শিরোনামসংবাদপত্রতারিখপৃষ্ঠা
সম্পাদকীয়জয় বাংলা* ২য় সংখ্যা৩১ মার্চ, ১৯৭১

জয় বাংলা ৩১ মার্চ সম্পাদকীয়

ইংরেজীতে একটা কথা আছে

“Man does not live by bread alone”

অর্থাৎ মানুষ শুধুমাত্র আহার করিয়াই বাঁচিয়া থাকে না। কথাটি অক্ষরে অক্ষরে সত্য। আমাদের বর্তমান স্বাধীনতা সংগ্রাম উহার প্রমাণ। স্বৈরাচারী সরকারের আমলে জনসাধারণ ভুট্টা, গম, চাইল ইত্যাদি মোটামুটি খাইতে পাইত। স্বাধীনতা স্বাধীনতা বলিয়া চিৎকার না করিলে “বাসমতী” চাউলও কিছু খাইতে পাইত! ভাতের সঙ্গে আমরা স্বাধীনতাও চাহিয়াছি- এবং আমরা পরম করুণাময়ের অনুগ্রহে সফলতা অর্জন করিয়াছি। আম মনে করি ভাতের সঙ্গে মানুষের মনের খোরাকেরও প্রয়োজন আছে। “জয় বাংলা” সেই চাহিদার কিঞ্চিৎ মিটাইবার চেষ্টা করিতেছে।

গতকল্যকার সংখ্যায় আমরা জনসাধারণের প্রতি আবেদন করিয়াছিলাম- প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্রয় করিবেন না। জানিতে পারিলাম কিছুসংখ্যক লোকও বেহুঁশের মতো লবণ কিনিতে শুরু করিয়াছে। এই জাতীয় কর্ম হইতে বিরত থাকুন। ইহাতে বাজারে সংকট সৃষ্টি হইতে পারে। আমরা মনে করি দোকানদারদের উচিৎ লবণের মত একটি অত্যাবশ্যকীয় জিনিস কাহারও নিকট এক সঙ্গে অর্ধসেরের বেশি বিক্রয় না করা। এই সমস্ত ছোটখাট ব্যাপারেও সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকিবেন- ইহা কোনো কাজের কথা নহে। সংগ্রাম পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে আপনারাও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি নাগরিকের জাতীয় স্বার্থের কথা চিন্তা করা কর্তব্য।

“জয় বাংলা”

জনসাধারণ, সংগ্রাম পরিষদ ও সেনাবাহিনীর সমর্থন ও উৎসাহ পাইয়াছে। সেজন্য আমরা সকলের কাছেই কৃতজ্ঞ।

উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নওগাঁর বাহিরেও বেশ কিছুসংখ্যক পত্রিকা প্রেরণ করা হইয়াছে।

নিরস্ত্র যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করা ন্যায়নীতি ও যুদ্ধনীতির পরিপন্থী। ভাবাবেগে চালিত না হইয়া সংশ্লিষ্ট সকলের বিচার বিবেচনা করিয়া কার্য করিবেন। ইহা আমাদের কথা বহে- পবিত্র কোরানে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশ রহিয়াছে। জয় বাংলাঃ স্বাধীন বাংলার আদি পর্যায়ে নওগা থেকে প্রকাশিত একটি মুদ্রাকার দৈনিক পত্রিকা। সম্পাদকঃ রহমতউল্লাহ এম,এ,। সম্পাদক দাবী করেছেন, “জয় বাংলা”-ই সে সময়ে স্বাধীন বাংলার একমাত্র দৈনিক পত্রিকা এবং স্বাধীন বাংলার সাড়ে সাত কোটি জনগণের একমাত্র মুখপাত্র।

বাংলা মুক্তিবাহিনী, পুলিশ আনসার এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহিত সর্বপ্রকার সহযোগিতা করিবেন। মনে রাখিবেন হয় আমরা জয়ী হইব, নতুবা ধ্বংস হইব। মাঝামাঝি কোন পথ আর নাই। সংগ্রাম পরিষদের সদস্যদের নানা প্রকার গুরুত্বপূর্ণ কাজে এখানে-ওখানে ছুটাছুটি করিতে হইতেছে বলিয়া অনেক সময় জনসাধারণের তাহাদের সহিত যোগাযোগ করিতে অল্প-স্বল্প অসুবিধা হইতেছে। আমরা মনে করি জনসাধারণের সহিত সর্বক্ষণ যোগাযোগ রক্ষার সুবিধার্থে মহকুমা প্রশাসকের দপ্তরে সরকারী কর্মচারীদের রোষ্টার ডিউটি দিয়া একটি নয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা প্রয়োজন। সংগ্রাম পরিষদের নির্দেশে আওতার মধ্যে উক্ত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ হইতে বিশেষ বিশেষ কাজ-যেমন পেট্রোল, কেরোসিন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের কাজ সুষ্ঠুভাবে চলিতে পারে। ইহাকে উপ-নিয়ন্ত্রণ কক্ষ নাম দেয়া যাইতে পারে।

কোরানের বানী

“… যদি কেহ তোমাকে আক্রমণ করে তবে ঠিক সেইভাবেই তুমি তাহাকেও আক্রমণ করে…” ( সুরা বাকারা-১৯৪ আয়াত)

“… অত্যাচার বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই কর-ধর্ম আল্লাহরই। যদি তাহারা বিরত হয় তবে শুধুমাত্র অত্যাচারীদের ছাড়া অপর কাহারও উপর বিদ্বেষ না রাখাই শ্রেয়…” ( সুরা বাকারা-১৯৩ আয়াত)

“এবারে সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারে সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। “ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল”। ( ঘোড়দৈড় মাঠ, ঢাকা, ৭ই মার্চ)

“তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতা সংগ্রাম চালাইয়া যাও”।– মাওলানা ভাসানী (পোলোগ্রাউন্ড, চট্টগ্রাম-২১শে মার্চ)

Scroll to Top