গৃহযুদ্ধ বা আভ্যন্তরীণ গোলযোগ নয়, বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছেন – বিরোধী প্রচারণার জবাবে বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটি

<৪,২৬,৪৬>

অনুবাদকঃ শিপ্রা কর্মকার

শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৬। গৃহযুদ্ধ বা আভ্যন্তরীণ গোলযোগ নয়, বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছেন – বিরোধী প্রচারণার জবাবে বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটি বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটির প্রচারপত্র এপ্রিল, ১৯৭১

 

বাংলাদেশ: গৃহযুদ্ধ— অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব?

২৫শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করা হয়। ঐ দিন কোন সংবিধান ছিল না। তাই, সাংবিধানিক বিধান লঙ্ঘন করার প্রশ্নই উঠে না।

নিজস্ব সংবিধানের অভাবে, ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের সময়, পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য গৃহীত আইনগত ভিত্তি নিয়ে পাকিস্তান সম্পূর্নভাবে ফিরে আসে! এই প্রস্তাব চুক্তি, “সার্বভৌম ও স্বাধীন” বাংলাদেশের জন্য এক অন্যতম উপাদান।

জাতীয় সমাবেশের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ২ মার্চ অসহযোগ আান্দোলন শুরু করেন। সেদিন থেকেই স্বাধীনতার ঘোষণার আগ পর্যন্ত ইয়াহিয়ার সামরিক আইন জারি থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র তার আদেশপত্রই জনগণের শতভাগ প্রতিক্রিয়াসহকারে বলবৎ ছিল। এই আদেশপত্রে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, মুদ্রা ও ডাকসংক্রান্ত বিধানসমূহ অন্তর্ভূক্ত ছিল। ইয়াহিয়া সরকার, অন্য কোন সামরিক সরকারের মতই কার্যত বিধানের জন্য স্বীকৃতিলাভ করে। এই কার্যত বিধানের মূল ভিত্তি বাংলাদেশ বিষয়ে ২ মার্চ ইয়াহিয়া সরকারের পক্ষে স্থগিত করা হয় স্বাধীনতা ঘোষণার আগ পর্যন্ত মুজিবুর রহমানের কার্যকর নীতির সূচনা ও চালু রাখার সুবিধার্থে। এই ঘোষনা ১) শেখ মুজিবের কার্যত বিধানের ক্ষমতার ওপর নিয়ম জারি করে, ২) এটি পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বিদেশি হানাদার বাহিনীতে পরিণত করে। যে সময়ের কথাই বলা হয়ে থাকুক না কেন, একবার বাংলাদেশ আইনগতভাবে স্বাধীন হয়ে যাওয়া মাত্রই পরবর্তী কার্যত বিধানের তথাকথিত কার্যকর কোন নিয়ন্ত্রণই ইয়াহিয়াকে অনুমোদন দেবে না। ইয়াহিয়া সরকার এই প্রশ্নাতীত তর্কের ক্ষমতার বিষয়ে সচেতন এবং স্বাধীনতা ঘোষণার আধ ঘন্টা আগেই তিনি গ্রেফতার হয়েছেন বলে গুজব ছড়ান।

রিপোর্টে বলা আছে যে, বাংলাদেশে ইয়াহিয়া খানের ১ লক্ষ শক্তিশালী সৈন্যর মধ্যে একজনও বাঙালি নয়। পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৫৬% বাঙালি। বাংলাদেশের সামরিক কর্মকর্তারা হয় কেউ গ্রেফতার নয় কেউ মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করেছে। সুতরাং বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনী কোন যুক্তরাষ্ট্রীয় সেনা নয়, যার  ফলে তার বিধানও যুক্তরাষ্ট্রীয় নয়।

গৃহযুদ্ধ শব্দটির অর্থ হল একই দেশে একই জাতীয়তার দু’ট প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষের মধ্যে উদ্দ্যেশ্যপ্রণোদিত দ্বন্দ্ব। যেহেতু বাঙ্গালী একটি স্বতন্ত্র জাতি এবং ইয়াহিয়ার পক্ষে তাদের সশস্ত্র অংশগ্রহণ নেই, সেহেতু বাংলাদেশের ঘটনাটিকে গৃহযুদ্ধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা বা উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায় না। 

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা মানতেই হবে।

২১(৩) ধারায় বর্ণিত, “মানুষের ইচ্ছাই সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি হবে; এটি সাময়িক এবং প্রকৃত নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকাশ পাবে। বাংলাদেশের মানুষের এই ইচ্ছা সর্বসম্মতভাবে ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রকাশ পায় এবং মার্চের ২ থেকে ২৫ তারিখ সময়ে পূনঃনির্ধারিত হয়। বাংলাদেশে গনহত্যার গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল গণতন্ত্র।

বাংলাদেশের এই ঘটনাগুলো কোন গৃহযুদ্ধ বা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নয়। এটা চরিতার্থ করতে হয় এবং মাও সে তুং এর এই নীতিবাক্য অারও তাজা ও অধিকতর সাক্ষ্যযোগ করতে হয় যে রাজনৈতিক ক্ষমতা বন্ধুকের নালী দিয়ে বের হয়। সেভাবে বলতে গেলে সত্য অস্বীকার করে মাও সে তুং এর বাণীকে আরও নতুন করে উপস্থাপন করে বলতে হয় যে, বন্দুকের নলই সকল ক্ষমতার উৎস।

Scroll to Top