শিরোনাম | উৎস | তারিখ |
৮৭। একটি প্রচার পত্র | ৪নং সেক্টরের দলিলপত্র | …………… ১৯৭১ |
কম্পাইল্ড বাইঃ Rashed Islam
<১১, ৮৭, ৫৮৩– ৫৮৪>
বাংলার গণদুশমনরা
হুঁশিয়ার
স্বাধীন বাংলাদেশবাসী ভাইসবের প্রতিঃ
আমাদের মুক্তিবাহিনী বীরবিক্রমে হানাদার ইয়াহিয়া সরকারের বর্বর সেনাবাহিনার সহিত লড়াই করিয়া চলিতেছে।বিপুল অস্ত্র-শস্ত্র, সীমাহীন অত্যাচার-অবিচার, নিরস্তর নর-নারী, শিশু, বৃদ্ধা, নারী ধর্ষণ, অবাধ লুন্ঠন ও ঘরে ঘরে অগ্নিসংযোগের তান্ডবলীলা বাঙ্গালী জাতির উস্পাতদৃঢ় মনোবল ক্ষুন্ন করিতে পারে নাই। সমস্ত দেশে নরখাদকে পাক সরকার আজ পর্যন্ত অফিস, আদালত, রাস্তাঘাট চালু করিতে অক্ষম হয় নাই, খাজনা-শুল্ক আদায় ও দেশের কাঁচামাল লুণ্ঠনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ায় তারা অর্থনৈতিক দিক দিয়া সর্ম্পূর্ণ দেউলিয়া হইয়া পড়িয়াছে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দখলদার বাহিনী নিজেদের দালার খুঁজিয়া পাইয়াছে গণদুশমন লীগ, পি, ডি, পি, জামাত ইত্যাদি জনসমর্থনবিহীন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে। আপনারা এইসব দালালদের কলঙ্কময় অতীত ইতিহাস ভালভাবে জানেন।আজ তারা হানাদারদের সাহায্যে বাংলাদেশের নিরীহ জনসাধারণের উপর যে বিপদ ডাকিয়া আনিয়াছে বিশ্বের ইতিহাসে তাহার তুলনা নাই।
স্বাধীন বাংলাদেশের জনসাধারণ মুক্তিফৌজের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া লড়াই করিতেছেন। অপরদিকে পাক ফৌজকে তাহার দুস্কর্ম ও পাশবিক কার্যকলাপে পি,ডি,পি,মুসলিম লীগ ও জামাতে ইসলামী উত্যাদি প্রতিষ্ঠানের প্রদালাল ও গুন্ডারা সহযোগিতা করিতেছে। দালালেরা গ্রামে গ্রামে পাক ফৌজকে পথ দেখাইয়া লইয়া আসে, নিরীহ জনসাধারণের টাকা-পয়সা, গরু-খাসীসহ যাবতীয় খাদ্যবস্তু লুটপাট করে, ঘরবাড়ী ভাঙ্গীয়া আগুণ ধরাইয়া দেয়, মহিলাদের উপর পাশবিক অত্যাচার চালায়, মানুষের মণে ত্রাসের সৃষ্টি করিয়া হাজার হাজার লোককে দেশত্যাগে বাধ্য করে। নির্বিচারে নারী-শিশু-বৃদ্ধা-যুবকদিগকে হত্যা করিয়া নদী-নালায় ভাসাইয়া দেয়।
তাই, হানাদার দস্যুবাহিনীর পাক ফৌজের মতো এই সমস্ত দালাল ও গুন্ডাদল বাংলাদেশবাসীর জাত শত্রু এই দালাল গুন্ডা-দেশদ্রোহী বিভীষণদের খতম করার জন্য আমরা চিহিত করিয়াছি।এদের প্রতিটি দুষ্কর্ম ও গতিবিধি সম্বন্ধে আমরা সম্পূর্ণ অবগত আছি।এদের নির্মূল করা আমাদের প্রাথমিক ও অবশ্য কর্তব্যের মধ্যে গণ্য।ইতিমধ্যে আমরা এই সমস্ত দেশদ্রোহীদের মধ্যে অনেককেই খতম করিয়াছি। বাকীগুলি মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনিতেছে।জানিয়া রাখুন, এদের ধ্বংসের দিন আর বেশি দূরে নয়।
ভাইসব,
হানাদার বাহিনীর প্রতি পদক্ষেপ দুর্বার গণপ্রতিরোধ অধিকতর দৃঢ় করুন। নিকটস্থ মুক্তিবাহিনীর শিবির ও স্বাধীণ বাংলাদেশ সরকারের কার্যালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ ও পরিপূর্ণ সহযোগিতা বজায় রাখিয়া চলুন।দুর্বার গতিতে মুক্তির সংগ্রামকে চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষে পৌছাইয়া দিন।
আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম আজ প্রায় তিন মাস যাবত অপ্রতিহত গতিতে চলিয়াছে।সারাবিশ্বে বীর জাতি হিসাবে আমরা শির উঁচু করিয়া দাঁড়িয়াছি। রক্তের বিনিময়ে দেশর স্বাধীনতা অর্জন করিতে হয়। আমরা বহু রক্ত দিয়াছি, প্রয়োজনে আরো দিব।আমাদের সংগ্রাম ন্যায়ের সংগ্রাম, আজাদীর সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।
জয় আমাদের সুনিশ্চিত।
মনে রাখিবেন, যে জাতি নিঃশেষে প্রাণ বিলাইয়া দিতে জানে, সেই জাতির ক্ষয় নাই, লয় নাই।
-জয় বাংলা-
বাংলাদেশ সংযোগ ও তথ্য দফতর তামাবিল, সিলেট হতে প্রকাশিত ও প্রচারিত।