব্যাপারে আপত্তি ছিল। সব অসুবিধা বিবেচনায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হবে এবং রাজনীতিকরন হবে বলে আওয়াজ ওঠে। এটা যে শুধু সুদূর কল্পিত আশঙ্কা তা নয় ভ্রান্ত ও বটে। এসব প্রতিষ্ঠানে যে সব সমস্যা আসে সেগুলো মূলত স্থানীয় ধরণের এবং শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব ছোট জনগোষ্ঠীর জন্য তার স্থানীয় গুরুত্ব রয়েছে। জাতীয় নীতি পর্যায়ে স্বার্থ ইউনিয়ন পরিষদ / ইউনিয়ন কমিটি দ্বারা ব্যাহত হয় না। এসব প্রতিষ্ঠান মূলত এমন কাজ, উন্নয়ন, সমাজ সেবায় নিয়োজিত থাকে যা ঐ ছোট এলাকার মধ্যে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক হয়।

 

 

বস্তুত, মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থার শক্তি নিহিত থাকে নির্বাচত লোকদের নিয়ে গঠিত ইলেক্টরাল কলেজে যেখানে তাদের মূল লক্ষ্য থাকে সম্প্রদায়ের কল্যাণ সাধন ও উন্নীত করন। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে ও তারা অনুরূপ মনোভাব ও যোগ্যতা প্রদর্শন করবে।

 

অপরপক্ষে, যখন নির্বাচনী কলেজ স্থানীয় সরকার পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, তখন সেটা সম্পূর্ন একটি রাজনৈতিক ফোরামে পরিণত হয় এবং এটা যাচাই করার উপায় থাকে না যে তারা জনস্বার্থ কাজ চালিয়ে যাবেন। জনগণের কাছে এটি অর্থহীন হয়ে পড়ে। কারণ যে উদ্দেশ্যে নির্বাচনী কলেজ গঠিত হয় তার থেকে তাদের নিজ চাহিদার দূরত্ব অনেক বৃদ্ধি পায়। ফলে এই নির্বাচন হয়ে পড়ে একটি নিছক আনুষ্ঠানিকতা এবং এই সিস্টেমটি অপরিবর্তনীয় ভাবে রাজনৈতিক চক্রান্ত এবং দুর্নীতির জন্য একটি বাহন হয়ে ওঠে।

 

জাতীয় সংসদের ক্ষুদ্র আসন বিন্যাস:

 

নির্বাচনের বিপক্ষে দ্বিতীয় আপত্তি হল ভোটারদের তুলনায় আসনের স্বল্পতা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচনী কলেজের উপর এই আপত্তি থাকে না – কারণ যেখানে বর্তমানে প্রায় ৮০, ০০০ লোক আছে ও ভবিষ্যতে সম্ভবত ১,২০, ০০০ হতে যাচ্ছে – তারা কোনভাবেই সহজ ম্যানিপুলেশন করতে সক্ষম হবে না।

 

আইনসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে, প্রতিটি আসনে বর্তমানে প্রায় ৫০০ ভোটার অন্তর্ভুক্ত এবং ভবিষ্যতে ৭৫০ করা হবে। তাই এখানে আপত্তি আসতে পারে। এটা অবশ্য মনে রাখা দরকার যে, প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতিতে আইনসভার ক্ষমতা সরাসরি নির্বাহী প্রভাবিত করার সুযোগ নেই। নির্বাচনের উদ্দেশ্য, আইনসভা- যা সংসদীয় ব্যবস্থায় পরিচালিত হবে – যেখানে নির্বাহী সরাসরি আইনপ্রণেতাদের ওপর নির্ভরশীল ছিল- সেটিও এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

 

আইনসভায় সংসদীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকার প্রভাবিত করার সুযোগ থাকে বলে অনেকে এটাকে বিনিয়োগ হিসাবে নেয়। এতে সরকারকে দিয়ে ক্ষমতা অপব্যবহার করে তার নিজের বা দলের লোকদের সুবিধা দেয়ার সুযোগ থাকে। নতুন ব্যবস্থায় আইনসভার নির্বাচনে এমন সুবিধা লাভের কোন সম্ভাবনা থাকবে না। তাই এটিকে একটি ব্যবসা উদ্যোগে সরাসরি আর্থিক বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করা হবেনা। এছাড়াও, যারা মৌলিক গণতন্ত্র থেকে নির্বাচিত হয়ে আসবেন তারাও সেবা করতে উদগ্রীব হবেন এবং সমগ্র প্রতিষ্ঠানটি এক হয়ে জনস্বার্থে কাজ করতে পারবে। এ অবস্থায়, ইলেক্টোরাল কলেজের মধ্যে দুর্নীতি ও চক্রান্ত কোন নির্বাচনের ফলাফল মীমাংসাকারী প্রভাবের হতে পারবে না।

 

এটি মনে রাখা দরকার যে নির্বাচনী কলেজের প্রতিটি সদস্য কিছু ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মানুষ দ্বারা নির্বাচিত, প্রায় ৫০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক, যেখানে একটি সাধারণ ওয়ার্ডে থাকে ৮০০- ১২০০ লোক। এতে নির্বাচিত ব্যক্তি প্রতিবেশীদের চোখে চোখে থাকবেন এবং তিনি যদি কখনো ঘুষ দিয়ে ভোট দিতে বলেন সেটাও জনসাধারণের কাছে ছড়িয়ে পরবে। এবং সে তার নিজের সম্প্রদায়ের কাছে ঘৃণিত হবেন, এবং পরবর্তী নির্বাচনে তার আস্থা ও বিশ্বাস হারাবেন।

 

 

বুদ্ধিজীবি সমাজে বাদ পড়ার অনুভূতি:

 

মৌলিক গণতন্ত্র নির্বাচনী অধিকার নিশ্চিত করলেও এটা সম্ভব যে বুদ্ধিজীবীরা নির্দিষ্ট বিভাগে জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে বাদ অনুভব করতে পারে। কিন্তু বর্তমান সাংবিধানিক ব্যবস্থা চিরস্থায়ী বা অনমনীয় নয় এবং কিছু পদ্ধতি নিঃসন্দেহে যথাসময়ে ঠিক করে তাদের বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যেতে পারে। সেটা করতে যেয়ে শহরে, একটি নেতৃত্বের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট যোগ্যতাকে গুরুত্ব দেয়া সম্ভব – এবং এখানে শুধুমাত্র শিক্ষা বা সম্পত্তিযোগ্য তাকেই বিবেচনার মাপকাঠি করা ঠিক হবে না। মৌলিক গণতন্ত্রে জাতীয় এবং প্রাদেশিক স্তরে নেতৃত্ব নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে কেনোনা নির্বাচনের পরোক্ষ সিস্টেমে এসব প্রতিষ্ঠান আমাদের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী যারা গ্রামে বাস করে তাদের উপর কার্যকর উপায়ে প্রতিনিধিত্ব চালিয়ে যাওয়ার নিমিত্তে একটি শ্রেষ্ঠ উপস্থাপনা।

 

অবিলম্বে নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা:

আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন হচ্ছে অবিলম্বে সাংবিধানিক সরকার ফিরিয়ে আনা। যদি অন্য কোন নির্বাচনী ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়, তাহলে একটি ভালো মানের ভোটের প্রস্তুতি ও নির্বাচন করতে কয়েক বছর লেগে যাবে – তাই এই বিলম্ব পরিহার করতে হবে। মৌলিক গণতন্ত্রে নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা গঠিত নির্বাচনী কলেজ অবিলম্বে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং সহজ পদ্ধতি। এই কারণে, সংবিধান কমিশন পরামর্শ দেন যে এই পদ্ধতি বর্তমান নির্বাচনের জন্য গ্রহণ করা উচিত।

Scroll to Top