ডঃ আয়েশার হত্যাকাণ্ড

৮২। ডাঃ আয়েশার হত্যাকাণ্ড (৪৯৯)

ডাঃ আয়েশার হত্যাকাণ্ড

সুত্র-দৈনিক বাংলা, ২৪ জানুয়ারি, ১৯৭২

ওরা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করল ডাঃ আয়েশাকে 

।। মঞ্জুর আহমেদ প্রদত্ত ।।

“বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর শেষ মুহূর্তের উন্মত্ততার একজন করুণ শিকার তদকালীন স্টেট ব্যংক এর মেডিকেল অফিসার ডাঃ আয়েশা বেদোরা চৌধুরী। জল্লাদের বুলেটে ঝাঝরা হয়ে গিয়েছিল ডাঃ আয়েশা চৌধুরীর সমস্ত শরীর। এই নির্মম হত্যাকান্ডটি ঘটেছিল ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ১৮ নং রাস্তায়। ঘটেছিল সেই সর্বজন পরিচিত বাড়িটির সামনে যে বাড়িতে মাসের পর মাস দু:সহ জীবন কাটিয়েছেন বেগম শেখ মুজিবুর রহমান। ঘটনাটি ঘটেছিল বেগম মুজিবের অসহায় দৃষ্টির সামনেই।

খান সেনাদের আত্মসমর্পণ এর খবর পেয়ে আরো অনেকের মতই আনন্দে উল্লসিত হয়ে উঠেছিলেন ডাঃ আয়েশা চৌধুরী। এতদিন গোপনে গোপনে তিনি যে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করেছেন , সাহায্য করেছেন সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা দিয়ে পয়সা দিয়ে , তাদের এই অসামান্য সাফল্যে (লেখা আছে সামান্য) উদ্বেল হয়ে তিনি সেদিন চুপ করে ঘরে বসে থাকতে পারেন নি। তিনি বেড়িয়েছিলেন তাঁর খালু সড়ক বিভাগের সাবেক চীফ ইঞ্জিনিয়ার জনাব হাতেম আলী খান কে সাথে নিয়ে তাঁর নিজের গাড়িতে। শত্রুমুক্ত ঢাকা নগরীর মুক্ত হাওয়ায় মুক্তির আস্বাদে হৃদয় কে ভরিয়ে তোলার বাসনায়।

বেগম হাতেম আলী খান এবং তাদের পুত্রবধূ মাহবুবা রশীদ চপলও সাথী হয়েছিলেন সেই সময়। তারা প্রথমেই ছুটে গিয়েছিলেন ১৮নং রাস্তার সেই বাড়িতে যে বাড়িতে বেগম মুজিব ছিলেন বন্দীনি। তাঁরা গিয়েছিলেন বেগম মুজিবকে খবর জানাতে। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য সফল হয় নি। তখনো খান সেনারা মেশিনগান উচিয়ে পাহারা দিচ্ছিল এই বাড়িতে। আর ঠিক সেই মূহুর্তে তাদের গাড়ি বাড়িটার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তার হাতের মধ্যে শিকার পেয়ে আনন্দে উল্লসিত হয়ে উঠেছিল। মুহুর্ত মাত্র দেরী না করেই তারা ঝাপিয়ে পড়েছিল গাড়িটার উপর্। একটানা গুলিবর্ষণে তারা ঝাঝরা করে দিয়েছিল গাড়িকে। জর্জরিত করে তুলেছিল গাড়ির আরোহীদের্। গুলির আঘাতে ডাঃ আয়েশা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আর নিহত হন গাড়ির চালক মুনির আহমেদ। জনাব হাতেম আলী খানের পায়ে এসে গুলি লাগে। বেগম খানের লাগে হাতে। তাদের পুত্রবধুর মাথার তালু ছুয়ে গুলি চলে যায়। অল্পের জন্য রক্ষা পান তিনি। বুলেটবিদ্ধ গুরুতরভাবে আহত জনাব ও বেগম খান এবং তাদের পুত্রবধূ কোনমতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন পাশের একটি বাড়িতে। পরে সেখান থেকে তাদেরকে পাঠানো হয় হাসপাতালে। মাত্র কয়েকটি ঘন্টা পরেই যারা হাতের অস্ত্র ফেলে দিয়ে দুহাত তুলে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল সামান্য সময় আগেই তাদের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের শিকারে পরিনত হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হল দুইটি শিশু সন্তানের জননী ডাঃ আয়েশা বেদোরা চৌধুরীকে।“

Scroll to Top