১৯৮. অক্টোবর সম্পাদকীয় এবং একটি প্রবন্ধ

দীপংকর ঘোষ দ্বীপ

<৬,১৯৮,৩৪৪>

শিরোনামঃ সম্পাদকীয় এবং একটি প্রবন্ধ

সংবাদপত্রঃ মুক্তি* ১ম সংখ্যা

তারিখঃ ১ কার্তিক, ১৩৭৮ (অক্টোবর, ১৯৭১)

[মুক্তিঃ মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক মাসিক সাহিত্যপত্র। সম্পাদকঃ শারফুদ্দীন আহমেদ। প্রদীপ্ত সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রচারিত। পত্রিকাটি শত্রুসেনা পরিবেষ্টিত বাংলাদেশ হতে সাইক্লোস্টাইলে প্রকাশিত।]

                                         সম্পাদকীয়

       বাংলাদেশে আজ যুদ্ধ । যুদ্ধের পটভূমিতে সাহিত্য রচনা আজ বাংলার লেখক-লেখিকাদের অবশ্যকর্তব্য । অধিকৃত বাংলার প্রগতিবাদী সাহিত্যিকরা যুদ্ধের মাঠে অস্ত্র ধরেছে । অস্ত্রের ভাষায় কলম ধরেছে । তারই কলম এই “মুক্তি” পত্রিকা ।

                           বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে গণসাহিত্য

       বাংলাদেশের পরিবর্তিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সাহিত্যের মুক্তি অবশ্যম্ভাবী । দেশে এখন যুদ্ধ চলছে । এটা মানুষের মুক্তির যুদ্ধ । অনেক বছরের শোষণের প্রতিবাদে শান দেওয়া হাতিয়ার চকচকে । জনতার সাগরে জাগবে বাংলার এক প্রান্ত-পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে অন্য প্রান্ত পঁচাগড়া পর্যন্ত জনবসতি মুখরিত । তাই সাহিত্যের অঙ্গনে একটা সুস্পষ্ট পরিবর্তন যুদ্ধের অস্ত্রের মত প্রয়োজনীয় । কেননা সংস্কৃতি হচ্ছে বিপ্লবের হাতিয়ার । তবে সেই সংস্কৃতি নয় যা গণমানুষের প্রগতি বিমুখী ।

       সাহিত্য সংস্কৃতির একটি অংশ । তাই বর্তমান অবস্থাতে সাহিত্য মূল্যবোধ অনস্বীকার্য । আর সেই সাহিত্য হতে হবে গণসাহিত্য । জনতার প্রয়োজনে অগ্রগতির জন্য যে সাহিত্য তাই গণসাহিত্য ।

       বাংলাদেশের মানুষ এখন মুক্তি চায় । সমস্ত পরাধীনতার আবদ্ধ থেকে সে মুক্তির দাবী । বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে তারই একটি বলিষ্ঠ আভাষ যাকে স্পষ্টতর করার জন্য সাহিত্যের দরকার । এ দেশের যুবকের শিক্ষা অঙ্গন ছেড়ে দিয়ে মাঠে নেমেছে । এ মাঠ যুদ্ধের মাঠ যাকে অতিক্রম করতে অসীম ধৈর্য্য আর সুস্থ মানসিকতার প্রয়োজন । সুস্থ্য মানসিকতা শিক্ষা আশ্রয় করেই গড়ে ওঠে । সে শিক্ষা গণসাহিত্যের শিক্ষা । গণসাহিত্য জনতার বিপ্লবের পথকে বাতলে দেয় । বাস্তবতাকে আশ্রয় করে গণসাহিত্য গড়ে ওঠে । এটা প্রয়োগধর্মী বিজ্ঞানের ওপর বিশ্বাসী। গণসাহিত্যের ধারা বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদের ওপর নির্ভরশীল । আমরা জানি আমাদের সমাজে জড়বাদ মজবুত করে শিকড় গেড়ে আছে । মানুষের রক্ষণশীল চিন্তা সমাজের প্রগতির পথ ব্যাহত করেছে । ধর্মের সুন্নাহ- রক্ষণশীলবাদের প্রশ্রয় দিচ্ছে যাকে ভেঙ্গে ফেলতেই হবে । আর এ দায়িত্বের একটা অংশ গণসাহিত্যের ।

       আজকের তরুণদের মন ও মানসিকতার পরিবর্তন ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ সঠিক গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না । আর এই পরিবর্তনের দায়িত্বটা নেবে গণসাহিত্যিক ।

       সূর্য্যের আলোর মত গণসাহিত্য গ্রাম বাংলার প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি তরুণ মনে ছড়িয়ে পড়ুক । মোহমুক্তি হোক তাদের মন ও মানসিকতার । দেখি কে আমাদের মুক্তিকে অবদমিত করে ?

Scroll to Top