শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৮২। আমরা সাহায্য করতে পারি তবে অস্ত্র দিয়ে নয়। | নিউ ইয়র্ক টাইমস | ১৯ আগস্ট ১৯৭১ |
<14,82,202-203>
নিউ ইয়র্ক টাইমস, বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট ১৯৭১
আমরা সাহায্য করতে পারি তবে অস্ত্র দিয়ে নয়।
যদিও পুরো পরিস্থিতি আমাদের নাগালের মধ্যে নাই
– জন কেনেথ গালব্রেইথ
কেম্ব্রিজ – ম্যাস
বাংলার এই দুঃখজনক অবস্থায়, চারটি উপাদান নিয়ন্ত্রন করছে। তাদের তালিকা: শরণার্থী সমস্য এবং অসহনীয় পরিস্থিতি অবিলম্বে হ্রাসকরণের জন্য প্রতিটি প্রচেষ্টা করা আবশ্যক। কিন্তু সহনশীল সমাধান না হলে এই মানুষগুলো তাদের গ্রাম এবং জমিতে ফিরে আসতে পারবেনা। এই বিপুল সংখ্যক লোক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পে থাকবে অথবা নিকটবর্তী ভারতের কোন প্রদেশে থাকবে যা প্রচন্ড নিষ্ঠুর ও অচিন্ত্যনীয়।
উদ্বাস্তুরা শুধুমাত্র একটি শান্তিপূর্ণ এবং সুরক্ষিত দেশে ফিরে আসবে। এই বছরের শুরুতে স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ব্যাপক ভোট পরে এবং এই ঘটনাগুলি থেকে এটি নিশ্চিত যে পূর্ব পাকিস্তান তথা ইস্ট বেঙ্গল কেবল শান্তিপূর্ণ হবে যদি পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও নিজস্ব সরকারব্যাবস্থা দেওয়া হয়।
স্বায়ত্তশাসনের চাপ যেসকল জনগণ দেশ ছেড়ে চলে যায়নি তারা ভোটের মাধ্যমে দিয়েছে, এবং তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন এবং নিজস্ব সরকার পশিম পাকিস্তানের জন্যও ভালো। পশ্চিম পাকিস্তান ভারতের তুলনায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভালো সম্ভাবনা দেখা যাবে । সামরিক শাসনের কারণে সেই সম্ভবনা ভেস্তে যাবে। আরও খারাপ হল পশ্চিম পাকিস্তানের সেনা ও পাঞ্জাবিরা।
সেনাবাহিনীতে থাকা পাঠান এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা নিষ্ঠুর ও অত্যাচারী কাজ চালাচ্ছে বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমে তারা নিষ্ঠুর আর শোষক হিসেবে পরিচিত হবে। ভিয়েতনামের মত হয়ে যাবে তাদের অবস্থা।
ভারতবর্ষের একটি সামরিক সমাধান উপমহাদেশের দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করবে।
আমেরিকান নীতি যা অনুসরণ করে:
এটা আশা করা হয় যে, উপমহাদেশের দুটি ইসলামী সাম্রাজ্য এখনও এমন একটি সম্পর্ক খুঁজে পেতে পারে যেমন একটি কমনওয়েলথের দুটি অংশের মধ্যে থাকে যা তাদের স্বাধীন সহাবস্থানে বসবাসের অনুমতি দেবে। তবে পূর্ববাংলার জন্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন এবং -সরকার অবশ্যই থাকতে হবে। তাই আমাদের কোনও পদক্ষেপকে- পশ্চিমে পূর্বের সামরিক কর্তৃত্বকে হতাশ করতে বা উৎসাহিত করতে উৎসাহিত করা উচিত নয়।
এর অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানে কোনো ধরনের সামরিক সহায়তা করা যাবে না। এবং এর মানে হল যে সমর্থন বা প্রস্তাব দেওয়ার মত এমন ছোট বা প্রতীকী সহায়তা যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষতিকর হতে পারে। পূর্ববর্তী বিষয়গুলো যেকোনো অর্থনৈতিক সাহায্যকেও নিষেধ করে, যাতে তারা বাঙালির স্ব-শাসন বা স্বাধীনতার দমনের জন্য সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কাজ করতে পারে।
চীনাদের কোন গুপ্ত কৌশল নীতি সমর্থনযোগ্য নয়। অবশ্যই এই বিষয়গুলি ভারতীয় সামরিক বাহিনীর কোন উদ্যোগ এবং ভারতের জন্য অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করে। অন্যদিকে, শরণার্থীদের দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে সাহায্য করতে আমাদের অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে উদার হতে হবে।
গত কয়েক বছরে এটি স্পষ্টভাবে পরিষ্কার যে তৃতীয় বিশ্বে আমাদের (হস্তক্ষেপের) ক্ষমতা সীমিত। আমরা হয়তো পূর্ববাংলার সমস্যা সমাধানে সক্ষম নই কিন্তু আমরা নিশ্চয়ই, যেভাবে রাশিয়ানরা আপাত দৃষ্টিতে করেছে, সেভাবে সহমর্মী হয়ে জোরপূর্বক ভুল কাজ করার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সক্ষম।
[জন কেইনথ গালব্রাইট ভারতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত।]