নির্বাচনের মাধ্যমে দাবী আদায় না হলে আবার আন্দোলন শুরু হবে

<2.127.556>

শিরোনাম সূত্র তারিখ
নির্বাচনের মাধ্যমে দাবী আদায় না হলে আবার আন্দোলন শুরু হবেঃ শেখ  মুজিব দ্য পিপল ১৮ অক্টোবর, ১৯৭০

 

পূর্ব বাংলার অধিকার রক্ষায় ভোটের লড়াই আমার শেষ লড়াই

 

ধোলাইখালে শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা

১৭ই অক্টোবর, ১৯৭০

আওয়ামী লীগের দলনেতা শেখ মুজিবুর রহমান গতকাল ধোলাইখালে সংহত উৎসুক জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আসন্ন “ভোটের যুদ্ধ” হবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলার অধিকার আদায়ের শেষ লড়াই।

 

পুরোন ঢাকা থেকে তিনি জাতীয় পরিষদের আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, সেখান থেকেই তার নির্বাচনী  প্রচারণার সূচনা ঘটে। এ সময় শেখ মুজিব যে সব ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো পশ্চিম পাকিস্তানের পুঁজিবাদী একচেটিয়া আধিপত্যকে বজায় রাখার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে, সেগুলোকে জাতীয়করণের সংকল্প পুনর্নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে বাংলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে না, ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

 

শেখ মুজিব বলেন, বোনাস ভাউচার পদ্ধতি বাংলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোকে বৃহৎ বাণিজ্য ও পশ্চিম পাকিস্তানের পুঁজিবাদী আধিপত্যের গ্রাস থেকে সুরক্ষা করা হবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।

 

নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি ভোটকে অন্যান্য দলের দৃষ্টিতেই দেখছেন, যদিও জেলের যন্ত্রণা ভোগের বদলে স্বার্থের কারণে বাংলার মানুষকে বিকিয়ে দেয়া ঝানু রাজনীতিবিদদের মত ক্ষমতা অর্জন তাঁর রাজনীতির লক্ষ্য নয়।

 

তিনি বলেন, ক্ষমতার লোভ থাকলে জেল থেকে বের হবার পর পরই তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে যেতে পারতেন, বাংলার গভর্নর হতে চাইলে দীর্ঘ কারাবাসের যন্ত্রণা ভোগ না করে সহজেই সেই আসনটি দখল করতে পারতেন। কিন্তু কোন প্রলোভনই তাকে বাংলার মানুষের কল্যাণের ইচ্ছা থেকে সরিয়ে নিতে পারে নি।

 

আবেগঘন কন্ঠে তিনি সবাইকে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া চাইতে অনুরোধ করেন, যেন তিনি নিজের জীবন দিয়ে হলেও বাংলার সেবার করার শক্তি ধরে রাখতে পারেন। তিনি জানান, মানুষের কাছ থেকে যে বিপুল স্নেহ ও ভালবাসা পেয়েছেন এবং তাঁর ফাঁসি ঠেকাতে মানুষ যে অভাবনীয় আত্মত্যাগ করেছে, একমাত্র নিজের জীবন দিয়ে তিনি তার প্রতিদান দিতে পারেন।

 

তুমুল করতালির মধ্যে শেখ মুজিব ঘোষণা দেন, নির্বাচনের মাধ্যমে ছয়-দফা দাবি পূরণ না হলে তিনি আবারও বাংলার তেজোদ্দীপ্ত মানুষকে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে আহ্বান জানাবেন।

শহরের নির্বাচনকেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ঢাকার মানুষই তার মুক্তির জন্য সবচেয়ে বেশি রক্তত্যাগ করেছে এবং ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারেই তিনি তারুণ্যের দশটি বছর কাটিয়েছেন। ঘটনাক্রমে কাশ্মিরি বংশোদ্ভূত খাজা খায়রুদ্দিনের চাইতে তিনি নিজেকে বেশি “ঢাকাইয়া” বলে দাবি করেন। মিথ্যার মাধ্যমে ঢাকাবাসীর সাথে তার রক্তের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন এবং জানান, নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো তাদের সাথেই কাটিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন স্থানীয় সমস্যা নিয়ে, বিশেষ করে অবরুদ্ধ ধোলাইখালের জন্য বিকল্প নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং ভূমিহীন দরিদ্রদের জন্য আবাসন প্রকল্প নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

 

শেখ মুজিব বলেন, পরবর্তী নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে পরাজিত করার লক্ষ্যে কোটি কোটি রুপি পানিতে ঢালা হচ্ছে এবং ১৯৫৪ সালে যুক্ত ফ্রন্টের ঐতিহাসিক বিজয়ের পর যা হয়েছিল, সেভাবেই মানুষের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর মুলতুবি রাখার জন্য স্বার্থান্বেষী চক্র এখনও ষড়যন্ত্রের বীজ বুনে যাচ্ছে।

Scroll to Top