৭৩. ৩ সেপ্টেম্বর মুজিবের বিচার ও বিশ্ব প্রতিক্রিয়া

তুষার শুভ্র

<৬.৭৩.৭১২-৭১৩>

.

শিরোনামঃ world concern over Mujibur Rahman’s Trial

সংবাদ পত্রঃ Bangladesh

তারিখঃ ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

.

[ Bangladesh: সাপ্তাহিক বুলেটিন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, মুজিবনগর সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ মিশন, ওয়াশিংটন হতে এম আর সিদ্দিকী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।]

.

শেখ মুজিবের বিচারে বিশ্বের উদ্বেগ

সারা পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য আইনজীবি,রাষ্ট্রনায়ক এবং খবরের কাগজ পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসক কর্তৃক শেখ মুজিবের গোপন বিচারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁদের মতামত এই যে সাড়ে সাত কোটি মানুষের ভোটে নির্বাচিত কোন নেতার গোপনে সামরিক আইনে বিচার শুধু অন্যায়ই নয় অমানবিকও বটে।

ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিল

ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিল এর সেক্রেটেরিয়েট হেলসিঙ্কিতে একটি বিবৃতিতে বলেছিলেন যে বিচার মন্চায়ন এবং গনহত্যা ও লুটতরাজ এর ইয়াহিয়ার একনায়কতন্ত্র পৃথিবীর কাছে এটাই প্রকাশ করে দিয়েছে যে এটি সম্পূর্ণ রূপে নৈতিকতা বর্জিত এবং তা জনগনের অধিকার ক্ষুন্ন করে। “শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি ভারতে বৃটিশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করেছিলেন যখন ইয়াহিয়া ও তার দোসররা তাদের ব্রিটিশ মনিবের প্রতি চরম আনুগত্য প্রকাশ করছিল,একমাত্র ভুলটি হচ্ছে প্রথম বারের মত অনুষ্টিত সাধারন নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ তার দলকে ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭টিতে বিজয়ী করেছিল।

আর্ন্তজাতিক জুরিস্টস কমিশন

আর্ন্তজাতিক জুরিস্টস কমিশন বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের গোপনে সামরিক আইনে বিচারে পশ্চিম পাকিস্তানের ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আইসিজে এর সেক্রেটারি জেনারেল কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক বার্তায় বলেন, “আর্ন্তজাতিক জুরিস্টস কমিশন শেখ মুজিবুর রহমানের গোপনে সামরিক আইনে বিচারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ন্যায় বিচারে গোপনীয়তার কিছু থাকতে পারে না।”

ইউ থান্ট

জাতিসংঘের মহাসচিব ইউ থান্ট এক সংবাদ বিবৃতিতে বলেছিলেন জাতিসংঘে কর্মরত অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের সাথে তিনিও একই অনুভূতি পোষণ করেন যে শেখ মুজিবের ভাগ্য সংক্রান্ত যেকোন উন্নতি বা অবনতি পাকিস্তান সীমান্তের বাইরেও প্রভাব ফেলবে।

ইউএস সিনেটর

গারজন ইউএস সিনেটর আমেরিকার সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন যেন সরকার পাকিস্তানকে জানায় যে তারা আশা রাখে যে শেখ মুজিবের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা হবে।

নিউ ইয়র্ক পোস্ট

যেহেতু ওয়াশিংটন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা কুড়িয়েছে, তা ব্যবহার করে তাদের উচিত ইয়াহিয়া কে শেখ মুজিবের প্রতি প্রতিহিংসা মূলক বিচার থেকে বিরত রাখা। যদি গোপন বিচারে রহমান দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাঁকে যদি মেরেও ফেলা হয় তিনি পূর্ব পাকিস্তান ও ভারত দুটি দেশেই শহীদ বলে বিবেচিত হবেন এবং এই বিচার প্রক্রিয়ার সত্যিকার বলি হবে এশিয়ার শান্তি।

ক্রিস্তিয়ান সায়েন্স মনিটর

পূর্ব বাংলার সায়ত্তশাসন অর্জনের লক্ষ্যে তাঁর (মুজিবুর রহমান) ভূমিকা কি আদৌ রাষ্ট্রদোহীতামূলক কিনা তা বেশিরভাগ মানুষের মনেই সংশয়ের জন্ম দিয়েছে। গোপন বিচারে তাঁকে দন্ডিত করা অবশ্যই বেদনাদায়ক অনুভূতির জন্ম দেবে।

টরেন্টো টেলিগ্রাম

শেখ মুজিবের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করা এবং ইয়াহিয়া খানের সরকারকে আরেকটি অপ্রয়োজনীয় হত্যাকান্ড থেকে বিরত রাখাই শুধু নয়, সমগ্র উপমহাদেশকে নতুন করে বিক্ষোভের মুখে ঠেলে দেওয়া থেকে বিরত রাখার দায়িত্ব সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপরই বর্তায়।

আর্সেইটার জয়তুং ( অস্ট্রিয়া )

মুজিবের মৃত্যুদন্ডের মানে হবে ঐতিহাসিক ভাবে পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি মৃত্যুদন্ড।

Scroll to Top