প্রধানমন্ত্রীর ১৮-দফা নির্দেশাবলী

শিরোনাম সুত্র তারিখ
প্রধানমন্ত্রীর ১৮-দফা নির্দেশাবলী। দি স্ট্যাটসম্যান, নয়াদিল্লী। ১৪ মে, ১৯৭১

 

জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ কর্তৃক লিখিত ১৮ দফা নির্দেশাবলি, মে ১৪,১৯৭১

 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ কর্তৃক জারিকৃত স্বাধীনতা সংগ্রামের বিস্তারিত জন সম্পৃক্ততার জন্য ১৮দফা নির্দেশাবলী। 

 

তিনি জনগণকে বলেছেন যে, গুজব না শুনতে এবং “জনগণের চুড়ান্ত বিজয়” সম্পর্কে নিঃসন্দেহ থাকতে। 

 

তিনি বলেন: “জনসাধারণকে মনে রাখতে হবে যুদ্ধক্ষেত্রে সম্মুখে এগিয়ে যাওয়া ও অপসৃত হওয়া সমান গুরুত্ববাহী। একটি ক্ষেত্র হতে মুক্তিবাহিনীর পশ্চাদপসরণ সাধারণের মনে যেন এই ছাপ না ফেলে যে আমরা দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ছেড়ে দিয়েছি। 

 

এই সংগ্রামে, জনসাধারণ দল-মত, ধর্ম বা শ্রেণী-গোত্রে বিভক্ত নয়। “আমরা বাঙ্গালী হিসেবে একতাবদ্ধ হয়েছি, এবং আমাদের শত্রুরাও আমাদের সেই দৃষ্টিতেই দেখে। যখন তারা আমাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়, মানুষের ওপর গুলি চালায় বা শহর ধ্বংস করে, আমরা বাঙ্গালী বলেই তারা আক্রমণ করে, আমাদের ধর্ম অথবা রাজনীতি নিয়ে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।

 

শত্রুর সঙ্গে কোন বাঙ্গালী কর্মচারী সহযোগী হবেন না; সকল পদবীর কর্মচারীরা বাংলাদেশ সরকারের সঞ্চালনা অনুযায়ী চলবেন। শত্রু দখলকৃত অঞ্চল সমূহে, তারা জনপ্রিয় প্রতিনিধির নির্দেশনায় কাজ করবে এবং পারিপার্শ্বিকতা নির্ভর ছদ্মরূপ ব্যাবহার করবেন।

 

তাদের দায়িত্ব সমূহ

 

জনাব আহমেদ বলেন: “সরকারী ও আধাসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণ যারা অন্যজায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন তারা তাদের পদে কর্মরত হিসেবে ধরে নেয়া হবে এবং তাদের প্রতি এই আশাবাদ রাখেন যে তারা বাংলাদেশ সরকার এবং মুক্তিফৌজ কে তাদের সাধ্যানুযায়ী সহযোগীতা করবেন।

 

সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাবৃন্দ ও সৈনিকগণ, তারা চাকরীরত বা অবসরে যেভাবেই থাকুন, তারা অবশ্যই নিকটস্থ মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে দায়িত্বে যোগ দিবেন এবং “কোন পরিস্থিতিতেই” নিজেকে শত্রুর দ্বারা অপব্যবহৃত হতে দিতে পারবে না নিজেদের “না শত্রুর প্রতি সহযোগীতা করবেন”।

 

নির্দেশাবলীতে বলছে, “শুধুমাত্র বাংলাদেশ সরকার ব্যতীত অন্য কারো করাদি, খাজনাদি এবং শুল্কাদি গ্রহণ করার অধিকার নেই। এটা অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে যে একটি পয়সাও শত্রু দ্বারা গ্রহীত হলে তা ব্যবহৃত হবে আপনাদের এবং আপনাদের সন্তানাদিকে হত্যার জন্য। অতএব যে কোন ব্যক্তি শত্রুপক্ষকে কর পরিশোধ করলে বা এই ব্যাপারে সাহায্য করলে তাদের বাংলাদেশ সরকার এর কাছে জাতীয় শত্রু হিসেবে গণ্য হবে এবং তার যথাযোগ্য শাস্তি পাবে।

যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার কার্যরত কর্মচারীরা “শত্রু সঙ্গে সমবায় করা উচিত নয়, প্রথম সুযোগেই তারা তাদের পরিবহন নিয়ে শত্রুর দখলকৃত এলাকা খালি করে সরে পরা উচিত”। সঠিক মনোযোগ দেয়া উচিত জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পণ্য চাহিদা পুরনের এবং এ ব্যাপারে উৎপাদনন বারাতে মানুষকে দ্বিগুণ উৎসাহিত করা উচিত।” “সাধারণের স্মরণে রাখতে হবে যে, খাদ্য বা পণ্য আমদানি নির্ভর ব্যবস্থা আত্মঘাতী হয়।” বেশী জোর দিতে হবে খামার উৎপাদিত পণ্যের উপর, নির্ভর থাকা উচিত” স্থানীয়ভাবে উপলব্ধ পণ্য ও কুটির শিল্পের উৎপাদনে।” . লক্ষণীয়

নির্দেশনায় বলা হয় যে, “আমাদের জাতীয় সংকটে, আমাদের এক নম্বর শত্রু যারা কালোবাজারী, মুনাফাবাজ, মজুতদার ও চোরাকারবারী করে। তাদের নজরদারিতে রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করা উচিত তাদেরকে।” এতে আরো বলা হয়েছে: আমাদের আরো সতর্ক হতে হবে অন্য ধরনের অসামাজিক, সাধারণ অপরাধী যারা বিশ্বাসঘাত করেছে। যেহেতু তারা আমাদের চরম শত্রু তাই তাদের চিহ্নিত করতে হবে। একটি ঐক্যবদ্ধ দেশে তারা সাধারণ মানুষকে ধর্মের নামে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করছে। তারা সত্যিকার অর্থেই পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমী স্বার্থ রক্ষার দালাল।

এদিকে, বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেছে যে, সাবেক জাতীয় পরিষদের সব সদস্যগণ এখন থেকে সংসদ সদস্য বা এম.পি. নামে পরিচিত হবেন এবং সাবেক প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত সদস্যগণকে বিধায়ক বা এম.এল.এ. বলা হবে। আওয়ামী লীগ এর দলীয় সাপ্তাহিক জয়বাংলা হতে প্রকাশিত নির্দেশিকায়, এম.পি.-দের ও এম.এল.এ.দের তাদের নিজ নিজ এলাকায় থাকার এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্য করার জন্য তাদের নির্দেশ দিয়েছে। “যদি এটা পালন করা একেবারে অসম্ভব এমন একটি নির্বাচনী এলাকা হয়, তাহলে তিনি নিকটতম মুক্তিবাহিনী ইউনিটে তার কার্যক্ষেত্র স্থানান্তর করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা তদারক করা উচিত”, মর্মে দলীয় নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। . সাংসদ ও বিধায়কদের যারা সীমান্তের ওপারে ভারত চলে গেছে তাদের অবিলম্বে দলীয় নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা উচিত, আওয়ামী লীগ হাই কমান্ড আদেশ জারী করেছে যারা তরুণ বা মধ্যবয়সী এবং, ভারতে আশ্রয় নিয়েছে অবিলম্বে নিজেদের সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য তালিকাভুক্ত করতে হবে।

“যারা তাদের জীবন বাঁচাতে সীমান্ত ওপারে উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে সবসময় এটা মনে রাখা উচিত যে, এটি একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা মাত্র। তারা চিরস্থায়ী আবাসের জন্য ভারতে যায় নাই।” . মুজিবনগর হতে পিটিআই আরো যোগ করে: জনাব এ.এইচ.এম.কামরুজ্জামান, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী গতকাল “সমস্ত উপলব্ধ সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন” নিশ্চিত করা জন্য একটি লিয়াজোঁ অফিস এর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।

 

[দ্য স্টেটসম্যান নিউ দিল্লি ১৫ মে, ১৯৭১]

Scroll to Top