জাতিসঙ্ঘের সাহায্য দল

হোসাইন মুহাম্মদ মুরাদ

<১৪, ৭৪, ১৭২-১৭৩>

 

দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস,রবিবার,১ আগষ্ঠ,১৯৭১

জাতিসংঘ পূর্ব পাকিস্তানে দল পাঠাবে

যুক্তরাষ্ট্র ১৫৩ জনের রিলিফ ইউনিট পাঠানোর পরিকল্পনায়

থান্ট এবং ইয়াহিয়ার স্বীকৃতি

বেঞ্জামিন ওয়েলস স্পেশাল

দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস

 

         ওয়াশিংটন, ৩১’ই জুলাই -কর্মকর্তারা আজ বলেছেন, ওয়াশিংটন, ৩১’ই জুলাই- জাতিসংঘের অধীনে ১৫৬ জন বেসামরিক ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিশেষজ্ঞদের একটি আন্তর্জাতিক দল পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানের চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একমত হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তান ও জাতিসংঘ উভয়ই।

         তাছাড়া তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টকে অবগত করেছেন দল সংগঠিত করা এবং প্রয়োজনীয় সরজ্ঞাম আকাশ পথে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রাথমিক ভাবে দশ লক্ষ ডলার খরচ হবে।

 সংবাদদাতা বলেন, জাতিসংঘের কর্মীদের মধ্যে ৭৩ জন পর্যবেক্ষক থাকবে তার মধ্যে চারজন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনার অফিসে সংস্থিত হবে এবং বাকী ৬৯ জন অন্য স্থানে। তবে প্রত্যেক পর্যবেক্ষক  ঢাকায় সদর দপ্তরের সঙ্গে রেডিও দ্বারা সংযুক্ত থাকবেন।

       “জাতিসংঘের ৭৩ জন পর্যবেক্ষকের উপস্থিতিতে , প্রত্যেকে নিজ এলাকার অবস্থার উপর প্রতিবেদন দিবেন। এটি হয়ত সামরিক প্রতিহিংসা ও ক্রোধ শান্ত এবং নিরস করতে পারবে” সাংবাদিক আরো বলেন, “এটি যদিও জাতিসংঘের কর্তব্য নয় কিন্তু এইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে”।

        ২৫’শে মার্চ। রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য রাষ্ট্রপতি আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব বাংলায় সৈন্য নিয়ে প্রবেশের এবং দাবী দমনের আদেশ দেন। তখন থেকে সেনাবাহিনীর আক্রমণে জীবন এবং সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং অর্থনৈতিক ধ্বস সহ প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ সংলগ্ন ভারতে আশ্রয়প্রার্থী হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানে জাতিসংঘ দলের প্রস্তাবে জনাব থান্ট এবং রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়ার চুক্তিতে এক জন কর্মকর্তা আজকে একে “বিষাদ অবস্থায় একমাত্র সূর্যকিরণ” হিসেবে ব্যাখা করেছেন।

 

জাতিসংঘ দলের চুক্তিতে পাকিস্তানের সম্মতিকে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরব কিন্তু একটানা চাপের ফল বলা হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, যুক্তরাষ্ট্র এক বছরে বিশ্ব ব্যাংকের অধীনে আন্তর্জাতিক সাহায্য হিসেবে দেওয়া ৪৫ কোটি ডলারের মধ্যে ২০ কোটি ডলার পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সাহায্যে দিয়েছে।

 

পাকিস্তান থেকে অনুরোধ

 

২৪’শে মে, রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া জাতিসংঘের সুপারিশ চেয়েছেন। পরিকল্পনায় তাঁর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন প্রতিমুহূর্তে আশা করা হচ্ছিল।

 

বিশ্ব ব্যাংক এবং অন্যান্য সূত্র আজকে জানিয়েছে, নতুন দলে নিয়োগ কাজ বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে।এই সূত্র মতে, সদরদপ্তরের স্টাফদের মধ্যে ৩৮ জনের গঠন করা প্রথম সম্ভাব্য দল ঢাকা পাঠানো হবে।

 

বিশেষ সংস্থা থেকে ৪৫ জনের সম্ভাব্য দ্বিতীয় দল গঠন করা হবে। যেমন, জাতিসংঘের শিশুদের সংস্থা ইউনিসেফ ১৮ জন, খাদ্য এবং কৃষি সংগঠন ২ জন, বিশ্ব খাদ্য কার্যসূচী ১৩ জন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন ১২ জনকে পাঠাবে। তৃতীয় সম্ভাব্য দলের রেডিও- সজ্জিত পর্যবেক্ষক হবেন ইসমত কিত্তানি যাকে জাতিসংঘের “মাঠ পর্যায়ের ব্যক্তি” বলা হয়।একজন ইরাকী যিনি আন্তঃসংস্থার সহকারী মহাসচিব। নিউ ইয়র্কে জাতি সংঘের সদর দপ্তর থেকে দল নিয়োগ এবং দ্রূত সম্পাদনের জন্য জনাব থান্ট সহকারীর দায়িত্বে আছেন। বাগ হাত এল- তাওয়াল, একজন মিশরীয় যিনি ঢাকায় জনাব থান্টের ব্যক্তিগত প্রতিনিধি, পূর্ব পাকিস্তানে অপারেশন পরিচালনা করবেন।

 

থান্টসীমার বাইরে

 

এক সূত্র জানিয়েছে, “জাতিসংঘের ত্রাণ অভিযানের জন্য কোন যন্ত্রপাতি এবং বাজেট নেই। উ থান্ট “সীমার বাইরে”। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই প্রজেক্টের পরিচলনার জন্য দশ লক্ষ ডলার অনুমোদন দেওয়ার জন্য সম্মত হয়েছেন।”

 

অন্যান্য সূত্র জানিয়েছে, এই দলের প্রথম ৬ মাসের খরচ ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাবে। এই অনুদানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের অংশগ্রহণ আশা করছে।

 

পাকিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন গ্রহণের সাথে সাথে আকাশপথে রেডিও ও অন্যান্য সরঞ্জাম পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাকে বলা হয়। সংস্থার ৬ কর্মী ঢাকায় আছে এবং রিপোর্ট করে জাতিসংঘ দলের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহয়তা দিতে প্রস্তুত আছে।

 

সংবাদদাতা জোর দিয়ে বললেন, জাতিসংঘ দল প্রাথমিক ভাবে পাকিস্তান কতৃপক্ষের সাহায্যে অনাহার এবং রোগের হুমকি উপশম করবে সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষ যারা সেনাবাহিনীর প্রতিহিংসা এড়াতে গ্রামাঞ্চলে পালিয়ে গিয়েছে বা যাদের বাড়ী ধ্বংস হয়েছে তাদের বাড়ী এবং আশ্রয় পুনর্বাসন করবে।

 

তারা পাকিস্তানকেও যোগাযোগ পুনঃস্থাপন এবং প্রদেশের দ্রূতগামী বেসরকারী ৪০,০০০ নৌবহর এবং ১০,০০০ ট্রাক মেরামত করবে।

 

এক সংবাদদাতা বলেন, “জাতিসংঘ কোন অপেরেশন না চালালেও প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনে আস্থা পুনরূদ্ধার করতে সাহায্য করবে।”

 

Scroll to Top