একটি বিভক্ত দেশ

শিরোনাম
সূত্র
তারিখ
৬৯। একটি বিভক্ত দেশ
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
২৩ শে জুলাই, ১৯৭১

 

নীতেশ বড়ুয়া & Raisa Sabila

<১৪, ৬৯, ১৫৭১৬২>

 

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, নিউ ইয়র্ক, জুলাই ২৩, ১৯৭১

একটি বিভক্ত দেশ

ধর্ম, বর্ণ ও দারিদ্র্য নির্বিশেষে পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধ দ্বিধাচ্ছন্ন, কোন আসন্ন সমাধান এ মুহূর্তে আসা করা যাচ্ছেনা, নাগরিকরা কোনরকমে বেচে আছেন, বাঙ্গালিরা সামরিক শাসন নিগৃহীত হচ্ছে, অথচ, কি সমস্যা, সে প্রশ্নের কোন উত্তর নেই।

 

পূর্ব পাকিস্তানের একটি শহরে, একজন ডাক্তার তার রাস্তার পাশের চেম্বারে বসেন রোজই, মাঝে মাঝে রোগির আশায় বাইরে তাকান, যেখনে এখন ধুলাবালি, লুটপাট হওয়া দোকান আর ঘরবারির কিছু অংশ পরে আছে কেবল।

 

মাঝে মাঝে রাস্তায় ইউনিসেফ এর চিনহ আকা, কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি সেনা বোঝাই কিছু গারি রাস্তায় টহল দেয়, এছাড়া গোটা রাস্তায় কোন জনমানুষের চিনহ নাই। ডাক্তার নিজেও এখনও পযন্ত চেম্বারে বসে আছেন, কারন তাকে এমন্টাই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার পরিবার শহরের বাইরে কোথাও লুকিয়ে আছে। তিনি ফিস্ফিশিয়ে কথা বলেন, কেননা, রাস্তার যেকোন পথিক গুপ্তচর হতে পারে। রাতের বেলা যখন আর্মিরা বিভিন্ন বাড়ির দরজার কড়া নাড়ে, তিনি ভয়ে থাকেন যে যেকোন দিন তার নামও ঐ তালিকায় থাকতে পারে।

 

নগরে এখন কি হচ্ছে, রাস্তায় পড়ে থাকা পচাগলা দেহাবশেষ, ঘরে ঘরে আগুন, লুটপাট, ধর্ষণ আর চলতে থাকা সন্ত্রাসের কথা ডাক্তার বলছিলেন, ফিসফিসে গলায়। “ আমরা সত্যি কথা বলতে ভয় পাই। যারা সত্যি বলে, তারা শাস্তি পায়, আর একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যু”, তিনি বললেন। এই ডাক্তার একজন প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা হবার কারনেই তার প্রাক্তন সহকর্মীদের জন্য আরো বেশি চিনহিত হবার ভয়ে আছেন। কিন্তু তার আসল অপরাধ, এমন একটি ভুখন্ডে জন্মগ্রহন করা, যা বাঙ্গালীদের ভুখন্ড হিসেবে পরিচিত, এবং তা পাকিস্তানের একটি অংশও বটে। এখন এই ভুখন্ড কেবলি মৃত্যু আর ভীতির এক রাজ্য।

 

যেখানে যুদ্ধের কারন মুছে গেছে রক্তের বন্যায়

 

চার মাসেরো কম সময় ধরে পূর্ব পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে, কিন্তু এতদিনে এই যুদ্ধের কারন মোটামুটি পুথিগত হয়ে গেছে। এই যুদ্ধের ভৌগলিক, ঐতিহাসিক উৎস, নিতিগত বা বিবেকগত কারন- সবি যেন ধুয়ে গেছে রক্তের বন্যায়। ২৫শে মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে ঠিক কত মানুষ মারা গেছে তার কোন সঠিক হিসাব নেই। পশ্চিমা কূটনৈতিকরা বলছেন সংখ্যাটি কমপক্ষে ২ লক্ষ থেকে সরবোচ্চ ১০ লক্ষ।

 

ঘটনাগুলোকে মোট তিনভাগে ভাগ করা যায়

 

প্রথমে এটি ছিল বাঙ্গালীদের করা একটি রাজনৈতিক আন্দোলন, যার মুলে ছিল পশ্চিম পাক্সিতানিদের প্রায় দুই শতক ধরে চালিয়ে যাওয়া অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শোষণের বিরোধিতা। মার্চে তা আরো প্রকট আকার ধারন করে, যখন বাঙালি আওয়ামী লীগ দল নির্বাচনে জয় লাভ করে এবং পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসনের একটি সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু ২৫শে মার্চ রাতে, বাঙ্গালিরা স্বাধীনতার দাবী করছে এই ভয়ে, পাকিস্তানি আর্মি (যাদের বেশিরভাগি পশ্চিম পাকিস্তানের সদস্য) পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানি ঢাকার উপর হামলা করে। বাঙালি ছাত্রদের তারা হত্যা করে, রাজনীতিবিদদের গ্রেফতার করে এবং আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

দ্বিতীয় পর্যায় কোন রুপকথার চেয়ে কম নয়, যেখানে বাঙালিরা নিজেরাই নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করল ও তা পালন করতে শুরু করল। এ সময়ে হাজারখানেক অবাঙ্গালিকে হত্যা করা হয়েছে, যার ফলে, সাবধানতাবশত সেনাবাহিনী রাজধানির বাইরে বা মিলিটারি ক্যাম্পের বাইরে গমন করেনি। কিন্তু এই স্বাধীনতার স্বপ্ন আপ্রিলের মাঝামাঝি আসতেই সেনা অভিযানের আঘাতে চুরমার হয়ে গেল। শহরের পর শহর পুনরায় দখল করে নিল তারা, যার ফলে দশ হাজারের বেশি বাঙালিকে হত্যা করা হল, লুটপাট আর অগ্নিসংযোগ বেড়ে গেল। তাদের খুব কমই প্রতিরোধ এর সম্মুখীন হল। প্রায় ৬০ লক্ষ বাঙালি, যাদের বেশিরভাগই সংখ্যালঘু হিন্দু গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ও সেনাবাহিনিদের আক্রমনের স্বীকার হয়েছে বেশি, তারা ভারতে পালিয়ে যেতে শুরু করল।  

 

এখন চলছে তৃতীয় পর্যায়

 

তৃতীয় ও বর্তমান পরযায়ে cসেনাশাসন বলবত আছে- আতংকিত বাঙালি শাসিত হচ্ছে সেনা বাহিনী ও কঠোর সামরিক দমন আইনের আওতায়। পশ্চিম পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষগন বলেই যাচ্ছেন যে সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। কিন্তু, আর্থিক অবস্থা চরমভাবে বিপর্যস্ত, কলকারখানাগুলো অচল, স্কুল বন্ধ, রাস্তাঘাট বেশিরভাগই ফাকা, শহরবাসীরা বেশিরভাগই শহর ছেড়ে চলে গেছে। লক্ষ লক্ষ বাঙালি, বিশেষ করে হিন্দু ও মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবার গ্রামে লুকিয়ে আছেন। এখনও প্রতিদিন ৫০,০০০ শরণার্থী পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে। বাঙ্গালীদের প্রবল সমর্থনপুষ্ট মুক্তি বাহিনী বা বাঙালি গেরিলা বাহিনী প্রতিনিয়তই সেনাদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। গেরিলাদের মধ্যে এখনও যথেষ্ট প্রশিক্ষন বা সঙ্ঘবদ্ধতার অভাব রয়েছে, কিন্তু সীমান্তে আশ্রয় বা রসদ সরবরাহ তারা প্রতিনিয়তই পাচ্ছে ভারত থেকে।

 

প্রায় ১০ দিন ধরে পূর্ব পাকিস্তানে ভ্রমন ও বিভিন্ন স্তরের লোকের সাথে কথা বলে এটাই মনে হচ্ছে যে এই অবস্থার চতুর্থ পরযায়ে রয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের, বাংলাদেশের বা বাঙ্গালীর স্বাধীনতা। যদিও তা অর্জন করতে আসন্ন দিনগুলোতে আর কত বাঙ্গালিকে প্রান দিতে হবে, তার কোন সঠিক ধারনা নেই। যদিও কোন সমাধান, এমনকি স্বাধীনতাও, পুরব পাকিস্তানের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কোন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা বয়ে আনবে বলে মনে হয়না, যারা আজো মহানবী মুহম্মদের বানি অনুযায়ী “মুখ দিয়েছেন যিনি, আহার দিবেন তিনি” জীবনযাপন করে যাচ্ছে এবং ক্রমান্বয়ে আরো বেশি দরিদ্র, অনাহারি জাতিতে পরিনত হচ্ছে। ৭.৫ কোটি মানুষের এই জনবসতি ইতিমধ্যে গড়ে প্রতি বর্গমাইলে ১৬০০ জনে দাড়িয়েছে, এবং আগামি ২৫ বছরের মধ্যে তা দ্বিগুণ আকার ধারন করবে। গত শরতের শেষদিকে সাইক্লোনে মৃত্যুবরণ করে প্রায় ৫ লক্ষ বাঙালি। অন্যদিকে ৫ লক্ষ নতুন শিশু জন্ম নিয়েছে মাত্র ৮৭ দিনে। পূর্ব পাকিস্তানে এই সাইক্লোনের মত একটি দুর্যোগকে ছাপিয়ে যাওয়ার মতই ভয়াবহ এই গৃহযুদ্ধ- যা সঙ্ঘটিত হল মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই।

 

প্রাচীন ধারায় প্রতিহিংসার অনুশীলন

 

দারিদ্র্য, অবহেলা, আর হতাশার ফলে এমন যুদ্ধের সুচনা করেছিল কঙ্গো আর আলজেরিয়াতেও। মানুষ শুধু রাজনৈতিক কারনে না, ধর্ম ও বর্ণের নামেও হত্যা করছে পরস্পরকে। মুসলিম দর্শন অনুযায়ী চোখের বদলে চোখ কিংবা দাতের বদলে দাতের মত প্রাচীন ধারনাও এমন গোষ্ঠীবদ্ধ অনুতাপের কারন বলা যায়। সেনাবাহিনী হত্যা করছে বাঙ্গালিকে, প্রায় ২০ লক্ষ সংখ্যালঘু অবাঙ্গালী (যাদের সাধারনত বিহারী বলা হয়) এই সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে। সুতরাং বাঙ্গালিরা হত্যা করছে বিহারীদের। প্রায় ১ কোটি সংখ্যালঘু হিন্দু নিশ্চিত ভাবেই সেনাবিহিনির হাতে বলি হচ্ছে। এমনকি কিছু বাঙালি মুসলিমও এই হত্যাযজ্ঞে সানন্দে যোগদান করছে। এই বিক্ষিপ্ত গোলযোগের সুযোগ নিয়ে অনেক গ্রাম, বাহিনী বা ব্যাক্তি আর্থিক লাভের আশায় বা ব্যাক্তিগত প্রতিহিংসায় আক্রমন করছে একে অপরকে। 

 

এ তথ্যগুলো পূর্ব পাকিস্তানের ভেতর থেকে ঘুরে এসেছেন, এমন ব্যাক্তিদের কাছ থেকেই শোনা। এই ডাক্তারের মতই, বাঙ্গালীরা মুছে ফেলছন তাদের পূর্ব পরিচয় বা শহরে বসবাসের ঠিকানা। বাঙ্গালিরা সাংবাদিকদের সাথেও কথা বলেন না প্রান হারানোর ভয়ে। বেশিরভাগই মুখ খুলেন না, এমনকি অপরিচিতের কাছে সাহস করে ভিক্ষার আবেদন করেনা কোন ভিক্ষুকও। স্বাভাবিকভাবে বিশ্বের অন্যতম দরাজ কন্ঠের এই বাঙ্গালিরা, এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাব আদান প্রদান করেন চোখের চাহনির মাধ্যমে, ভিতসন্তস্ত্র বাঙালি চোখে চোখ রেখে কথা বলে না- অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে, লজ্জায় অবনত চাহনি মিশে থাকে মাটির সাথে, আর নয়ত চুপিচুপি ইশারাতেই তারা প্রকাশ করতে চান নিজেদের অনুভুতি।

 

একজন আইনজীবী ও তার ছেলের ভাগ্য বেশ ভাল বলতে হবে। এই সময়ে, কোন বাঙ্গালিকে কেমন আছেন বলে প্রশ্ন করলে, তারা উত্তর দেন- বেচে আছি। এই আইনজীবী ও তার ছেলে কেবল মাত্র প্রানে বেচে আছেন, তা নয়, তারা নিজেদের বাড়িতেই বাস করছেন। যদিও, তারা নিজেদের বাড়িতে আত্মগোপন করে আছেন, কালেভদ্রে বের হন। আইনজীবী বললেন- রাস্তা থেকে গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি, এমনকি সাত বছরের কোন শিশুও যদি আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বলে আমি একজন দুর্বৃত্ত, তাহলেও আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে’।

 

পাকিস্তান বিরোধী প্রতিটি বাঙ্গালিই এখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে দুর্বৃত্ত। আইনজীবীর কনিষ্ঠ ছেলেটি বলছিল, “ সব বাঙ্গালিই এখন দুর্বৃত্ত”। সে আইনের ছাত্র। সেনাবাহিনিরা ছাত্রদেরই বিশেষভাবে নিশানা করে, ফলে তাদের বেশিরভাগকেই লুকিয়ে থাকতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ। ছেলেটি প্রশ্ন করছিল- “ যে দেশে আইন বলে কিছুর অস্তিত্ব নেই, সেদেশে আইন পরে কি হবে”?

 

আইনজীবীর বাড়িতে বসেই আলাপচারিতায় সন্ধ্যা হয়ে আসলো। কথা বলার আগে তিনি কাঠের জানালার কপাটগুলো শক্ত করে আটকে নিলেন। তারপরি তার মাথায় ফের চিন্তা হল যে পথচারিদের কেউ এখানে কোন ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করতে পারে- তাই কপাটগুলো পুনরায় খুলে সামান্য ভিরানো অবস্থা রাখলেন।

 

তারা ‘গন্ডোগোলের” কথা বলছিলেন, কখন কিভাবে এই শহরে ২৫ শে মার্চে ঢাকায় সেনাবাহিনীর হামলার খবর আসলে, আওয়ামীলীগ নিয়ন্ত্রন নিজেদের হাতে তুলে নেয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশের পতাকার আওতাধীন ছিলেন তারা, আর তারপরি বিমান হামলায় শহর ধ্বংসাবশেষে পরিনত হয়। মানুষ আতংকিত হয়ে পরে। আওয়ামীলিগ এর লোকজন কিংবা তাদের নিয়ন্ত্রিত সশস্ত্র মুক্তিবাহিনীও পলায়নপর হাজার মানুষের স্রোতে সামিল হতে থাকে। সেনাবাহিনী এখানে আসার অনেক আগেই তারা পালিয়ে যায়। পালানোর আগে যে উত্তেজনা সারা শহরে বিরাজ করছিল, তার ধারাবাহিকতায় প্রায় শতাধিক বিহারিকে বাঙ্গালিরা দল বেধে আক্রমন ও হত্যা করে।

 

এর ফলশ্রুতিতে, অন্য সকল এলাকার মতই আর্মিরা এখানে এসেই প্রতিরোধ শুরু করেন। শহরের বেশিরভাগ অংশ অক্ষত থাকলেও, সেনাবাহিনী ও তার অনুসারীরা লুটপাট চালিয়েছে সবখানেই। মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই শহরে ফিরে এসেছেন।  অনেক দোকানপাটও পুনরায় খুলেছে, যদিও তাদের মালিকানায় আর আগের ব্যাক্তিরা নেই। হিন্দু দোকানদাররা পালিয়ে গেছে, বিহারি কিংবা আর্মিদের সমর্থকরা সেগুলো দখল করে নিয়েছে। সর্বত্র এখনও গ্রেফতার প্রক্রিয়া চলমান।

 

পাকিস্তানিদের একটি সড়ক অবরোধে চার খ্রিস্টান বাঙালি গ্রেফতার হন। পূর্ব পাকিস্তানের সরকগুলোতে এখন খুব কম সংখ্যক বাসই চলাচল করে। রাস্তায় চলমান এই গুটিকয়েক বাসগুলোকে কিছুক্ষন পরপরি থামানো হয়, যাত্রিদের নামিয়ে লাইনে দাড় করানোর পর পাকিস্তানি আর্মি তাদের উপর তল্লাসী চালায়। এই চেকপয়েন্টে যেসব সেনারা অবস্থান করেন, তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই বাংলা শব্দ বলতে পারেন (পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা উর্দু), সুতরাং, তল্লাসি করে দুর্বৃত্তদের খুজে পাবার একটি জনপ্রিয় উপায় হচ্ছে তাদের লুঙ্গি উঠিয়ে দেখা। মুসলিমদের মুসলমানি করা হয়ে থাকে, হিন্দুদের তা থাকেনা। কিছু পশ্চিম পাকিস্তানি সেনা যখন এদেশে এসেছিলেন, তখন তারা ভাবতেন, সব বাঙ্গালিই হিন্দু। আরো বেশি অভিজাত সেনাদের মতে সব হিন্দুই ‘দুর্বৃত্ত”। কিন্তু বাঙালি মুসলিমদের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি হওয়ায় সেনারাও দ্বন্দ্বে পরে গেছেন। যার ফলে এই চার খ্রিস্টান বাঙ্গালিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

খ্রিস্টানদের শারীরিক নির্যাতন করা হয়না

 

যারা পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষায় কথা বলতে পারেন না, তাদের মিলিটারি ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং ঘন্টাখানেক সময় ধরে জেরার নামে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। একজন পশ্চিমা খ্রিস্টানদের গ্রেফতারের কথা শুনে এর প্রতিবাদ করেন। সুতরাং এ বিষয়টি এখন আর্মি মেজরকে জানানো হলে, তিনি বন্দী চার খ্রিস্টানকে তলব করেন ও তাদের কাছে ক্ষমা চান। তিনি ব্যাখ্যা করেন- কোন খ্রিস্টানকে শারীরিক নির্যাতন করার কথা আমাদের বিধিমালায় নেই।

 

মোটা ফ্রেমের চশমা পরে একজন চর্মসার বাঙালি দোকানদার দোকানে বসে দেখছিলেন দুইজন অপরিচিত ব্যাক্তি ফাকা রাস্তা ধরে হেটে আসছেন। তারা দোকানে এসে শহরের গন্ডগোলের কথা জিজ্ঞেস করলেন। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে দোকানদার উত্তর দিলেন, আমি কিছু বলতে পারবোনা, বলতেই বলতেই তিনি ধ্বংসপ্রাপ্ত দালান, ভাঙ্গা রাস্তাঘাটের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললেন- “চারদিকে তাকিয়ে দেখেন”, ঐ দুই ব্যাক্তিরা দোকান থেকে চলে যেতেই, তিনি ভাঙ্গা গলায় বললেন- আমি লজ্জিত যে আমি পারিনা…’।

 

একটু দুরেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন তরুন এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলতে শুরু করে- সৈন্যরা শহরটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বহু বাঙালি গ্রেফতার হচ্ছে, প্রতি রাতে তাদের গুলি করে হত্যা করে নদিতে লাশ ফেলে দেয়া হচ্ছে। আমরা এখন আর নদির কোন মাছ খাইনা। তরুন পথিকদের পথ দেখিয়ে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেল একজন সার্জন এর সাথে কথা বলার জন্য। এই সার্জন বাঙালি হলেও সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার কারনে বেশ চাপের মধ্যে আছেন। তাকে শহরে হত্যাযজ্ঞের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি পালটা প্রশ্ন করলেন- “ হত্যা, কিসের হত্যা? কে হত্যা করছে? তার কাছে শহরের সাধারন সমস্যার কথা জানতে চাইলেও তিনি একি ভঙ্গিতে উত্তর দেন- সমস্যা? কিসের সমস্যা? এখানে কোন সমস্যা নেই’।

 

স্বাভাবিক অবস্থার বিশ্লেষণ

 

এক সময় দর্শনার্থীরা সার্জনের কাছ থেকে বিদায় নেন। হাসপাতালের বাইরে এসে তরুণটি আবারো ফিসফিস করে কথা বলতে শুরু করে। “ আপনারা ডাক্তারের সাথে কথা বলেছেন। তিনি সত্য গোপন করছিলেন, কারন তিনি সত্য বলতে ভয় পান। এতেই বোঝা যায় আসলে কি ঘটছে।

 

অগাস্টের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবার খুলে দেয়া হলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফেরত যাবে কিনা, সে বিষয়ে কথা হচ্ছিল একজন অধ্যাপক ও তার ছাত্রদের সাথে। তারা খুব একটা আশাবাদী নন এবিষয়ে। কিছু শিক্ষার্থী লুকিয়ে আছেন, নিজ বাড়িতেই, কেউ গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন, আবার কেউ পালিয়েছেন ভারতে। কেউ কেউ মুক্তি বাহিনীতে যোগদান করেছেন। ক্যাম্পাস এখন সৈন্যদের ক্যাম্পে পরিনত হয়েছে, আর সেনারা বসবাস করছেন ছাত্রাবাসগুলোতে, সেনারা রান্না করার সময় আগুন জালান ছাত্রদের বইয়ের কাগজ পুড়িয়ে। অধ্যাপক প্রশ্ন করলেন- ‘এই অবস্থায় আপনি ফিরে আসার কথা ভাববেন’?

 

একজন ছাত্রী, বলছিলেন, তিনি যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন, তার একটি কক্ষ থেকে আর্মিদের জিজ্ঞাসাবাদের কেন্দ্রটির ভেতরে দেখা যায়। ‘সারাদিনই সেখানে ছাত্র, কমবয়সী ছেলেদের ধরে নিয়ে এসে মারধোর করা হয়। তিনজন সৈন্য ক্রমাগত তাদের বুট দিয়ে ছাত্রদের আঘাত করতে থাকে। সারা রাত তাদের চিৎকার শোনা যায়। আমি ঘুমাতে পারিনা। এই দৃশ্য এবং শব্দ সহ্য করার মত না’।

 

অধ্যাপক বললেন-“ আমাদের সেনাবাহিনীর ভাল নামডাক ছিল। আমাদের সেনাবাহিনী সত্যি গর্ব করার মত ছিল। কিন্তু, দেখুন আজ তারা কি করছে। কোন সেনাবাহিনী সত্যি মহৎ হলে কি করে অন্যায়ের পক্ষে অস্ত্র ধরতে পারে”? 

 

পদ্মার ফেরি পারাপারের ঘাটে দুইজন আর্মি মেজর দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাদের একজন ছিলেন ডুবুরি, অপরজন নিয়োজিত ছিলেন ঊটের বাহিনীতে। তাদের দুইজনকেই বেশ সভ্য ও আকর্ষণীয় মনে হচ্ছিল। তারা ব্যাখ্যা করলেন যে তারা দেশ রক্ষার জন্যই যুদ্ধ করছেন, দেশের অখণ্ডতা অক্ষুন্ন রাখতে তারা লড়াই করছেন ভারতীয় চর, দুর্বৃত্ত আর বিপথগামি ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে। ‘ তাদের অরাজকতা দেখে রাগে আমাদের রক্ত টগবগ করে ফুটছিল। যদি আপনি দেখতেন, আপনিও তাদের হত্যা করতে চাইতেন”। তারা কোন এক শহরের কথা বলছিলেন। গুজব ছিল যে সেখানে বাঙ্গালিরা বিহারিদের হত্যা করেছে। (পরে সেই শহরকে সৈন্যরা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে, বাঙালি হত্যা করেছে আরো অনেকগুন বেশি।)

মেজরদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন এত বাঙালি পালিয়ে গেল, বিশেষ করে হিন্দু বাঙ্গালিরা। উত্তরটা বেশ কল্পনাপ্রসুত বলেই বলা যায়। তারা উত্তরে বললেন- এপ্রিলে সেনারা আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার আগে, হিন্দুরা এদেশের মুসলিমদের বলছিল যে- “পবিত্র কুরআন পুরনো হয়ে গেছে। ফলে মুসলিমরা তাদের কুরআন রক্ষার জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করে আর তারপরি অনেক হিন্দুরা পালিয়ে যায়”। ঊট বাহিনীর সৈন্যটি স্বীকার করে যে অনেক বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পদ্মার দিকে তাকিয়ে ডুবুরি বললেন- “কুমিরগুলো মোটা হয়ে গেছে। ”

 

কিন্তু, তারপরও তারা বলেন সব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে এবং বাঙ্গালিরাও এখন আর সৈন্যদের ভয় পায়না। একটা ফেরি এসে পাড়ে ভিরল, সেনাদের নির্দেশে একটি পাটকল পুনরায় সচলের কাজ করতে নিয়োজিত একদল শ্রমিকদের নিয়ে। একসারিতে মেজরদের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিটি শ্রমিক মেজরদের দিকে কুরনিশের ভঙ্গিতে অবনত মস্তকে এগিয়ে যাচ্ছিল।

 

সব আর্মি অফিসাররা এই মেজরদের মত সহমর্মী না। একটি শহরের অবস্থানকারী একজন পশ্চিমা বলছিলেন কিভাবে একজন আর্মি ক্যাপ্টেইন একজন হিন্দু তরুণীর উপর আক্রমন করার সময় মেয়েটিকে তার বন্দুকের ব্যারেল ধরে দেখতে বলে। “অনেক হিন্দু মারার কারনে দেখ, বন্দুক এখনও গরম হয়ে আছে”- কথাগুলো হাসতে হাসতে বললেও সে বানিয়ে কৌতুক বলছিল না।

 

ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মিতে বহু বছর আগে বেয়ারার কাজ করতেন এমন একজন বৃদ্ধ বিহারি এখন এই অর্ধেক ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরীর একপ্রান্তে অবস্থিত এক হোটেলে পরিচারকের কাজ করেন। তিনি সৈন্যদের সমর্থন করেন, তাই কথা বলতে ভয় করেন না। তিনি বলছিলেন- এপ্রিলের বেশ কিছুদিন যাবত, সৈন্যরা এসে পৌছানর বহু আগে, আওয়ামীলীগের লোকজন পালিয়ে যাওয়ার পরপরি বিহারিদের জন্য খুব খারাপ একটা সময় কেটেছে। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইন্ডিয়ান আর্মির ইংরেজিতে উনি বর্ণনা করছিলেন কিভাবে বাঙ্গালিরা দল বেধে বিহারিদের তাড়া করত রাস্তায় আর চিৎকার করে বলত, “বিহারি চোরদের মারো, বিহারি চোরদের পুড়িয়ে ফেলো’। কিছু বিহারিকে হত্যা করে হয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগই প্রানে বেচে গেছেন। তারপর আর্মিরা আসলো। তার ভাষ্যমতে- “আর্মিরা অনেক বাঙালি, হিন্দু চোরদের হত্যা করেছে। এখন তারা ভারতে পালিয়ে গেছে, সময় খুব খারাপ সাহেব’।

 

এই গন্ডগোলের আগে একজন ধনবান ও নিজ সমাজে গন্যমান্য একজন হিন্দু ব্যাক্তি, সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করতেন। নিজের এলাকার প্রান্তিক মুসলিমদের জন্য তিনি স্কুল, হাসপাতাল নির্মাণ, সেচের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বাঙালি হলেও, নিজেকে তিনি একজন খাটি পাকিস্তানি নাগরিক মনে করতেন। একজন বাঙালি হয়েও, তিনি আওয়ামীলীগের সমর্থক ছিলেন না, বরং কট্টর মুসলিম লীগের সমর্থন করতেন। 

 

শিকারিই যখন শিকার

 

এই গৃহযুদ্ধ শুরু হবার প্রায় এক মাস পরে, যখন পাক আর্মিরা তার এলাকাতে প্রবেশ ও করেনি, (এবং বিহারিরা বাঙ্গালীদের জন্য বিপদে দিন কাটাচ্ছিল), এই হিন্দু ব্যক্তিটি তার বাড়িতে দুইজন বিহারিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। যখন বাঙ্গালীদের দল তাদেরকে খুজতে এসেছিল, উনি তাদের বাচিয়েছিলেন। কিন্তু, আর্মিদের আশার পর দৃশ্যপট পুরোই উলটে গেল, আর বাঙ্গালিরা- বিশেষ করে হিন্দু বাঙ্গালিরা শিকারে পরিনত হলো। 

সৈন্যরা হিন্দু গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে, লোকজনদের উৎসাহিত করেছে, হিন্দু বাড়িতে লুটপাট, হামলা চালাতে। আর্মিদের নির্দেশে স্থানীয় হিন্দু মন্দিরটি মানুষ হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে।

 

উল্লেখ্য এই হিন্দু ব্যাক্তি পালিয়ে তার এক বন্ধুর গ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নিলেন, দুই মাস সেখানে লুকিয়ে ছিলেন তারা। সেই লুকানোর আস্তানা থেকে প্রথম তিনি আলোর মুখ দেখলেন দুইজন সাংবাদিকের সাথে কথা বলতে গিয়ে। বিকেলের দিকে একজন কৃষকের বেশে তিনি হেটে যাচ্ছিলেন ধান খেতের আল ধরে, একটা কালো ছাতা দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছিলেন। তিনি অন্য হিন্দুদের মত ভারতে পালিয়ে যাননি, কারন তিনি আশায় বুক বেধে আছেন যে একদিন এই আর্মিরা চলে যাবে, তাদের জীবন আবার আগের মত স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু আর্মিরা রয়েই গেছে, হিন্দুদের খুজে খুজে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে, এমনকি সীমান্তের দিকে যাওয়াও অনেক বেশি ঝুকিপুরন হয়ে গেছে।  

 

মাত্র কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ব্যাক্তি জানতেন তিনি কোথায় লুকিয়ে আছেন। তাদের একজন ছিলেন মুসলিম লীগের কর্মকর্তা, একজন বেশ প্রভাবশালী নেতা, কেননা মুসলিম লীগ বহুদিন ধরেই আর্মিদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। হিন্দু ব্যাক্তিটি বলছিলেন- “সে জানে আমি কোথায় লুকিয়ে আছে, কিন্তু সে ভুলেও আমাকে সাহায্য করার সাহস করবে না”। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রায় সকল মুসলিম লীগ নেতারাই হিন্দুদের প্রতি সহমর্মিতা অনুভব করেন, তাই বললেন- “তারাই বা কি করবে বলেন? তারাও তো বিপদে আছে, ভয়ে আছে”।

 

আর্মিদের লিস্টে সকল হিন্দুদের সম্পত্তিই এখন “বহিরাগতদের সম্পত্তি”। অন্যান্য এলাকায় একে শত্রুদের সম্পত্তি বলেই ধরে নেয় সবাই। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই এই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা নিলাম করা হয়। এই হিন্দু ব্যাক্তি সাক্ষাতকারে নিজের জীবনের বিপদের চেয়ে বেশি, তার হারানো সয়সম্পত্তি নিয়েই কথা বলছিলেন। ছাতাটা আবার মাথার উপরে ফেলে দিয়ে খেতের মধ্য দিয়ে হেটে নিজের লূকানোর আস্তানায় ফিরে যাওয়ার আগে তিনি বললেন- “ আমার মুসলিম বন্ধুরা আমাকে বলে, যখন কোন হিন্দুর লাশ নদী থেকে তোলা হয়, দেখা যায় তাদের দেহ প্রচন্ড নির্যাতনে এতই ক্ষতবিক্ষত হয়ে আছে

 

যে বেশিরভাগেরি চেহারাও সনাক্ত করা সম্ভব হয়না”। 

 

শেখানো বুলি আউড়ে যাওয়া এক প্রধানশিক্ষক

 

পরিদর্শকরা ভারত সীমান্তের কাছেই একটি শহর পরিদরশন করেন। আর্মিদের পুনরায় দখল করে নেয়া শহরগুলোর মধ্যে এটিই ছিল সর্বশেষ। এই শহরেও বিপুল ধংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে এবং বেশিরভাগ এলাকাই পরিত্যাক্ত। স্থানীয় শান্তি কমিটিতে কাজ করছেন কিছু বিহারি আর ডানপন্থী বাঙালি মুসলিম লীগার। এরাই এলাকায় আর্মিদের চোখ ও কান হিসেবে ভুমিকা পালন করে যাচ্ছেন। পরিদর্শকদের পথ চেনানো ও অনুসরন করার জন্য তারা দুইজন তরুণকে নিয়োজিত করলেন। তরুন দুইজন আমাদের বললেন- এখানকার স্কুলে গিয়ে হেডমাস্টারের সাথে কথা বলেন। 

হেডমাস্টার লোকটি মধ্যবয়স্ক, ডেস্কে বসে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলছিলেন। তার মুখোমুখি চেয়ারে বসেছিল দুই সাংবাদিক আর তাদের পেছনেই দাঁড়ানো দুই তরুন শান্তি কমিটির চর। ভাঙ্গা গলায় হেডমাস্টার স্কুলের ভরতির হার, স্কুলের স্থাপনকাল এসব বিষয়ে মুখস্ত পাঠ আবৃত্তি করে গেলেন, কোন বিতর্কিত আলোচনা ছাড়াই। প্রতিটি কথা শেষে তিনি ভয়ে ভয়ে সাংবাদিকদের মাথার উপর দিয়ে ওই চরদের দিকে তাকাচ্ছিলেন, যেন হাতে বেত সমেত কোন এক রাগী শিক্ষকের সামনে পড়া দিচ্ছে কোন স্কুল বালক।

সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করলেন- এই বিদ্যালয়টি এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হল কি করে? তিনি অস্ফুট স্বরে বললেন- “কিছু হামলার ঘটনা ঘটেছিল” তারপরই পেছনে দাঁড়ানো দুই কিশোর চরদের দিকে তাকিয়ে তিনি দ্রুত আগের কথার সাথে নতুন কিছু কথা যোগ করে বললেন- “খুব সম্ভবত দুর্বৃত্তরাই এই হামলা চালিয়েছে। ”

যখন সাংবাদিক ও সেই দুই চর বেড়িয়ে আসছিল, শিক্ষকটি বিড়বিড় করে বললেন- “ আমরা আবার একতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি” আর তারপর একদৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলেন।

 

পিটার আর। কামি

Scroll to Top