৬৬। দানবীর নূতনচন্দ্র সিংহ বাঁচতে পারেননি (৪৬৫)
দানবীর নূতনচন্দ্র সিংহ বাঁচতে পারেন নি
গত বছর এই দিনে খান সেনারা তাঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিল
সুত্র – দৈনিক বাংলা, ১৩ এপ্রিল, ১৯৭২।
“তার একমাত্র ইচ্ছা ছিলো তিনি যেনো দেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারেন। সে ইচ্ছা তার পূরণ হয়েছে। দেশের মাটিতে তিনি মরতে পেরেছেন। তবে বড় নিষ্ঠুরভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে তাকে। কখনো কেউ যা কল্পনাও করেনি।
গত বছর এই ১৩ এপ্রিল চট্রগ্রামের অদূরে নিজের হাতে গড়া কুন্ডেশ্বরী ভবনে তাকে হত্যা করা হয়। কুন্ডেশ্বরী বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতা বাবু নূতন সিংহের কথা বলছি। এপ্রিলের প্রথম দিকে চট্রগ্রাম শহরের পতন হয়েছিলো। ১৩ তারিখ পাক বাহিনী কুন্ডেশ্বরী আক্রমণ করে। বাবু নূতন সিংহ তখন মন্দিরে প্রার্থনা করছিলেন। স্বাধীনতা ঘোষণার পর চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৭ জন অধ্যাপক সস্ত্রীক আশ্রয় নিয়েছিলেন সেখানে। সৈয়দ আলী আহসান, ডঃ এআর মল্লিক, ডঃ আনিসুজ্জামান, ডঃ কোরাইশী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। চট্রগ্রাম থেকে আগরতলা যাওয়ার পথে জনাব এম আর সিদ্দিকীও কুন্ডেশ্বরীতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
পাক বাহিনীর অগ্রগতির খবর শুনে সবাই কুন্ডেশ্বরী ছেড়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যায়। বাবু নূতন সিংহকে যাওয়ার কথা বললে তিনি রাজী হননি। বলেছিলেন, যদি মরতে হয় দেশের মাটিতেই মরবো। অনেক পীড়াপীড়ির পরেও তাকে রাজী করানো গেলো না। এদিকে পাক বাহিনী দ্রুত এগিয়ে আসছিলো। ১৩ এপ্রিল পাক বাহিনী কুন্ডেশ্বরী ভবনে প্রবেশ করে।
ছেলেরা আগেই পালিয়ে গিয়েছিলো। বাবু নূতন সিংহ তখন মন্দিরে প্রার্থনা করছিলেন। “জনৈক সালাউদ্দিন” তাকে সেখান থেকে টেনে হিচড়ে বাইরে নিয়ে এসেছিলো। তার চোখের সামনে মন্দির উড়িয়ে দিয়েছিলো। তারপর তাকে হত্যা করা হয়েছিলো নৃশংসভাবে। মেজর তিনটি গুলি করার পরেও “সালাউদ্দিন” রিভলবারের গুলি ছুঁড়েছিলো নূতন বাবুর দিকে। তিনি লুটিয়ে পড়েছিলেন। তেমনি মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন তিন দিন।
সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ নূতন বাবুর জন্ম ১৯০১ সালে। শৈশবেই তিনি মাতৃ পিতৃ হারা হন। আট বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন। তিনি নয় বছর বয়সে বার্মা যান। সেখানে মুদির দোকানে চাকুরী করেন। ১৯২২ সালে চট্রগ্রাম ফেরেন এবং বিয়ে করেন। তারপর কলকাতা যান। ১৯৪৬ সালে ঔষধালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিহারের বৈদ্যনাথ ধামে গিয়ে কুন্ডেশ্বরী মায়ের কবচ গ্রহন করেন। ১৯৪৭ সালে আবার চট্রগ্রামে ফিরে আসেন।
কুন্ডেশ্বরী বিদ্যাপীঠঃ নিজের মেয়েকে লেখাপড়া শিখাতে পারেননি তিনি। সে জন্য একটা ক্ষোভ ছিলো মনে। তখন রাউজান থানায় কোনো বিদ্যালয় ছিলো না। রাউজান থানার মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগের জন্য তিনি গড়ে তুলেছিলেন কুন্ডেশ্বরী বালিকা মন্দির। পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিদ্যালয় ছিলো এটি। শুধু রাউজান থানা নয়, দেশের সব এলাকা থেকেই ছাত্রীরা যায় সেখানে লেখাপড়া করার জন্য। বিদ্যালয়ের নিজস্ব ডাকঘর, সরাসরি টেলিফোন যোগাযোগ, পানির পাম্প, জেনারেটর, বাস ইত্যাদি ছিলো। মোট প্রায় ২ লাখ টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে সেখানে।“