Awami League Opts for Military Solution

ডিসেম্বর ৬ এর টাইমস অফ লন্ডনে বলা হয়েছে, “যেহেতু পাকিস্তান বিশ্ব নেতাদের করা সকল আবেদনের সতর্কবানীকে প্রত্যাখান করেছে, ইন্ডিয়া বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশের জন্য সমাধান জারি করার জন্য তার আওয়াজ তলা ব্যতীত ভিন্ন রাস্তা নেই। এখানে আরও বলা হয়েছে যে, পুর্বে ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তানী ব্যবহারের নির্মমতা বিবেচনা করে, শত কোটি শরনার্থীর উপর চাপিয়ে দেয়া দুর্দশা বিবেচনা করে এবং বাংলাদেশের প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের পেছনে শক্ত যুক্তির কথা চিন্তা করে পাকিস্তান দুর্বল এবং কলঙ্কিত দলিলের মাধ্যমে এই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছে। ডিসেম্বর ৬ এ টাইমস অফ লন্ডনের পরামর্শ অনুযায়ী, “ এই পরিস্থিতে সবচেয়ে উত্তম পন্থা হতে পারে বাংলাদেশে ইন্ডিয়ার একটি আশু বিজয় যাতে ইন্ডিয়া পশ্চিমে পাকিস্তানী আক্রমনকে প্রতিহত করতে পারে।

স্যার আলেক ডগলাস হিউম, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব, হাউস অফ কমন্সে দেয়া বক্তব্যে ভারতীয় উপমহাদেশের উপর কোন প্রকার মুল্যবিচার থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন। বিরোধীদলীয় নেতা মি হ্যারল্ড স্যার আলেকের মনোভাবের মত নিজেকে যুদ্ধের উপর উত্থিত কোন সমস্যার চটজলদি বিচারে না পৌঁছনয় নিজেকে যুক্ত করেছেন।

মি জন স্টোরহাউস, পার্লামেন্টের নেতৃ সদস্য এবং সাবেক  মন্ত্রীপরিষদ সদস্য স্যার আলেককে ইউ এন প্রস্তাবনে সমর্থন না করার জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং ঘোষণা করেছেন যে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকারকে স্বীকৃতি না দেয়ার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ দোষারোপের যোগ্য।

১১ ডিসেম্বর, ১৯৭১

পুর্ব জার্মানির সংবাদ সংস্থা এডিএনের মাধ্যমে প্রচার হওয়া একটি বক্তব্যে পুর্ব জার্মানির সরকার সোভিয়েতের স্থানকে সমর্থন দিয়ে বলে যে ভারতীয় উপমহাদেশে এই রক্তপাত অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। এই বক্তব্য বলা হয় যে, “ পুর্ব জার্মানি ভারতীয় উপমহাদেশের পরিস্থিতির উপর উদাসীন ছিলনা এবং এখনও নয়”। এখানে বলা হয়, “ বিশ্ব শান্তি রক্ষার্থে নিয়োজিত দায়িত্ববান সরকার প্রধানেরা বাংলাদেশে একটি শান্তিপুর্ন সমঝোতা নিশ্চিত করার জন্য পাকিস্তানের কাছে অনেকবার আবেদন করেছেন কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খান এটির পক্ষে সাড়া দেননি।

প্যারিসে ফ্রেঞ্চ কমিউনিস্ট পার্টি একটি বক্তব্যে বলেছে “ ইন্ডিয়ার সাথে পাকিস্তানের যুদ্ধাবস্থায় যাওয়ার ঘোষণা এশিয়ায় একটি অত্যন্ত ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে”। এই বক্তব্যে আরও বলা হয় যে, “ এই দ্বন্দ্ব গত বছর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যাপক সাফল্যকে ইয়াহিয়া খানের সরকার স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করায় আরও ত্বরান্বিত হয়েছে” ।

কমিউনিস্ট পার্টির সংবাদপত্র লা হিউমানিতে তে  একজন ভাষ্যকার বলেন যে, “ এটি একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপুর্ন ব্যাপার যে এখনও তারা তাদের মুল লক্ষ্যকে হারিয়ে যেতে দেয়নি। এবং এই ৮ মাসব্যাপী এই কার্যপরম্পরা এখন শুধুমাত্র একটি ইন্দো-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব নয়, একটি যুদ্ধ যা বাংলাদেশের উপর পাকিস্তানী সামরিক সরকার ছেড়ে দিয়েছে।

ডিসেম্বর ৭ এর টাইমস অফ লন্ডন লেখে, “ ইন্ডিয়া এখন বাংলাদেশে যুদ্ধের রাজনৈতিক সমাপ্তি নিশ্চিত করতে চাইছে এই আশায় যে এটি করলে সামরিক শক্তির পতন শীঘ্রই ঘটবে। সমঝোতার কোন স্থান নেই, কোন অংশ থেকে কোন প্রতিবাদের জায়গা নেই, জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবনা হবে না এবং পর্যবেক্ষকদের যুদ্ধরত দেশগুলোর মধ্যে অবস্থান ইন্ডিয়ার সংকল্পকে পরিবর্তন করবে না।লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ বলেছে, “ ইন্ডিয়ার নীতি এবং পরিস্থিতি যা বাংলাদেশ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পৌঁছানর কথা বিবেচনায় আনলে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবিকপক্ষে যুক্তিযুক্ত হয়েছে।

 দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, “ বাংলাদেশ যা সংকল্প ও রক্তের মাধ্যমে জন্মেছে এখন হার স্বীকার করবে না। এমনকি যদি শান্তির জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা  মিসেস গান্ধীর আওয়ামী লীগ সরকারের স্বীকৃতি সফল হয় তবে এই সরকার বাস্তবিক আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রন দ্বারা সমর্থিত হবে। রয়টার্স প্রতিবেদন দিয়েছে যে, “ রেডিও মস্কো আজ বর্তমান পরিস্থিতে জাতিসংঘে ইন্দো-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে শান্তিপুর্ন সমাধান খুজে বের করার জন্য চীনের আন্তরিকতার অভাবকে দায়ী করেছে”। এখানে আরও বলা হয় যে, “ চীন পুজিবাদীদের সাথে মিলিত হয়ে জাতীয় মুক্তির আন্দোলনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে”।

ডিসেম্বর ৭ এর দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস রাষ্ট্রপতি নিক্সনকে ইন্দো- পাকিস্তান দ্বন্দ্বে নিরপেক্ষতার আড়ালে পাকিস্তানকে সমর্থন দেয়ার জন্য দায়ী করেছে। সকল সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশে নিপীড়ন বন্ধ করার জন্য অথবা আসল রাজনৈতিক সমঝোতার ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগে সবকিছু ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে স্পষ্টভাবে ইন্ডিয়াকে এই চলমান আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব এর পেছনে প্রধান দায়ী বলে অভিহিত করেছে যা কয়েক মাস অপেক্ষা করেছে পাকিস্তানে অস্ত্র সাহায্য পাঠানো বন্ধের পেছনে। প্রশাসন এখন তাৎক্ষণিকভাবে ইন্ডিয়ায় অস্ত্র সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে। এটিকে কোনভাবেই পুরোদস্তর নিরপেক্ষতা বলা যায় না। এই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয় যে, “  জাতিসংঘে প্রথমে নিরাপত্তা পরিষদ এবং এখন সাধারণ পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য প্রচেষ্টা হল একটি সাধারণ অস্ত্রবিরতি চুক্তি তৈরি এবং সৈন্য প্রত্যাহার”।এই ধরনের কার্যক্রম নিশ্চিতভাবেই জরুরি এবং প্রয়োজনীয়, কিন্তু কার্যগতভাবে এটি সফল হতে পারবে না যতক্ষন না জাতিসংঘ এবং এর প্রধান সদস্য দেশগুলো বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্র একই সময়ে স্বীকৃতি দেয়া এবং পাকিস্তানের সাথে এই সমস্যার মুল কারন নিয়ে কাজ করার প্রচেষ্টার জন্য তৈরি হচ্ছে।

 রাষ্ট্রপতি নিক্সনের সম্মান বাচানোর জন্য শেষ মরিয়া চেষ্টা হিসেবে তিনি বলেন যে দক্ষিণ এশিয়া দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে আমেরিকা একদম নিরপেক্ষ থাকবে। সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয় যে, “ ইন্দো-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে রাষ্ট্রপতি নিক্সনের পুর্ন নিরপেক্ষতার ঘোষণা প্রশাসনিক রাজনিতিকে লুকোতে ব্যর্থ হয়েছে,  যেটি আসলে ইসলামাবাদে ইয়াহিয়া খানের সরকারের পক্ষে নিশ্চিতভাবেই পক্ষপাতদুষ্ট”।

Scroll to Top