পাক দখলদার আমলে অবাঙ্গালীদের ভূমিকা ও মনোভাব সম্পর্কিত কয়েকটি দলিল

পরিষিষ্ট

পাক দখলদার আমলে অবাঙালীদের ভূমিকা ও মনোভাব সম্পর্কিত কয়েকটি দলিল

পার্বতিপুর টাউন কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রশাসক কামারুজ্জামানের

রোজনামচা

২৬ মার্চ – ১৭ মে

.

২৬.৩.৭১

শাফায়েতের সাথে দেখা হলো। পার্বতীপুরের বর্তমান অবস্থা যে ভাবে সে সামলেছে, তার জন্য প্রশংসা করলাম। সাথেসাথে তার অধিনস্থ লোকদের বিষয়েও তাকে সতর্ক করে দিয়ে বললাম এদের বেশি বিশ্বাস না করতে কারণ শত হলেও এর বাঙ্গালী।  বলা যায় না সুযোগ  পেলে এরা তার জীবনের জণ্য হুমকি হতে পারে। শাফায়েত আমার কথায় হেসে ফেললো। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমাদের অস্ত্র জমা দেবো না, কারণ বাঙ্গালীরাও তাদের অস্ত্র জমা দেয়নি, যদিও আইনত ব্যাপারটা ঠিক নয়।

শহেরর পূর্বদিকে নিকটবর্তী গ্রাম গুলোতে প্রচুর বাঙ্গালীদের সমাগম দেখা যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে এবং চারিদিকে সর্তক প্রহারা জারি আছে।

২৭.৩.৭১

সকাল এগারোটা থেকে শুরু করে প্রায় ১৫ ঘন্টা আমেরিকান ক্যাম্প, উত্তর কর্মাঙ্গন (শহরের উত্তর দিক) এবং  চৌকি কর্মাঙ্গনের (শহরের দক্ষিন দিক)দিকে প্রচুর বাঙ্গালীদের সমাগম হয়েছে।বাঙ্গালীরা উত্তর কর্মাঙ্গনে আক্রমন করেছিল। সম্পূর্ন উত্তর কর্মাঙ্গনে আগুন দেয়া হয়েছে এবং যা কিছু ছিল সব লুটপাট করা হয়েছে। সন্ধার দিকে বাঙ্গালীরা একজন  ইমাম সহ চারজন লোককে হত্যা করেছে, এরা সব  মসজিদে আত্মগোপন করেছিল। আগামীকাল সকাল পর্যন্ত শহরে কার্ফু জারি করা হয়েছে।

২৮.৩.৭১

সকাল প্রায় আটটার দিকে বাঙ্গালীরা চৌকি কর্মাঙ্গন আক্রমন করেছিল, আমাদের একজন লোক মারা গেছেন। দুপুর প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে লাখ খানেকেও বেশি বাঙ্গালীরা চারিদিক থেকে শহরে আক্রমন চালিয়েছে। শহরের মধ্যে অবস্থানরত বাঙ্গালী পুলিশ এবং ই আর পি সদস্যরা এদের সহযোগীতা করেছে। আমরা যখন আমাদের এলাকা থেকে বাঙ্গালীদের সাথে যুদ্ধ করছি, তখন এরা পেছন থেকে আমাদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। আমাদের লোকজন যখন শহর থেকে বাঙ্গালীদের হটিয়ে দিয়ে ব্যারাকে ফিরছিল তখন এদের রাইফেলের গুলিতে দুজন নিহত এবং আরও অনেকে আহত হন।

.

পিছু ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়ার পর তাদের গ্রাম গুলো আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের প্রায় ৩০ লোক শহরের বিভিন্ন যুদ্ধ ক্ষেত্রে আহতে হয়েছিল। আহতদের সবাইকে পার্বতীপুরের রেলওয়ের ডক্টর খুরশিদ বানু তার স্বামী এবং ছেলের সহযোগীতায় নিজের বাসায় একাই চিকিৎসা করেছেন। তার নৈতিকতা বোধ অত্যন্ত উঁচু পর্যায়ের। আমাদের প্রতিটি আহত লোকদের তিনি খুব দ্রুততা, ধৈর্য্য এবং দক্ষতার সাথে চিকিৎসা করেছেন। আমাদের সাহসী আহত জাওয়ানদের জন্য সেই একমাত্র চিকিৎসক ছিলেন।

২৯.৩.৭১

কর্ণেল তারিক রাসুল দিনাজপুর থেকে তার পরিবার সহ এসে পৌছলেন। তিনি আজ খুব সকালে এসেছেন এবং এর মধ্যে ঘটে যাওয়া দিনাজপুরের ঘটনা প্রবাহ ও বর্তমান টানটান উত্তেজনার কথা আমাদের কাছে বর্ণনা করলেন।

৩০.৩.৭১

কর্ণেল টি রাসুল ও তার পরিবার এবং পার্বতীপুরে কর্মরত অবাঙ্গালী ই আর পি সদস্যগণ সৈয়দপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। যাবার সময়ে কর্ণেল রাসুল আমাদের কিছু অস্ত্র এবং গোলাবারুদ দিয়ে গেছেন।  কিছু শুভানুধ্যায়ীগন আমার স্ত্রী এবং সন্তানদের কর্ণেল রাসুলের সাথে সৈয়দপুর পাঠিয়ে দেবার কথা বললেন। কিন্তু আমি এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি কারণ এতে শহরের জনগনের মনোবল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

শহরের জনগনের নৈতিক মনোবল চাঙ্গা করতে সচেষ্ট হলাম আমি কারণ অবাঙ্গালী ই আর পি সদস্যদের শহর ছেড়ে সৈয়দপুর চলে যেতে দেখে তারা মুষড়ে পরেছিল। শহরের চারিদিকে শক্তিশালী ফাড়ি স্থাপন করা হয়েছে। এম/এস বাচ্চা খান ও মতিউর রহমানেকে সঙ্গে নিয়ে সারারাত ধরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করা হলো।

২৯.৩.৭১

কর্নেল তারেক রাসুল দিনাজপুর থেকে স্পরিবারে এসেছিলেন।তিনি খুব সকালে এসে দিনাজপুরের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তুলে ধরে ছিলেন।

৩০.৭.৭১

কর্নেল তারেক রাসুল তার পরিবার এবং পারবতি পুরে দায়িত্বরত অবাঙ্গালি ই পি আর কর্মকর্তাগণ সৈয়দপুরের দিকে রওনা দিয়েছিল।তিনি যাওয়ার সময় কিছু অস্ত্র ও গলাবারুদ আমাদের দিয়ে গিয়েছিলেন।আমার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী কর্নেল টি রাসুলের সঙ্গে আমার ও আমার বাচ্চাদের সায়িদপুরে পাঠাতে বলেছিল।আমি সেই কথা অমান্য করলাম যেহেতু এটা শহরের মানুষের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতো।তখন মানুষ আতঙ্কিত ও আশাহত ছিল অবাঙ্গালি ই পি আর দের সৈয়দপুর প্রস্থানে।মিসেস বাচাখান এবং মতিউর রহমান সারা রাত  পুরো শহরের শক্ত প্রতিরোধের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।

 

১.৪.৭১

দুপুর প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে মেজর শাফায়েত আমার বাসভবনে এসে দেখা করে বললেন তিনি ১৫.৩০ ঘন্টা ব্যাপী কার্ফ্যু জারী করতে যাচ্ছেন। তিনি বললেন, এই সময়ে  তার অধিনস্থ বাঙ্গালী সেনাদের তিনজন করে দলে ভাগে করে চৌকি দিতে পাঠাবেন যাতে করে তখন আমারা এদের হত্যা করতে পারি।

আমি বললাম, এই কর্মসূচী এখনই শুরু করা উচিত, নইলে যদি বেশি দেরী হয়ে যায় আল্লাহ না করুন এরা আমাদেরকেই হত্যা করতে পারে।  কিন্তু তিনি রাজি হলেন না।

এরপর নয়টার দিকে সে যখন তার ক্যাম্পে ফেরার পরে তার লোকেরা তাকে হত্যা করে। এই ঘটনার পরে মেজরের বাহিনীর লোকেরা পালিয়ে যায়।  

১.৪.৭১

মেজর সাফায়েত আমার বাসায় ভোর ৩.৩০ এ দেখা করে জানান যে তিনি ১৫.৩০ থেকে কারফিউ জারি করবেন এবং ব্যাচ সহ তার বাঙ্গালি সৈন্যদের পাঠাবেন এবং আমাদের তাদের হত্যা করতে হবে।

আমি তাকে উপদেশ দিলাম যে এই অভিযান এখনি শুরু করতে আল্লাহ নাকরুক না হলে অন্যরা তাকে হত্যা করবে।কিন্তু তিনি রাজি হলেন না।যখন তিনি সকাল ৯ টায় তার ক্যাম্পে ফিরেছিলেন তার লোকেরা তাকে হত্যা করে।এর পর তার রেজিমেন্ট পালিয়ে যায়। পাবতিপুরের ও/সি ও ৯ জন কন্সটেবল রাইফেল সহ ১১ টায় পালিয়ে যায়।বিকেল ৪ টায় আমি ও জনাব মতিউর রহমান জি আর পি আস/পারবতিপুর আক্রান্ত হই। থানার বাঙ্গালি ফোস অল্প কিছু প্রতিরোধের পর আত্মসমর্পণ করে। তাদের কাছ থেকে ভাল অবস্তায় ৯ টি রাইফেল,২৮ টি বোল্ট ছাড়া রাইফেল আনং ২০০ টি ৩০৩ রাইফেলের গুলি উদ্ধার করা হয়।এটি সৈয়দপুরে কর্নেল সাফায়েতকে ফোনে জানানো হয়।সে বাঙ্গালি থানাকেও আটকের নির্দেশ দেন।

২.৪.৭১

  বাঙ্গালি ই অই আর গণকে তাদের পারবতিপুরের হলদিবাড়ি কলনির সহকর্মীদের সাথে যোগ দিতে বলা হয়।পারবতিপুরের বাঙ্গালি পুলিশদের কেও ই বি আর দের সাথে যোগদিতে বলা হয়। এইভাবে আপেক্ষিক রুপে হলদিবাড়ি হয়ে উঠলো বাংলাদেশি ফোস  একটি শক্ত ঘাটি এবং আমাদের ক্ষতির একটি বড় উৎস যেহেতু হলদিবাড়ি অংশে  আমাদের সাথে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ হত। 

৩.৪.৭১ থেকে ৬.৪.৭১

টানটান পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।বারবার গোলাগুলি চলত। আমরা আমাদের শহর রক্ষাথে ব্যাস্ত ছিলাম ।আমাদের থানা গত রাতে ঘেরাও হয়েছিল কিন্তু ওরা সফল হয়নি।

.

.

দুপুর ১২ টায় আমি, মিস বাচা খান, মতিউর রাহমান আরো ৮ জন মুজাহিদ সহ থানা ঘেরাও করি। আমি মতিউর রহমান কে নিয়ে থানায় প্রবেশ করে ও সি কে বলি আমরা আপনার থানা ঘেরাও করে ফেলেছি, আপনি এখুনি সারেন্ডার করুন নাহলে আমরা আপনাকে ও আপনার লোকদের মেরে ফেলব. ও সি সারেন্ডার করল। আমরা ভাল মানের ৪০ টি রাইফেল ও থ্রি নট থ্রি রাইফেলের ৫০০ টি গুলি কব্জা করে নিলাম । থানার কাছেই আমি আমার লোক দের পাঠালাম যারা ২ জন বাঙ্গালীকে হত্যা ও ২৫ টি গ্রাম জালিয়েফেরত আসল। এরপর সেই এলাকা কড়া পাহারায় রেখে আমরা ফেরত আসলাম ।

৭.৪.২০১৭

এটি আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল। ভোর ৫.৪০ এ শহরকে পূর্ব দিক থেকে আক্রমন করা হল। ২টি বোম্ব শেলের ভয়াবহ আওয়াজে আমার বাড়ি কেপে উঠল যদিও তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি । ভোর ৬টা থেকে বৃষ্টির মত গুলি বর্ষণ শুরু হল। E.B.R. E.P.R ও পুলিশ বাহিনীর সহযোগীতায় এক লাখ বাঙ্গালী শহর টিতে আক্রমন করে। পূর্ব দিক থেকে আক্রমন অনেক ভয়াবহ ছিল। তারা রকেট, ২’,৩’ মর্টার , LMG, চাইনীজ অস্ত্র ও থ্রি নট থ্রি রাইফেল ব্যাবহার করছিল।আমি সারা শহরের এক মোরচা থেকে অন্য মোরচায় যেতে লাগলাম আর যেখানে যেখানে জনবল বা অস্ত্র শস্ত্র দরকার তা সরবরাহ করলাম।পূর্ব দিকের আক্রমন জোরদার হতে থাকল ও এক এর পর এক রকেট শেল নিক্ষেপ করা হতে লাগল। যদিও আমরা আমাদের অস্ত্র শস্ত্র খুব সাবধানে ব্যাবহার করছিলাম, কিন্তু ১২টার পর থেকে অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকল ও শত্রুপক্ষ ভারি রকেট ও মর্টার শেল নিক্ষেপ করতে লাগল।

আমরা আস্তে আস্তে পিছু হটতে লাগলাম, আমরা বৃদ্ধ , মহিলা ও শিশুদের পূর্ব দিক থেকে সরাতে লাগলাম। আমরা আর্মি দেরকে সহযোগীতার জন্য ডাকলাম যেহেতু তারা আসছিলনা আর আমাদের অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। আমাদের অস্ত্রের মজুদ শেষ পর্যায়ে চলে গেছিল। বাচা খান ও তার সাথের লোকেরা তখন ও লড়াই চালানোর চেষ্টা করছিল এবং খুব সাবধানে পিছু হটছিল।কিন্তু শত্রুপক্ষ আমাদের কে কাবু করে পূর্ব দিকের মার্কেট এ ঢুকে যেতে সক্ষম হয়। তারা সব দোকান লুট করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। দুপুর দুইটায় তারা আমাদের কিছু রেল স্টেশনে ঢুকে পরে। কিন্তু আমরা আমাদের প্রান পন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলাম যাতে তারা শহরের আর কোনো অংশে আক্রমন না চালাতে পারে।আমাদের লোকের লাঠি দিয়ে মার্কেট দখল কারীদের সাথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। দুপুর ২.৩০ মিনিটে প্রথম দফা আর্মি রা এলো আমাদের সাহায্য করতে। এরমধ্যাই আমাদের ১০ জন লোক মারা গিয়েছিল ও ১০০ জন বোমা বিস্ফোরনে আহত হয়েছিল। তারা সবাই চিকিৎসার জন্য ডা। খুরশিদ বানুর বাসায় যাচ্ছিল, কারন একমত্র তিনিই ছিলেন যিনি আহতদের স্বেচ্ছায় সাহায্য করছিলেন আর পূর্ব দিকের বেশিরভাগ বাড়ি ই খালি করে দেয়া হচ্ছিল। আর্মি রা পূর্ব দিক থেকে সব শ্ত্রুদের সরিয়ে দিয়েছিল।কিছুক্ষনের মধ্যেই ২য় দফা আর্মি এসে পরে। আর্মি দের শহরের চারিদিকে পাহারায় বসানো হয়। দুই ঘন্টার মাঝেই তারা পুড়ো শহরকে শ্ত্রুমুক্ত করে তাদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে। এই অপারেশান এ তিনজন আর্মি মারাত্মক ভাবে আহত হয়। তারা সবাই ডাক্তার বানুর কাছে ছুটে যায়। অপারেশান এর পর আমি, মেজর দুররানী, ক্যাপ্টেন চিমা ও ক্যাপ্টেন শারাফাত ডাক্তার বানুর বাসায় যায়। তাঁর বাঙ্গলোতে একশ এর ও বেশি আহত মানুষ ছিল। দুইজন আর্মি কে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল এবং তিনি এখন তৃতীয় জন কে নিয়ে ব্যাস্ত ছিলেন। তিনি তাকে বাঁচানোর আপ্রান চেষ্টা করার পরেও সেই আর্মি অফিসার মারা যায়। কর্নেল শফি এসেও উনার চিকিৎসা সেবার অনেক প্রশংশা করেন। সেই অফিসারেরা এক রাতের জন্য ডাক্তার বানুর বাড়িতে থাকেন ও বাকি সৈন্য রা তার বাড়ির পাশের জিন্নাহ ময়দানে থাকেন। আমি সবার জন্য খাবার এর ব্যাবস্থা করছিলাম ওশহরের মানুষ কি দুর্ভোগ এ আছে তা বর্ণনা করছিলাম। হলদিবাড়িতে অপারেশান চলাকালে আর্মিরা কিছু গ্রাম জালিয়ে দেয় । ই পি আর ও পুলিশ ফোরস ২ টি চাইনীজ রাইফেল জব্দ করে যার মধ্যে একটি মেজর দূররানী নিয়ে যায় ও আরেকটি আমাদের সাথে থাকে। হলদি বাড়িতে যেসব আর্মি ছিল তারা তারা তাদের দলের জন্য খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা কে আবার খতিয়ে দেখে তার পুনর্বিন্যাস করে।

 

বিত্তিপাড়া ও বাসুপাড়ায় অপারেশান এর জন্য আর্মিদের পাশাপাশি ১০ জন মুজাহিদ কেও পাঠানো হয়।

শত্রুরা কিছুক্ষনের মধ্যেই পালিয়ে যায় । এবং সেই এলাকায় আর্মিদের থাকা খাওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়।

রাতে হুগলীপাড়ায় একটি অপারেশান টিম কে পাঠান হলেও সেখানে কোনো শত্রুর সন্ধান পাওয়া যায়নি

মেজর কুমার ও আমার নির্দেশে ১৫ জন এর একটি দল কে নিয়ে কল্কা বাড়িতে অপারেশান চালানো হয়। কিছু শত্রু কে হত্যা করা হয় ও কিছু রাইফেল জব্দ করা হয় যা পরে আমি আর্মি দের কে দিয়ে দেই ।

বাচা খান ও মেজর কুমারের নির্দেশে লোকজনকে ফুলবাড়ি ১ এর রেল লাইন ও টেলিফোন লাইন ঠিক করতে পাঠানো হয়। আমি আমার লোক জনদের কে নিয়ে পূর্ব দিকের কিছু গ্রামে অপারেশান চালাই।

রাব্বানী নামের আমার এক লোক কে আমি মেজর কুমারের সাথে বেলেচান্দি গ্রামে অপারেশান এ পাঠাই। আর আমি বাচা খান কে সাথে নিয়ে মেজর কুমারের অনুমতি নিয়ে হুগলি পাড়া অপারেশান এ যাই।

আঞ্চলিক নানা রকম সমস্যার কারনে, আমি পার্বতীপুর এর এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে নিযুক্ত হই। শহরের নিরাপত্তার দেখাশুনার জন্য মেজর কুমার ই আমাকে এই পদে নিযুক্ত করেন। আমি অতি দ্রুত একটি মিটিং ডাকি এবং সরকারী ও আঞ্চলিক প্রধান দের প্রশাসনের সব নিয়ম কানুন মেনে চলতে বলি ও কঠোর পরিশরম করতে বলি। লোকাল থানা, বাজার, দোকান পাট, রেল স্টেশান, রেফুজ্যি ক্যাম্প যা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেগুলো আবার পুনর্বিন্যাস করা হয়।

স্টেশান মাস্টার মি মল্লিক, জনাব মুস্তফা (DME/PXC) ও সিগনাল ইন্সপেক্টর মি ষেলটন এর সহায়তায় রেল লাইন স্থাপনার কাজ শুরু করা হয়। সবাই এখানে কঠোর পরিশ্রম করছিল, এখানে বিদ্যুৎ এর ব্যাবস্থা করা হল, যা এত দিন বন্ধ ছিল। ডাক্তার বানু কে চিকিৎসার দায়িত্ব দেয়া হল, সকল আহত আরমি, মুজাহিদ, পাঠান , রেফুজি এমনকি যারা পার্বতীপুর থেকে এখানে আহত হয়ে এসেছিল সবার স্বাস্থ্য সেবার দায়িত্ব ডাক্তার বানু কে দেয়া হল।

মেজর যাওয়াদ, বাচা খান ও রাব্বানীর নেত্রিত্তে বদরগঞ্জে অপারেশান চালিয়ে ৫০০ ব্যাক্তি কে গ্রেফতার করা হয় । অনেক গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়। দুটি স্টেঙ্গান জব্দ করে আর্মি দের হাতে তুলে দেয়া হয়। ৮২ জন হিন্দু বন্দি কে পার্বতীপুর নিয়ে আসা হয়।

পরের দিন একই ভাবে ভবানীপুর ও খোলাহাটির ২৩ টি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয় । কিছু ছাত্র ও নিরাপত্তা রক্ষি কে হত্যা করা হয়, একটি শটগান জব্দ করে আর্মি দের হাতে তুলে দেয়া হয়।

২৩ তারিখ বাচা খান, রাব্বানী ও মেজর জাওয়াদ কে Kawgaon পাঠানো হয়। আমি লে. শহীদ এর সাথে ফুলবাড়ি যাই। ফুলবাড়ি থেকে আমরা দুই ওয়াগন অস্ত্র নিয়ে আসি। আমার একজন লোক লে আকবার এর হাতে নিহত হয়। সৈয়দ পুর আর্মি হেড কোয়ার্টার এর আদেশে বাচা খান ১৫ জন মুজাহিদ কে রাত ১০ টায় সেখানে পাঠান। তাদের কে পাঠানো হয়েছিল আরমি দের সাহায্য করার জন্য যারা রংপুর থেকে পার্বতীপুর যাওয়া রিলিফ ট্রিন গুলোকে পাহাড়া দিচ্ছিল এবং কিছু সংখ্যক ছিল খোলাহাটিতে যেখানে রেল লাইন উপড়ে ফেলা হয়েছিল ও শত্রুরা আক্রমন করছিল। শত্রুরা কিছুক্ষনের মধ্যেই পালিয়ে যায় ও সে রাতেই ব্রীজ ও রেল লাইন মেরামত করা হয়। মিলিটারি দের খাবার সরবরাহ করা হয় ও খোলাহাটি থেকে ট্রন এ করে তাদের পার্বতীপুর ফেরত পাঠানো হয়। ২৪ এপ্রিল খবর পাওয়া গেল মন্মথপুর রাইস মিল থেকে বাঙ্গালী রা চাল চুরি করছে। সৈয়দপুর থেকে আদেশ পেয়ে সেখানে লোক পাঠিএ সব বাঙালি দের তারীয়ে দেয়া হয় এবং ৩০০ মন চাল পার্বতীপুর নিয়ে আসা হয়। কর্নেল শাফি পার্বতীপুর থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এতে তিনি ৫০০ লোক কে নিয়োগ দেন। আর্মিদের নির্দেশে চিড়িড় বন্দর থেকে ৬৭৫ মন চাল আনা হয় । সিভিল ফোরস কেও আর্মিদের অপারেশানে সাহায্য করার জন্য নিযুকত করা হয়। রাস্তাঘট ও রেল লাইনের উন্নয়ন , পার্বতীপুর সৈয়দ পুর রাস্তা নির্মাণ , চিড়িড় বন্দর থেকে ৩৫০ মন চাল, মম্নথপুর থেকে ২০০ টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে আসা হয়। আর দুইটী রাইফেল আর্মিদের হাতে তুলে দেয়া হয়।

 

১ তারিখ সকাল বেলা আমরা পার্বতীপুর সৈয়দ পুর রাস্তার সংস্কার কাজে যাই এবং সারাদিন সেখানে থেকে কাজের অগ্রগতি দেখি।

মেজর যাওয়াদ এর নেত্রিত্তে আমি , আমার কিছু লোক ও বাচা খান কে নিয়ে চকোরি যাই চাল ও গম আনতে , কারন সেখানে শত্রুরা জিনিসপত্র লুট করছিল। আমরা গুদাম থেকে ৯৯৪ বস্তা চাল ও গম নিয়ে পার্বতীপুর ফেরত আসি।

পরের দুই দিন আমরা পার্বতীপুর – সৈয়দপুর রাস্তা সংস্কার এর কাজ দেখা ও রেফুজি দের দেখা শুনা করার কাজে ব্যাস্ত ছিলাম

৫.৫.৭১

আমি বাচা খান কে আমার কিছু লোক সহ চাওকাই পাঠাই, সেখানে গয়ে তারা শ্ত্রদের ধাওয়া করে ও ৩৬০ বস্তা গম ও ৪৮০ বস্তা চাল নিয়ে আসে। আমি আবার ও রাস্তা সংস্কার দেখার কাজে ব্যাস্ত হয়ে যাই।

৬.৫.৭১ এবং ৭.৫.৭১

আমি বাচা খান কে আমার কিছু লোক সহ চাওকাই পাঠাই, সেখানে থেকে তারা ৩৬০ বস্তা চাল ও ৭২০ বস্তা গম নিয়ে আসে।রাত ১১ টার দিকে শহরের পশ্চিম দিকে টর্চ লাইট হাতে কিছু লোক কে ঘুরাঘুরি করতে দেখা যায়। রুশেদ নামের আমাদের এক জন নিরাপত্তা কর্মী রাইফেল নিয়ে সেসব শত্রুদের ধাওয়া করে ও নিরাপত্তা আরো জোরদার করে।

৮.৫.৭১

পার্বতীপুর – সৈয়দপুর রাস্তা সংস্কার এর কাজে শহর থেকে আরো শ্রমিক এনে লোকবল বাড়ানো হয়। এখানে আরো ১০০ জন লোক নিয়োগ পায় যার ফলে কাজের দ্রুত অগ্রগতি হয়। বাচা খান কে আবারো কিছু লোক সহ চরকাই পাঠানো হয় , সন্ধ্যা বেলায় তারা ৭০০ বস্তা গম নিয়ে ফেরত আসে।

৯.৫.১৯৭১

পরদিন বাজার পরিদর্শনে যাই, যেসব দোকান পাট খুলে দেয়া হয়েছে সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য ঠিক আছে কিনা, শহরের আইন কানুন ব্যাবস্থা ও যেসব মুজাহির রা বাইরে থেকে এসেছে তাদের পুনর্বাসন ব্যবস্থাঠিক ঠাক  হয়েছে কিনা সব দেখে আসি।

১১.৫.১৯৭১

আমার লোক দের বাচা খান সহ চরকাই খাদ্য গুদামে পাঠাই তারা সেখান থেকে ৮৪০ বস্তা গম নিয়ে ফেরত আসে।

.

.

পার্বতীপুরের হাবীব ব্যাংক এবং ইউনাইটেড ব্যাংকের ব্যালেন্স ঠিকঠাক ছিলো। পার্বতীপুরের ন্যাশনাল ব্যাংক ছিলো বন্ধ। ম্যানেজার এবং ক্যাশিয়ার ছিলো বাঙ্গালি এবং তারা পালিয়ে গিয়েছিলো।তাই এই ব্যাংকের ব্যালেন্স চেক করা সম্ভব হয়নি।

১৪টি রাইফেল এবং ৭০০ রাউন্ড গুলি দিয়ে চিরির বন্দর পুলিশ স্টেশন খুলতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।ইপি আরসিটি কোচ সার্ভিস এবং পিআই সার্ভিস কার্যক্রম শুরু হয়েছে।এছাড়া বিভিন্ন ট্রেন সার্ভিস ও চলাচলের ঘোষণা দিয়েছে।মেজন জেনারেল জাওয়াদের নির্দেশে সাইদপুর এয়ারপোর্টের জন্য ১৫জন রাজমিস্ত্রী যোগাড় করা হয়েছে। বাচ্চার সাথে চরকাইয়ে আমার লোক পাঠানো হয়েছে যারা ৮৪০ ব্যাগ গম নিয়ে আসেছে।রাস্তা তৈরির কাজ তত্ত্বাবধান করতে ও গিয়েছিলাম।

১৩.০৫.১৯৭১

পিবিটি- এসডিপি রাস্তা পরিদর্শন করতে গিয়ে সাইদপুরের কর্নের শফি এবং বিগ্রেডিয়ার এর সাথে দেখা হলো । রাস্তাগুলোকে ঠিকঠাক করার ব্যাপারে আলোচনা হলো।কর্নেল শফি রাস্তা পরিদর্শন করে কাজের প্রশংসা করলেন।আমাকে কাজের গতি দ্বিগুণ করতে বললেন যাতে আসছে বর্ষা মৌসুমের আগেই কাজ শেষ করা যায় । পার্বতীপুরে হেঁটে ফিরে এলাম।

১৪.০৫.১৯৭১

১০দিন আগে ২জন বিহারী ,একজন খাদ্য পরিদর্শক এবং অন্য একজন ব্যবসায়ীকে বাঙ্গালিরা খুন করেছে,যশোইহাটে আই খবর পেলাম।মেজর জাওয়াদের কাছে যশোইহাটে অপারেশনের নির্দেশ পেয়েছি। ১২.৪৫ এর দিকে বাচ্চা খান,মতিউর রহমান এবং আমার লোকজনসহ যশোইহাটের দিকে হেঁটে রওনা হয়েছি।প্রায় তিনটার দিকে মন্মুথপুরে দুইজন হিন্দুকে একটি গরুর গাড়ি পুর্ন করে চাল এবং ধান ভারতের দিকে নিয়ে যাওয়া অবস্থায় আটক করলাম।হিন্দু দুইজনকে হত্যা করে পাশেই একটা মুসলিম এলাকায় সেই ধান ও চাল ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।বিকেল ৪.৪৫ এ নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে জায়গাটিকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললাম ।প্রায় ২৫০ বাঙ্গালিকে গ্রেপ্তার করা হয়,তাদের মধ্যে ৯জনকে রেখে বাকিদের সতর্ক করে ছেড়ে দিই। ২বোর শটগান ,একটি পাঁচ টাকার ভারতীয় নোট জব্দ করা হয়।পার্বতীপুরের মৌলাদের কাছে বন্দুক দুটি হস্তান্তর করা হয়েছে।এছাড়া এক বাঙ্গালির বাড়ি থেকে এক বিধবা বিহারীকে উদ্ধার করেছি। এই বাঙ্গালি সম্প্রতি তার স্বামীকে খুন করে ।আর ও একটি বাড়ি থেকে এক এতিম বিহারি মেয়েকে উদ্ধার করা হয়।বিধবাটিকে শরনার্থী শিবিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এতিম মেয়েটিকে আমার বাড়িতে রেখে দিয়েছি।মেজর জাওয়াদের কাছে অপারেশন থেকে ফিরে সকল খুঁটিনাটি বিষয় ফোনে জানিয়েছি।

১৫.০৫.১৯৭১

পিবিটি- এসডিপি রাস্তা পরিদর্শন করতে গিয়ে ৩টার সময় তথ্য পেলাম খোলাইহাটিতে রেললাইন ভাড়া এবং রেলের সম্পত্তি বিনষ্ট কারীদের ধরতে যাওয়া বাচ্চাখানকে শত্রুরা ঘিরে ফেলেছে। দ্রুত পার্বতীপুর ফ্রে সাইদপুরের আর্মি হেটকোয়ার্টারে যোগাযোগ করে তাজা গুলের নেতৃত্বে আমার ২৫জন জোয়ান এবং আর্মিসহ খোলাহাটির উদ্দেশ্যে রওনা দিই।প্রায় ৪টায় ওখানে পৌছায়।ততক্ষনে শত্রুরা দৌড়ানো শুরু করেছে।আমরা তাদের ঘিরে ফেলে অন্তত ২৫জনকে হত্যা করেছি। একটি ১২ বর শটগান এবং দুজন ইউনিফর্ম পরা শত্রুকে আটক করা হয়। রাত প্রায় ১০টায় আমরা পার্বতীপুরে ফিরে আসি।সাইদপুরে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।কর্নেল শফি বাচ্চাখানের উপরে রেগে আছেন অনুমতি ছাড়া খোলাইহাটি যাওয়ার জন্য।খোলাইহাটি থেকে আটক করা ২৭জন বন্দীর ভিতর ৩জনকে আঁটকে রেখে বাকিদের যথেষ্ট শাস্তি দিয়ে মেজর জাওয়াদের নির্দেশে ছেড়ে দেওয়া হয়।

১৬.০৫.১৯৭১

পিবিটি- এসডিপি রাস্তা পরিদর্শন শেষে মেজর জাওয়াদ পার্বতীপুর আসেন। তিনি গতকালকের খোলাইহাটির ঘটনা ,স্থানীয় প্রশাসন এবং পার্বতীপুরের অন্যান্য দুশ্চিন্তার বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন এবং আমাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। তিনি খোলাইহাটিতে অস্ত্রধারী শত্রুদের উপস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় আছেন ।তিনি চিরির বন্দর পুলিশ স্টেশনের ওসিকে দিনাজপুরে বদলির জন্য আমাকে নির্দেশনা দেন। খোলাইহাটির কয়েদিদের তার সাথে সাইদপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রেললাইন দিয়ে পার্বতীপুর দুইদিকে ভাগ করা ।গত ১৫ বছর একটা লেভেল ক্রসিংয়ের  কাজ অগাহ্য হয়ে আসছে অন্যদের আপত্তিতে।আজকে আমাদের নিজস্ব চেষ্টায় এবং মিস্টার শেলটন ( সিগন্যাল ইনস্পেক্টর পি ই রেলওয়ে) এর ব্যক্তিগত চেষ্টায় দু সপ্তাহের ভিতরেই লেভেল ক্রসিংয়ের  কাজ সম্পুর্ন হয়েছে।সন্ধ্যায় আমরা আলহাজ্ব মোহাম্মদকে দিয়ে এটি উদ্বোধন করাই । এবং শহরের লোকজনের তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে ডঃ বানো লেভেল ক্রসিং দিয়ে প্রথম যান চালিয়েছেন।

১৭.০৫.১৯৭১

পিবিটি- এসডিপি রাস্তা পরিদর্শন করতে গিয়ে পার্বতীপুরে নতুন জয়েন করা ইপিসিএফ এর নেয়ামতুল্লাহর সাথে সাক্ষাত হয় । দিনাজপুর ,সান্তাহার এবং এরকম অনেক জায়গা থেকে স্রোতের মতো আসা শরনার্থীদের ত্রান বিতরন এবং পুনর্বাসনের কাজ দেখছিলাম।তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ই ছিলো বিধবা এবং এতিম । শরনার্থীদের সংখ্যা ইতিমধ্যেই আশংকাজনক। ২০০০ এর মতো চলে আসছে এবং সৃষ্টিকর্তা জানেন আরো কতো আসতেছে। তাদের বেশিরভাগই একসাথে সবকিছু হারিয়ে খবই করুণ অবস্থায় আছে।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি আমাকে যেন সাহস এবং শক্তি দেন যাতে এই সমস্ত লোকের জন্য মানুষের পক্ষে সম্ভব ,এমন সবকিছু করতে পারি ।তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং পার্বতীপুরের অন্য সকল বড়ো সমস্যাগুলো যেন আমার নেতৃত্বে সমাধান করতে পারি।আমি আমাদের সেনাবাহিনীর সার্বিক সাফল্যের জন্যেও প্রার্থনা করি যাতে তারা জাতীয় বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের জন্য উদাহরণ হতে পারে ।

 

প্রতি,

তারিখ

বিষয়ঃ- মিঃ কামরুজ্জামানের প্রতিদিনের দিনলিপি কামরুজ্জামান- সাবেক এমপিএ ,চেয়ারম্যান,শহর কমিটি এবং প্রশাশন ,পার্বতীপুর।

১৭.০৫.১৯৭১

আল্লাহ্‌ এই শহর এবং নাগরিকদের রক্ষা করেছেন।খোদা না করুক এই শহর যদি শত্রুরা দখল করে নিত ,তাহলে শুধু ৫০ হাজার মোহাজির গনহত্যার শিকার হতো তাই নয়,সমগ্র উত্তর বঙ্গ নিয়ন্ত্রন করতে আমাদের আর্মি ভয়ঙ্কর অসুবিধায় পড়তো। আল্লাহ্‌কে ধন্যবাদ জানাই। শহরের সাহসী লোকজনকে ধন্যবাদ জানাই এবং আমাদের আর্মিকে,যাদের চেষ্টায় শত্রুরা পরাজিত হয়েছে।

.

.

শত্রুর হাত থেকে শহরকে বাঁচাতে জনাব বাচা খান,আলহাজ মোহাম্ম্দ, শোয়েব মোহাম্মদ, মতিয়ুর রহমান এবং মিস্টার ও মিসেস খুরশেদ বানু যে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন্,তার প্রশংসা করার উপযুক্ত ভাষা আমার জানা নাই।এই মানুষেরা তাদের নিজেদের শহর বাঁচাতে অসাধ্য সাধন করেছে। একজন নারী হয়েও ডাক্তার বানু যা করেছেন,তা একজন পুরুষ মানুষ ঐ অবস্থায় করতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তিনি যে সাহসিকতার সাথে টাউনটি রক্ষা করেছেন,,তার জন্য আমার পক্ষ থেকে এবং সমগ্র টাউনবাসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই কৃতজ্ঞতা প্রাকাশ করা হয়েছে।

        আমি সর্বোসম্মততভাবে এই চার ব্যাক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদকের জন্য সুপারিশ করছি।

                                                                         এস ডি/কামরুজ্জামান

                                                                               টাউন প্রশাসক

                                                                                  পার্বতিপুর

(২)

পুর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ে বিভাগের অবাঙ্গালী কর্মকর্তাদের দুটি চিঠি

       হতেঃ        আরশাডঃ মাহমুদ

                 কর্মকর্তা, স্পেশাল ডিউরি,

                 চট্টগ্রাম

সুপ্রিয়……..                                                   তারিখঃ২৯।০৪।১৯৭১

   গতকাল্কের আপনার সাহায্যের জন্য আমি আপনার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।আমি আশা করছি যে,এন্টি করাপশন ডিপার্টমেণ্ট থেকে কাগজপত্র পাওয়ামাত্রই আমি পশ্চিম পাকিস্তানের দিকে রেওনা দিতে পারব। 

   আমাদের কথোপকথনে প্রায়শই স্টেটবিরোধী কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন মানুষের কথা উঠে এসেছে। গোপন বিষয় হলো,রেলও্য়ে বোর্ডের অনেকেই এমনকি আমি ও সিনিয়র অফিসাররেরাও জানে যে,ইঞ্জিনিয়ারিং রেলওয়ে বোর্ডের সদস্য জনাব আশফাক ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ইয়াসিনের হত্যার প্রতিবাদের সময় জনাব শফি,প্রধান পরিকল্পন অফিসার;নাসিরুদ্দিন আহমেদ,প্রধান কর্মি অফিসার;মাকবুল আহমেদ,বিভাগিয় সুপারিটেন্ডেন্ট;তাহুর খান,সিভিল ডিফেন্স অফিসার;সিরাজ হক, রেলওয়ে বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি;কাফিল আহমেদ,বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং আতাউর রহমান স্পষ্টভাবে অগ্নিস্নগযোগের ঘটনায় জড়িত ছিলেন।এই কর্মকর্তারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আওমালীগকে আর্থিক সহায়তা সহ আওয়ামীলীগকে  আরো  শক্তিশালী করতে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছে।এর মধ্যে টেলিফোনসংযগ বিচ্ছিন্ন করা,বাঙ্গালি সেনাদের আগাম পাসপোর্টের ব্যাবস্থা করা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

    সেনারা ইতোমধ্যে মিস্টার এবং মিসেস শাফি,প্রধান পরিকল্পনাকারী এবং আতাউর রহমানকে জাহাজে করে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। এটা নিশচয়ই তাদের অন্যান্য একশনের মতই প্রাক পরিকল্পনা।যাইহোক, এখন এইসব অফিসারদের অবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য পরযাপ্ত সময় নেয়া দরকার।  স্টেশনের অন্যান্য কর্মকর্তারা অবশ্যই এই জঘন্য ঘটনার সাথে যুক্ত আছে।শুধু তাই নয়,তারা এখনো বিভিন্ন তথ্য,আলামত নষ্ট করায় ব্যাতিব্যাস্ত।কাজেই আমার মনে হয়েছে,বিষয়টি আপনাকে জানানো দরকার।মনে হচ্ছে,বাংলাদেশের মানুষের এই আন্দলনকে ত্বরান্বিত করতে গেলে নষ্ট করে ফেলা আলামত গুলো পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা উচিত।এতে আন্দোলন আর বেগবান হবে।

   যাবার আগে বলে যাই,আপনার তালিকায় দুজন অতি গুরুত্তপুর্ন ব্যাক্তির নাম না থাকায় অবাক হয়েছি।তারা হলেন,রেলওয়ে বিভাগের  স্পেশাল ডিউটী অফিসার জনাব, এম এ করিম,যার প্রতি আমার পিয়নের বোনকে ওপেন ফায়ার করে মেরে ফেলার অভিযোগ রয়েছে,এবং আরেকজন জনাব আর এন বাগচি ;সিনিয়র কর্মি অফিসার যার বিরুদ্ধে অফিসারেরাই পার্টীশানের সময় ভারতপন্থি কর্মকান্ডের শাঠে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আনে।

যেহেতু আমি একজন পাঞ্জাবী এং আমার চাকরিখানা বদলির,সুতরাং এইসব ঘটনা আমাকে উৎপীড়িত করেনা।।

শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত দুশ্চিন্তা থেকে এবং কোনো ঘটনা ঘটার আগেই,আপনি যেন সবকিছু ওয়াকিবহাল থাকেন এইজন্য এইসব তথ্য জানানো আমার কর্তব্য বলে মনে হয়েছে।

শ্রদ্ধাসমেত,

                                                            আপনার অনুগত

                                                             এস ডি

                                                            আরশাদ মাহমুদ

                                                          তারিখঃ ২৯ মে,১৯৭১     

 

বরাবর,

মাননীয় রাষ্ট্রপতি, পাকিস্তান

ইসলামাবাদ

মাননীয় গভর্নর, পুর্ব পাকিস্তান

ডেক্কা

বিষয়ঃ আওয়ামিলীগ এবং কিছু সরকারি কর্মকর্তাদের অবৈধ কার্যকলাপ প্রসঙ্গে

জনাব,

যথাবিহিত স্মমানপুর্বক নিবেদন এই যে,নিম্নক্ত বিষয়ে আপনার সদয় দৃষ্টি প্রার্থনা করছি।

’৭১ সালের তেসরা মার্চ চট্টগ্রামে আওয়ামীলীগ কর্তৃক অসহযোগ আন্দোলোন চলা কালে রেলওয়ের অবাঙ্গলী কর্মি ও স্থানীয় পুলিশের সাথে আওয়ামিলীগের নেতাকর্মি,ই আর পি, এবং বাঙ্গালি কর্মকর্তদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয় ঘটনাক্রমে,সেওসব অবাঙ্গালী ও পাকিস্তান কতৃক নির্বাচিত ব্যাক্তিদের অনেকেই নিহত হন।কেউ কেউ আহত হন ও তাদের বাড়ীঘর জালিয়ে দেয়া হয়।এর দরুন নন রেলওয়ে কলোনি মুজাহির কলোনিও আক্রান্ত হয়।অবশেষে পাঞ্জাব রেজিমেন্টদের গুলি চালানো ছাড়া আর উপায় ছিলোনা।তখন পুলিশ এবং ই পি আর দের তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করারা ছিলনা।আহত কয়েকজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরন করেন।এদের মধ্যে কাউকে বিষ প্রয়োগেও হত্যা করা হয়েছে।আসলে ৩/৩/’৭১ থেকেই এইসব ষড়যন্ত্রের সুত্রপাত,যেদিন ভারতীয় আর্মিদের যোগসাজশে এবং পাঞ্জাবি-মুহাজিরি-বিহারিবিরোধিদের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে, বাঙ্গালি সরকার,ই আর পি,ই বি আর,পুলিশ,রেলওয়ে এক সাথে আতাত করে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ করার পরিকল্পনায় পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে লাল দীঘি ময়দানে ট্রেনিং নেয়া শুরু করে। এমনকি সেদিনের এই ঘটনায় মাওলানা ভাসানীও মানসিক আঘাত পান এবং তৎক্ষণাৎ চট্টগ্রামের পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন।সাথে সাথেই তিনি শেখ মুজিবকে জরুরি টেলিগ্রাম করেন এবং তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন।আপনার সেনা পাঠাতে বড় দেরি হয়ে যায়,ততক্ষনে  বহু মুহাজিরি,পাঞ্জাবি,পাঠানসহ বহু নীরিহ নারি,পুরুশ,শিশুদের বলির পাঠার মত হত্যা করা হয়,গুলি চালানো হয় এবং লুটপাটও চালানো হয়।এদের মধ্যে কাউকে কাউকে ধরে নিয়ে যায় তারা।একি মাসের ২৬ তারিখ জুমার নামাজের সময় চট্টগ্রামের বিবিরহাট মসজিদ ও ওয়ালিখান মসজিদেও হামলা চালানো হয়।এতে বেশ কয়জন অবাঙ্গালী মারা যান।এই সব ই সম্ভব হয়েছে আপনার অকঠোর অবস্থানের কারনে এবং আওয়ামিলীগেরা এই দুর্বলতার সুযোগ নিতে ভোলেনি।আপনি অবশ্যই আপনার এহেন দায়িত্তজ্ঞানহীন কর্মকান্ডের জন্য ঈশ্বরের কাছে জবাবদিহি থাকবেন।কয়েকলক্ষ মানুষ তাদের একমাত্র উপার্জনকারিকে হারিয়ে শোকের মাতম করছে এবং ঈশ্বর কখনও আপণাকে ক্ষমা করবেনা।

   এইবারে কেন স্বাধীনতাকামী আওয়ামীলীগেরা এই ধধংস লীলা চালালো,যার বলি হলো নীরিহ কিছু মানুষ সে বিষয়ে আলোকপাত করা যাক।,প্রকৃতপক্ষে সেইসব অবাঙ্গালিরা আও্য়ামিলীগের এই অসহযোগ ও আইন বহির্ভুত সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি।আও্যামিলীগেরা চায় যে, ৩/৩/’৭১ হতে ২৫/৩/’৭১ পর্যন্ত যেখানে যেখানে তাদের কর্মি,ইপিয়ার,ইবিয়ার বাহীনিরা আটক আছে,প্রত্যেককে যেন মুক্তিপ্রদান করা হয়। এবং কিছু ননবেঙ্গলি অফিসার মরহুম আশফাক,(প্রাধান ইঞ্জিনিয়ার) এবং জনাব ইয়াসিন(প্রাধান ইঞ্জিনিয়ার) তাদের এই বক্তব্যে সাড়া দেয়নি।শুধু তাই নয়,চট্টগ্রাম,পাহারতলি,আখাঊড়া জাংশাণ,ভৈরব বাজার জাংশান,সান্তাহার জাংশান,ময়মনসিংহ,বোনাপারা,পাকশি,লাকশাম, এবং আরো অনেক রেলওয়ে স্টেশন তাদের দখলে চলে গেছে।নিগৃহিতদের পুত্র,কন্যাদের ও রেহাই দেয়া  হয়নি। বিভিন্ন শহরে,হাসপাতালে অবাংগালিদের ধরে ধরে আনা হয়েছে  আহত মুক্তিবাহিনিদের রক্ত প্রদান করার জন্য।এমনকি, ইপিআরের অবাঙ্গালী অফিসারেরা,এবং পুলিশ অফিসারেরা নিজ নিজ সহকর্মি কর্তক হৃত হয়। মিল এরিয়াতেও অবাঙ্গালীরা এই ভাবে মারা যাচ্ছে,সম্পত্তি লুট হচ্ছে।

.

.

১।হিন্দুদের বিদ্বেষ ও ভারতীয় দের অপপ্রচার থেকে তৈরি হওয়া ঘৃণা স্বাধীন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষাকে আরো বেশি জাগিয়ে তুলেছিল। বাংলা ভাষা এক্ষেত্রে সহায়ক ভুমিকা পালন করেছে ।

২. অ-বাঙ্গালীরা পূর্ব পাকিস্তানে প্রো-পাকিস্তানী হিসেবে বিবেচিত হত এবং তাদের কে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বাধা মনে করা হত। মৌলভি দের দ্বারা তাদের উপর ‘ফতোয়া’ জারি করা হল যাতে তাদের মেরে ফেলা হয় কারন তারা দেশের শত্রু।

৩। অ-বাঙ্গালীরা বাঙ্গালীদের কাছে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে বিবেচিত হত।

৪. আওয়ামীলীগ ধারনা করে যে এই অপারেশান এ অবাঙ্গালীরা পাকিস্তানী মিলিটারি দের সাহায্য করবে, সুতরাং এরদের বিনাশের মাধ্যমেই মিলিটারিদের দুর্বল করে ফেলা সম্ভব।

  1. ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের খারাপ পরিস্থিতির সম্মুক্ষিন না হতে হয় এই কারনে নিম্নোক্ত ব্যাবস্থা সমূহ গ্রহন করা হয়-

১. পাকিস্তানের শুধুমাত্র একটি রাষ্ট্র ভাষা থাকবে, যেমন- উর্দু । ভারতে যেমন অনেক কথা বলা ও লেখার সময় অনেক ভাষা ব্যাবহার করা হলেও তাদের রাষ্ট্র ভাষা হিন্দি। অন্যান্য ভাষা যেমন বাংলা সিন্ধি পশতু এগুলো সব আঞ্চলিক ভাষা। এটি কায়েদে আজম এর ও সিদ্ধান্ত ছিল কারন একটি ভাষা একটি একটি জাতির পরিচয় বহন করে।

২. সকল সরকারী কর্মচারী , রেইলোয়ে পুলিশ, ই পি আর, ই বি আর, রেডিও যারা যারা আওয়ামীলীগের পক্ষে ছিল তাদের শাস্তি পেতে হবে।

৩ সকল রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা ই পি আর ও ইবি আর দের জন্য স্পেশাল ট্রেইন চালাচ্ছিল এবং সেচ্ছাসেবী ও ইন্ডিয়ান আর্মি এদের শাস্তি আরো বেশি হবে। এসব স্পেশাল ট্ট্রেন পাকিস্তানী মিলিটারি দের অপারেশান এর সময় ও বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়। এটি খুব আশ্চর্যের ব্যাপার যে রেলওয়ে সড়কপথ ও জপথের এসব দোষী সচিব ও অফিসারেরা ২১ জুলাই ১৯৭১ এর পরেও তাদের দায়িত্তে বহাল ছিল। এসব অপরাধী দের ধরার জন্য একটি তদন্ত কমিশন গঠন করা উচিত ছিল এবং সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী দের সাক্ষ্য রেকর্ড করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া উচিত ছিল। অপরাধী রেলওয়ে অফিসারেরা তখন ও কর্মরত ছিল এবং তারা তাদের দায়িত্ব পালন না করে বরং নানা রকম বাঁধার সৃষ্টি করছিল । R.W এবং R.T এর সচিব , চেয়ারম্যান ও রেল ওয়ে বোর্ড ও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যাবস্থা নিচ্ছিলনা।

৪ একইভাবে EPR, EBR ও পুলিশ কর্মচারীরা যারা সাধারন মানুষকে হত্যা করেছিল , আর্মি দের উপর গুলি চালিয়েছিল ,লুটপাট করেছিল ও মিলিটারি অপারেশান এর সময় তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছিল তাদের ও শাস্তি হওয়া উচিত। একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা উচিত ছিল। এটি ভয়াবহ যে অপরধী পুলিশ রা তখন ও তাদের পদে বহাল ছিল।

৫ জেলা শহরের সরবচ্চ পদে বহাল কর্মকর্তারা , যারা আওয়ামীলীগের পক্ষে ছিল, তাদের ও শাস্তি হতে হবে। এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হতে পারে।

৬- শেখ মুজিব সহ আওয়ামীলীগ এর অন্যান্য কর্মী যারা ইন্ডিয়ার সাথে ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল তাদের ও কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। তারা বিশ্বাসঘাতক এবং অনেক নিরীহ সাধারন বাঙ্গালীকে হত্যা করেছিল।

৭। সকল ছাত্র নেতা যারা এই অপরধের সাথে জড়িত ছিল, সাধারন মানুষ দের মেরেছিল, জাতীয় পতাকা ও কায়েদে আজমের ছবি পুড়িয়েছিল তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হতে হবে।

৮ রেডিও পাকিস্তান , ঢাকা ও চিটাগং এর সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা জয় বাংলা গানটি গেয়েছিল তাদের শাস্তি হতে হবে অথবা চাকরীচ্যুত হতে হবে

  1. মিলিটারী, আর্মড পুলিশ ও রেইল ওয়ে পুলিশ পদে কোনো বাঙ্গালী কে নিযুক্ত করা যাবে না, তা না হলে ভবিষ্যতে আবার ষড়যন্ত্র দানা বেঁধে উঠবে।

১০ সব ক্লাস ওয়ান অফিসার ও ডি সি র্যাঙ্ক থেকে শুরু করে তার ঊরধের সব পুলিশ অফিসার কে পশ্চিম পাকিস্তান বদলী করতে হবে।

১১. প্রধান সেক্রেটারী ও সেক্রেটারী রা যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল তাদের পূর্ব পাকিস্তান থেকে অনতিবিলম্বে পশ্চিম পাকিস্তানে বদলী করতে হবে।

১২- ইন্টেলিজ্যান্স ব্রাঞ্চের যেসব অফিসার এই ষড়যন্ত্রের কথা গোপন করে আওয়ামীলীগ কে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করেছিল , ইন্ডিয়ান অস্ত্র ও মিলিটারীদের কথা গোপন রেখেছিল তাদের ও উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।

  1. যেসব আওয়ামীলীগ সদস্য কসাই এর মত নির্বিচারে নিরপরাধ মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশু দের হত্যা করে তাদের শাস্তি পেতে হবে। তারা অনেক নারি কে বন্দি করে রেখেছে ও ধর্ষণ করেছে। তারা অনেক টাকা পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার ও লুট পাট করে।

১৪ শহর ও গ্রামের প্রতিটি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে দেখতে হবে কোনো অবৈধ অস্ত্র, বন্দী নারী ,লুটের মাল বা কোন অপরাধী লুকিয়ে আছে কিনা। দেশ প্রেমিক নাগরিক দের সহায়তায় ই এই তল্লাশি চালানো সম্ভব।

  1. কয়েকশ কোটি পাকিস্তানী মুদ্রা বর্ডার দিয়ে পাচার হয়ে যায় এবং বিলুপ্ত প্রায় আওয়ামীলীগ এর অনেক আন্দোলন পরিচালনায় এই অর্থ ব্যাবহার করা হয়।যেসব মুদ্রা পাচার হয়েছিল তা মারওয়ারিদের সহযোগীতায় ইন্ডিয়ান মুদ্রায় রূপান্তর করে নেয়া হয় (১০০পাকিস্তানী মুদ্রার জন্য ৫০ ইন্ডিয়ান মুদ্রা)। এসব এর সহযোগীতায় তারা পাট পাচার করতে চাচ্ছিল যার ফলে পাকিস্তান বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আয় থেকে বঞ্চিত হত। তাদের এই ষড়যন্ত্র বানচাল করার মোক্ষম উপায় ছিল এইসব পুরান নোট বাতিল করে দিয়ে নতুন ডিজাইনের নতুন নোট ছাপানো। যার ফলে পুরানো নোট গুলোর আর কোনো উপযোগীতা থাকবেনা। কেননা আওয়ামীলীগ এর কর্মী দের এই নোট স্টেট ব্যাঙ্কে গিয়ে বিনিময় করার মত সাহস থাকবেনা। তিন মাসের মধ্যেই তা বাস্তাবায়ন করতে হবে তা না হলে পাকিস্তান পাট রপ্তানীর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন থেকে বঞ্চিত হবে।

 

১৬ স্কুল কলেজ গুলোতে যথাযথ ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে এবং পাকিস্তানের ভাবাদর্শ যথাযথ ভাবে তুলে ধরতে হবে। যেকোনো রকমের ষড়যন্তের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে- পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান দুই জায়গাতেই। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান এর জন্য একটি সাধারন ভাষা থাকতে হবে।

 

১৭. রেলপথ, সড়কপথ ও পানি পথ সব রকম যোগাযোগ মাদ্ধম কেই সরাসরি প্রতিরক্ষা বিভাগের সাথে যুক্ত করতে হবে।

 

১৮ মুহাজির ও পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যাবসায়ি দের অস্ত্রের জন্য বিনামূল্যে লাইসেন্স দিতে হবে নাহলে তারা পশ্চিম পাকিস্তান ত্যাগ করবে যার ফলে এখানের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড হ্রাস পাবে।

 

১৯। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বাণিজ্যিক সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী গঠন করতে হবে। যার দায়িত্ব হবে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের রক্ষনাবেক্ষন করা । তবে শুধু মাত্র অ-বাঙ্গালী ও পশ্চিম পাকিস্তানী দের কেই এক্ষেত্রে নিয়োগ দেয়া হবে। এর খরচ শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোকেই বহন করতে হবে। এটি প্রয়োগ করা না হলে মুহাজির ও প্সহচিম পাকিস্তানীদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা ই থাকবেনা।(চট্টগ্রাম, চন্দ্রঘোনা, কাপ্তাই, রাঙ্গামাটি জেলার হাউজিং সোসাইটি, কুমিরা,কালুরঘাট মিল এলাকা ও বায়েজিদ বোস্তামি, বিবিরহাট এলায় বিপুল সংখ্যক মুহাজির, পাঞ্জাবি, পাঠান ,মেমম ও আগাখানি দের হত্যার ঘটনার ভিত্তিতে). এই খরচ বহন করতে পূর্ব পাকিস্তানীদের বেতন থেকেও একটি নির্দিষ্ট অংশ কেটে নিতে হবে।তা না হলে বন্ধ ইন্ডাস্ট্রি গুলো খোলা হবেনা যার ফলে, পাকিস্তান রপ্তানী বাণিজ্যে তার বাজার হারাবে এবং ইন্ডিয়া ক্রমশ তা দখল করে নিবে ও নিজেদের স্থায়ি আসন গেড়ে নিবে।

২০- EPWAPDA ও WASAর কর্মী রাও এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল। ২৬ তারিখ পর্যন্ত চট্টগ্রামে পানি ও বিদ্যুৎ এর সরবরাহ ছিল। পাকিস্তানী মিলিটারি দের অপারেশান শুরু হবার ঠিক আগে আগে সব বন্ধ হয়ে যায়। এসব ডিপার্টমেন্ট কেন্দ্রিয় সরকারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পানির অভাবে ক্যান্টরমেনটে পাকিস্তানী মিলিটারি দের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে ৩/৪ দিন ধরে। পরে চট্টগ্রাম এর মুহাজির কলোনিতে তারা পানি খাবার এবং অপারেশান পরিচালনা করার মত সব পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পায়। মিহাজির দের এসব অবদানের কথা অস্বীকার করোনা তাহলে আল্লাহ ও তোমাদের ক্ষমা করবেন না।

মুসলীম লীগ ও পি ডি পী নেতারা কেন এই সময় নিষ্ক্রিয় ছিল? কেন তাদের নিজের দেশের পতাকা উত্তোলন করার মত সাহস ছিলনা যেখানে মুজাহির রা মিরপুর কলোনিতে পাকিস্তানী পতাকা উত্তোলন করেছিল। নুরূল আমীন কেন কনফারেন্সে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানালেন ।

২১ টেলিযোগাযোগ বিভাগ এই সময় জঘন্য ভূমিকা রেখেছিল। তারা আওয়ামীলীগ সদস্যদের যোগাযোগ ব্যাবস্থা চালু রেখেছিল যেখানে মুজাহির কলোনী ও সাধারন শান্তিপ্রিয় নাগরিক দের যোগাযোগ ব্যাবস্থা বিচ্ছিন্ন ছিল। আওয়ামীলীগ নেতা দের এভাবে সাহায্য করার কারনে তাদের শাস্তি পেতে হবে।

২২- বিপুল সংখ্যক আওয়ামীলীগ ও হিন্দু নেতারা ইন্ডিয়া পাড়ি জমান ।তেমনি ভাবে অনেক মুহাজির পরিবার ও সম্পূরন রূপে ঊধাও হয়ে যান। তাদের অনেক স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি স্থানীয় মানুষ দখল করে নেয় । অনেক স্থানীয় ও ধূর্ত মুসলীম নেতারা ভুয়া বিক্রয় দলিল তৈরি করে সব দখল করে নেয়। এসব সম্পত্তির জরিপ, পরিচালনা , ভূয়া দখল দারিত্ত থেকে এসব রক্ষা করা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গূলোর পুনর্বাসন ব্যাবস্থা করা খুব দরকার ছিল। এসব সম্পত্তি নিলামে তুলে তা থেকে প্রাপ্ত অর্থের সাহায্যে গরীব অসহ্যা এতিম ও বিধবা বা খতিগ্রস্থ পরিবার গূলোর দেখা শুনার ব্যাবস্থা করা খুব জরূরী ছিল।

২৩- বিভিন্ন বিদেশি এজেন্ট, সি আই এ ও সন্দেহজনক লোকজন ও তাদের কাজকর্ম কে কঠোর নজরদারী তে রাখার জন্য সরকার বা রাষ্ট্রপতির অধীনে ইন্টেলিজ্যান্স ব্রাঞ্চ গঠন করতে হবে। যাতে অভ্যন্তরীণ ও বাইরের শত্রু দের যেকোনো রকম ষড়যন্তের যথাযথ প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। এসব সমস্যার বীজ কে অঙ্কুরেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে যাতে তা আগের বারের মত প্রকট আকার ধারন করতে না পারে ও জানমালের ক্ষতি সাধন করতে না পারে । আমাদের স্বাধীনতা কে আমরা কোনো ভাবেই ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারি না।

২৪- ছাত্র দের কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়া নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের কাজকর্ম শুধু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সব রাজনৈতিক কার্যকলাপ কে কঠোর নজরদারী তে রাখতে হবে।

আল্লাহ আপনাকে পাকিস্তানের সব আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক শত্রুদের মোকাবেলা করার মত শক্তি দিক। ভুল রাজনৈতিক নীতি ও দেরিতে পদক্ষেপ গ্রহন করার কারনে যেসব পাকিস্তানীদের জীবন দিতে হয়েছে – তাদের জন্য আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দিক। আমি পাকিস্তানের একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে আমার মতামত দিলাম। আমি পাকিস্তানের স্বাধীনতা পূরব বর্তি বিভিন্ন আন্ডলন এর সাথে জড়িত ছিলাম। আপনি যদি এসব পরামর্শ গ্রহন করেন তবে আল্লাহ আপনাকে সাহায্য ও পাকিস্তানের সৎ নাগরীকেরা আপনাকে সাহায্য করবে। কিন্তু আপনি যদি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন না করেন তবে মনে রাখবেন ভবিষ্যতেও আপনি পশ্চিম পাকিস্তানে এসব সমস্যার মুখোমুখি হবেন, শুধু পশ্চিম নয় পূর্ব পাকিস্তানেও এরূপ সমস্যা দেখা দিবে। মনে রাখবেন পাকিস্তানের শত্রুরা অনেক ধূর্ত ও সংবদ্ধ। আওয়ামীলীগ এর নেতারা সহজ সরল এসব পাকিস্তানী জনগন কে তাদের বিভিন্ন ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে উলটাপালটা বুঝাচ্ছে ও তাদের মনে বিদ্বেষ সৃষ্টি করছে। এসব শ্ত্রুরা, ভারত, আমেরিকা ও ইংল্যান্ড এর থেকে সাহায্য পাচ্ছে যাতে তারা পাকিস্তান কে ধ্বংস করে দিতে পারে।

.

.

আমি তাই আপনাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি সাধারন জনগণের পরামর্শ বিবেচনা করুন অ সেই মোতাবেক কাজ করুন, নচেৎ পাকিস্তান, ইসলামের স্তম্ভ ও নিরপরাধ মুসলিমদের জীবন না বাঁচানোর দায়ে আপনি আল্লাহর কাছে অভিযুক্ত হবেন।

 

শত্রুদের দুর্বল মনে করবেন না। তারা আবার মাথা চাঁড়া দিতে পারে। সকল ফ্রন্টে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের শত্রুরা সম্পূর্ণরূপে পরাজিত ও ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্রের কথা বলবেন না। ভুট্টো সাহেবের সাম্প্রতিক সময়ে বলা খমতা হস্তান্তরের কথা বিশ্বাসঘাতক আওয়ামী লীগকে উস্কে দিয়েছে এবং তারা এখন যারা মিলিটারিদের সহযোগিতা করছে তাদের শাস্তির ভয় দেখাচ্ছে, কেননা তারা নাকি যে কোনও উপায়ে ক্ষমতায় আসবেই। এটাই তাদের রক্ষা করেছে, আর এখন তারা “মেষশাবকের ছদ্মবেশে নেকড়ে” কৌশল অবলম্বন করছে।ক্ষমতা হস্তান্তরের আলোচনা শুরুর আগে ভুট্টো সাহেব অন্তত সাত দিন পূর্ব পাকিস্তানের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে সপরিবারে বাস করে আসুক, পুলিশ বা মিলিটারি পাহারা ছাড়াই, তারপর ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলুক। বাইরের চাইতে আভ্যন্তরীণ শত্রুরাই বেশি বিপজ্জনক, আর তাদেরকে ধ্বংস করাই বেশি কঠিন।

 

ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনার সাফল্য কামনা করি।

 

                                                আপনার বাধ্যগত

                                                স্বাঃ / বাইরের অবাঙালি অফিসার ও

                                                        P.E. স্টাফ রেলওয়ে , চট্টগ্রাম।

 

 

 

 

 

 

মেজর এম আফজাল খান সাকিব                            টেলিফোন ৮৩৬৪৪

                                                        বাংলো ১৪৩-ই

                                                        ইউনিট-৬, লতিফাবাদ

                                                        হাইদ্রাবাদ

                                                        তারিখ ২১ অগাস্ট ৭১

প্রিয় ইকরাম,

.

.

আপনি তার সাথে কথা বলতে পারেন যখন ই তার সাথে আপনার দেখা হবে। তিনি একজন ভাল সহকর্মী এবং নিশ্চয় তিনি আপনার ভ্রমনে সহায়তা করবে।

আজকাল আমি গভীরভাবে জমির উপর মনোযোগ করছি যেন অন্য কেউ যেন আব্দুল্লাহকে সন্মর করতে না হয়। এটা আগষ্টের শেষ এবং আবার বেত ফসল এখনও দাঁড়িয়ে আছে। কী ভাগ্য! আমি চিনি তৈরীর মেশিন এবং পেষনকারী যন্ত্র ধার করেছি এবং বর্তমানে ধানি চিনি তৈরি করছি । বাংলার বাঘিনীদের রশিদের নিয়ন্ত্রনে আনার খবরে আমি বিস্মিত ছিলাম না। এটি অবশ্যই তাদের পরবর্তী প্রজন্মের পরিবর্তন ঘটাবে। আমার করাচির দুশ্চরিত্রা দেখার সুযোগ হয় নি এবং আমি এটা আশাও করি না। ছোটজন ডাঃ খালিদের সাথে আবারও চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তিনি তার ভাইয়ের লাহোর যাওয়ার অপেক্ষা করছে। আমার এবং খালেদের মাঝে বন্ধুত্ব হয়েছে। তিনি এখানে এসেছিলেন ক্ষমা চাইতে। তিনি বলেছিলেন সেদিন তিনি অসুস্থ ছিলেন। ওয়ালি রাওয়ালকোটে স্থানান্তরিত হয়েছে। কি সুন্দর জায়গা!

 

ফজল একটি কার্গো জাহাজ ক্রয় করেছে যা চট্টগ্রাম রয়েছে এবং তিনি এটি চট্টগ্রাম ত্যাগ করার আশা করছেন যদি না এটি প্রস্ফুটিত হয়।তার সিনেমা প্রজেক্ট এখন সঠিক রাস্তায় যাচ্ছে। গত রাতে তিনি আমার সাথে ছিলেন এবং আপনার কথা মনে করছিলেন।তিনি একজন দারুন মানুষ।

 

দয়া করে মর্মাহত হবেন না। স্রষ্টা অবশ্যই ভাল প্ররিস্থিতি সৃষ্টি করবেন। আমি E.P ভ্রমন করার পরিকল্পনা ছেড়ে দেই নি। এটি শুধুমাত্র আমার ব্যাস্ততার কারনে। আপনি হয়তো আমাকে এবং ফজল কে যেকোন সেখানে পাবেন। আপনি সেখানে কিছু বন্য কুকুর পালন করতে পারেন। আপনি কি প্রতিদিন আপনার চেয়ার, টেবিল, ড্রয়ার পরিদর্শন করেন? আপনি আপনার চাকরদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত । তারা যেকোন সময় সেখানে থাকতে পারে। আপনি অবশ্যই হোটেলে খাওয়ার পূর্বে আপনার খাবার বিড়াল দিয়ে নিরুদ্ধ করাবেন । আপনার অবশ্যই সন্দেহজনক হওয়া উচিত । আমি আপনাকে বিরত করছি না । এটি একটি অনুস্মারক মাত্র।

ভালবাসা এবং শ্রদ্ধা চাচীর জন্য । চান্দ এবং অন্যান্যদের পক্ষ থেকে সালাম । রাশিদ কে আমার কাছে লিখতে বলবেন।

                                            আপনার আদরের

মেজর মোহাম্মদ আকরাম খা                             সাকিব

O.C.200 SURVEY SEE,JESSORE(East Pak)

 

(4)

      ( লাহোরে অধ্যায়ন্রত জনৈক বাঙ্গালী ছাত্রের প্রাননাশের হুমকিসহ একটি চিঠি )

Nwe Hostel

Goverment College

Lahore

তারিখঃ-১৩/১১/৭১

প্রিয় আওয়াল,

পত্রটি আপনাকে একটি ধাক্কা দিবে। আপনার পুত্র ইফতেখারুল আওয়াল আমাদের সাথে ৩বছর ধরে পড়ালেখা করছে। এখানে থাকার সময় সর্বত্র তার অদ্ভুতস্বভাব এবং কুড়কুড় শব্দ করতে দেখেছি।

.

.

যখন সে পড়ালেখা করছিল তখন সে আমাদের সাথে বেশি কথা বলত , যা কোন মানুষ সহ্য করবে না। সে জাতির পিতাকে অসন্মান করতেও দ্বিধা করতো না। সে মাঝে মাঝে মুজিব কে তার পিতা বলতো । আমরা জানি না তার কয়তি পিতা। সে ছিল পাকিস্তান বিরোধী, মুজিব এবং আওয়ামিলীগের ৬দফা নিয়ে গল্প করতো। আমরা শুরু থেকেই এগুলো শুনতাম। যখন মুজিব আওটক হয় এবং আওয়ামিলীগ কে ব্যান করা হয় । তিনি এবং সেই সাথে ডা ওয়াস্তি মনে করতেন -জিসি লাহোরের ইতিহাস বিভাগের প্রধান । প্রাক্তন জুরি মেম্বারদের অপহরন করা হয়েছিল।

আমরা বুঝতে পারছি ,আপনি আপনার সন্তানকে পাঠাচ্ছেন । সতর্ক থাকবেন , এওতি আপনার সন্তাঙ্কে শেষ দেখা। সে আমাদের দৃষ্টি থেকে বাহিরে যাবে না। আপনি এবং আপনার পরিবার ভারতীয় । সতর্ক থাকবেন নতুবা বিস্মিত হবেন।

আপনাদের পাকিস্তানি

আসফাক আলি খান

ইউসুফ আহমেদ

শাহিদ রাফি

________

জনাব এ কে এম আওয়াল

১৯ সিদ্দিক বাজার

পূর্ব পাকিস্তান

Scroll to Top