৭.৮৩.১৮০ ১৮৪
শিরোনামঃ ৮৩। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আগা শাহীর আরেকটি বিবৃতি
সূত্রঃ জাতিসংঘ দলিলপত্র উদ্ধৃতিঃ বাংলাদেশ ডকুমেন্টেস
তারিখঃ ১৩ অক্টোবর, ১৯৭১
.
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জনাব আঘা শাহী (পাকিস্তান) এর বক্তব্য
অক্টোবর ১৩, ১৯৭১
সাধারণ বিতর্কের সময় আমার প্রতিনিধিদল কয়েকবার এ ব্যাপারে জোর দিয়েছে যে আমরা এখানে যুক্তি মেলাতে এবং বিতর্কে জয়লাভ করতে আসিনি। আমরা বর্তমান ভারত পাকিস্তান পরিস্থিতি খুবই গুরুতর, এবং আমাদের বিতর্কে অংশগ্রহণ করার জন্য অত্যাবশ্যক শান্তির বাধ্যতামূলক হওয়া বিবেচনা করছি।
আমি গতকাল যা বলেছি, এইমাত্র ভারতের প্রতিনিধির দেয়া তার প্রত্তুত্যরে বিভিন্ন ভুল বিবৃতি এবং পুরনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি রয়েছে ইতিমধ্যে যেসব আমরা মিথ্যা প্রমাণিত করেছি। আমি নিশ্চিত যে পরিষদের কেউই শান্তির কারণ উন্নয়ন করতে অথবা শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ কোন একটি অবস্থার সম্পর্কে স্পষ্ট উপলব্ধি আনতে ব্যর্থ একটি উত্তর এবং পাল্টা উত্তরের সারি উপভোগ করেন না। যাই হোক, ভারত এর প্রতিনিধির আগের হস্তক্ষেপের প্রেক্ষাপটে, তিনি যেই চিত্র অংকন করেছেন আমি একটি যুক্তিসঙ্গত এবং পক্ষপাতহীন উপস্থাপনার মাধ্যমে সেই চিত্র সংশোধনের আমার সরকারের নিকট দায়িত্বে আবদ্ধ আছি।
প্রথমত, আমি গতকাল আমার উত্তর দেয়ার অধিকার ব্যবহার করায় ভারতের প্রতিনিধিকে ক্ষুব্ধ মনে হয়েছে, আমাদের বিরুদ্ধে তার ভারতের অভিযোগ বিবৃতির সাতদিন পর আমরা তাকে এটাই আশ্বাস দিতে চাই যে আমরা সবসময় বিশ্বাস করি একটি বিরতি নিয়ে যেকোনো ধরণের অভিযোগের উপর প্রতিফলন ঘটানোতে যাতে আমরা কোন উত্তেজনাপূর্ণ উত্তর না দেই এবং কোন উত্তাপের সৃষ্টি না করি, বরং এই সাধারণ পরিষদকে জ্ঞানের আলো পরিবেশন করি। এইজন্য আমরা ভাবলাম যে ভারতের প্রতিনিধি থেকে এক মুহূর্ত আগে যে বিবৃতি আমরা শুনেছি সে ধরণের বিবৃতি না করে বরং আমাদের একটি উপযুক্ত উত্তর করা উচিত।
আমি ব্যাপকভাবে বিস্মিত হয়েছি যখন ভারতের প্রতিনিধি বলেন যে ভারত-পাকিস্তান বিনিময়ে যেসকল দফা আমার দ্বারা তৈরি করা হয়েছে সেগুলো আফগানিস্তানের প্রতিনিধি দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে।
আমরা বহু সময় জন্য শুনেছি যে ভারত সরকার পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ইচ্ছা পোষণ করে না, এবং তারপরও ভারতের প্রতিনিধি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের উপর একটি যথার্থ সুদীর্ঘ বক্তৃতা মধ্যে চালু করেছেন। তিনি রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া রাজনৈতিক পরিকল্পনার সংবিধানের প্রকৃতি সম্পর্কে পাকিস্তানের কিছু রাজনৈতিক নেতাকে উদ্ধৃত করেন। নেই
একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সংবিধান উন্নয়নসমূহের উপর মন্তব্য করা কি রাষ্ট্রের একচেটিয়া গার্হস্থ্য অধিক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে না? যদিও পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের আমার দেশে অর্জিত মতামতের মুক্ত প্রকাশের চর্চায় কি বলার আছে তা তিনি পাকিস্তান প্রেস থেকে উদ্ধৃত করেছেন।
তবুও তিনি আমার সরকারকে কৃতিত্ব প্রদান করেননি যে সরকারের সম্পর্কে এই সমালোচনামূলক মতামত, যা শুধুমাত্র সমালোচনামূলক নয়, বরং অত্যন্ত জোরালোভাবে সমালোচনামূলক-বাস্তবিকই প্রকাশিত। তিনি এখনও আমার দেশে বিদ্যমান অবস্থার উপহাস করেন এবং বলেন যে, আমরা জানি না যে এসব তারা বলেছেন কারণ পাকিস্তানে সেন্সরশিপ আছে। যদি সেন্সরশিপ থাকতো, পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা সরকারের বিরুদ্ধে এই সমালোচনামূলক মন্তব্য কোনদিনও দিনের আলো দেখতে পেত না। ভারতের প্রতিনিধি এই সাধারণ পরিষদকে আমার এবং ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের মধ্যকার সম্পর্ক সম্বন্ধে অবহিত করার মতো এবং কিভাবে বিদ্রোহীরা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী উপাদানেরা কিভাবে অস্ত্র পাচ্ছে তা নিয়ে রাষ্ট্রদূত হিলালির একটি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে দেয়া বক্তব্য উদ্ধৃত করার মতো ভালো ছিলেন। তিনি ১৯৭১ এর ১লা থেকে ৫ শে মার্চের অবস্থা নিয়ে বলছিলেন, যখন পূর্ব পাকিস্তানের পুলিশ, উপ-সামরিক বাহিনী, পূর্ব পাকিস্তান সৈন্যদলের বিরাত অংশের আনুগত্য পরাভূত অবস্থায় ছিল। পূর্ব পাকিস্তান থেকে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর এইসকল উপাদানসমূহের আনুগত্য পরাভূত করা হয়েছে এবং তারা অস্ত্রাগার এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদের দোকান লুট করার উদ্ধেশ্যে প্রণোদিত ছিল, স্পষ্টত, পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের উপ-সামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর নিয়মিত সদস্য হওয়ায় তারা অস্ত্রে সুসজ্জিত ছিল, এবং যখন তারা পক্ষত্যাগ এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে উত্থান করে, তখন তারা এই অস্ত্র ব্যবহার করে।
কিন্তু সেটা গল্পের শেষ। এখানে একটি দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ব পাকিস্তানে সশস্ত্র ভারতীয় মৌলসমূহের অনুপ্রবেশকে হয়েছে। অস্ত্র এবং গোলাবারুদ যে সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং ভারত দ্বারা পাকিস্তানে প্রেরিত হচ্ছে এটা জনসাধারণের অবগত একটা বাস্তব সত্য। তারা গেরিলা সরবরাহ এবং গেরিলাদের অস্ত্র প্রদান করছে এটা অস্বীকার করার কোন উদ্যোগ ভারতীয় কর্মকর্তাদের দ্বারা গত কয়েক মাস ধরে নেয়া হয়নি।
শুধু আজ, নিউ ইয়র্ক টাইমসের ভারত ভিত্তিক সংবাদদাতা সিডনি শানবার্গ থেকে নিউ ইয়র্ক টাইমসে ট্রেনের পর ট্রেন ভর্তি করে যে অস্ত্র কলকাতায় যাচ্ছে এই বিদ্রোহীদের সশস্ত্র করার জন্য যাতে তারা পূর্ব পাকিস্তানে তাদের অভিযান জোরদার করতে পারে এই বিষয়ে আমাদের কাছে একটি সম্পাদনা আছে।
আমি ২৫শে মার্চের পরবর্তী অনেক সংবাদদাতাদের উদ্ধৃত করতে পারি, বিশ্ব বিখ্যাত সংবাদপত্র দ্য লন্ডন, ডেইলি টেলিগ্রাফ এবং অন্যান্যের সংবাদদাতাগণ যারা এই বিদ্রোহীদের অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ এবং সমর্থন ও ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তা দিয়ে ছেড়ে দেয়ার সঙ্গে ভারতের জড়িত থাকার ব্যাপ্তি সম্পর্কে নিজস্ব সম্পাদকদের সম্পাদনা প্রেরণ করেছেন।
দলিলপত্রের উদ্দেশ্যসমূহ এবং মূলনীতিসমূহ কঠোরভাবে পালন করার প্রয়োজনীয়তা, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা জোরদার করার মূলনীতিসমূহ, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মূলনীতিসমূহ ঘোষণা, মূলনীতিসমূহ যার উপর আগ্রাসন সংজ্ঞায়িত করা উচিত এসকল বিষয়ে আমরা ভারতীয় প্রতিনিধি থেকে অনেক কিছু শুনে থাকি, এবং আমরা জানি যে ভারতীয় প্রতিনিধিগণ আন্তর্জাতিক আচরণের সংজ্ঞা নয়, নিজেরাই আগ্রাসনের সংজ্ঞা প্রণয়নে সক্রিয় অংশ নিয়েছে, বলা হয়েছে যে গেরিলাদের সশস্ত্র করা এবং উদ্দীপনা সৃষ্টি করা, অনুর্বর আন্তর্জাতিক সীমানায় অভিযান ও অন্তর্ঘাত চালাতে পাঠানো আগ্রাসী কর্মকাণ্ড। কিন্তু এটা আসলে হচ্ছে তা যা তারা পাকিস্তানের ব্যাপারে করছে; তবুও তারা বলে তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে ইচ্ছুক না।
এটা সবসময় সবচেয়ে বেদনাদায়ক যখন মৃত্যুর ভয়াবহ গণিত বা হতাহতের সংখ্যা নিয়ে কোনো যুক্তিতর্কে প্রবেশ করতে হয়। ভারতের প্রতিনিধি অবিরতভাবে হতাহতের সংখ্যা “এক মিলিয়নের এক-চতুর্থাংশ থেকে দুই মিলিয়ন” বলে বক্তব্য দিয়ে গেছেন। এখন, এক মিলিয়নের এক-চতুর্থাংশ থেকে দুই মিলিয়নের সীমান্ত দিয়ে এমন বক্তব্য প্রদান করার স্বাধীনতা কি দায়িত্বশীলতার মধ্যে পড়ে, যেন তারা শুধু কিছু সংখ্যা বা শুধু কতগুলো জড় একক, এবং জীবন্ত মানুষ নয়?
যদি আমরা আমাদের নিজের দেশের আইন বিবেচনা করি, প্রতিটি মৃত্যুর সর্বোচ্চ অপরাধ হিসেবে তদন্ত করা হয়, এবং একটি দেশ শুধুমাত্র একটি দুর্ঘটনায়ও সবচেয়ে উদ্বিগ্ন এবং শাসিত হয়। কিন্তু ভারতের প্রতিনিধি এখানে আসেন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী উপাদানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রীয় পদক্ষেপকে দায়ী করে ২৫০,০০০ থেকে ২,০০০,০০০ এর মধ্যে পুরুষ, নারী ও শিশু মৃত্যুর অভিযোগ করেন।
সত্যবাদিতা এবং স্পষ্টতার প্রয়োজনীয়তা কি বলতে পারেন যেখানে তারা এই ধরণের অভিযোগ করতে পারে? আমি বলতে চাই যে ঐ পরিসংখ্যান যা ভারত দ্বারা সবসময় উদ্ধৃতকরা হয় এবং যা ভারতীয় উৎস হতে উদ্গত হয়ে বিশ্ব সংবাদে জায়গা করে নিয়েছে, বিচ্ছিন্নতাবাদী উপাদানসমূহ যাদের থেকে এসব গুজব ছড়িয়ে পড়েছে এবং পাকিস্তানের ভাবমূর্তি কলুষিত করতে চেষ্টা করেছে। সদস্যরা সকলে গত নভেম্বর ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সচেতন। সে সময়ে, পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচনে জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারা নির্দিষ্ট অভিযোগ সৃষ্টি হয়েছে যে পাকিস্তান সরকার সংগঠিত সব সম্পদ বন্যা থেকে বেঁচে ফেরা মানুষদের সাহায্য করতে পর্যাপ্ত আকারে সংহত করেনি। সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী সেইসকল রাজনৈতিক দলসমূহ নিজেদের দল থেকে একটি কর্মীও বিচ্যুত করেননি তাদের নিজের আত্মীয়স্বজনের জন্য মানবতা ও ত্রাণ স্বার্থে। তারা নির্বাচন, ভোটভিক্ষা, আমাদের প্রচারণা মিছিলে জড়িত ছিল, এবং এখন তারা পাকিস্তানের ফেডারেল সরকার তাদের দায়িত্ব নিয়ে অভিযুক্ত করছে, এবং আমি পরিষদকে বলতে চাই যে তারা পাকিস্তান সরকারকে গণহত্যা দায়ে অভিযুক্ত করেছে।
দৃশ্যত, শব্দের এই যুদ্ধে, মানুষ বাস্তবতার জ্ঞান হারিয়েছে, শব্দেরা তাদের অর্থ হারিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের উত্তরজীবিদের মধ্যে একজনও অবহেলার ফলে মৃত্যুবরণ করেনি।
হতাহতের যে ঘটনা সংঘটিত হয়েছিলো তার কারণ ছিল বন্যা; তারা সব ঘটেছিল ঘূর্ণিঝড়ে, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে এবং তবুও পাকিস্তান সরকার সেই সকল রাজনৈতিক দল অভিযুক্ত হয়-যা পরবর্তীতে তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী রং-এর গণহত্যাকে বিশ্বাসঘাতকতা করে।
আমি পরিষদকে এটাও বলতে চাই যে ২রা মার্চ থেকে ২৫শে মার্চের মধ্যে আওয়ামী লীগ একটি সমান্তরাল সরকার গঠন করার জন্য ক্রিয়াকলাপের ক্রম গঠন করে এবং প্রতিষ্ঠিত সরকারের কর্তৃত্ব তুচ্ছ করে। তারা সরকারী কর্মচারীদের অফিস যোগ দিতে না নির্দেশনা জারি করে; তারা বিদ্রোহের পতাকা উত্তোলন করে; তারা বাণিজ্যিক কেন্দ্রসমূহকে নির্দেশ দেয় তারা নির্দেশনা দেয় যে কেন্দ্রীয় সরকারকে কোন কর প্রদান করা উচিত নয়। এবং এই উপায়ে তারা, বিচ্ছিন্নতাবাদী উপাদানেরা যারা নির্দোষ নাগরিকদের হত্যা শুরু করে। ঐ ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। যখন সশস্ত্র বাহিনী, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে অভিযুক্ত না হওয়ার তাগিদে যারা দর্শকের মত দাঁড়িয়ে থেকেছে, এবং অবশেষে যখন হত্যাকান্ড দমন করার আদেশ ছিল, এবং যখন, তাদের কর্মকাণ্ডের ফলে, দুই বা তিন ডজন মানুষের বেশি মানুষ নিহত হয়নি, তাদের গণহত্যার জন্য দায়ী করা হয়েছিল। পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার চিৎকার ২৫শে মার্চের আগেই শুরু হয়েছিলো যখন সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের নিরপরাধ মানুষ যারা বিচ্ছিন্নতাবাদী উপাদানসমূহের মতো একই রাজনৈতিক প্ররোচনায় ছিল না তাদের হত্যা দমন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
সেসব নথিভুক্ত করা আছে, নথিভুক্ত তথ্যসমূহ, এবং তবুও তথ্য দমন করা হয়েছে। ঐ তথ্যসমূহকে বিশ্ব সংবাদে তাদের জায়গা করে নিতে অনুমতি দেয়া হয়নি। তবুও পাকিস্তানের সরকারকে সেন্সরশিপ ও দমনের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।
তবে আমি আপনাদের বলতে চাই যে ভারত প্রতিনিধি দ্বারা উদ্ধৃত সকল মৃত্যুর পরিসংখ্যান ভারতীয় সূত্র থেকে নির্গত হওয়া। সেই প্রতিনিধিদের এসব ভাণ্ডার খাওয়ানো হয়েছে। আমি আর এর উপর বাস করতে চাই না, কিন্তু আমাকে যদি চ্যালেঞ্জ করা হয়, আমি আপনাদের সামনে আরও প্রমাণ উপস্থাপন করতে প্রস্তুত। আমি ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়েছি যে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর সশস্ত্র উপাদান হতে বিচ্ছিন্ন বিদ্রোহীরা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীরা করেছেন, যারা অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র চুরি করে এবং যারা অস্ত্র ও গোলাবারুদের দোকান লুটপাট করে, তারা ভারত থেকে সরবরাহ করা হয়েছিলো এবং ভারত দ্বারা সশস্ত্র হয়েছিলো, এবং আমি আজকের নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটি নিবন্ধের প্রতি পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পাস হওয়ার অভিযোগ নিয়ে ভারতের প্রতিনিধি উত্থাপিত প্রশ্ন প্রসঙ্গে, নিউইয়র্ক টাইমসে আজ একটি সংবাদ অনুচ্ছেদ আছে যাতে বলা হয়েছে যে একটি পাকিস্তান মিশন থেকে একটি কূটনৈতিক দলত্যাগী তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে এই বিবৃতি দিয়েছে যা তিনি পক্ষত্যাগ করার আগে পাকিস্তান মিশনকে বিদেশে দেওয়া হয়। আমি এখানে একটি শ্রেণীগত বিবৃতি করতে চাই; আমার মিশন বা কোনো ধরনের মিশন আমার সরকার থেকে শেখ মুজিবুর উপর পাস হওয়া কোন আইনের প্রশ্ন নিয়ে কোন তথ্য পাইনি।
অতএব, এই মিশন থেকে কোনো দলত্যাগী, যে আমাদের দিকে এই অভিযোগ নিক্ষেপ করার আগে
যায় এবং প্রেসে বিবৃতি রাখেন যে যত্ন এবং সাবধানতাবশত একটি প্রাণদন্ড প্রয়োগ করা হয়েছে।
আমি এই পরিষদকে আরও বলব যে নির্দিষ্ট কূটনৈতিক দলত্যাগীগণ শেখ মুজিবুর রহমান মারা গেছেনস্মারকলিপি প্রচারিত করেছে এবং প্রতিনিধিদের চিঠি পাঠিয়েছে। এ ধরনের ভুল বিবৃতি এবং মিথ্যা প্রচারণা করে কি উদ্দেশ্যে সাধিত হচ্ছে তা আমাদের বোধশক্তির বাইরে, কিন্তু, অন্তত, আমরা আশা করি যে সার্বভৌম যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ এঁকে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন এবং কটাক্ষ করতে পুস্তিকা-লেখক এবং প্রজ্ঞাপকদের চেয়ে বেশী দায়িত্বশীল হবে।
আমাকে আরো গঠনমূলক কিছুর উদ্দেশ্যে এসব অভিযোগের উত্তর দিতে দিন, যা আপনাদের সকলের জন্য যেমন, ঠিক তেমনি আমার জন্যেও বেদনাদায়ক। আমি বর্তমান ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতির অবনতি থামানো এবং স্থানচ্যুত ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনতে একটি আস্থা পরিবাহী একটি জলবায়ু নির্মাণের জন্য পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রদত্ত প্রস্তাবনাসমূহ নবায়ন করে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চাই।
এই হল আমাদের প্রস্তাবনাসমুহঃ
প্রথমত, আমাদের দ্বারা গণনা করা সংখ্যা এবং যে ভারত দ্বারা কথিত সংখ্যার মধ্যে বিদ্যমান ব্যাপক অসমতা বিবেচনা করে যারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ভারতে চলে গেছেন একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা সেসব ব্যক্তির সংখ্যা নির্ণয় করা, যাতে পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করেছেন এমন শরণার্থীদের সংখ্যা সংক্রান্ত বিতর্ক শেষ হতে পারে, শুধুমাত্র একটি নিরপেক্ষ সংস্থা এমন একটি মূল্যায়নে পৌঁছাতে পারে যা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।
দ্বিতীয়ত, আমরা বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ফিরে আসা এবং পুনর্বাসনের সহজতর করতে পূর্ব পাকিস্তান এবং ভারত সীমান্তের উভয় পক্ষের শরণার্থী জন্য জাতিসংঘের হাই কমিশনার প্রতিনিধিদের স্থাপত্যের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করছি। এই প্রস্তাবটি মহাসচিব দ্বারা প্রস্তুত করা হয়েছিল, এবং এটি স্পষ্ট যে জলবায়ু উন্নতি এবং আস্থা প্রতিষ্ঠায় তজ্জাতীয় একটি পরিমাপ দীর্ঘ পথ যেতে পারবে। আমার সরকার পূর্ব পাকিস্তানের যেখানে শরণার্থীরা ফিরে আসছে সেসব এলাকা পরিদর্শন করতে এবং তাদের সাথে দেখা করতে জাতিসংঘের হাই কমিশনার প্রতিনিধিদের সব সুবিধা নিতে পারবে। তবে সীমান্তের ওপারে একটি পর্দা টানা হয়েছে যা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তন ব্যাহত করছে।
তৃতীয়ত, কিভাবে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা অপনীত করা যেতে পারে, পূর্ণ নিরাপত্তা ব্যাবস্থায় বাস্তুচ্যুত পূর্ব পাকিস্তানিদের ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা সংগঠিত করা যায় এসব বিষয়ে ভারত ও পাকিস্তান উভয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে আমরা নিরাপত্তা পরিষদের একটি ভাল কার্যালয়ের কমিটিকে আমন্ত্রণ করার প্রস্তাব করছি।
চতুর্থত, আমরা ভারতের সঙ্গে কাজ করতে, যে কোন পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় প্রস্তুত, উপায় এবং মাধ্যম বের করতে যার দ্বারা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন নিষ্পন্ন হতে পারে এবং সশস্ত্র সংঘাতের হুমকি সরানো যায়।
সুদীর্ঘ বিতর্ক না করে, যা নিছক তিক্ততা বৃদ্ধি করে, আমরা আশা করি যে ভারত সরকার এসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে না। আমি জানি এটা বলা যায় যে, “এগুলো আগেও প্রস্তুত করা হয়েছে, এবং আমরা এগুলোকে প্রত্যাখান করেছি”, কিন্তু আমরা তার প্রত্যাখ্যান পুনর্বিবেচনা করতে আবেদন জানাচ্ছি। কারণ এগুলো গঠনমূলক প্রস্তাবনা এবং পরিস্থিতির একটি সত্য উন্নতিবিধান সংগঠিত করতে পারে, যাতে আমরা উভয় মানবতাবাদ এবং শান্তি কর্তৃক দাবি করা চাহিদাসমূহ কম করার লক্ষ্যে অবদান রাখতে পারি, এবং আমি ভারতের প্রতিনিধিকে এই সকল প্রস্তাবনা তুচ্ছতাচ্ছিল্য না করতে আবারও আবেদন করছি ।