<৪,১৭৮,৩৫৬-৩৫৭>
অনুবাদকঃ স্বজন বনিক
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৭৮। পরিস্থতি সম্পর্কে ইন্দোনেশিয় পত্রিকার মূল্যায়ন | ‘আমরা’ | ২০-২৩ জুন,১৯৭১ |
পররাষ্ট্র মন্ত্রির জন্য সংক্ষিপ্তসার
১৩ জুন ১৯৭১ তারিখ সকাল ১০-৩০ ঘটিকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য ইন্দোনেশীয় দৈনিক পেডোমানের প্রতিনিধি মোঃ আব্দুল্লাহ আলমুদি রওয়ানা হবেন । তিনি বর্তমানে ভারত সরকারের অতিথি হিসেবে ভারত সফর করছেন। তার সঙ্গী হিসেবে ভারত সরকারের দূতবৃন্দ থাকবেন। এখানে আসার পূর্বে তিনি ইতোমধ্যে ছয় সপ্তাহ যাবত ইউরোপীয় দেশগুলো ভ্রমন করেছেন। সূত্রমতে দৈনিক পেডমান একটি সমাজতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী মনোভাবে প্রভাবিত পত্রিকা।
(ক)বাংলাদেশের প্রতি ইন্দোনেশিয়ান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিঃ
সমগ্রভাবে ইন্দোনেশিয়ান সরকারের মনোভাব খুব একটা অনুকূলে নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রী আদম মালিক বর্তমান অবস্থাকে পাকিস্তানের “অভ্যন্তরীণ ব্যাপার”হিশেবেঅভিহিতকরেছেন।এটা অবশ্য মনে হচ্ছে যে সরকারকে সরাসরি প্রস্তাবের ফলে হস্তক্ষেপের প্রতি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে এবং স্বীকৃতির বিষয়ে এর প্রভাব পরতে পারে। বর্তমানে মনে হচ্ছে সরকার পাকিস্তান আর্মির বর্বরতার বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং পাকিস্তানের প্রজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করেনি । ইন্দোনেশিয়া পাকিস্তানকে কোন প্রকার সাহায্য প্রদান থেকে বিরত থাকছে।
(খ)জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া :
ইন্দোনেশিয়ান গণমাধ্যমের একটি অংশ বাংলাদেশের আন্দোলন বেশ ভালভাবে প্রচার করেছে। ঢাকায় পাকবাহিনীর নির্মম বর্বরতার এবং মুক্তিবাহিনীর কার্যকলাপ স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে প্রকাশ পেয়েছিলো। জনশ্রুতি ছিল যে কিছু সংবাদপত্র নিজেদের পক্ষে নেয়ার জন্যপাকিস্তান বিরাট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে।
সাধারণ জনগণ মনে করছে পাকিস্তানের অখণ্ডতা চিরতরে বিনষ্ট হয়েছে। এছাড়াও তারাবিশ্বাস করতে অনাগ্রহী যে সম্পূর্ণ দায়ভার আওয়ামী লীগের। জনাব আছমেদ সাইচো,ইন্দোনেশিয়ান পার্লামেন্টের স্পীকার ওআন্তর্জাতিক ইসলামিক সংস্থার চেয়ারম্যান এবং সাবেক প্রধান মন্ত্রী ও মাসজুমি পার্টির (নিষিদ্ধ) নেতাডঃ মোহাম্মাদ নাতচির পাকিস্তানকে বিবেচনার সঙ্গে পদক্ষেপ ও দ্রুত সমাধান খোজার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
(গ)বৈঠকে যে বিশেষ বিষয়গুলি উঠে আসতে পারেঃ
১২ জুন ১৯৭১ তারিখের জনাব আলমুদির সাথে কলকাতা মিশনের প্রধানের আলোচনায় দেখা যায় যে ঊর্ধ্বতন কেউ কোন বিশেষ বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করতে অনিচ্ছুক। যদিও তিনি জানতে আগ্রহী যে কেন আওয়ামী লীগ কে স্বাধীনতা ঘোষণার মত একটি বড় পদক্ষেপ নিতে হল।
সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন
জাকার্তা ২৩/৪/৭১
১. স্বরন সিং এর সফর এখানকার গণমাধ্যমে বেশ ভালভাবে আলোচিত হয়েছে। তাঁর এবং দুই ভারতীয় মন্ত্রির সফর সফল হিসেবে বিবেচিত হয়।
২. ১২০ ব্রিটিশ সাংসদ কর্তৃক পাকিস্তানকে সাহায্য প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য উত্থাপিত প্রস্তাব বিশালাকারে প্রচারিত হয়। প্রত্যেকটি সংবাদপত্র খবরটি গুরুত্বের সাথে প্রচার করে। ত্রাণ সাহায্যের প্রতিবেদনগুলি সবিস্তারে ছাপা হয়।
৩.জনাব হুসাইন আলির বিবরণীতে পাকিস্তান আর্মির যুদ্ধ ও ক্ষতির এবং নির্যাতনে আহতদের কথা উন্মোচিত হয়। সাধারণ মানুষের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে এটি।
৪.দেশটি বাংলাদেশের সঙ্গীন অবস্থার ব্যাপারে জ্ঞাত ছিল। কিছু সময়ের জন্য, অন্তত আসন্ন নির্বাচন পর্যন্ত তাদের নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় থাকবে। সেখানের গণমাধ্যমগুলো সর্বদাবাংলাদেশকে সব ধরণেরসমর্থন দিয়ে যাচ্ছিলো।
৫.মর্নিং নিউজ এর সহ-সম্পাদক বাংলাদেশে ঘটা পাশবিকতার বিবরণী সানডে টাইম্স এ প্রকাশ করেন।লন্ডনের গণমাধ্যমে এটি সাড়া ফেলে দেয়। এটি ছিল একটি সুলিখিত ও তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন। জনগণ স্তব্ধ হয়ে যায় রিপোর্টটি পড়ে। সরকারের প্রতি জনগনের একটি নীরব ঘৃণার সৃষ্টি হয়।
৬.কিছু পত্রিকায় ইঙ্গিত দেয়া হয় যে পাকিস্তান ভুট্টোকেদেশের বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে। উদ্দেশ্য ছিল স্বরন সিং কর্তৃক আরোপিত অভিযোগগুলোর মোকাবিলা করা। ভুট্টো এখানে ভালভাবে অভ্যর্থিত হবেন না। তিনি পাকিস্তানের সুবেন্দ্রীয়হিসেবে পরিচিত।
৭.গণমাধ্যম মারফত বাংলাদেশের পরিস্থিতির জন্য আওয়ামীলীগকে দোষী করার একটি সূক্ষ্ম চাল হয়। সমর্থকেরা এগুলোর তীব্র সমালোচনা করে।
৮.আগের একটি প্রতিবেদনে সংবাদপত্র ও সম্পাদকদেরতালিকা দেয়া হয়।সেখানে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি লেখার জন্য অনুরোধ করা হয়। এখন পর্যন্ত জানা যায়নি যে এরকম কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিনা।
৯.কয়েকবার অনুরোধের পরেও এর কোন উত্তর আসেনি।ধারণা করা হচ্ছে যে পাঠানো রিপোর্টগুলোর ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করা হচ্ছে অথবা আমাদের ঠিকানায় পাঠানো চিঠিগুলো বিপক্ষ দ্বারা পথিমধ্যে আটকানো হচ্ছে। আমাদের সন্দেহ কেটে যাবে যদি তৎক্ষণাৎ নিশ্চিত করা সম্ভব হয় যে চিঠি প্রাপকের কাছে পৌঁছেছে।তা না হলে আমাদের চিঠি লেখা হতে বিরত থাকতে হবে।
১০.জনাব জে.পি.নারায়ণের রাজধানী সফর সফল হয়নি। কিন্তু এটি অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় সংবাদপত্রগুলি ফলাওভাবে তাঁর ইন্টারভিউ এবং প্রকৃত অবস্থার প্রতি তার অবস্থান প্রচার করে ।
১১.আন্তারা উদ্ধৃত করে একটি প্রতিবেদনে বলা হয় প্যারিসেপাকিস্তানকে সাহায্যের উপর স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে। খবরটি প্রথম সারির পত্রিকাগুলোতে প্রচারিত হয়।