বাংলাদেশের সংগ্রামে মার্কিন জংগণের ভূমিকা সম্পর্কে বিশেষ প্রতিবেদন

<৪,১৫৮,৩০৬-৩০৭>

অনুবাদকঃ নওশীন তাসনিম     

শিরোনাম সূত্র তারিখ
১৫৮। বাংলাদেশের সংগ্রামে মার্কিন জংগণের ভূমিকা সম্পর্কে বিশেষ প্রতিবেদন বাংলাদেশ ইনফর্মেশন সেন্টার প্রকাশিত নিবন্ধ ——-

  ১৯৭১

                  বাংলাদেশ তথ্যকেন্দ্র

    ৪২৩ ৫ম রাস্তা, এস.ই., ওয়াশিংটন ডি.সি. ২০০০৩*২০২-৫৪৭-৩৮৭৩

                 আমেরিকা বাংলাদেশের বন্ধু

                 লিখেছেন কায়সার জামান

গত নয় মাসের মোহমুক্তিতে বাংলাদেশের মানুষদের ধ্বংসযজ্ঞের অভিজ্ঞতা হয়ে গিয়েছিলো। অধিকাংশ বাঙ্গালী ভাবেনি যে পাকিস্তান সৈন্য সত্যই তাদের নিজেদের লোক হয়ে উঠবে, যেমনটা গত বছরে ২৫শে মার্চের বাঙ্গালী ছিল । কিন্তু তা ছিল এক রকম অনৈতিকতা যা ছিল ইতিহাসের সদৃশ। একবার যখন না ফেরার মুহূর্ত আসে, বাঙ্গালী পাকিস্তানী অর্থনীতি টানাপড়েন কম সময়ে কাটিতে উঠতে পারার পূর্বাভাস পায়। কিন্তু এটা ছিল একরকম চতুর অর্থনীতিবিদের কিংকর্তব্যবিমুড় শোষণ কৌশল । বাঙ্গালীরা আশা করেছিল যে অন্তত কিছু দেশ বাংলাদেশ কে সাথে সাথে চিনতে পারবে। কিন্তু কেউ পারেনি, এমনকি তখন পর্যন্ত ইন্ডিয়াও না। নিশ্চিতভাবে, বাঙ্গালীরা ভেবেছিল, গনতন্ত্রের রক্ষক এবং অভিভাবক দেশ আমেরিকা গণতন্ত্র দমনের জন্য মিলিটারি একনায়ক্তন্ত্রের নির্মম প্রচারণাকে সমর্থন করবে না। কিন্তু তারা পুরো পৃথিবীকে পরিতাপের গোঁ ধরে তা করেছিল । আমার কাছে বাঙালীদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি ইউ এস এর সংবেদনশুন্য আচরন মেনে নেয়া কষ্টসাধ্য ছিল, কারণ এটা ছিল অদূরদর্শী এবং অনর্থক। বাঙালীদের এবংনিঃসন্দেহে অনেকের মনে যদি ঠিক ভুলের পরিষ্কার ধারনা থাকতো তাহলে তা এটা। একটি মিলিটারি একনায়কতন্ত্র একটি মুক্ত এবং স্বাধীন গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফলাফল মুছে দিয়েছিল এবং নিরীহ মানুষ,শিশু মেরে ফেলা, ধর্ষণ, লুটের তাণ্ডব চালিয়ে অনুভুতিশুন্যভাবে একটি দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছিলো। নিশ্চিতভাবে, একটি সভ্য গণতান্ত্রিক দেশ যেমন আমেরিকা এর নিন্দা জানিয়েছিল অথবা, শেষ পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিল। ধীরে ধীরে এটাই স্পষ্ট হচ্ছিল যে নিক্সন প্রশাসন এই শাসনের পাশবিকতার নিন্দা করেনি কিন্তু অনেক সহায়তা করেছিল।

আশানুরূপভাবে সাধারণ গণতন্ত্র এবং আমেরিকায়, সব আমেরিকানরা সরকারের রাজনীতিকে সমর্থন করেনি। পুরুষ এবং নারী, জানা এবং অজানা মানুষেরা নৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে সরকারের এই ভুল মনোভাবের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল। সিনেটার এবং ছাত্রসমাজ, শিক্ষাবিদ এবং শ্রমিক, চিকিৎসক এবং চার্চের যোজক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের মানুষ এই রাজনীতি বদলের জন্য কঠিন উদ্যোগ নেয়া শুরু করে। ফলত প্রেস এটা স্পষ্ট করে যে পুলিশদের অত্যাচারী এবং অত্যাচারীত দের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব করছিল। একজন স্বতন্ত্র আমেরিকান নারী, একদা নাজি পাশবিকতার স্বীকার, হোয়াইট হাউজেড় বাইরে অটলভাবে জাগরণ থাকতো। একদল নিজস্ব শহুরে পাকিস্তানী অনুশাসন সৈন্য দিয়ে সফলভাবে পাকিস্তানির একটি বিশাল জাহাজ আতকে দিয়েছিল। ছোট ডেভিড ক্ষমতাশীল দানবকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। যতক্ষণ পর্যন্ত ইয়াহিয়া খান অসহায় মানুষের উপর শোষণ বন্ধ করেনি ততক্ষন তারা মিলিটারি এবং পাকিস্তানী অর্থনৈতিক সাহায্যের নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য সিনেটের করিডরে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছিল।

ফিলাদেলফিয়ার একটি দল হোয়াইট হাউজ জুড়ে থাকা লাফায়েত পার্কের নর্দমার পাইপ ক্যাম্প কে উপহাস করে।শিকাগো এবং বোস্টনের মত দূরেরে এলাকা থেকেও মানুষ এসে পাইপে বসবাস করে এবং লক্ষ্যাধিক উদ্বাস্তুদের সাথে ভাত এবং ডালের মত একই খাবার খায়। আমেরিকানরাদক্ষিন এশিয়ার জনসচেতনতা আর্কের ক্ষতিপূরণমূলক এরকম এবং অন্যান্য অভিব্যাক্তিতেদুঃখ প্রকাশ করে।

এছাড়াও থার্টি-অড ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশ সংস্থায় কিছুসংখ্যক দল গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। যদিও প্রশাসন নীতি বাংলাদেশের বিপরীতে বাড়াবাড়ি রকম কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো, এই ত্যাগী মানুষদের চেষ্টা বৃথা যায়নি। কংগ্রেস অতিরিক্ত সহানুভূতিশীল হয়েছিল। কমপক্ষে ত্রিশ সেনাটর এবং সভাসদস্য প্রশাসনকে সমালোচনামূলক বিবৃতি প্রদান করে। মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া ছিল ইতিবাচক। এই আঁচ হোয়াইট হাউজ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল যেটা  পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভয়ানক পদক্ষেপ নিতে বাধা সৃষ্টি করেছিল। কে জানে এই চেষ্টাগুলোই কি স্বাধীনতায় সহায়তা করেনি? মিঃ নিক্সন বিভিন্ন অজুহাতে চাইলেই ইয়াহিয়া খান কে মেরিন সাপোর্ট দিতে পারতো।

ইয়াহিয়া খানের প্রতি আমেরিকার তিক্ত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায় ফরেইন-এইড বিলের কাছে সাক্সবি-চার্চ এমেন্ডমেণ্ট এর মাধ্যমে, যেটা পাকিস্তানের সকল প্রকার সৈনিক এবং আর্থিক সহায়তা বন্ধ করেছিল। এছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য সহায়করাও অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিল। বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার পর্দার ওপাশের অল্প পরিচিত কিন্তু সম্মানিত দল হিসেবে কাজ করে। প্রাথমিকভাবে এটি তৈরি করা হয় আমেরিকান চিকিৎসক এবং অন্যান্য পেশার মানুষ এবং তাদের স্ত্রী দ্বারা, যারা একসময় বাংলাদেশে ছিল এবং ভালবেসেছিল। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সীমাহীন ত্যাগ ছিল অনুপ্রেরণার  মূল উৎস। অদ্ভুতভাবে, এটি সম্ভবত ইউ.এস. এর শ্রেষ্ঠ অর্থনৈতিক সহায়তা কর্মসূচী।

বাংলাদেশের আমেরিকান শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে বাংলাদেশের এই স্বাধীনতা যুদ্ধই শেষ নয়, দীর্ঘ এবং দুঃসহ সংগ্রামের শুরু। তাদের সকল চেষ্টার মাধ্যমে তারা এটাও বুঝতে পেরেছিল যে,  আমেরিকার স্বাতন্ত্র্য কাজ ছিল তীব্র ঘৃণার প্রকাশ। বাংলাদেশ সে বছরের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আলোচ্য রাজনৈতিক ইস্যু ছিল না। সুতরাং, মিঃ নিক্সন তার নীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোন প্রবল চাপে ছিলনা।অতএব, যে চাপ ছিল তা অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বজায় রেখেছিল। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি উদ্দেশ্য ছিল জনগণের আরও প্রতিশ্রুতি উদ্বুদ্ধ করা এবং বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সহায়তা করা। আমেরিকা তার নৈতিক দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেনা, জ্ঞ্যাত অথবা অজ্ঞ্যাতভাবে। আমেরিকা বাংলাদেশ ধ্বংসের পক্ষে কাজ করেছইল। সত্যিকার অর্থে, আমেরিকান বন্দুক যা দেশের লাখো মানুষ হত্যা করেছিল, ট্যাঙ্ক এবং যোদ্ধা যা এ দেশ ধ্বংসে ভুমিকা পালন করেছিল।

Scroll to Top