নিরাপত্তা আইনে সোহরাওয়ার্দী গ্রেপ্তার

<2.017.132>

 

 

শিরোনাম সূত্র তারিখ
নিরাপত্তা আইনে সোহরাওয়ার্দী গ্রেফতার  পাকিস্তান অবজারভার ৩১ জানুয়ারী , ১৯৬২

 

 পাকিস্তানের নিরাপত্তা  আইনের অধীনে  পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী  জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে, (৬৯) গ্রেপ্তার  এবং করাচির কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রাখা হয়েছিল। করাচি পুলিসের ডিআইজি বশির আহমেদ সকাল ৭টায় আটকের আদেশটি পালন করেন।

আটক আদেশটিতে বলা হয়েছে “ পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার  জন্য ক্ষতিকর প্রতীয়মান  হওয়ায় তাকে আটক ও পশ্চিম পাকিস্তানের কোন কারাগারে বন্দি করার আদেশ  দেয়া প্রয়োজন ছিল।

নিরাপত্তা আইন বা অন্য কোন আইনের আওতায় জনাব সোহরাওয়ার্দীকে তাঁর জীবনে  এই প্রথমবার গ্রেফতার করা হয়েছিল।

সম্প্রতি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান এক মাস সফর করে   জনাব সোহরাওয়ার্দী  ফিরেছিলেন। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী,তিনি  সফরের সময় বন্ধু  এবং রাজনৈতিক সহযোগীদের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন ।

 বিছানায় থাকা অবস্থাতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাঁর আটক আদেশ পেয়েছিলেন। তিনি রাত ২টা পর্যন্ত বই পড়ছিলেন । পুলিশ প্রবেশের একটু পরেই তাঁর কন্যা বেগম সুলায়মান ও তার সচিব জনাব সোহরাওয়ার্দীর বাসভবনে পৌঁছান ।  জনাব সোহরাওয়ার্দী শান্ত এবং স্থির ছিলেন  এবং  আটকাদেশ  পাওয়ার পর ও তিনি পুলিশকে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেননি । ডিআইজি’র গাড়িতে করে তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে পুলিশ তাঁকে  সকালের নাস্তা ও জামা কাপড় পরার প্রয়োজনীয় সময় দিয়েছিল। তিনি সাথে করে  রেকর্ড প্লেয়ার,  রেকর্ড এবং দুটো স্যুটকেস নিয়েছিলেন। তাঁকে জেলে “এ” ক্লাস কক্ষ  দেওয়া হয়েছিল  এবং তাঁর রেকর্ড  প্লেয়ার সঠিকভাবে জেলে রুমে স্থাপন করা হয়েছিল । 

এখানে রিপোর্ট অনুযায়ী তিনি মিয়া মমতাজ দাউলতানার সাথে এক বা দুইবার দেখা করেছিলেন ।  ফেব্রুয়ারি ৩ তারিখে ,  বিদায়ী আমেরিকান রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম রনট্রির   সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জনাব সোহরাওয়ার্দীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। পার্টি বাতিল করা হয় এবং তা আগেই জানানো হয়েছিল .

সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে তাঁকে  তার বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয় । যাবার আগে তিনি তার কন্যা সুলাইমান, অগ্রজ জনাব  শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তার নাতনী ও তার সচিব থেকে বিদায় গ্রহন করেন।  উনার গ্রেফতার হওয়ার খবর শুনে সে সকালে উনার অনেক বন্ধুই উনার সাথে দেখা করতে আসেন এবং তাদের মাঝে একজনকে বলতে শোনা যায় , “ তাহলে আজ আর কোন মামলা  হবে না” । উক্ত বন্ধুটি একটি মামলার প্রতি ইঙ্গিত করেছিলেন যেখানে জনাব সোহরাওয়ার্দী   কাউন্সিল হিসেবে উপস্থিত হতেন । জনাব সোহরাওয়ার্দী সম্প্রতি  ঢাকা সফরকালে এই মামলা সম্পর্কিত কাজে  সাবেক সহকর্মী শেখ. মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করেছিলেন ।তিনি এখানে গত রবিবার ফিরে এসেছিলেন  এবং বিদায়ী  আমেরিকান রাষ্ট্রদূত জনাব রনট্রির সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে  উপস্থিত ছিলেন।

<2.18.133>

জনাব সোহরাওয়ার্দী যিনি বর্তমানে অবলুপ্ত আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা বর্তমান সরকারের EBDO এর অধীনে চেষ্টা করেছিলেন।  EBDO এর নিয়মের অধীনে তাকে ছয় বছর  একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোন পদে অধিষ্ঠিত হওয়া থেকে তাকে বিরত রাখা হয়েছে (উদ্ধৃতাংশ)।

সরকার গ্রেফতারের ব্যাখ্যা করেছে

পাকিস্তান সরকার পাকিস্তান সুরক্ষা আইনের  অধীনে  জনাব এইচ এস সোহরাওয়ার্দীর গ্রেপ্তার ও আটক করেছে, যা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বাধ্য হয়ে করা হয়েছে বলে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রেসনোটে বলা হয়।

এটা ইতিমধ্যে সর্বজনবিদিত যে জনাব সোহরাওয়ার্দী  পাকিস্তানের জন্মলগ্ন  থেকেই ব্যক্তিগত সমৃদ্ধি সাধনের কারণে, উদার কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন যা অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রকৃতির ছিল  এবং এটি বলা অযৌক্তিক নয় যে অন্যদের সাথে তিনিও ১৯৫৮ সালের শেষভাগে পাকিস্তানের বিপদজ্জনক পরিস্থিতির জন্য দায়ী ছিলেন।

জনাব সোহরাওয়ার্দী এবং তার মত মানুষের ভূমিকা একটি বড় ধরনের বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দেশকে নিয়ে আসে যা  বিপ্লবের সূচনা করে।  বিপ্লবের স্মৃতিচারণা করতে গেলে বলতে হয় যে শিকড় শুরু হয়ে গিয়েছিল তা বৃক্ষের কান্ড তৈরি করে। এটি যে শুধু কান্ডই তৈরি করেছিল তা নয় বরং গত সাড়ে তিন বছর ধরে আরো ইতিবাচক অর্জনও ছিল।

এই সময়ের সর্বত্র এটা সরকারের স্বীকৃত নীতি কাউকে তার অতীতের অপকর্মের জন্য কাউকে শাস্তি বা দোষারোপ না করা যদিও কেউ কেউ  অপরাধমূলক সীমানা করে ফেলে  এবং এটি এই কারণে ছিল  যে এমনকি রাজনীতিবিদদের যাদের  EBDO ট্রাইব্যুনালস দ্বারা যাচাই করা হয়েছে তাদের উদারভাবে দেখা হয়েছে।  জনাব সোহরাওয়ার্দী তাদের অন্যতম।

কিন্তু জনাব সোহরাওয়ার্দীর এই উদারতাকে ভুল ভাবে দেখেন এবং তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা কোন বাধা মানত না যে তিনি পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও একতার প্রতি হুমকিস্বরূপ কর্মকান্ড অব্যাহত রাখেন। এটা  দু: খজনক  যে  তার বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন একজন ভাল দেশপ্রেমিকের মত  দেশ বাঁচানোর পরিবর্তে  বিপ্লবের পরেও ধ্বংসাত্মক ভূমিকা পালন করছেন। জনাব সোহরাওয়ার্দী প্রকাশ্যে  দেশের বাইরে এবং মধ্যে পাকিস্তান বিরোধী উপাদানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

এটা এমন পরিস্থিতি ছিল যে সরকার অনিচ্ছায় জনাব সোহরাওয়ার্দীকে যার সাম্প্রতিক অতীতের কার্যক্রম  পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য বিপদজনক  হিসাবে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে, এই জন্য আটকাদেশ করতে বাধ্য হয়েছে।

Scroll to Top