৫১। পটুয়াখালীর জেলখানায় বধ্যভূমি (৪৪৭)
সূত্র – দৈনিক বাংলা, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২
পটুয়াখালীর জেলখানায় বধ্যভূমি
।। নিজস্ব সংবাদদাতা প্রেরিত ।।
পাকবাহিনী একাত্তরের ২৬শে এপ্রিল পটুয়াখালী শহর কব্জা করার পর গত ৮ মাসে ঠাণ্ডা মাথায় তাদের দালালের সহযোগিতায় হাজার হাজার বাঙ্গালীকে হত্যা করেছে। প্রকাশ, নিহত ব্যক্তিদের কাউকে নদীর জলে ফেলে দিয়েছে কাউকে বা বিভিন্ন স্থানে গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দিয়ে রেখেছে। এই পাষণ্ডরা। সম্প্রতি পটুয়াখালী জেলার অভ্যন্তরে একটি বধ্যভূমি আবিষ্কৃত হয়েছে।
এখানে বহু কবর রয়েছে। কয়েকটি কবরের মাটি খুঁড়ে কংকালের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। একটি গর্তের মধ্যে ৩ থেকে ৪জন, কোথাও বেশী মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে এখানে ৫০০ শত লোককে গুলী করে হত্যা করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের অনেকেই যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তা কংকাল দেখে বুঝতে কষ্ট হয় না। কংকালে বুলেটের ছিদ্র স্পষ্ট দেখে যায়।
মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে পুলিশের লোক রয়েছে, কবরের মধ্যে পোশাক দেখে বুঝা গিয়েছে। এখানেই ঘুমিয়ে রয়েছেন শ্রদ্ধেয় কম্যুনিস্ট নেতা হিরালাল দাসগুপ্ত, পাথরঘাটার সি,ও, তরুন ব্যবসায়ি নিরঞ্জন বিশ্বাস সহ নাম না জানা দেশমাতৃকার সন্তানেরা। জানা গিয়েছে এদের লাইন করে দাঁড় করিয়ে গুলি করা হতো তখন বুলেট মানুষের শরীর ভেদ করে দেওয়ালে এসে আঘাত করতো। জেল খানার অদূরে বসবাসকারী ব্যক্তিরা আমাকে জানিয়েছেন যে, যখন মানুষ গুলিকে গুলী করা হত তখন মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর বহু লোকের আর্তনাদ তারা শুনতে পেতেন।
তারা আরো জানিয়েছেন যে দুপুর ২টা থেকে ৫টার মধ্যে কাজ হতো। জানা গিয়েছে যে বরিশাল জেলার আটঘর কুঁড়িয়ানায় পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড চালিয়ে সৈন্যরা পটুয়াখালীতে ফিরে এসেই তৎকালীন মেজর নাদির পারভেজের নির্দেশে ৬০/৭০ জন লোককে জেলের মধ্যে গুলী করে হত্যা করেছে।