<2.166.668-670>
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ | পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ | ৩রা মার্চ, ১৯৭১ |
ছাত্রলীগ আয়োজিত পল্টনের জনসভার প্রস্তাবাবলী
সূত্রঃ প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ
১। এই সভা পাকিস্তানী উপনিবেশবাদ শক্তির লেলিয়ে দেওয়া সশস্ত্র সেনাবাহিনী কর্তৃক বাঙালীদের উপর গুলিবর্ষণের ফলে নিহত বাঙালী ভাইদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করিতেছে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করিতেছে এবং পাকিস্তানী উপনিবেশবাদ শক্তির সেনাবাহিনীর এই জঘন্য হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়িয়া তোলার জন্য আহবান জানাইতেছে।
২। এই সভা ভাড়াটিয়া সেনাবাহিনীর গুলিতে আহত স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বীর বাঙ্গালী ভাইদেরকে বাঁচাইয়া রাখার জন্য স্বাস্থ্যবান বাঙাগী ভাইদেরকে ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত প্রদানের আহবান জানাইতেছে।
৩। এই সভা পাকিস্তানী উপনিবেশবাদের কবল হইতে মুক্ত হইয়া স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জন্য সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ও নির্ভেজাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করিয়া স্বাধীন বাংলাদেশে কৃষক-শ্রমিক রাজ কয়েমের শপথ গ্রহণ করিতেছে।
৪। এই সভা স্বাধীন বাংলার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পূর্ণ আস্থা রাখিয়া তাঁহার সফল সংগ্রাম চালাইয়া যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছে।
৫। এই সভা দলমত নির্বিশেষে বাংলার প্রতিটি নরনারীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম চালাইয়া যাওয়ার আহবান জানাইতেছে।
জয় বাংলা
ইশতেহার নং/এক
(স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ঘোষণা ও কর্মসূচী)
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণা করা হয়েছেঃ
গত তেইশ বছরের শোষণ, কুশাসন ও নির্যাতন এ’কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত করেছে যে, সাত কোটি বাঙালীকে গোলামে পরিণত করার জন্য বিদেশী পশ্চিমা উপনিবেশবাদীদের যে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র তা থেকে বাঙালীরা মুক্তির একমাত্র পথ স্বাধীন জাতি হিসেবে স্বাধীন দেশের মুক্ত নাগরিক হয়ে বেঁচে থাকা। গত নির্বাচনের গণরায়কে বানচাল করে শেষবারের মতো বিদেশী পশ্চিমা শোষকেরা সে কথার প্রয়োজনীয়তা হাড়ে হাড়ে প্রমাণ করেছে।
৫৪ হাজার ৫শত ৬ বর্গমাইল বিস্তৃত ভৌগলিক এলাকার ৭ কোটি মানুষের জন্যে আবাসিক ভূমি হিসেবে স্বাধীন ও সার্বভৌম এ’ রাষ্ট্রের নাম ‘বাংলাদেশ’। স্বাধীন ও সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’ গঠনের মাধ্যমে নিম্নলিখিত তিনটি লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।
(১) স্বাধীন ও সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’ গঠন করে পৃথিবীর বুকে একটি বলিষ্ঠ বাঙালী জাতি সৃষ্টি ও বাঙালীর ভাষা, সাহিত্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পূর্ণ বিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
(২) স্বাধীন ও সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’ গঠন করে অঞ্চলে অঞ্চলে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বৈষম্য নিরসনকল্পে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করে কৃষক, শ্রমিক রাজ কায়েম করতে হবে।
(৩) স্বাধীন ও সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’ গঠন করে ব্যক্তি, বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ নির্ভেজাল গণতন্ত্র কায়েম করতে হবে।
বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালনার জন্যে নিম্নলিখিত কর্মপন্থা গ্রহণ করতে হবেঃ
(ক) বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম, মহল্লা, থানা, মহকুমা, শহর ও জেলায় ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করতে হবে।
(খ) সকল শ্রেণীর জনসাধারণের সহযোগিতা কামনা ও তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
(গ) শ্রমিক এলাকায় শ্রমিক ও গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের সসংগঠিত করে গ্রামে গ্রামে, এলাকায় এলাকায় ‘মুক্তিবাহিনী’ গঠন করতে হবে।
(ঘ) হিন্দু-মুসলমান ও বাঙালী-অবাঙালী সাম্প্রদায়িক মনোভাব পরিহার করতে হবে এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।
(ঙ) স্বাধীনতা সংগ্রামকে সুশৃংখলার সাথে এগিয়ে নিয়ে বাবার জন্যে পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে এবং লুটতরাজসহ সকল প্রকার সমাজবিরোধী ও হিংসাত্মক কার্যকল্প বন্ধ করতে হবে।
স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারা নিম্নরূপ হবেঃ
(অ) বর্তমান সরকারকে বিদেশী উপনিবেশবাদী শোষক সরকার গণ্য করে বিদেশী সরকারের ঘোষিত সকল আইনকে বেআইনী বিবেচনা করতে হবে।
(আ) তথাকথিত পাকিস্তানের স্বার্থের তল্পীবাহী পশ্চিমা অবাঙ্গালী মিলিটারীকে বিদেশী ও হামলাকারী শত্রুসৈন্য হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং এ হামলাকারী শত্রুসৈন্যকে খতম করতে হবে।
(ই) বর্তমান বিদেশী উপনিবেশবাদী শোষক সরকারকে সকল প্রকার ট্যাক্স-খাজনা দেয়া বন্ধ করতে হবে।
(ঈ) স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের উপর আক্রমণরত যে-কোন শক্তিকে প্রতিরোধ, প্রতিহত, পাল্টা আক্রমণ ও খতম করার জন্যে সকল প্রকার সশস্ত্র প্রস্তুতি নিতে হবে।
(উ) বৈজ্ঞানিক ও গণমুখী দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে সকল প্রকার সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।
(ঊ) স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে ‘আমার সোনার বাঙলা আমি তোমায় ভালবাসি……..’ সংগীতটি ব্যবহৃত হবে।
(ঋ) শোষক রাষ্ট্র পশ্চিম পাকিস্তানী দ্রব্য বর্জন করতে হবে এবং সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
(এ) উপনিবেশবাদী পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে বাঙলাদেশের জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে হবে।
(ঐ) স্বাধীনতা সংগ্রামে রত বীর সেনানীদের সর্বপ্রকার সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়কঃ
স্বাধীন ও সার্বভৌম ‘বাঙলাদেশ’ গঠন আন্দোলনের এ পর্যায়ে নিম্নলিখিত জয়ধ্বনি ব্যবহৃত হবে-
* স্বাধীন সার্বভৌম ‘বাংলাদেশ’ –দীর্ঘজীবি হউক।
* স্বাধীন কর স্বাধীন কর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর।
* স্বাধীন বাংলার মহান নেতা- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
* গ্রামে গ্রামে দূর্গ গড়- মুক্তিবাহিনী গঠন কর।
* বীর বাংগালী অস্ত্র ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন কর।
* মুক্তি যদি পেতে চাও-বাংগালীরা এক হও।
বাংলা ও বাংগালীর জয় হোক
জয় বাংলা।
স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ।