ক্যাপ্টেন এম এ হামিদের একটি চিঠি

শিরোনাম উৎস তারিখ
৬১। ক্যাপ্টেন এম এ হামিদের একটি চিঠি ১১ নং সেক্টরের দলিলপত্র ২২ নভেম্বর, ১৯৭১
 
কম্পাইল্ড বাইঃ Ayon Muktadir
<১১, ৬১, ৫২০- ৫২১>

 

গোপনীয়

ক্যাপ্টেন এম এ হামিদ

রাংরা মহেশখোলা

সাব সেক্টর

২২ নভেম্বর

 

প্রতি: সিভিল অ্যাফেয়ার্স উপদেষ্টা

ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সেক্টর

বাংলাদেশ সরকার

 

বিষয়: আমার সেক্টরের কিছু নূন্যতম প্রয়োজন সম্পর্কে।    

 

জনাব,

 

এই সাবসেক্টরে আমার নিয়োগের পর নিচে উল্লেখিত কিছু সমস্যা আমার নজরে পড়েছে যেগুলো জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করার দরকার এই সেক্টরের যুদ্ধ সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য।

 

শৃঙ্খলা:        কিছু মুক্তিযোদ্ধা, আর কিছু লোক মুক্তিযোদ্ধা সেজে গ্রামবাসীদের উপর নানারকম অত্যাচার করছে ও হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। দেশের ভেতরে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ঘাঁটিতে পরিদর্শনের সময় আমি ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছি। আমি এই অভিযোগগুলোর তদন্তসাপেক্ষে অভিযুক্তদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে চাই। আমি এ ব্যাপারে ব্রিগেডিয়ার বাবাজির সাথে কথা বলেছি এবং তিনি সম্মতি দিয়েছেন। আমি চাই এ ধরনের শাস্তি প্রদানের অধিকার আমাকে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকেও দেয়া হোক।

 

গোলা: গোলাবারুদের ঘাটতিই এখন আমাদের প্রধানতম সমস্যা। আমি এফজে সেক্টরের ডিকিউ এর সাথে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। কিন্তু তার সাফ জবাব হচ্ছে যে প্রতি মুক্তিযোদ্ধার জন্যে প্রতি মাসে ৫০ রাউন্ডই সর্বোচ্চ সম্ভাব্য সরবরাহ। এতে আমরা পরে যাচ্ছি এক বিরাট সমস্যায়, বিশেষত যখন আমাদের ছেলেরা বাংলাদেশের অনেক গভীরে ঢুকে যুদ্ধ করছে। এইজন্যে এবিষয়ে আমার প্রস্তাব, আমরা মহেশখোলা এবং বাগমারাতে একটি করে অগ্রসর ঘাঁটি খুলি, যেখান থেকে আমার প্রয়োজনমত সরবরাহ নিতে পারব।

 

অস্ত্র:   আমাদের কিছু ২” মর্টার, ৩” মর্টার, লাইট মেশিনগান (যদি মাঝারি মেশিনগান না পাওয়া যায়), রকেট লঞ্চার ইত্যাদি প্রয়োজন। এই মুহুর্তে যা দরকার তা হল:

                ৩” মর্টার – ৪টা

                এলএমজি – ১৬টা

                ২” মর্টার – ৬টা

                রকেট লঞ্চার – ৫টা

        আমি ইতিমধ্যেই এই দাবিনামা এফজে সেক্টরে পাঠিয়েছি, কিন্তু তারা জানিয়েছে এই মুহুর্তে এসবের সরবরাহ তাদের কাছে নেই।

 

ডাকাতি:       আমি জানতে পেরেছি, এবং আমার কাছে যথেষ্ট প্রমান আছে যে কিছু বিএসএফ এবং ভারতীয় আর্মি অফিসার আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বাধ্য করেছে বাংলাদেশের ভেতর থেকে টাকা এবং মুল্যবান দ্রব্যাদি এনে তাদের হাতে তুলে দিতে। যারা এসব আনেনি, তাদেরকে আর গোলাবারুদ সরবরাহ করা হয়নি। এরকম নির্দেশনার ফলে আমাদের ছেলেরা বিপথে গিয়ে জনগনের উপর অত্যাচারে বাধ্য হচ্ছে। আমাদের ছেলেরা যা এনে জমা দিয়েছে, তার কোন ভাউচার বা রিসিট দেয়া হয়নি। আমি এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের মতামত এবং এ ক্ষেত্রে আমার সুস্পষ্ট করনীয় জানতে চাই।

পরিবহণ: রাংরা, মহেশখোলা এলাকা এতই দুর্গম যে কাজ চালানোর জন্য একটি জীপ স্থায়ীভাবে প্রয়োজন। এছাড়া এখানে সার্বক্ষনিক ভাবে একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকা দরকার। এছাড়াও ১ টন লোড বহনকারী একটি ট্রাক আমাদের দরকার।

 

চিকিৎসা: মহেশখোলাতে একটি হাস্পাতাল দরকার। এই মুহুর্তে, ডাক্তার এবং ওষুধ সহ শল্যচিকিৎসার সুবিধা সম্পন্ন ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল এখানে স্থাপন করা দরকার।

 

যেহেতু আমি বেশ ব্যস্ত থাকি এবং যে সমস্যাগুলোর কথা জানালাম তা কিছুটা জটিল, আমি আপনার অফিস আমার কাছাকাছি থাকার সুযোগে আপনার মাধ্যমে এ বিষয়গুলোর সুরাহা করার জন্য পেশ করলাম। সামরিক যে সমস্যাগুলোর কথা আমি লিখেছি সেসব ব্যাপারে আমি এফজে সেক্টর থেকে সন্তোষজনক সমাধান পাইনি। আমি আশা করছি আপনার মাধ্যমে এসব তথ্য বাংলাদেশ ফোর্সেস হেড কোয়ার্টারে পৌঁছুবে।

 

স্বাক্ষর/-হামিদ

ক্যাপ্টেন

২২ নভেম্বর, ৭১

 

গোপনীয়

Scroll to Top