২৬৮. ২৫ নভেম্বর প্রতিধ্বনি

কম্পাইলারঃ হিমু নিয়েল 

<৬,২৬৯,৪৫৭>

সংবাদপত্রঃ অভিযান ১ম বর্ষঃ ২য় সংখ্যা

তারিখঃ ২৫ নভেম্বর, ১৯৭১

.

প্রতিধ্বনি

(রাজনৈতিক পর্যালোচনা)

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজুদ্দিন আহমেদ গত ২৩শে নভেম্বর বেতার ভাষণে বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ভারত পাকিস্তান বিবাদে পরিণত করার পাকিস্তান কিংবা পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষক সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি দুরভিসন্ধি বাংলার জনগণের ঐক্যবদ্ধ জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের মুখে বানচাল হয়েছে। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছেন ‘বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহনযোগ্য ব্যবস্থা একটিই- আর তা হলো পূর্ণ স্বাধীনতা।’ এই পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিতে বাংলার জনগণ লড়েছে এবং পূর্ণ স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে আদায় করেই ছাড়বে।

.

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে আরো বলেছেন, ‘স্বাধীনতার ধারণা অশেষ অর্থগর্ভ। স্বাধীনতার তাৎপর্য নির্ভর করে যুদ্ধাবস্থায় আমরা কি মূল্য দেই এবং শান্তির সময়ে এর কি ব্যাবহার করি তার উপর।’ তাঁর বক্তব্যের নির্গলিতার্থ, আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধে প্রচুর আত্মত্যাগ করেছি এ জন্য যে তার বিনিময়ে একটি শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধশালী সমাজ আমরা প্রতিষ্ঠা করবো। একটি সুন্দর স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা রচনা করার আত্মত্যাগ, যে ক্লেশ ভোগ প্রয়োজন তা আমাদের আবশ্যক করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য সম্প্রসারণ করে আরো কিছু কথা বলা প্রয়োজন। বাংলাদেশের কতিপয় মানুষ (যদিও তারা সংখ্যায় অল্প) যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তাদের কাছ থেকে যা প্রত্যাশিত ছিলো সে ধরণের কর্ম কিম্বা আচরণ করেননি। এতো এতো রক্তপাত, এতো আত্মত্যাগ, এতো বীরত্বব্যঞ্জক সংগ্রামেও তারা ক্ষুদ্র স্বার্থের কথা ভুলে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে নিজেদের প্রয়াস প্রযত্ন জড়িত করেননি। এখনও অনেকের কর্ম এবং চিন্তাধারা বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের বদলে ক্ষুদ্র আত্মসার্থের খাতেই প্রবাহিত হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখের বিষয়। যারা এ ধরণের কাজ কর্ম করে যাচ্ছেন, তাঁরা হয়তো মনে করে থাকতে পারেন, সংগ্রাম এবং নৈরাশ্যের ডামাডোলে অনেকের অনেক অপকীর্তিই ধামাচাপা পড়ে যাবে। স্বাধীন বাংলাদেশে এর জন্য তাদের কোনরকম জবাবদিহি করতে হবে না। এ ধারণা পোষণ করে যদি তাঁরা নিশ্চিন্তবোধ করতে চান, তা হলে ভুলতে হয়, সময় সবকিছু ফাঁস করে দেবে। সুতরাং সময় থাকতে সাবধান হওয়া ভাল।

.

আমাদের সংগ্রামের লক্ষ্য স্বাধীনতা। স্বাধীনতা পেলেই আমাদেরকে শান্তি সম্প্রীতিতে ভরপুর একটি সমৃধ্যশালী সমাজ নির্মাণে আত্মনিয়োগ করতে হবে। শুরু থেকেই আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ সে লক্ষ্যে ধাবিত করা উচিৎ। চিন্তার একমুখিতা কাজে শৃঙ্খলা আনবে। নচাৎ এলোমেলো চিন্তা বিশৃঙ্খলা ডেকে আনবে। তার ফলে সমাজে একটা অরাজকতা আসা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। শুরুতেই বিচার বিশ্লেষণ না করে সামাজিক শক্তিগুলোকে যদি আপন গতিবেগে বাড়তে দেওয়া হয়, তা হলে সামাজিক শান্তির আশা সুদূরপরাহত। এখন থেকেই রণাঙ্গনে, গেরিলা একশানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাধারণ মানুষের প্রতি আচরণে, রাজনৈতিক শক্তি এবং সামরিক শক্তির মধ্যে সামাঞ্জস্য বিধানের জন্য পারস্পরিক শ্রদ্ধা, প্রীতি, যংযম এবং বিচার বোধ জাগরিত করা একান্ত প্রয়োজন। কেননা আজকের যুদ্ধচলাকালীন অবস্থার মধ্যে আমরা যে বীজ রোপণ করছি, ভবিষ্যতে সেই বৃক্ষই গজাবে তা থেকে।

.

হানাদার পাকিস্তানীরা আমাদের অসহায় প্রিয় পরিজনদের কাপুরুষের মত হত্যা করেছে। সাত কোটি বাঙালী মুক্তিযোদ্ধা চলুন আমরা প্রত্যেকটি ঘাতকের টুঁটি ছিঁড়ে ফেলি।

Scroll to Top