জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবানের বিলম্বর সমালোচনায় শেখ মুজিবুর রহমান

<2.149.629>

 

আওয়ামী লীগ ১১ দফার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল
মুজিব ন্যাশনাল এসেম্বলি আহ্বানে দেরি হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন

৯ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৭১ ঢাকায় দেওয়া বিবৃতি

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান আজ ন্যাশনাল এসেম্বলি আহ্বানে অপ্রয়োজনীয় দেরি হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বলেন যে, দেখা যাচ্ছে এটি জনগণকে সরকার থেকে বঞ্চিত রাখার ষড়যন্ত্র।

* *  *  *  *  *  *  *  *

শেখ মুজিবর রহমান পুনর্ব্যক্ত করেন যে,  তাঁর পার্টি ৬ দফা অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল।

তিনি বলেন, “ আমরা সংবিধান সংশোধন করতে চাই এবং ৬ দফার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করতে চাই। যারা এটা মানতে চায় মেনে নিক, আর যারা না মানতে চায় না মেনে নিক।“

আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন যে, তাঁর পার্টি পাকিস্তানের বেশী আসন পেয়েছে এবং তাঁরা সংবিধান সংশোধন করতে পারে। তবুও এটি সবার চাওয়া এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে হোক। তিনি বলেন, “যদি কেউ সহযোগিতা করতে অস্বীকার করে, এটা তাঁর নিজের দায়িত্ব।”

শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, জনগণ তাঁর দলের ডাকে সাড়া দিয়েছিল এবং শুধুমাত্র জনপ্রতিনিধিরাই দেশের সংবিধান সংশোধন করার যোগ্যতা রাখে। অন্য কারো এই ক্ষমতা নেই।

শেখ মুজিবর রহমান গত ডিসেম্বরের নির্বাচনে তাঁর দলের বিজয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন যে,  তাঁদের আশা  সংবিধান সংশোধন করে জনগণের সরকারকে তাঁদের সমস্যা সমাধানের সুযোগ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্র এখনও চলছে।”

তিনি আরো বলেন, “পাকিস্তানের রাজনীতি হলো ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের রাজনীতি। ষড়যন্ত্র এখনো বন্ধ হয় নি, এটি এখনো চলছেই। যেহেতু বাঙালি রক্ত দিতে শিখেছে, সেহেতু কেউ তাঁদের ঠেকাতে পারবে না। আমাদের অবশ্যই ৬ দফার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে।”

শেখ মুজিবর রহমান বলেন, “আওয়ামী লীগ তাঁদের প্রতিজ্ঞায় অটল এবং কিছুতেই পিছু হটবে না। দরকার হলে, আমরা আবার জেলে যাব, কিন্তু আমাদের মূলনীতি থেকে সরে দাড়াব না। ” তিনি বলেন যে, তিনি এবং তাঁর দলের লোকজন আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় পান না। তিনি যোগ করেন যে, যদি শাসক গোষ্ঠী ভাবে যে, তারা তাঁদের ভয় দেখাতে পারবে, তাহলে তারা ভুল করছে।

*  *  *  *  *  *

—————

<2.149.630>

 

এই প্রসঙ্গে তিনি আয়ুবের আমলে তাঁর নিজের এবং আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের জেল-জুলূমের কথা উল্লেখ করেন। তিনি আওয়ামী লীগারদের বলেন যে, সংগ্রাম শেষ হয় নি, এটি কেবল শুরু হয়েছে এবং তাঁদের সব সময় পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আত্মোৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকতে হবে।

শেখ মুজিবর রহমান আবারও বলেন যে, সংবিধান প্রণয়ন করার দিকেই তাঁদের অবস্থান এবং এ ব্যাপারে তিনি রমনার রেসকোর্স ময়দানে ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে এই সংশোধনে দলের এমএনএ ও এমপিএ-দের সংকল্প গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। 

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাতীয় ও প্রাদেশিক এসেম্বলি এবং আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির মিটিং-এ  তিনি বলেন যে, “সিদ্ধান্ত আমাদের ভবিষ্যত খসড়া কর্মের উপর গ্রহণ করা হবে।”

আওয়ামী লীগ প্রধান তীব্র খাদ্য সংকটের কথা, প্রদেশে দ্রব্যমূল্যের অস্থিতি ও ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসযজ্ঞ উল্লেখ করে বলেন যে, আমরা আমাদের জনগণকে শোষিত হতে এবং মরতে দিতে পারি না। তিনি অনেকগুলো সমস্যাকে চিহ্নিত করেন এবং বলেন যে, তাঁর দল শোষকদের কাছ থেকে সম্পদ কেড়ে নিয়ে জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দিতে চেয়েছিল। তিনি বলেন যে, নির্বাচনের পরে তাঁর দল ভেবেছিল সংবিধান প্রণয়ন করা হবে এবং প্রশাসনের দায়িত্ব তারা নেবে এবং জনগণের সমস্যা দূরীকরণে পদক্ষেপ নেবে।

শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, শাসক গোষ্ঠী জীবনের চারপাশে বহুবিধ সমস্যা তৈরি করে রেখেছে। যদি তাঁর দল ক্ষমতায় আসেও, তাঁর জন্য এই সমস্যাগুলো জরুরী ভিত্তিতে সমাধান করা অসম্ভব হবে। তিনি বলেন যে, আমি বাংলা বাজার ও কলোনিগুলো ঘুরে দেখেছি। খাদ্য ঘাটতি এতই তীব্র যে বার্ষিক ২০ লক্ষ টন খাদ্য শস্যের ঘাটতি হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ প্রধান তাঁর দলের সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে বলে বলেন, “যদি সময় আসে, আমি তোমাদের ডাক দেব। ক্ষমতা আমাদের হাতে আনতেই হবে এবং কেউ এটা ঠেকাতে পারবে না। যদি আমরা ক্ষমতা পাই, আমরা আমাদের জনগণের সমস্যা সমাধান করব।” তিনি বলেন যে, তিনি জনগণের জন্য একটি উজ্জল এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের আশা করেন। “আমরা জিতবই, কেননা আমরা সত্যের জন্য লড়াই করছি।”

Scroll to Top