২১৮. ১১ ডিসেম্বর জনসভা

কম্পাইলারঃ সহুল আহমদ মুন্না

<৬,২১৮,৩৬৮-৩৬৯>

শিরোনামঃ জনসভা

সংবাপত্রঃ জাগ্রত বাংলা, ১ম বর্ষঃ ৮ম সংখ্যা

তারিখঃ ১১ ই ডিসেম্বর, ১৯৭১

 

                                    জনসভা
আঙ্গার বাজার,২৬শে নভেম্বর।
বিকেল ৫টায় কমিউনিটি সেন্টার প্রাঙ্গনে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন  মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ। তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, সর্বহারা বাংলার স্বাধীনতার জন্যে আমরা যুদ্ধকরছি,যুদ্ধ করে যাব; দুর্ভাগা বাংলাদেশকে প্রাণের বিনিময়ে হলেও মুক্ত করব।

 

এক ঘোষণায় মেজর আফসার বলেন, শহীদদের পবিত্র নামের স্মরণে, আমলীতলাকে মমতাজ নগর, মল্লিক বাড়িকে মান্নান নগর, ঢালুয়াকে জহির নগর বলে ডাকা হবে।
মজুতদার ও মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে মেজর আফসার কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, সমাজের মুষ্টিমেয় ধনিক ব্যাক্তি যারা মুনাফাবৃত্তি নিয়ে ৪০/৫০ টাকা দরে ধান বা টাকা লগ্নি করছে তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের  তরফ থেকে সমুচিত ব্যবস্তা গ্রহণ করা হবে। তাদের দিন শেষ হয়ে গেছে। এখনও নিবৃত্ত না হলে কঠিন শাস্তির হাত থেকে এদেরকে কেউ বাঁচাতে পারবেনা।

রাজাকারদের অচিরেই আত্মসমর্পণ করার নিরদেশ দিয়ে তিনি বক্তৃতা সমাপ্ত করেন।
                                       

                     জনসভা
                                     ভালুকা

১০ই ডিসেম্বর। চারটায় স্কুল প্রাঙ্গনে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। পরিচালনা করেন অধিনায়ক আফসার উদ্দিন আহমেদ। সভায় বক্তৃতা করেন ‘জাগ্রত বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি জনাব কুতুবুদ্দিন আহমেদ, ভালুকা থানার সি,ও, (রেভ) সাহেব ও জনাব ওমর আলী এবং আরও অনেক  গণ্যমান্য ব্যাক্তিগণ।

জনাব হাফিজউদ্দিন শহীদদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, বাঙ্গালীর এ সংগ্রাম প্রকৃতপক্ষে শুরু হয়েছিল বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে। মায়ের ভাষাকে সরকারী ভাষায় প্রতিষ্ঠীত করার দাবী নিয়ে তারা পাকিস্তানী শাসকদের কাছ থেকে উপহার পেয়েছিল বুলেট ও বেয়নেট। তখন থেকে আজ পর্যন্ত বাঙ্গালী রক্ত দিয়েই চলেছে। আর এর ফলেই জন্ম নিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ।
তিনি জনগণকে হুঁশিয়ারি জ্ঞাপন করে বলেন, আমাদের এই স্বাধীনতা যেন পাকিস্তানের মত পর্যবসিত না হয়। ৪৭ সালে আমরা পাকিস্তান চেয়েছিলাম শোষণের অবসানকল্পে, আমাদের মধ্যেই অপর এক শ্রেণী স্বাধীনতা চেয়েছিল শোষণের রাজত্ব বহাল ও মজবুত করার জন্যে। আজ সে সব চোর গুন্ডা বদমায়েশদের আমরা নির্মূল করছি সত্যিকার স্বাধীনতার আশায়,শোষনহীন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের উদ্যেশ্যে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, অর্থনৈতিক মুক্তিই প্রকৃত মুক্তি। যে বৈষম্যের পাহাড় পাঞ্জাবী শোষকেরা গড়ে তুলেছিল, তাদের কবর হল তাঁরই নিচে। এটা ইতিহাসের কাছ থেকে শিক্ষনীয় বস্তু। জনগণ যে লক্ষ্যে পৌঁছার জন্যে সংগ্রাম করে, যে লক্ষ্য থেকে সামান্যতম  বিচ্যুতিও পতন ঘটায় স্বৈরাচারী পশুশক্তির।
জনাব হাফিজউদ্দিন বলেন, আমরা এখন স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে; কিন্তু আসলে এটাই আমাদের শুরু, দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে গড়ে তুলতে হবে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের ওপর ভিত্তি করে। এর জন্যে প্রয়োজন আরও চেতনাশীল হওয়া।
পরিশেষে তিনি দৃষ্টান্তসরূপ ভালুকার তথাকথিত ‘বাঘ’-এর ল্যাজ গুটিয়ে কুক্রের ন্যায় পশ্চাদপসরণের ব্যাপারটি উল্লেখ করেন। জনগনের সম্মিলিত শক্তি এইভাবে চারিদিকে পতন ঘটিয়ে চলেছে অত্যাচারীর। তারা পিছনে ফেলে যাচ্ছে মানুষকে শোষণ করে জমিয়ে তোলা বিপুল ধন সম্পদ। কিন্তু তবু তারা রেহাই পাচ্ছে না,কারণ গণ-আন্দোলনের প্রখর সূর্যালোক প্রতিটি চুলেরও ছায়া পড়ছে।
মেজর আফসারউদ্দিন সভাপতির ভাষণে জনগণকে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্যে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বিভাগের সাথে অসামরিক জনতার অবিচ্ছেদ্য সম্পরকের ওপর তিনি বিশেষ জোর দেন।
——————————————————————–
বিপুল হর্ষধ্বনি, স্লোগান ও করতালির মাধ্যমে সভার কাজ সম্পন্ন হয়। সবশেষে শহিদদের আত্মার মাগফেরাত ও চুড়ান্ত বিজয়ের জন্যে পরম করুণাময়ের কাছে মুনাজাত করা হয়।
* * * * * * * * *
কয়েকটি নির্দেশ
১। মুক্তিবাহিনি ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মিত্র বাহিনীকে সাহায্য করুন।
২। কালবাজারির আশ্রয় নিবেন না; বাংলাদেশ সরকার কালবাজারিকে কোনদিন বরদাশ্ত করবেনা।
৩। পশ্চিম পাকিস্তানি জিনিসপত্র পরিহার করুন।
৪। অপরাধীদের শাস্তির ভার কোন অবস্থাতেই নিজের হাতে নেবেন না। বাংলাদেশ সরকারি অপরাধিদের বিচার করবেন।
৫। বংলাদেশ বেতার শুনুন।
-বাংলাদেশ সরকার

Scroll to Top