খণ্ড | শিরোনাম | সূত্র | তারিখ | পৃষ্ঠা |
১৪ | ৯৯। গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ভারত সৈন্য পিছু হটাবে না | লস এঞ্জেলেস টাইমস | ২১ অক্টোবর, ১৯৭১ | ২৩৭-২৩৮ |
অনুবাদ করেছেনঃ Zulkar Nain
“গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ভারত সৈন্য পিছু হটাবে না”
লস এঞ্জেলেস টাইমস, ২১ অক্টোবর, ১৯৭১
উইলিয়াম জে ড্রামন্ড
নয়া দিল্লি, ১৯শে অক্টোবর – আজ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে তাদের নৃশংসতা বন্ধ না করা পর্যন্ত ভারত তার সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন কমাবে না।
গত মার্চ মাসে পূর্ব পাকিস্তানে আত্মবিরোধ শুরুর পর থেকে তার প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে, মিসেস গান্ধী ১০০ জনেরও অধিক সাংবাদিকদের জানান যে, তিনি একটি সীমান্ত সেনা প্রত্যাহারের বিষয় অথবা নয় মিলিয়ন উদ্বাস্তু তাদের দেশে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার বিরোধিতা করেছেন।
মিসেস গান্ধীর অবস্থান সীমান্তে সৈন্য জমায়েত কমানো এবং ভারত ও পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে অন্তরায় মুকাবিলা করার কোন পন্থা রাখেনি।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বারবার করে তার বাহিনী কমাতে চেয়েছেন যদি ভারতও অনুরূপ কাজ করে এবং “অনুপ্রবেশ এবং অন্যান্য প্রতিকূল কার্যক্রম বন্ধ রাখে”।
যদিও মিসেস গান্ধী যেমন সীমান্ত পরিস্থিতিকে “গুরুত্বর” হিসাবে বর্ণনা করেন। তিনি ২৪শে অক্টোবর তার বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমি বলতে পারি সেনাবাহিনীর এবং ভারতীয় জনগণের হাতে দেশ পুরোপুরি নিরাপদ”।
তিনি ৪ঠা নভেম্বর ওয়াশিংটন পৌছানোর পর, পশ্চিম ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতায় কোনো তৃতীয় পক্ষের প্রচেষ্টায় বিপক্ষে। “কোন দেশ কি বিষয়ে মধ্যস্থতা করবে?” তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন। যা ইঙ্গিত করে, সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট পদজর্নি দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার সঙ্কট সমাধানের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
ভারত সীমানা থেকে তার বাহিনীর কিছু সরাতে সম্মত হবার আগে পাকিস্তানকে কি করতে হবে, জানতে চাইলে মিসেস গান্ধী বললেন।
“প্রথমত, পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের বাংলাদেশে তাদের নৃশংসতা বন্ধ করতে হবে”।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানকে এমন অবস্থার সৃষ্টি করতে হবে যেখানে অবাধে নির্বাচিত প্রতিনিধিবৃন্দ কার্যালয় চালাবে। তিনি আরো বলেন, গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে, ফলাফল হিসাবে এটাকে উপেক্ষা করা যাবে না”।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে মুজিবুর বন্দী এবং একটি গোপন ট্রায়াল হওয়ার কথা জানা যাচ্ছে। পাকবাহিনী ২৫শে মার্চে পূর্ব পাকিস্তানে ধ্বংস সাধনের পর থেকে তাঁর জঙ্গি অনুসারীরা পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে রত।
মিসেস গান্ধী বলেন, গেরিলা বাহিনীর প্রতি বাংলাদেশের সমগ্র জনসংখ্যার সমর্থন ছিল। তিনি “বাংলাদেশ” (বাংলা জাতি) শব্দটি নিয়মিত ব্যাবহার করছেন, পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে বিদ্রোহীদের যেটা ব্যবহার করছে।
তিনি দাবি করেন, ভারত “পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া” হিসাবে সঙ্কটে জড়িত ছিল এবং এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ এখন ভারতীয় মাটিতে জীবন যাপন করছে। তিনি বলেন, অতএব, ভারত শরণার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার সমাধান দিতে পারেনি।
“সমস্যা পাকিস্তানি সামরিক শাসন এবং বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে। এর সমাধান অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণ ও তাদের সাম্প্রতিক নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সন্তুষ্ট করতে হবে”, প্রধানমন্ত্রী বলেন। এই সম্পৃক্ততা থেকে ভারতকে সরিয়ে নিতে মিসেস গান্ধীর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, এটা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে যে পূর্ব পাকিস্তানে গেরিলা অপারেশন চালাচ্ছে ভারতের সাহায্যে এবং সেখানে আশ্রয় নিচ্ছে।
এদিকে, পাকিস্তানের বিমানবাহিনীর কমান্ডার “যথাযথ ব্যবস্থা” গ্রহণ করার হুমকি দিয়েছেন। যদি ভারতীয় বিমান “পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন অব্যাহত রাখে”, এপি রিপোর্ট।
বিমান বাহিনীর মুখপাত্র বলেন ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রধানের এক বার্তায় এয়ার মার্শাল এ রহিম খান বিবৃতি দেন। শনিবারে রহিম দাবি করেন, ভারতীয় বিমানবাহিনী ক্যানবেরা ভাওয়ালনগরে পশ্চিম পাকিস্তানের সীমানা অতিক্রম করে, প্রায় চার মাইল পাকিস্তানের ভেতর ঢুকে পড়ে। এলাকাটি রাজস্থান মরুভূমির কাছে যেখানে উভয় পক্ষ সৈন্যদল মোতায়েন জোরদার করেছে।
বিবৃতি অনুযায়ী বিমানবাহিনী প্রধান বলেন, ভারত কিছুকাল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে কিন্তু “এই ধরনের লঙ্ঘন আরো বেশি ইচ্ছাকৃত এবং উস্কানিমূলক হয়ে উঠেছে”।