স্বাধীন পূর্ববাংলা প্রতিষ্ঠার আহ্বানে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন

<2.157.646-648>

   শিরোনাম   সূত্র    তারিখ
স্বাধীন পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার আহবানে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন  বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন ২১ ফেব্রুয়ারি,১৯৭১

 

একাত্তরে একুশের ডাক

সশস্ত্র কৃষি বিপ্লবের পতাকা উর্ধে তুলিয়া ধরুন,স্বাধীন গনতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা

কায়েম করুন

 

বাংলা ভাষার উপর আক্রমণঃ

       ০   পূর্ব বাংলার বাঙালি জাতির জাতিসত্তা বিকাশকে রুদ্ধ করিবার জন্য পাকিস্তানের শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সাম্রাজ্যবাদ,সামন্তবাদ ও আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজির শোষণমূলক শাসনব্যবস্থার জাতীয় নিপীড়ন নীতির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।

 

ভাষা আন্দোলনঃ

  • শোষক শ্রেণীর এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার জনগণের প্রথম সচেতন ও বলিষ্ঠ প্রতিবাদ।
  • বায়ান্ন-এর একুশ সেই প্রতিবাদের সক্রিয় ও সংগ্রামী রূপান্তর।
  • এইদিনে জনতার সচেতন অংশ হিসাবে পূর্ব বাংলার ছাত্রসমাজ শোষকশ্রেণীর দালালদের আত্মসমর্পন ও আপোষকামী নীতির বেড়াজাল ছিন্ন করিয়া তুলিয়া ধরে সংগ্রামের পতাকা।
  • নিজেদের নিয়োজিত করে শাসকগোষ্ঠী পরিচালিত সকল নির্যাতনের প্রত্যক্ষ মোকাবেলায়।
  • হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করিয়া সৃষ্টি করে জনগণের স্বার্থে আত্মবলিদানের মহান ঐতিহ্য।

 

বায়ান্ন-এর একুশ পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একটি ইতিহাস সৃষ্টিকারী দিন কিন্তু একাত্তরে আজওঃ

০   আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ-আমলামুৎসুদ্দি পুঁজির স্বৈরাচারী এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার পূর্ব বাংলার উপর নিষ্ঠুর জাতিগত নিপীড়ন অব্যাহত।

০   রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে “কাগুজে” “লোকভোলানো” অধিকারের শ্রুতিমধুর প্রতিশ্রুতির সোচ্চার ঘোষণা করা হইলেও বাস্তবে উহা “একজাতিতত্ত্ব” “রাষ্ট্রীয় সংহতি ও অখন্ডতার” বস্তাপচা বুলির বেড়াজালে আবদ্ধ।

০   বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি পরিপূর্ণ মর্যাদা পায় নাই। প্রতিমুহূর্তে তাহা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আক্রমণের সম্মুখীন।

০   ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের ১৫ লাখ বাঙালী নির্মম মৃত্যুবরণ করিয়াও পাইয়াছে নিষ্ঠুর উপেক্ষা ও অবমাননা।

০   আধা-ঔপনিবেশিক,আধা-সামন্তবাদী সমাজ ব্যবস্থায় কৃষক-শ্রমিক-মধ্যবিত্ত তথা গোটা বাঙালী জাতি পরিপূর্ণ ধ্বংসের মুখে।

০    জেলখানাগুলো রাজবন্দীতে ভরপুর।হুলিয়া মামলার বেড়াজালে অনেকে আবদ্ধ।জেল-গুলি-বেয়নেট আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।

০    আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ চক্রান্ত পূর্ব বাংলার গভীরতর হইয়াছে।

আর অন্যদিকেঃ

               ০    বিগত নির্বাচনের পূর্ব বাঙালি জাতির বিভিন্ন শ্রেণী তাহার শ্রেণীগত মুক্তি ও স্বাধীনতার উদগ্র আকাঙ্ক্ষা লইয়া যে “জয় বাংলা” ধ্বনির পিছনে সমবেত হইয়াছিল নির্বাচনোত্তরকালে বাঙালী ধনিক শ্রেণীর প্রতিনিধিরা শ্রেণীগত দুর্বলতা ও আপোষমুখী মনোভাব লইয়া সেই “জয় বাংলা” শ্লোগানকে “জয় পাকিস্তান” শ্লোগানে পরিণত করিতে চাহিতেছে।

            ০     পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তির পতাকাবাহীদের ও সেই উদ্দেশ্যে পরিচালিত শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনতার বিপ্লবি সংগ্রামকে দমননীতির যাঁতাকলে নিস্পিষ্ট করিতে চাহিতেছে।

 

     একাত্তরে একুশেতে পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম নবতর সমস্যার সম্মুখীন

 

 

কেন এই ব্যর্থতাঃ

            ০     কারণ জনগণের  সংগ্রামের মধ্যে ঢুকাইয়া দেওয়া শোষকশ্রেণীর রং-বেরং এর দালালরা পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তির মূল প্রশ্ন শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী জনতার উপর শ্রেণী শোষন অবসানের প্রশ্নকে বারবার বাদ দিয়া গিয়াছে।

            ০     ভাষা আন্দোলন হইতে শুরু করিয়া বিভিন্ন গণ আন্দোলনকে ব্যবহার করা হইয়াছে মুষ্টিমেয় ধনিকশ্রেণীর লাভের ভান্ডার পূরণের জন্য ভোটের রাজনীতি,মন্ত্রীত্ব ও পার্লামেন্টের মাধ্যমে ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারার বাহন হিসাবে।

            ০     আর তাই সত্যিকার দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ নয়,শ্রমিক-কৃষক মেহনতী জনতার শ্রেণী সংগ্রাম বিচ্যুত বিকৃত ধাপ্পা পূর্ণ “জাতীয়তাবাদী” শ্লোগানে করিয়াছে জনগণকে বিভ্রান্ত।

            ০     শোষণব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের বিরূদ্ধতা করিয়া তথাকথিত শান্তিপূর্ণ সংগ্রাম ও নিয়মতান্ত্রিকতার বেড়াজালে আবদ্ধ রাখিয়াছে জনগণের বিপ্লবী চেতনা।

পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম বারংবার মিথ্যা রাজনীতির আবর্তে নিক্ষিপ্ত হইয়াছে।

একাত্তরে মহান একুশেতেঃ

            ০    পূর্ব বাংলার মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিতে হইবে যে,বাংলা ভাষার পরিপূর্ণ মর্যাদা লাভ তথা পূর্ব বাংলার উপর পরিচালিত নিষ্ঠুর শাসন ও শোষণের অবসান হইতে পারে একমাত্র জনগণের বৃহত্তর অংশ কৃষকের মুক্তির পতাকাকে দৃড়ভাবে উর্ধ্বে তুলিয়া ধরিয়া।

            ০    এই মুক্তি আসিতে পারে ভোটের রাজনীতি,মন্ত্রীত্বের লড়াই বা তথাকথিত আইনসভার “শাসনতন্ত্র” রচনা করিয়া নয়,শ্রমিকশ্রেণীর বিপ্লবী পার্টির নেতৃত্বে সশস্ত্র কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে।

            ০     গ্রামাঞ্চলে কৃষকের শ্রেণীসংগ্রাম ও সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে সামন্তবাদী,জোতদারী,মহাজনী ব্যবস্থার উচ্ছেদসাধন ও শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে কৃষকের বিপ্লবী কর্তৃত্ব কায়েম করিয়া।

            ০     উহার পাশাপাশি শহরাঞ্চলে বিপ্লবী গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করিয়া।

            ০     মুক্ত গ্রামাঞ্চল দ্বারা শহর ঘেরাও ও অধিকার এবং সর্বোপরি সারা পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করিয়া।

                             আর এই লড়াই হইবে সশস্ত্র জনযুদ্ধের মহান বিপ্লবী পথে

এবার একুশে তাই শহিদদের স্মরণের সাথে সাথে সশস্ত্র কৃষি বিপ্লবের পতাকা উর্ধ্বে তুলিয়া ধরি।স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা কায়েমের শপথ গ্রহণ করি।

 

                                 পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন  

Scroll to Top