শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৪২। পাকিস্তানের কথা | বালটিমোর | মে ১৪, ১৯৭১ |
<১৪, ৪২, ৯২>
দি বালটিমোর সান। মে ১৪, ১৯৭১
সম্পাদকীয়
পাকিস্তানের কথা
মার্চ মাসে পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া শোকাবহ ঘটনার ব্যাপ্তি, যখন দেশটির দুইটি অংশকে পাশবিকভাবে ছিড়ে দু’টুকরো করে ফেলা হয়, একটু একটু করে জানা যাচ্ছে, পূর্ব পাকিস্তানে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে অনুসন্ধানে নিয়োজিত ছয়জন বিদেশী সাংবাদিকের একটি দলের পাঠানো এ যাবতকালে প্রাপ্ত প্রকৃত তথ্য থেকে। এখন পর্যন্ত এই পর্যবেক্ষকরা সতর্ক নিরীক্ষণের মধ্যে সাবধানে লেখালেখি করেছেন, কিন্তু তাদের মধ্যে একজন, এসোসিয়েটেড প্রেস –এর মোস্ট রোসেনব্লুম, এর বিকল্প হিসেবে দেশত্যাগ করেন এবং ব্যাংকক থেকে তাঁর বার্তাগুলো পাঠান। তাঁর প্রতিবেদন এমন এক ঘৃণা ও বিভীষিকার কথা জানায়, যা কিনা এক গৃহযুদ্ধের অবিশ্বাস্য গণহত্যা, ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে যাওয়া জাতীয় অর্থনীতির এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার।
মৃতের সংখ্যা, মিঃ রোসেনব্লুমের আনুমানিক হিসাবে, পাঁচ লক্ষ হতে পারে। যে ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে, তিনি জানান, তা অবিশ্বাস ধরণের। লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধাপীড়িত, দুর্ভিক্ষ থেকে এবং ত্রাণ বিতরণ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। পরিস্থিতি এর চেয়ে খারাপ আর হতে পারেনা।
মিঃ রোসেনব্লুম এবং অন্যান্য সুত্রমতে এটা পরিষ্কার যে অজ্ঞাতসংখ্যক হত্যাকাণ্ড সঙ্ঘটিত হয়েছে পূর্ব বাঙালীদের দ্বারা, সেখানে বসবাসরত পশ্চিম পাকিস্তানী এবং অন্যান্য অবাঙালীদের প্রতি ঘৃণা এবং প্রতিশোধপরায়নতার প্রেক্ষিতে। কিন্তু এটাও পরিষ্কার যে জাতিটিকে পাশবিকভাবে ছিড়ে দু’টুকরো করার কৃতিত্ব প্রথমতঃ পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকেই দিতে হবে এবং তাদেরকে যারা আদেশ-নির্দেশ দিয়েছে তাদেরকেও।
এক ভাষ্যমতে সামরিক বাহিনীর অভিযানে ঢাকায়, যা কিনা পূর্ব বাংলার রাজধানী, মৃতের সংখ্যা ১৫০ এর মতো হবে যা অবশ্যই এক দানবীয় মিথ্যাচার, এবং সামরিক বাহিনী সেদিন ভোরে পূর্ব পরিকল্পিত এক সশস্ত্র বিদ্রোহ দমনের জন্য এই হামলা চালিয়েছে এমন কোনো প্রমাণও পরিবেশন করা হয়নি সামরিক বাহিনী এই অভিযান শুরু করার পরে।
প্রকৃত ঘটনা এখনো তাই মনে হচ্ছে, যা প্রথমেই ধারণা করা হয়েছিল, যে পাকিস্তানের সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী পূর্ব বাংলার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসতে না দেয়ার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর ছিল, এবং এই দৃঢ়সংকল্প থেকেই মার্চের এই সুপরিকল্পিত গণহত্যার জন্ম হয়।
যদিও এর পূর্ণ পরিণতি এখনো জানতে বাকি, তবুও এটুকু এখনই স্পষ্ট যে পাকিস্তানের স্রষ্টাদের পরিকল্পিত পাকিস্তান আর নেই, এক নড়বড়ে অর্থনৈতিক কাঠামোকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে যা থেকে পরিত্রাণের আর কোন পথ প্রায় নেই, বিদ্বেষপূর্ণ এক প্রজন্মের সৃষ্টি নিশ্চিত করা হয়েছে এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এমন সব নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে যার উদ্দেশ্যের সাথে পাকিস্তানের জাতীয় সমৃদ্ধির সামান্যই সংযোগ রয়েছে।