বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র থেকে বলছি (পঞ্চম খণ্ড)
দলিল প্রসঙ্গঃ মুজিবনগর- বেতারমাধ্যম
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ৫ম খন্ডের দলিলপত্রের অধিকাংশই প্রাথমিক সূত্র থেকে আহৃত। প্রাথমিক সূত্র থেকে পাওয়া যায়নি এমন কিছু কিছু দলিল শহীদুল ইসলাম সম্পাদিত শব্দসৈনিক এবং রেডিও বাংলাদেশের পাক্ষিক মুখপত্র বেতার বাংলা’ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সন্নিবেশিত গানসমূহের কয়েকটি উৎস শামসুল হুদা চৌধুরী সম্পাদিত অনেক রক্ত একটি জাতি নামক সাময়িকী এবং তার রচিত একাত্তরের রণাঙ্গন। সন্নিবেশিত দলিলসমূহের সূত্রোল্লেখ থেকেই এটা জানা যাবে।
স্বাধীন বাংলা বেতারের সূচনা চট্টগ্রামের কালুরঘাট ট্রান্সমিশন ভবনে ২৬-৩০ মার্চ ১৯৭১- সমাপ্তি মুজিব নগরে জানুয়ারী ২, ১৯৭২ তারিখে। ৩০ মার্চ ১৯৭১ তারিখে কালুরঘাট ট্রান্সমিশন ভবন হানাদার বাহিনীর বিমান হামলায় বিধ্বস্ত হওয়ার পর ৩ এপ্রিল থেকে ২৫ মে পর্যন্ত যেসব অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছিল, সেগুলির কোন নিদর্শন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তবে এ পর্যায়ে প্রচারিত মাত্র একটি বিষয় (পৃঃ ১৩) সন্নিবেশ করা হয়েছে। সূচনা পর্বের ২৬ থেকে ৩০ মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত প্রচারিত বিষয় সমূহও বেশি পাওয়া যায়নি, শুধু একখানি বাণীবদ্ধ টেপ (পৃঃ ১-১০), ‘ শব্দসৈনিক – এ প্রকাশিত একটি কথিকা (পৃঃ ১২) ও বেতার বাংলায় প্রকাশিত এ সময়ের প্রচারিত অনুষ্ঠানের অংশবিশেষ (পৃঃ ১১) ছাড়া। এগুলি গ্রন্থের প্রারম্ভেই দেওয়া হয়েছে।
মুজিবনরে প্রতিষ্ঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সরকার তত্ত্বাবধানে সংগঠিতভাবে ২৫ মে ১৯৭১- এ স্বাধীন বাংলা বেতার সম্প্রচার নিয়মিতভাবে শুরু হয়। সেই তারিখ থেকে প্রচারিত অনুষ্ঠানমালার দলিলপত্র যতোদূর সংগৃহীত হয়েছে তা আংশিকভাবে সন্নিবেশ কারা হয়েছে (পৃঃ ৪০-৫১১)।
তার আগে বেতারের অধিবেশন সমূহের পরিচয় দেবার প্রয়াস রয়েছে গ্রহন্থের ৩ নং শিরোনামভূক্ত অনুষ্ঠান পত্রগুচ্ছে (পৃঃ ১৫)। শেষে রয়েছে সংগীত সূচী (পৃঃ ৫১২-৫১৬)। স্বাধীন বাংলা বেতারের নিয়মিত কর্মী, সংগঠক ও পরিচালবৃন্দের নামের কোন তালিকা এ খন্ডে দেওয়া হয়নি, কারণ, অনুরুপ একটি তালিকা এই দলিলপত্রের ৩য় খন্ডে আগেই মুদ্রিত হয়েছে।
বিভিন্ন শিরোনামে প্রচারিত বাংলা ধারাবাহিক স্বাতন্ত্র কথিকামালাকে সূত্রানুযায়ী বিভাজন করা হয়েঠেছ (পৃঃ ৫৪-৫২৬) বাংলা অনুষ্ঠানের বিষয়াদি ছাড়াও উর্দু এবং ইংরেজী অনুষ্ঠানের প্রচারিত বিষয় সমূহের পরিচয় মিলবে যথাক্রমে ২৭৯-২৮০ ও ৪২২-৫০২ পৃষ্ঠাগুলিতে। বিষয় বস্তু অনুসারে আলাদা শিরোনামে চিহ্নিত করেও বাংলা অনুষ্ঠানের কিছু কথিকা সন্নিবেশিত হয়েছে-যেমন রণাঙ্গন সম্পর্কিত কয়েকটি কথিকা (পৃঃ ৫২৭-২৭৮), ধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠানের ধারাবাহিক কথিকা (পৃঃ ২৮১-২৮৭) ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অনুষ্ঠন (পৃঃ ২৮৮-২৯৫) ইত্যাদি। প্রচারিত বিভিন্ন নিয়মিত অনুষ্ঠান যেমন রক্ত স্বাক্ষর সাহিত্যানুষ্ঠান (পৃঃ ২৯৬-৩০৯), মুক্তিবাহিনীর জন্য প্রচারিত অগ্নিশিখা অনুষ্ঠান (পৃঃ ৩৪০) গ্রামীণ শ্রোতাদের জন্য অনুষ্ঠান (পৃঃ ২৯৬-৩০৯), প্রবৃতির অন্তর্গত কিছু কিছু বিষয় সংকলন করা হয়েছে। এ ছাড়া কবিতা(পৃঃ ৩১০-৩৩৯), রুপকানুষ্ঠান (পৃঃ ২৪৮-৩৭০),জীবন্তীকা (পৃঃ ৩৭১-৩৮২), গান(পৃঃ ৪০২-৪২১) ইত্যাদিও রয়েছে। সংযোজনীতে স্থান পেয়েছে মার্চ ও এপ্রিল ১৯৭২-এর বেতার বাংলা থেকে সংকলিত আরও কয়েকটি বাংলা কাথিকা (পৃঃ ৫০৩-৫১১)।
পরিশিষ্ঠে (পৃঃ ৫১৭-৫২৭) আছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গোড়াপত্তন সম্পর্কিত বিভিন্ন জনের লেখা কয়েকটি প্রতিবেদনের অংশবিশেষ। সবশেষে এসেছে বেতার অনুষ্ঠন প্রচার সম্পর্কিত একটি সভার সরকারী দলিল (পৃঃ ৫২৮)। এ দলিলপত্রের পঞ্চদশ খন্ডে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলা বেতার নেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত তথ্যাদি সন্নিবেশিত হওয়ায় এখানে এ সম্পর্কিত তথ্য সংক্ষেপ করা হয়েছে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, নিয়মিত অনুষ্ঠানমালার বাইরে বিভিন্ন সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, সরকার প্রধান, সেনাবাহিনী প্রধান ও ছাত্র নেতৃবৃন্দের যেসব ভাষণ এবং সরকারের যেসব নির্দেশ, বিজ্ঞপ্তি স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রচারিত হয়েছে সেগুলি বাংলাদেশের স্বধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র -এর অন্যান্য প্রাসঙ্গীক খণ্ড, যেমন- ৩য়, ৪র্থ ও ১১শ খন্ডসমুহে সংযোজিত হওয়ায় এখানে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
বিষয়সমূহের রচয়িতার নাম প্রায় ক্ষেত্রেই দেয়া হয়েছে কেবল দু’একটি ক্ষেত্রে যেমন-বিশ্বজনমত শীর্ষক ধারাবাহিক বাংলা কথিকাগুলির (পৃঃ ৫৪-৮৬) লেখকের নাম দলিল সন্নিবেশকালে জানা যায়নি বলে অনুল্লিখিত থেকে গেছে। এ পর্যায়ের ৩০ মে, ১০ জুন, ২৯ জুলাই, ১ আগষ্ট ১৯৭১- এর কথিকাগুলি বাদে বাকী সবগুলি সাদেকীন-এর রচনা বলে পরে চিহ্নিত করা গেছে। ১ আগষ্ট-এর কথিকাটি লিখেছেন আবুল কাশেম সন্দ্বীপ। কিন্তু প্রথমোক্ত তিনটির লেখকের নাম জানা যায়নি। অনুরূপভাবে, ইংরেজী অনুষ্ঠানের ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস রিভিউ অন বাংলাদেশ শীর্ষক প্রতিবেদনগুলিরও লেখকের নাম জানা যায়নি। তবে এগুলি একাধিক জনের রচনা এবং আলমগীর কবীর, আলী জাকের ও মওদুদ আহমেদ সাধারণত এগুলি লিখতেন।