১০. ৭ জুলাই পশ্চিম পাকিস্তানের দৃশ্যপট

চুয়েট ডিবেটিং সোসাইটি

<৬,১০,৫৮৩> অনুবাদ

শিরোনামঃ পশ্চিম পাকিস্তানের দৃশ্যপট

সংবাদপত্রঃ বাংলাদেশ নিউজ লেটার লন্ডনঃ নং ৮

তারিখঃ ৭ জুলাই, ১৯৭১

.

তাদের কাজের ফলাফল ছিল ঔপনিবেশিক যুদ্ধ যা পশ্চিম পাকিস্তানিদের অর্থনীতি ধ্বংস করে দেয়। একমাত্র পতনের মাধ্যমেই সামরিক একনায়কতন্ত্র নিবারন সম্ভব। উঠতি অস্থিতিশীলতার ইংগীত ‘WEST PAKISTAN SCENE’ এর প্রতিবেদনে ছিল।

                                                                 আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি থেকে (করাচি)                                                                                                                                                                                  

পশ্চিম পাকিস্তান এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটি বিষ্ময় এর শিকার হয়। প্রথমটি বিশ্ব ব্যাংক এর নেতৃত্বে  প্রধান সাহায্যপ্রদানকারী দেশেগুলোর সিদ্ধান্ত ছিল যাতে পাকিস্তানের জন্য সকল অর্থনৈতিক সাহায্য স্থগিত হয়ে যায়। শাসক গোষ্ঠীর গুপ্তসভা  কোন দৃশ্যমান  নৈরাশ্য দেখায়নি।  নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমকে অনুপ্রানিত করা হয়েছিল  সহ্য করা ২৩ বছর পাকিস্তানের শাষনের অভিযোগ করার জন্য। কিন্তু বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, ব্যাবসায়িক এবং সাধারন লোকেরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল কারন তারা জানত তাদের সাথে সামনে কি হতে যাচ্ছে। প্রথম বারের জন্য পাকিস্তানের অর্থনীতি পংগু হয়ে গিয়েছিল।                                              দ্বিতীয় বিস্ময় ছিল ‘বাজেট’ এবং এটি প্রশংসিত হয়েছিল; গণমন্ত্রনালয় এর দায়িত্বে ছিল। ধনীদের উপর মোটা কর আরপ করা হয়েছিল যদিও তারা যা দিত অন্যভাবে তা তাদের কাছে ফেরত আসত। ২২ টি কর্পোরেশন মনে করতো আসল বোঝাটা ভোক্তা এবং  শ্রমিকশ্রেণীর বহন করা উচিত, তাদের তাদের রক্ত ও ঘামের  প্রতিটি বিন্দু তাদের থেকে নিংড়ে নিয়ে পুঁজিবাদি শাসকদের কফিতে মিশিয়ে খাওয়ানোটাই আমাদের নিয়তি ছিল। চিনি,চাল,ডাল,আটা ময়দা,সবজি, তেল,পেট্রল,ম্যাচ,শিক্ষা সব শেষ হয়েগিয়েছিল। এখন ভুট্টোকে দেখানোর সময় হয়েছিল ‘কিভাবে হাজার বছর ধরে ঘাস খেতে হয়’ যা তিনি কিছুদিন আগেই ভবিষ্যতবাণী করেছিল। তিনি এই পরিবর্তনে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল আর তার মুখ থেকে কোনো শব্দই আর বের হয়নি। এমনকি বিষ্ময়ের ব্যাপার এই যে, মুসলিম লীগ , জামায়াতে ইসলামএর মূর্খ রাজনৈতিকেরা যারা ইয়াহিয়া খান কে দেবতা মানত তারাও বোবা বনে গিয়েছিল।                       

তৃতীয় বিষ্ময় ছিল ইয়াহিয়া খানের ‘রাস্ট্র নীতি’। সার্জেন্ট-মেজর রাও ইয়াহিয়া খানের পুতুল হয়ে কথা বলা শুরু করেছিল , শুধুমাত্র মুল্লাহ এবং নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম ব্যাতীত আর কেউ একটিও শব্দ পক্ষে বা বিপক্ষে বলেনি। রাজনৈতিকেরা এবার শেখ মুজিবের কথার গুরুত্ব বুঝতে পারল যে, ‘আজ সামরিক সেনারা আমাকে দমনে নেমেছে কাল তোমাদের জন্য নামবে।’ গণতন্ত্র সেনাদের বুটের নিচে পদদলিত হয়ে চূর্ণ হয়ে যবে। ‘রেভোলিউশনারী কাউন্সিল’ মার্শাল ল’ এর আওতায় ইসলামিক রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার শুরু করল যা এখন পর্যন্ত ইসলামিক প্রজাতন্ত্রে স্থায়ী হয়ে আছে। ভুট্টো বুঝতে পেরেছিল পরিস্থিতি এ অবস্থায় আর কিছুদিন থাকলে সে এবং তার দলের অবস্থা চরমে পৌছাঁবে। সে ছলচাতুরীর সহায় নেওয়ার চিন্তা করল এবং সিদ্ধান্ত নিল সে আয়ুব ও তার দলের ১০ বছর ধরে যেভাবে খিদমত করেছে সেভাবে অন্য কারো সরণাপন্ন  হবে। সে সহ অন্য কোনো রাজনীতিবিদদের কেউই মুখ খুলল না। ২২ গোত্রের অধিপকতিরাও দেখ্ল তাদের ডানা কেটে দেওয়া হচ্ছে। তাদের পুরোপুরি দমিয়ে রাখার ব্যাবস্থা করা হচ্ছে আর শীঘ্রই এমন পরিস্থিতি আসবে যে এই অসহায়দের জন্য বিলাপ করার মতউ কেউ  থাকবে না।

Scroll to Top