<2.134.581-583>
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
নির্ধারিত তারিখে নির্বাচনের ঘোষণা ইয়াহিয়া খানের | মর্নিং নিউজ | ২৮ নভেম্বর,১৯৭০ |
নির্দিষ্ট তারিখেই নির্বাচন
পূর্ব পাকিস্তানকে পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসন দিতে হবে
২৭ নভেম্বর, ১৯৭০ তারিখে ঢাকায়
সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মন্তব্য
ঢাকায় গত সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন যে নির্বাচন যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। কিছু রাজনৈতিক দলের নির্বাচন স্থগিত দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে এক বিদেশী সাংবাদিকের প্রশ্নে তার উত্তর ছিল “নির্বাচন হবে”।
আট বা নয়টি নির্বাচনী এলাকা নির্বাচন তফসিলের হিসাব অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় দ্বারা আক্রান্ত এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, এ প্রশ্নের জবাব তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য রেখে গেলেন।
তিনি বলেন নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইতিমধ্যে এখানে এসেছেন ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত এলাকার পরিস্থিতি মুল্যায়ন করার জন্য।
কিভাবে বিলম্বিত নির্বাচনের উপর আইন পরিষদ হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে, প্রেসিডেন্ট ব্যখ্যা করেন জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে একটা ফাঁক ছিল। তিনি উল্লেখ্য করেন, এক অর্থে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন এত গুরুত্বপূর্ণ না যেহেতু প্রাদেশিক পরিষদ কাজ শুরু করবে জাতীয় পরিষদ সংবিধান প্রনয়ন করার পর। যদি ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত আসনে নির্বাচনে স্থগিত ঘোষণা করা হয় তবে সেখানে উপনির্বাচনের মত নির্বাচন হবে।
যদি সংবিধান লীগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক বহির্ভূত হয় মার্শাল ল আব্যাহত থাকবে
অপর এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি বলেন, তিনি ” যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ” জাতীয় অধিবেশন ডাকবেন। সংবিধানের খসড়া প্রনয়নের জন্য ১২০ দিনের সময়সীমা আধিবেশনের প্রথম দিন থেকে শুরু হবে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান।
গভর্নরের হাউসের দরবার হলে সংবাদ সম্মেলন চলাকালীন রাষ্ট্রপতি দুই উইংস, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের বিষয়ে তার মতামত এবং মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রশ্নও একটি স্কোর বলেন।তিনি বলেন তিনি পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না। তিনি বলেন তিনি বরং এটা উৎসাহিত করবেন যাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগন “পাকিস্তানের মধ্যে” থেকে “তাদের নিয়তি , পরিকল্পনা ও তাদের সম্পদের সদ্ব্যবহার” করতে পারে । তিনি বলেন যদিও পূর্ব পাকিস্তান অন্য পাঁচটি প্রদেশের মধ্যে একটি এবং ভৌগলিক অবস্থানের কারনে এটি বাকী প্রদেশ থেকে হাজার মাইল দূরে তবুও এটার সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসন থাকবে যাতে এক পাকিস্তানের মধ্যে থেকে সব কিছু চালিয়ে নিতে পারে “যত কিছুই হোক আমি পাঁচটি পাকিস্তান চাইনা”।
প্রেসিডেন্ট কে ছয় দফার উপর মন্তব্য করে অনুরোধ করা হয় এবং সাংবাদিকরা জানতে চান এটা শেষ পযযন্ত দুই পাকিস্তানকে আলাদা করতে ভুমিকা রাখবে কিনা।রাষ্ট্রপতি বলেন তিনি ছয় বা অন্য কোন দফা নিয়ে উদ্গিন ছিলেন না । অবজ্ঞা করেন বলেন পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের কি ছিল যে তারা এখন যা আছে তা নিয়ে অভিযোগ করবে।
অন্য এক বিদেশী সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি বলেন তিনি মনে করেন না পূর্ব পাকিস্তানের আলাদা হবার কোন প্রবণতা আছে, তারা সংখ্যা গরিষ্ঠ । তিনি জিজ্ঞেস করেন সংখ্যা গরিষ্ঠ কিভাবে সংখ্যালঘু থেকে আলাদা হবে? সাংবাদিক এই প্রদেশে পশ্চিম পাকিস্তানের সমালোচনা হচ্ছে এবং সেটা আলাদা হবার প্রবণতা হতে পারে উল্লেখ করলে রাষ্ট্রপতি বলেন , যদি এমন কিছু শুনে থাকেন তাহলে আমি বলব সেটা আমাদের জনগনের ভাষা নয়। তিনি বলেন পূর্ব পাকিস্তানের জনগন ঘূর্ণিঝড়ের কারনে আবেগাক্রান্ত যা খুব স্বাভাবিক। এক সংবাদদাতা যখন জিজ্ঞেস করেন যে পূর্ব পাকিস্তানের পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি সমালোচনা অব্যাহত থাকলে দেশ সংকটের দিকে যাবে কিনা, রাষ্ট্রপতি বলেন আমি তা মনে করি না। তিনি বলেন আমি পশ্চিম পাকিস্তানের সাফাই দিচ্ছি না তবে সেখানে পূর্ব পাকিস্তানে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের কারনে প্রচুর সহানুভূতি রয়েছে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ তিনি বলেন তিনি জেনেছেন এক ক্রন্দনরত বৃদ্ধ মহিলা তার সারা জীবনের সঞ্চয় ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত এলাকার ত্রানের জন্য তুলে দিয়েছেন যা তিনি হজ্জ করার জন্য জমা করেছিলেন। এমনকি ছোট শিশুরাও সারাদিন খেটে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অনুদান সংগ্রহ করছে। পূর্ব পাকিস্তান এইসব সম্পর্কে অবগত। তিনি বলেন, তিনি জানেন যে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ জানে যে ভ্রাতৃপ্রতিম পশ্চিম পাকিস্তানের জনগন তাদের সাথে আছে। এই সব শুধু তারাই বলে যারা ক্ষমতা লিপ্সায় বিভোর।
তিনি এমন নেতাদের কাছে জাতীয় ভাবনা আরও বিস্তৃত করার আবেদন জানান। এমন পরিস্তিতিতে কারও রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়া উচিত হবে না।
সংবিধানের উপর অপর এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি পরিস্কার করে বলেন যে প্রস্তাবিত সংবিধান যদি পাঁচটি মৌলিক কাঠামোর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হয় তবে মার্শাল ল অব্যাহত থাকবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন সাধারণ নির্বাচন হয়েছে এলএফও’র অধীনে যা সামরিক আইন উপকরন এবং সব রাজনৈতিক দল এটা গ্রহন করার পর নির্বাচনে অংশ নেয়।
যদি নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক দলগুলো এলএফও গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, তবেঁ যতদূর আমি অবগত আমি ধরে নেব যে নির্বাচনে অংশ নেয়নি।সে ক্ষেত্রে সামরিক আইন জারি থাকবে এবং অব্যাহত থাকবে ।
এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতিকে জিজ্ঞাসা করা হয় যদি সরকারের বিরুদ্ধে ত্রাণ সংক্রান্ত সমালোচনাগুলো রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়েছে কিনা। জেনারেল ইয়াহিয়া বলেন রাজনীতিতে সে পদ প্রার্থী বা অংশগ্রহণকারী নয়। সে বলেছে পাকিস্থানের জনগন তাদের নিজেদের সরকার নিজেরা গঠন করবে। তার উপর শুধু এই জিনিসটা দেখার দায়িত্বই বর্তায় যে প্রস্তাবিত সংবিধানটা সততা এবং দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
তিনি বলেন, সার্বভৌমত্ব জাতীয় পরিষদে দেয়া হবে শুধুমাত্র যখন তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। সে পর্যন্ত সব কিছু সেনা শাসনের অধীনে থাকবে।
রাষ্ট্রপতি য অনেকগুলো কাজের মধ্যে সমালোচনা করে পরামর্শ দিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের মধ্যমে ক্ষমতায় আসা” তিনি বলেছেন, তিনি তার প্রশাসনিক দায়িত্ব জনগণের সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে চান যত দ্রুত সম্ভব” “আমি আমার ক্ষমতা জনগণের সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে চাই”। আমি সৈনিক এবং আমি সেনাবাহিনীতে ফিরে যেতে চাই”
রাজনৈতিক নেতা , দেশের জনগণ, ত্রাণ সংক্রান্ত সংবাদগুলো নিয়ে সমালোচনায়, বিদেশি সাংবাদিকরা রাষ্ট্রপতিকে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সে বলেছে, আমি আমার জনগণের সমালোচনা গ্রহণ করেছি। আমার শুধু একটাই অনুরোধ তারা যেন গঠনমূলক হয়।
রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনার দ্রুত অন্য জবাব আসে রাষ্ট্রপতি থেকে। যখন একজন বিদেশি সাংবাদিক কেন্দ্রীয় সরকারের একজন হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্রিমিনাল নেগ্লিজেঞ্চে সংক্রান্ত শেখ মুজিবুর রাহমানের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চান, তখন ইয়াহিয়া বলেন, আমি ঘূর্ণিঝড়টি ডেকে আনিনি। এটা আমার দোষ না। আমার অপরাধ তীক্ষ্ণ হতে শুরু করেছে শুধুমাত্র যখন আমি ভুক্তভোগীদের জন্য কিছু করিনি।
যখন অন্য একজন সাংবাদিক আমলাতান্ত্রিক অপরাধের অংশে শেখ মুজিবের অনমনীয়তার পরিবর্তনগুলো উল্লেখ করলেন। রাষ্ট্রপতি বললেন, তার পরামর্শ হবেঃ তারা যেন তাড়াতাড়ি ক্ষমতায় আসে।
পাকিস্থান নৌবাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপে অনেকগুলো জীবন বেঁচে যেতে পারে, আওয়ামীলীগ নেতাদের এই বিবৃতিতে রাষ্ট্রপতি বলেন, অভিযোগ বেড়ে গেছে তথ্যর অভাবে। আমি আশা করি, তারা ক্ষমতায় আসবে এবং ভাল করবে।আমি আমার সর্বোচ্চ করার করার চেষ্টা করছি।