বিরোধী দলসমূহের কারণে আহ্বানে ঢাকায় সাধারণ ধর্মঘট

<2.74.401-402>

 

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বিরোধী দলসমূহের আহবানে ঢাকায় সাধারণ ধর্মঘট দৈনিক পাকিস্তান ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৬৮

 

ঢাকায় সাধারণ ধর্মঘট

 

          গতকাল শুক্রবার বিরোধী দলসমূহের আহবানে ঢাকায় হরতাল পালিত হয়। সকাল থেকেই শহরের সব দোকানপাট, হাট-বাজার, কল-কারখানা ও যানবাহন বন্ধ থাকে। ৩ দিন শহরের কয়েকটি এলাকায় সমাজবিররোধীরা কয়েকটি সরকারী ও বেসরকারী গাড়ী বিধ্বস্ত করে এবং দুটি জীপসহ তিনটি গাড়ী পুড়িয়ে দেয়। ইপিআরটিসি’র কয়েকটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

          আগের দিন রাত থেকেই শহরের সর্বত্র কড়া পুলিশ ও ইপিআর বাহিনী প্রহারায় মোতায়েন থাকে। গতকাল সারাদিন আইজি ও অন্যান্য পদস্থ পুলিশ কর্মচারী রায়ট কারসহ বিভিন্ন পুলিশ ভ্যানে শহর টহল দিয়ে বেড়ায়। পিকেটিং-এর চেষ্টা ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমায়েত করার অভিযোগে পুলিশ বহু লোককে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে।

 

          সাধারণ ধর্মঘটকালে গতকাল ঢাকা শহরে অবস্থানরত এয়ার মার্শাল আসগর খাঁন হেঁটে হরতাল দেখতে বের হন। এরপর তিনি বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়েন ও নামাজ শেষে সেখানে বক্তৃতা করেন। ফেরার পথেও অন্যান্য পুলিশ ভ্যান সর্তকতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তার অনুগমন করতে থাকে এবং কোনরূপ ভীড় হলেই তা ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এই সময় রায়ট হতে নিক্ষিপ্ত রঙ্গিন পানি এয়ার মার্শাল আসগর খানের পোশাককেও রঞ্জিত করে তোলে।

 

          তোপখানা রোডস্থ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে পুলিশ তার সেক্রেটারী কর্ণেল মোখতার হোসেনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর এয়ার মার্শাল আসগর খাঁন ও মৌলভী ফরিদ আহমদ প্রেসক্লাব গমন করেন ও সাংবাদিকদের সঙ্গে অল্পক্ষণের জন্য মিলিত হন।

 

          এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বিভিন্ন বিরোধী দল পূর্ব ও (পৃঃ ৮) পশ্চিম পাকিস্তানে ‘সরকারী নির্যাতনের প্রতিবাদে’ প্রদেশব্যাপী এই হরতাল পালনের আহবান জানিয়েছিলেন।

 

          আরো উল্লেখযোগ্য যে, প্রতিবার হরতাল বা ধর্মঘটের সময় রাস্তায় বখাটে ছেলেরা বিশেষ তৎপর হয়ে ওঠে এবং যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করে। কিন্তু এবারে এইসব বখাটে ছেলেদের অনুপস্থিতি দেখা যায়। ইপিআর ও পুলিশ ভ্যান ঘন ঘন টহল দিয়ে বেড়ানোর ফলে সম্ভবতঃ তারা ভয় পেয়ে আত্মগোপন করে।

 

          সন্ধ্যার দিকে অবস্থা স্বাভাকি হয়ে আসে।

 

 

নারায়নগঞ্জঃ

 

          নারায়নগঞ্জ থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধি জানান যে, গতকাল নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও বন্দর থানায় পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। ইপিআইডিসি ডকইয়ার্ডসহ বিভিন্ন মিলের শ্রমিকরাও পূর্ণ ধর্মঘট পালন করে। গতকাল

 

          নারায়ণগঞ্জে ষ্টীমার ও ট্রেন ছাড়া কোন যানবাহন চলেনি। বাজার, দোকানপাট সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। পুলিশের ভাষ্য অনুসারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ২০ জন, নারায়ণগঞ্জ থানায় ২৪ জন ও বন্দর থানায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

গ্রেফতার

 

          পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত এবং গতকাল শুক্রবার ঢাকা শহরের ৫টি থানা এলাকা; নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর ও টংগী থানা এলাকা এবং চট্টগ্রামে মোট ৬৯৪ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে গতকাল চট্টগ্রাম, ঢাকার ৫ টি থানা ও টংগী থানায় মোট ২৫৬ জন গ্রেফতার হয় বলে পুলিশ জানায়। বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয় তাদের প্রায় সবাইকে গতকাল রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

Scroll to Top