১৭৯. ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার সমীপেষু

শফিকুল ইসলাম

<৬,১৭৯,৩০৬-৩১১>

শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
স্বাধীন বাংলাদেশে সরকার সমীপেষু নতুন বাংলা
১ম বর্ষঃ ১৮শ সংখ্যা
১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১

 

স্বাধীন বাংলাদেশে সরকার সমীপেষু

আজ একথা বলিবার প্রয়োজন রাখে না যে-গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের আদর্শকে সামনে রাখিয়াই এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও যুবক স্বাধীনতার লড়াইয়ে জীবন দিয়াছে। জীবন ছাড়া যেমন জীব হয় না তেমনি গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র ছাড়া স্বাধীনতার কোন অর্থ হয় না। কৃষকরা বলাবলি করিতেছে এবারে তারা জমি পাইবে, পাটের ন্যায্য মূল্য পাইবে, প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম কমিবে, ঘুষ রিশওয়াত ও অন্যান্য দুর্নীতির হাত হইতে মুক্তি পাইবে। শ্রমিক মনে করে সে তার বাঁচার মত ন্যায্য মজুরী পাইবে। ছাত্র ভাবে এবার তার লেখাপড়ার সুযোগ হইবে। যুবক মনে করে এবার তাঁর চাকুরীর সংস্থান হইবে। এক কথায়- আজ এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক, বৃদ্ধ, নর-নারী, ডাক্তার, কবিরাজ, দোকানদার-ব্যবসায়ী রিক্সাওয়ালা ক্ষেতমজুর আপামর জনসাধারণ ভাবিতেছে-পারিব এবারে মানুষের মত বাঁচিতে কথা বলিবার অধিকার পাইব। মানুষকে মানুষের মত বাঁচিতে দেওয়া ও তাঁকে কথা বলিবার অধিকার দেওয়া এবং তার কথা মত কাজ করা এই-ই হইতেছে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সারমর্ম। এই লক্ষ্যকে সামনে রাখিয়াই আজ আমাদের আগাইয়া যাইতে হইবে। গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রে বিশেষ করিয়া সমাজতন্ত্রে এক লাফে পৌঁছান যায় না তাই, আমাদের তিন পর্যায়ে কাজ করিয়া যাইতে হইবে।

প্রথম পর্যায়ঃ

১। অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকারের স্বরূপ

ক) বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী দলসমূহের প্রতিনিধিদের লইয়া সরকার গঠন করিতে হইবে।

খ) রাষ্ট্রের প্রশাসন ব্যবস্থা প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং তাহার মন্ত্রীসভার সদস্যগণ পরিচালনা করিবেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী দলগুলি কর্তৃক ইহারা মনোনীত হইবেন।

গ) ক ধারায় সুস্পষ্টভাবে ঘোষিত নীতি সরকারের সকল স্তরে অনুসরন করিতে হইবে।

ঘ) সরকারী পদস্থ কর্মচারী এবং স্বায়াত্তশাসিত, আধা-স্বায়াত্তশাসিত সরকারী সংস্থার পদস্থ কর্মচারী ও সাধারণ কর্মচারী এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্য হইতে দালালদের বহিস্কারের জন্য উপযুক্ত স্ক্রীনিং পদ্ধতি স্থির করিতে হইবে।

ঙ) সকল স্তরে যেমন থানা, মহকুমা, জিলা, বিভাগ এবং জাতীয় স্তরে অন্তবর্তীকালীন সময়ে প্রশাসন পূর্বের মত চলিতে থাকিবে। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে পদস্থ কর্মচারী ও সাধারণ কর্মচারীদের কার্যনির্বাহ করিতে হইবে।

চ) পাকিস্তান সরকারের সর্বপ্রকার দমনমূলক ও গণবিরোধী আইন, অর্ডিন্যান্স এবং সার্কুলার (ঘোষনা) প্রত্যাহার করিতে হইবে।

ছ) যুদ্ধাপরাধী এবং দালালদের বিচারের জন্য বিশেষ আদালত স্থাপন করিতে হইবে এবং বিধিবিধান প্রণয়ন করিতে হইবে।

জ) মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ কাজ, সাহস ও ত্যাগের স্বীকৃতিদান এবং তজ্জন্য পুরস্কৃত করার ব্যবস্থা করিতে হইবে।

২। শরণার্থীদের পুর্নবাসন

ক) শরনার্থীদের ফিরাইয়া লইবার জন্য ভারত ও বার্মা সরকারের সহযোগিতায় উপযুক্ত লিয়াজোঁ (যোগাযোগ) ব্যবস্থা সংগঠিত করিতে হইবে।

খ) শরণার্থীদের আশ্বাস প্রদান ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের নিমিত্ত সকল শরনার্থী শিবির ও শরণার্থীদের আস্তানাগুলিতে সর্বদলীয় কমিটিগুলিকে সফরে যাইতে হইবে।

গ) স্ব স্ব এলাকায় শরনার্থীদের গ্রহনের নিমিত্তে উপযুক্তভাবে সংগঠিত অভ্যর্থনা ব্যবস্থা গড়িয়া তুলিতে হইবে। এইসব অভ্যর্থনা কমিটি সর্বদলীয় ভিত্তিতে হইতে হইবে।

ঘ) শরনার্থীদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি ফেরৎ পাওয়ার ব্যবস্থা করা।

ঙ) শরনার্থীদের পুর্নবাসনের জন্য সাহায্য সংগঠিত করা।

চ) সমাজসেবামূলক ত্রানকার্য সংগঠিত করা-অনাথ, বিধবা, বৃদ্ধ, এবং পঙ্গু ব্যক্তিদের রক্ষনাবেক্ষণ।

ছ) জমি বেদখল, জোরপূর্বক বাড়ী দখল এবং এক এলাকার লোক অন্য এলাকায় জোরপূর্বক অপসারণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা।

৩। খাদ্য সরবরাহ

ক) দেশের অভ্যন্তর ও বাহির হইতে খাদ্য সংগ্রহের নিমিত্তে এবং বিভিন্ন এলাকার প্রয়োজন অনুসারে ইহার সমবন্টনের জন্য সরকারের সরকারী সংস্থা ও সংগঠিত করিতে হইবে।

খ)মজুতকরণ, চোরাকারবারি, মুনাফাবাজীর ক্ষেত্রে কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করিতে হইবে।

গ) খাদ্য ও জীবনধারণের পক্ষে অপরিহার্য দ্রব্যাদির উপযুক্ত মূল্য বাঁধিয়া দিতে হইবে যেন উৎপাদকগণ তাহাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাইতে পারে।

ঘ) যথারীতি ফসলকাটা ও বীজ বপনের নিশ্চয়তার সপক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করিতে হইবে।

ঙ) সার, কীটনাশক ঔষধ ও শস্যেরর রোগ নিবারক ঔষধের ব্যবস্থা করিতে হইবে।

৪। যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা

ক) সকল ক্ষতিগ্রস্থ বিমান বন্দর, সড়ক, সেতু, আভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল, টার্মিনাল, খেয়াতরী রেল লাইন, অবিলম্বে মেরামত করিতে হইবে।

খ) যাত্রীসাধারণ বহন ও মালবহনের জন্য সকল বে-সরকারী সরকারী যানবাহন সরকারের কর্তৃত্বে লইতে হইবে। এবং অবিলম্বে মেরামত করিতে হইবে।

গ) টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, টেলিকমিউনিকেশন (টেলিযোগাযোগ) এবং ডাক ব্যবস্থা অবিলম্বে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করিতে হইবে।

ঘ) যাত্রীসাধারণ ও মাল বহনের জন্য সরকারী পরিবহনের ভাড়া শতকরা ২৫ ভাগ হ্রাস করিতে হইবে।

ঙ) রেডিও ও টেলিভিশন কেন্দ্র চালু করিতে হইবে। সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটির নির্দেশ মোতাবেক রেডিও টেলিভিশনে প্রচার কার্য চালাইতে হইবে।

৫।সংবাদপত্র ও সংবাদ প্রচার মাধ্যম

ক) পাক জঙ্গীচক্র সমর্থনকারী ও সহযোগী সংবাদপত্র ও সংবাদ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সংবাদ ও মতামত প্রচারমাধ্যম বাজেয়াপ্ত করিতে হইবে। বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বাংলাদেশে যে সকল সংবাদপত্র বর্তমানে চালু রহিয়াছে সেগুলি নিষিদ্ধকরিতে হইবে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ সামরিক জান্তার আক্রমনের পর সংবাদপত্রগুলি যে নামে প্রকাশিত হইত সে নামে সেগুলিকে প্রকাশের অনুমতি দেওয়া চলিবে না।

৬।বিদ্যুত সরবরা

ক) সকল ক্ষতিগ্রস্থ  বিদ্যুৎ কেন্দ্র মেরামত করিতে হইবে। এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় স্থাপন করিতে হইবে।

খ) বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রাখার জন্য ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে হইবে।

গ) গ্যাস সরবরাহ পুনরায় করিতে হইবে।

৭। শিক্ষাব্যবস্থা

ক) প্রাথমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবিলম্বে শিক্ষাদান কার্য শুরু করিতে হইবে।

খ) জাতীয় প্রয়োজনের উপযোগী এবং স্বাধীন বাংলাদেশের আশা-আকাঙ্ক্ষার উপযোগী পাঠ্যসূচীর আশু সংশোধন করিতে হইবে এবং অবিলম্বে উহা চালু করিতে হইবে।

গ) ১৯৬৯ সাল হইতে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে অংশগ্রহনের জন্য যে সকল ছাত্রের শিক্ষাজীবনের ক্ষতিগ্রস্থ হইয়াছে তাহাদের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনা করিতে হইবে।

ঘ)মাতৃভূমির মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী যুবকদের ক্ষেত্রে তাহাদের অধ্যয়ন চালাইবার জন্য আর্থিক সাহায্যসহ বিশেষ বিবেচনা বাঞ্চনীয়।

চ) বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে যে সকল শিক্ষক, অধ্যাপক এবং শিক্ষাবিভাগ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যান্য পদস্থ কর্মচারী আয়ুব ও ইয়াহিয়া সরকারকে সহযোগিতা করিয়াছেন বলিয়া প্রমাণ পাওয়া যাইবে তাহাদের কঠোর দন্ড এবং শাস্তিদানের ব্যবস্থা করিতে হইবে।

৮। ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘু

ধর্মীয় ও ভাষাগত ইত্যাদি সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রুখিয়া দাড়াতে হইবে। ধর্মীয় ও ভাষাগত সঙ্খ্যালঘুদের রক্ষার জন্য ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে হইবে।

৯। যুদ্ধাপরাধ এবং দালাল

ক) যুদ্ধাপরাধী ও দালালদের স্ক্রীনিং এর জন্য সংস্থা স্থাপন করিতে হইবে।

খ) যুদ্ধাপরাধী ও দালালদের শাস্তিদানের জন্য বিশেষ আদালত স্থাপন করিতে হইবে।

গ) যুদ্ধাপরাধী ও দালালদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করিয়া উহা রাষ্ট্রের নিকট গচ্ছিত রাখিতে হইবে।

এইভাবে দখলকৃত গ্রাম্য কৃষিজমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিলিবন্টন করিতে হইবে।

১০। মুক্তিবাহিনী

ক) জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণকে জাতীয় সম্মান বলিয়া স্বীকৃতি দিতে হইবে এবং মুক্তিবাহিনীর প্রতিটি সদস্য যেন তাহার এই দেশ সেবার উপযুক্ত স্বীকৃতি পান।

খ) শিক্ষালাভের জন্য মুক্তিবাহিনী তরুন্দের বিশেষ সুবিধা দিতে হইবে।

গ) সাহসিকতার জন্য পুরষ্কার দানের রীতি প্রচলন করিতে হইবে।

ঘ) বর্তমানে মুক্তিবাহিনীতে যুদ্ধরত তরুন্দের বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও মিলীশিয়াতে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করিলে তাহাদের গ্রহন করিতে হইবে।

১১। জনস্বাস্থ্য

ক) সকল হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ প্রসুতিসদন, গ্রাম ও শহরের শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অবিলম্বে দিন রাত কাজ শুরু করিতে হইবে।

খ) ঔষধ সরবরাহের প্রয়োজন মিটাইবার জন্য সকল ঔষধ প্রস্তুত শিল্পকারখানা কর্মক্ষম করিতে হইবে এবং উৎপাদন চালু করিতে হইবে।

গ) জীবন রক্ষাকারী ঔষধ আমদানীর জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে হইবে।

১২। শাসন্তান্ত্রিক সমস্যা

ক) একটি অর্ন্তবর্তীকালীন শাসনতন্ত্র গ্রহন করিতে হইবে।

১৩। সর্বদলীয় কমিটি

ক) জেলা হইতে শুরু করিয়া ইউনিয়ন স্তরে সকল পর্যায়ে সর্বদলীয় কমিটি স্থাপন করিতে হইবে। উপরে বর্ণিত লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্ত সরকারের প্রশাসনিক সংস্থাকে স্থানীয় সর্বদলীয় কমিটিগুলির সর্বাধিক সহযোগিতা ও পরামর্ষ গ্রহন করা উচিত হইবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে
স্বাধীন বাংলার রূপরেখা

(১) যে এক কোটি দেশবাসী পাক সৈন্যের বর্বর অত্যাচারে তাহাদের প্রানপ্রিয় মাতৃভূমি ফেলিয়া প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র ভারত ও বার্মায় আশ্রয় গ্রহন করিতে বাধ্য হইয়াছেন, তাহাদিগকে পূর্ণ মর্যাদার সহিত দেশে ফিরাইয়া আনিতে হইবে।

(২) বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে সকলেই স্পষ্টভাবে দেখিয়াছেন-আমেরিকা, চীন অন্যান্য কয়েকটি রাষ্ট্র আমাদের প্রতি দুষ্মনি করিয়া আসিতেছে। তাহাদের ও তাহাদের এজেন্ট মুস্লীম লীগ, জামাতে ইসলাম, নেজামে ইসলাম, পি-ডি-পি এবং চরম বামপন্থীদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সর্বদাই হুঁশিয়ার থাকিতে হইবে।

(৩) এই চরম বিপদের দিনে যে সব বন্ধুরাষ্ট্র (ভারত, রাশিয়া, পোলান্ড ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র) আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করিয়াছেন, তাহাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকিতে হইবে।

(৪) স্বাধীন বাংলাদেশকে গড়িয়া তুলিতে হইবে স্বাধীন প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে। বলাবাহুল্য ইহা হইবে একটি সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র অর্থাৎ সকল ধর্মের সমান অধিকার থাকিবে।

(৫) পার্লামেন্ট হইবে সার্বভৌম-জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই দেশ শাসন করিবেন। প্রাপ্তবয়স্করাই ভোট দিতে পারিবেন। নির্বাচন হইবে মুক্ত।

(৬) বিচার বিভাগ শাসন বিভাগ হইতে পৃথক হইবে।

(৭) নর-নারী জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার থাকিবে।

(৮) নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বৈদেশিক নীতি গ্রহন করিবে। ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রভৃতি গণতান্ত্রিক ও সামাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলির সহিত সখ্যের সম্পর্ক গড়িয়া তুলিবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা সগ্রামীদের স্বপক্ষে দাঁড়াইবে। সিন্ধি, বালুচ, পাঠান প্রভৃতি নিপীড়িত জাতির সহিত মৈত্রি সম্পর্ক গড়িয়া তুলিবে।

(৯) সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের সহিত কোনরূপ অসম চুক্তি করিবে না।

(১০) দেশের একচেটিয়া বৃহৎ পুঁজিপতিদের অধিকার খর্ব করা হইবে। ভারী ও মূল শিল্প জাতীয়করণ করিবে একচেটিয়া পুজিবাদ গড়িয়া উঠিতে দিবে না। ছোট ও মাঝারী জাতীও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড উৎসাহিত করিবে। ব্যাঙ্ক, ইনসিওরেন্স, বৈদেশিক বাণিজ্য রাষ্ট্রায়াত্ত করা হইবে।

(১১) ভূমির সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করিবে। অতিরিক্ত মালিকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিবে। বাড়তি জমি গরীব ও ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করিবে।

(১২) শ্রমিক কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার ও ন্যায্য মজুরির নিশ্চয়তা বিধান করিবে। ক্ষেত মজুররা যাহাতে কাজ পায় ও ন্যায্য মজুরী পায় মূল্য কৃষককে দিবার সুব্যবস্থা করিবে।

(১৩) পাট শিল্প ও চা শিল্প জাতীয়করণ করা হইবে এবং কৃষক যাহাতে পাটের ন্যায্য মূল্য পায় তাহার বাস্তব ব্যবস্থা করিবে। অন্যান্য কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য কৃষককে দিবার সুব্যবস্থা করিবে।

(১৪) দালালদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করিবে।

(১৫) বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা, সভাসমতি ও সংগঠন করার নিশ্চয়তা থাকিবে।

(১৬) জনগণের মিলিশিয়া থাকিবে।

(১৭) শিক্ষা ব্যবস্থাকে বৈজ্ঞানিক মতে আধুনিকীকরন করিবে। মাতৃভাষাই হইবে শিক্ষার মাধ্যম।

(১৮) সার্বজনীন অবৈতনিক শিক্ষার মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করিতে হইবে।

(১৯) কারিগরী শিক্ষার প্রসারের উপর গুরুত্ব দিতে হইবে।

(২০) জাতী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহঙ্কারীদের যথাযোগ্য মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান করিবে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারবর্গকে সাহায্য দিবে।

(২১) শোষন্মুক্ত স্বাধীন বাংলা গঠনের চেষ্টা করিতে হইবে।

তৃতীয় পর্যায়ে
সমাজতন্ত্র

 

এ যুগ সমাজ তন্ত্র উত্তরণের যুগ। দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন পথে সমাজতন্ত্রের দিকে আগাইয়া চলিতেছে। বাংলাদেশ ও তার নিজস্ব পথেই সমাজতন্ত্রের দিকে আগাইয়া চলিয়াছে। তবে আমাদের কাজ মেকি ও বাচনিক সমাজতন্ত্র সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকিতে হইবে। সোনার যেমন পিতলা কলসী হয় না, কানা ছেলের নাম ‘পদ্মলোচন’ হয় না তেমনি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র ছাড়া অন্য কোন সমাজতন্ত্র ও সত্যিকারের সমাজতন্ত্র নয়।

এ পর্যায়ে আমাদের সমাজতন্ত্রে উত্তরণ কর্মসূচী নিতে হইবে।

Scroll to Top