বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সদর দপ্তর প্রকাশিত যুদ্ধ পরিস্থিতি সংক্রান্ত আরো কয়েকটি প্রতিবেদন

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৩। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সদর দপ্তর প্রকাশিত যুদ্ধ পরিস্থিতি সংক্রান্ত আরো কয়েকটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ আর্কাইভস, মুজিবনগর ১৯৭১

 

ট্রান্সলেটেড বাইঃ Razibul Bari Palash

<১১, ৩, ৪৩-৪৯>

পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে কোনো মুহূর্তে মুক্তিফৌজ থেকে ভারী আক্রমণ আশা করছিল। এর জন্য তাদের প্রস্তুতি & ব্যবস্থা নেয়া ছিল। বাংকার ও অনেকগুলি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তবুও গেরিলাদের কার্যক্রম বেড়েই যাচ্ছে। রেডিও পাক, টেলিভিশন স্টেশন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাহারা বাড়ানো হয়েছে। ডবল মানুষের উচ্চতার দেয়াল করা হয়েছিল। এইসব জায়গার চারপাশের গাছ ও ঝোপকেটে ফেলা হয়েছিল। রহস্যময় মুক্তিফৌজদের ধরতে সব প্রস্তুতি তারা গ্রহণ করেছে।

 

আর মুক্তিফৌজদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া কি?

তারা এটাসহজে গ্রহণ করে। একজন ছেলে বলল-‘আমরা তাদের ছোট্ট একটা লাথি দেব। ভালোই লাগছে। ‘

লাথির কিছু নমুনা নিচে দেয়া হল-

  • মুক্তি বাহিনী দ্বারা গ্রীন রোডে একটি অতর্কিত আক্রমণ করা হয়। পাকবাহিনীর জিপ ছিল। চার সেনা সদস্যকে হত্যা করা হয়।
  • মিরপুর রোড, কলাবাগান কালেক্টরেট অফিসে আক্রমণ হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ ধরা হয় এবং সব হত্যা করা হয়। দশ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ হতাহত হয়।
  • ১৫ আগস্ট দুটি পাওয়ার পাইলন কাটা হয় কালীগঞ্জ টঙ্গী লাইনে।
  • ২১ শে আগস্ট কালীগঞ্জ থেকে ডেমরার মধ্যে লাইন বিছিন্ন করা হয় (রূপগঞ্জের কাছে)।
  • ঢাকার মুক্তিযোদ্ধারা রূপগঞ্জে নদীর তীরে একটি অ্যামবুশ করে। রূপগঞ্জের ওসি চার পাকবাহিনী ও চার পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশের সঙ্গে আসছিলেন। দুই স্থানীয় পুলিশ মুক্তি বাহিনীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে। ধাক্কা দিয়ে নৌকা দখল করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা স্টেনগান দিয়ে আক্রমণ করে এবং সমস্ত কর্মীদের হত্যা করে।

 

কুমিল্লা

মাধাবাগ এলাকার থেকে সর্বশেষ সংবাদ। মুক্তিফৌজ ও পাকবাহিনীর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছে।  পাকবাহিনী মুক্তিফৌজের প্রতিরোধ ভাঙ্গার কঠিন চেষ্টা করছে। এর মধ্যে শত্রুরা ঘেরাও হয়ে গেল।

সাম্প্রতিক খবরএ জানা যায় যে জুলাই ও ১ লা আগস্টে মুক্তিবাহিনী প্রায় পঞ্চাশ জন শত্রুসেনা নিহত ও বিশ জন আহত হয়।

আখাউড়া সেক্টর

নবীনগর থানায় মুক্তি বাহিনী শত্রুসৈন্য বহনকারী নৌকা অতর্কিতে আক্রমণ করে। তিনটি নৌকার ২টি ডুবে যায়। বায়ান্ন জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

আখাউড়া ছাপ্পান্ন নং সেক্টরে গত সপ্তাহে ৫৬ জন রাজাকার ৩৪ টি রাইফেলসহ আত্মসমর্পণ করে।

ফেনী (নোয়াখালী)

গেরিলা কার্যক্রম ফেনীতে চলতে থাকে। ৩০ শে আগস্ট ৩০ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয় এবং অনেকে আহত হয়েছে। মুক্তিফৌজ বিভিন্ন বাংকার উড়িয়ে দেয়, ধ্বংস করে ও রাজাকারদের বন্দী করে।

৩০শে আগস্ট কালিরহাটে মুক্তি বাহিনী শত্রু অবস্থানের উপর আক্রমণ করে। মর্টার ও এলএমজি র ভারি গোলাবর্ষণ চলে। শত্রুদের মনোবল দুর্বল হয়ে যায়। শত্রুরা বিভ্রান্ত এবং পশ্চাদপসরণ করে।

পঁচিশ জন পাকসেনা নিহত ও পঁয়ত্রিশ জন আহত হয়। ফারুক আহমেদ নামে একজন কুখ্যাত রাজাকারকে বন্দী করা হয় যে চট্টগ্রামে অনেক বাঙালি পরিবারকে হত্যা করে।

একই দিনে শত্রুদের সঙ্গে পরশুরাম এ বিভিন্ন সম্মুখযুদ্ধে পাঁচ শত্রুসৈন্য নিহত এবং তিনটি বাঙ্কার ধ্বংস করে।

কুমিল্লা

চৌদ্দগ্রাম মিয়াঁর বাজার এলাকা (কুমিল্লা দক্ষিণপূর্ব অংশ)

২৬ ও ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ১৯ জন শত্রুসেনা চৌদ্দগ্রাম ও মিয়াঁরবাজার এলাকায় এ নিহত হয়। শত্রু অবস্থানে অভিযান চালিয়ে সাত পাকসেনা নিহত, ছয় জনকে আহত হয়।

২৭ তারিখ হরিমঙ্গলে অভিযানে মুকিফৌজ শত্রুর ঘাঁটি ধ্বংস করে। এতে ১১ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়।

চৌদ্দগ্রামে মাইন বিস্ফোরণে এক পাকসৈন্য মারা যায়। মুনসীরহাঁট রাজস্ব অফিসে আগুণ দেয়া হয়। সকল সরকারী নথি এবং অন্যান্য জিনিস ধ্বংস করা হয়।

 

                       কুমিল্লার উত্তর পূর্বাঞ্চল (গোমতী নদীর কাছে)

 

ফকিরহাট ও রাঘুরামপুর এলাকায় শত্রুরা মাটি খনন করে এবং মাঝিগাছায় স্থানীয়দের তাদের সাহায্য করতে বলে। শত্রুরা ইতিমধ্যে হামলার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা লাইন তৈরি করে। শত্রুরা আরো সৈন্য, আরো আগ্নেয়াস্ত্র বৃদ্ধি করতে থাকে। ২৯ ও ৩০ শে আগস্ট এই সাব সেক্টরে মুক্তিফৌজ ১৭ জন শত্রু নিহত ও অনেক আহত হয়।

২৯ শে আগস্ট নিয়মিত বাহিনীর এক প্লাটুন ও রাজাকারদের দুই বিভাগ রেল লাইনের দিকে অগ্রসর হয়। তাদের কালিপুর এ অতর্কিতে আক্রমণ করা হয়। ৪ জন শত্রু নিহত ও তিন জন আহত হয়।

একই দিন তারা যখন চার্নালে এ লুটপাট চালিয়ে ফিরে যাচ্ছে তখন আরও তিন জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। ৩০ শে আগস্ট জাওয়াপাড়াতে শত্রু অবস্থানের ওপর অতর্কিত হামলাকরে দশ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করা হয়।

শালদা নদী এলাকা

শত্রুরা নতুন প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করার চেষ্টা করছে। তবে প্রতিটি সময় মুক্তিবাহিনীর সজাগ থাকার জন্য এটা সম্ভব হচ্ছিল না।

৩০ শে আগস্ট শত্রুরা শালদা নদীর দক্ষিণাঞ্চলে প্যান এ ভাঙা সেতুর কাছে বাংকার খনন করার চেষ্টা করে। মুক্তি বাহিনী তখন তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তিন জন পাকসেনা মারা যায় এবং আরও অনেক আহত হয়। পরিশেষে ৩১ শে আগস্ট শত্রুরা আবার বাঙ্কার খনন করার চেষ্টা করে। কিন্তু সেবারও তারা পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। একই দিনে তারা বিঞ্জা সেতুর কাছে প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করার চেষ্টা করে। ভারি মর্টার এবং ছোট অস্ত্র দিয়ে তারা পাকসৈন্যদের বিতাড়িত করে। তিন পাকসৈন্য মারা যান।

                       ময়মনসিংহ ঢাকার কিছু অংশে গেরিলা সাফল্য

* ১২ আগস্ট নরসিংদী, শিবপুর, ঢাকা জেলার মধ্যে পুটিয়া সেতুধ্বংস করে।

* লঞ্চে অতর্কিতে আক্রমণ করে। তিনটি লঞ্চ ধ্বংস করা হয়েছিল। তারিখ ছিল ৭ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্টের মধ্যে। ১৫০ জন নিহত ও প্রচুর শত্রু হতাহত হয়।

* নারায়নবাজারের কাছাকাছি দারোগাবাড়ি (মীমের পাশে) শত্রুর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

হতাহতের সংখ্যা ৭৫ থেকে ১০০। তারিখ ৭ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট।

* ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় শত্রুপাইলন ধ্বংস করার সময় শত্রুদের সাথে যুদ্ধ হয়। মুক্তিবাহিনী ৭৬২ এস এম জি এবং ৭৬২ রাইফেল (চীন) ও ১৫০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে।

* শিবপুর ও মনোহরদীতে তহশীল অফিস আক্রমণ করে এবং এইসব পুড়িয়ে দেয়

* কাঞ্চনের কাছাকাছি ২৭শে জুলাই লাখ্যা নদীতে পাট বহনকারী নৌকা পুড়িয়ে নিমজ্জিত করে।

* ৩০ শে জুলাই বাগাদিয়া ইউনিয়নের (থানা কাপাসিয়া) একজন দফাদারকে হত্যা করে। সে ছিল ময়মনসিংহের খুব নামকরা রাজাকার।

* ৩১ জুলাই কাপাসিয়ার ইকারিয়া গ্রামে শীতলক্ষ্যা নদীতে একটি লঞ্চ যা রেশন নিয়ে ডেমরা থেকে নয়নবাজারে যাচ্ছিল।

* ৯ আগস্ট মনোহরদী থানার উপর আক্রমণ করে। ও সি আব্দুল করিমসহ ২১ জন পুলিশ মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১৫ টি রাইফেল ও এক্স (এক হাজার) রাউন্ড আম্যুনিশন উদ্ধার হয়।

* নিম্নলিখিত রাজাকারদের নির্মূল করা হয়-

* মাইন উদ্দিন সরকার-বারোইবারি থানা জয়দেবপুর ঢাকা জেলা ৪ আগস্ট

* হযরত আলী গ্রাম সন্ধ্যা ঢাকা জেলা থানা জয়দেবপুর, ৫ আগস্ট

* সিদ্দিক (সদস্য) গ্রাম-মেঘপবি থানা জয়দেবপুর, ঢাকা জেলা

* পূবালীর সালাম ডাকাত থানা কালীগঞ্জ ঢাকা জেলা

* ৯ আগস্ট বায়রার দুই রাজাকার,থানা জয়দেবপুর

 

কুমিল্লা ফেনী

১৫ থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত

গোমতী নদীর কাছাকাছি (কুমিল্লা শহরের চারপাশে) ৫৫ এর বেশী রাজাকার আক্রান্ত হয় এবং চল্লিশ জন নিহত হয়।

আখাউড়ার কাছাকাছি ১৫ থেকে ১৬ আগস্ট আক্রমণে ১৩ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়।

গোমতীর কাছে

জাম্বারিতে মুক্তিবাহিনী অতর্কিত আক্রমণে ষোল জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। বেশ কিছু আহত হয়। শাওয়ালপুরে অন্য আক্রমণে পাঁচ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয় ১৬ আগস্ট।  ফকিরহাটে ২০০ ফুট রেললাইন উড়িয়ে দেয়া হয় এবং ৫০ ফুট চওড়া একটি গভীর খাত করা হয় চারটি চার্জে।

১৫ আগস্ট কোটেশরে পাকবাহিনীর তিন জন নিহত হয়।

আবার ১৬ আগস্ট গাজীপুরে শত্রুদের ২০ জন আহত হয় যাদের ১৪ জন মারা যায়। অতর্কিত হামলায় শত্রুদের প্রতিরক্ষা ধ্বংস করা হয়।

                                আখাউড়ার কাছাকাছি

মুক্তিফৌজ শত্রু অবস্থানের উপর গুলিবর্ষণ করে। ১৪ আগস্ট কাশিম্পুরে ২ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। রেললাইনও ধ্বংস করা হয়েছিল।

১৪ ই আগস্ট কলাচারা চা বাগানে ২৮ টি মাইন সেট করা হয়।

১৬ আগস্ট তোলাইমুলে মুক্তিবাহিনী পাঁচজন শত্রু হত্যা করে। একই দিনে গুরুইটে একটি অতর্কিত আক্রমণে অনেক শত্রুসৈন্য নিহত ও আহত হয়।

মনোহর বাজার (শালদা নদীর পাশে)

মুক্তিফৌজ একটি টহল দলের উপর গুলিবর্ষণ করে। ৪ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়।

চৌদ্দগ্রামের কাছাকাছি

শাশিয়ালিতে ৬০ জন পাঞ্জাবি ও ছয় রাজাকারকে ২৭ শে জুলাই হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। অতর্কিত অন্য এক আক্রমণে পাইকপাড়ায় ১০ জন নিহত হয়।

১৪ আগস্ট একটি শত্রু জিপ বিস্ফোরণে এক ক্যাপ্টেন গার্দিজি নিহত হয়। এন্টি ট্যাংক মাইন বিস্ফোরণে আরও ৩০ জন মারা যায়।

সংবাদ পূর্ব সেক্টর

কুমিল্লা

মীরাবাজার, চৌদ্দগ্রাম সাবসেক্টর

মুক্তি বাহিনী ২ সেপ্টেম্বর মিরাবাজারে শত্রু পাদদেশ কলাম অতর্কিতে আক্রমণ করে। ২৬ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং ২১ জন আহত হয়।এরা পাকবাহিনীর নিয়মিত ফোর্স ছিল। ৩ আগস্ট শউগাজিতে তিন পাকসেনাকে ও দুই রাজাকার হত্যা করে।

চাঁদ পুর পর্যন্ত জুড়ে এই সাব-সেক্টরে গেরিলাদের ক্রমাগত আক্রমণ চলে। বার বার শত্রুদের আক্রান্ত করা হয়। গত কয়েক মাসের মধ্যে অনেক জীপ ও ট্রাক (পাকসেনাবাহিনীর) ধ্বংস হয়েছে। অনেক পাক আর্মি অফিসাররা তাদের জীবন হারিয়েছে।

চাঁদপুর শাশিয়ালিতে ৬৬ জন পাক নিহত হয়। ২৯ আগস্ট ৬ পুলিশ এবং নয় রাজাকার নিহত হয়। ১২ জন আহত হয়েছে। একটি রাইফেল ও ৫০ টি ৩০৩ গোলাবারুদ হস্থগত হয়। ৩১আগস্ট এ বাওয়াল (চাঁদপুর) এ মুক্তিবাহিনী ৪টি রাইফেল ২০০ ৩০৩ গোলাবারুদ দখল করে নেয়। ১২ পাকসেনা নিহত ও অন্য ১০ জন আহত হয়। বিবির বাজারে মাইন বিস্ফোরণে এক পাকসেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন নিহত হন। নিউজ থেকে পেয়েছি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চাঁদপুর মহকুমা ফরিদগঞ্জ থানায় এ পর্যন্ত প্রকাশিত ৮ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত আরো ৮২ জন পাকসেনা, ৭৪ জন রাজাকার ও ৩০ জন পুলিশ নিহত হয়েছে। শত্রুপক্ষের উপর মুক্তিবাহিনীর কৃত আঘাত ১০০ জনেরও বেশি। গাজীপুরে সংঘটিত আক্রমণে ১৪ রাজাকার, ৩০ পাকসেনা নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। ঘটনাটা ১৯ আগস্ট সংঘটিত হয়েছিল। একই তারিখে ধনুয়াতে ১৯ পাকসৈন্য নিহত হয় এবং ১৩ জন আহত হয়েছে।

ইম্প ফেনী (সংবাদ দেরীতে গৃহীত)

আগস্টের ২০ তারিখ মুহুরিগঞ্জের কাছাকাছি উল্কা যাত্রীবাহী ট্রেন উড়িয়ে দেয়া হয়। পাকসৈন্য এবং ড্রাইভারসহ শত হতাহত হয়।

এতে চট্টগ্রাম-ফেনী ট্রেন চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুনসীর হাত ফেনী রোডে একটি ট্রাক অস্ত্র এবং গোলাবারুদ, লোড করার সময় ধ্বংস করা হয়েছিল। দুই জন পাকসেনা ও ৬ রাজাকার নিহত হয়।

 

সংবাদ

বিশেষ কমান্ডো একটিভিটিস

ঢাকা

ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্প্রতি তাদের কার্যক্রম তীব্রতর করেছে। এতে শত্রুরা হতাশ। রাস্তার যুদ্ধ একটি দৈনিক ব্যাপার। গত মাসে ঢাকা শহরে কমপক্ষে ৭ কর্মকর্তা, ১৭৫ পাকসেনাকে ও পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ নিহত হয়।

ধোলাইখালে তথ্য পেয়ে পাক বাহিনী একটি জায়গায় আক্রমন করে। যেখানে পাকসৈন্য পূর্ণ পাঁচটি লরি এসেছিল। সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেয়। মুক্তি বাহিনী ৪১ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। পাক বাহিনী অনেক হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের দুই জন আহত হয়েছে। পরে মুক্তিবাহিনী খাল পেরিয়ে চলে যায়।

পরদিন সূত্রাপুরে মুক্তিফৌজ ২জন পাকসেনা ও ১ জন সার্কেল ইন্সপেক্টরকে হত্যা করে।

২২ আগস্টপশ্চিম কমলাপুরে মুক্তিযোদ্ধারা গোয়েন্দা শাখার ১ জনকে হত্যা করে।

১০ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের উপর আকস্মিক হামলা করে আজিমপুর এলাকায়। ৪ জন নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা বন্দী চার টি ৩০৩ রাইফেল ও ৬০ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করে।

কুমিল্লা

মন্দব্যাগ্রায়নপুর এলাকা

১ লা সেপ্টেম্বর উপর বিকেল ৪টার ঘন্টা সময়ে মুক্তি ফৌজ শত্রু অবস্থানের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ৩ “মর্টারএর সাহায্যে। পাকসেনারা বিস্মিত হয়ে গেছিল এবং কোন উত্তর দিতে পারলনা। পাকবাহিনীর একজন অধিনায়ক নিহত হয়। পার্শবর্তী চালনা এলাকায় ১৬ জন পাকসৈন্য ও ২৪ জন রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিসেনারা ১টি এলএমজি এমকে-১, ১২ টি এলএমজি ম্যাগাজিন, ৪টি মার্ক থ্রি রাইফেল, ২টি মার্ক ফোর রাইফেল, ১টি ম্যাগাজিন বক্স এবং ৭টি বড় কাঠের নৌকা জব্দ করে।

নারায়নপুর মুক্তি ফৌজ তিনটি বাঙ্কার, ৫ জন সৈন্য নিহত ও ৭ জনকে আহত হয়।

(ক)স্টাফ কোয়ার্টারের বিপরীতে গ্রীন রোডে ভী আকৃতিতে খনি এম-৪ স্থাপন করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধারা নির্মানাধিন ছাদে অবস্থান গ্রহণ করে। এক সেনা ট্রাক (বেডফোর্ড) রাস্তায় যায় এবং পাশের বিল্ডিং এ ক্রাশ করে। সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড ছুড়ে ও ট্রাক টি ধ্বংস হয় এবং সব সেনা সদস্যরা নিহত হয়। ৫ মিনিট পর আর একটি শত্রু জিপ আবার সেখানে প্রবেশ করে এবং মাইনে আক্রন্ত হয়ে উলটে যায়। মুক্তি বাহিনী লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। জিপ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়। আবারও সশস্ত্র কর্মীদের বহনকারী অন্য একটি লরি মাইন এলাকায় ঢুকে পরে।

পাক আর্মি রা পালাতে শুরু করে আবার গুলিও করে। কিন্তু সেটি মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা বেষ্টিত ছিল। গুলিবর্ষণের পর যোদ্ধারা জলাভূমি দিয়ে চলে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের একজন পায়ে আঘাত পান।

 

শত্রুর প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি নিম্নরূপ:

(১)মৃত-২৪ জন

(২)আহত-৪১ জন

(৩) এক জিপ ও দুটি ট্রাক সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস

(খ) নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজ অফিসের রেকর্ড ও দরকারি কাগজপত্র পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে-

 ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা ব্যাহত করাই ছিল উদ্যেশ্য।

(গ) ঢাকার যোদ্ধারা টঙ্গী-জয়দেবপুর মধ্যে বিদ্যুৎপাইলন ধ্বংস করে।

কুমিল্লা

শালদা নদী থেকে আরও খবর আসছে। মাইঝখার (শালদা নদী এলাকা) এ মুক্তি বাহিনী অতর্কিত হামলায় করে। ৩০ রাজাকার ও ১০ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। এছাড়াও প্রায় ২০ জন আহত হয়।

অন্য একটি স্থানে মুক্তি ফৌজ একটি বাড়ী-যেখানে পাকসৈন্যরা থাকত সেখানে আক্রমণ করে বাড়িটি একদম উড়িয়ে দেয়।

তখন বাড়ির ভেতর অনেক চিৎকার শোনা যায়। ১৫-২০ মিনিট আগুণ জ্বলল। তারপর একটি বিকট শব্দ হল। রেল লাইনের একটি বাঙ্কার ও উড়ে যায়।

২৫ জুলাই সালদানদী পার্টি হাবিলদার জহুর (একটি কুখ্যাত ডাকাত) ও তার শিষ্যদেরকে গ্রেফতার করে। তারা লুটপাট ও পাবলিক হয়রানি করত।

৬ জুলাই ৬ জন শত্রু অনুপ্রবেশকারী গ্রেফতার হয়। ১৪ টি বিস্ফোরক, ১৩ টি হাত বোমা ও বুবি ট্র্যাপ জব্দ করা হয়।

২৮ জুলাই জগন্নাথ এ শত্রু অবস্থানে সফলভাবে অতর্কিতে আক্রমণ করা হয়েছে। ছয় রাজাকার নিহত ও ২ জন আহত হয়। এবং একটি মাইন বিস্ফোরণে ১টি জিপ ধ্বংস এবং এক অফিসার ও ৬ সৈন্য নিহত হয়।

সোনাবন সাবসেক্টর

২৪ জুলাই ২ টি ভিন্ন অ্যামবুশে পর্যবেক্ষণ পোস্টের ২৬ জন,আরও ৩০ জনের মধ্যে ৭ রাজাকার নিহত হয়। এটা ছিল শোনাবনে।

২৬ জুলাই আনন্দপুর এ শত্রু অবস্থানের উপর আক্রমণ করায় ৩ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়।

এক কর্মকর্তাও নিহত হয়।

২৬ জুলাই কুমিল্লা শহরে মুক্তি ফৌজ তারুমিয়াতে মর্টার ব্যবহার করে। একজন প্রখ্যাত রাজাকার নিহত ও এক কর্মকর্তা আহত হয় বলে সাধারণের কাছে খবর পাই। বিস্তারিত খবর আর পাইনি।

নোয়াখালী

২৬ জুলাই সকাল ১১ টায় অ্যান্টিট্যাংক বিস্ফোরণের ফলে একটি জিপসহ এক কর্মকর্তা এবং অপর এক র‍্যাঙ্কের সেনা নিহত হয়।

সিলেট সেক্টর

বাংলাদেশে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রতি ঘন্টায় তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

কিছু একশন নিম্নরূপ:

ক) ২৬ জুলাই গেরিলারা চুনারুঘাট থানা সিলেট জেলার কুখ্যাত রাজাকার হত্যা করে। আরও ৬ জনকে হত্যা করা হয়।

খ) ট্যামাই নামে একজন কুখ্যাত ডাকাত,, রাজাকার ও অন্যান্য ৬সহযোগীদের হত্যা করা হয়। এই ঘটনা বেল্লাতে সংঘটিত হয়েছিল। এই ঘটনায় খুশি হয়ে সাধারণ মানুষ নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ শুরু করে।

গ) ২৭ শে জুলাই মুক্তি ফৌজ সিরাজগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের মধ্যে দারাগাও ব্রিজ ধ্বংস করে।

ঘ) একটি মাইন বিস্ফোরণে শত্রুদের একটি ডজ গাড়ি ও ৬ সৈন্য নিহত হয়েছে

ঙ) রাজাকার এহসানুল হক, সাইফুল্লাহ কান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে হত্যা করা হয়

চ) সাতগাঁও এর একটি সেতু সফলভাবে উড়িয়ে দেয়া হয়।

 

Scroll to Top