পাক-ভারত পরিস্থিতি সম্পর্কে বৃটিশ পররাষ্ট্র সচিবের বিবৃতি

শিরোনাম সূত্র তারিখ
“পাক ভারত পরিস্থিতি সম্পর্কে কমনস সভায় ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিবের বিবৃতি” দি টাইমস ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১

 

“পাক ভারত পরিস্থিতি সম্পর্কে কমনস সভায় ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব এলেক ডগলাস হোম এর বিবৃতি”

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধবিগ্রহের প্রকোপ স্থানীয় সরকারের ও তার সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রের কাছে একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। গত কয়েক মাসে আমরা দেখেছি পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে দেশ দুটির মাঝে সম্পর্কের ক্রমান্বয় অবনতি ঘটেছে। আমাদের ও অন্যান্য ক্ষমতাসীন দেশগুলোর চেষ্টা সত্বেও ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধের দিকে এগিয়ে গিয়েছে। আমাদের এখন তাৎক্ষণিক ভাবনার বিষয় এটাই, যুদ্ধটা বন্ধের চেষ্টা করা এবং একটি সঙ্গতিপূর্ণ ও সভ্য সমাধানে পৌছতে দুপক্ষের ইচ্ছেগুলোকে আমলে নিয়ে সাহায্য করা।

আমরা যখন প্রথম ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান সীমান্তে ৩ জানুয়ারীর আক্রমণ ও যুদ্ধের বিষয়ে জানতে পারি তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও মিসেস গান্ধীর কাছে আবেদন করে তারা যেন তাদের ক্ষমতার মধ্যে সমস্ত কিছু করার চেষ্টা করে এই যুদ্ধের বিস্তার রোধ করার জন্য। আমরা অন্যান্য দেশগুলোর সাথেও যোগাযোগ রাখছি।

 

বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনসমূহ

সামরিক পরিস্থিতির উপর প্রতিবেদনগুলো বিভ্রান্তিকর। এটা পরিষ্কার যে পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে এবং ভারত-পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে ব্যাপক লড়াই চলছে। আর দুটো দেশেরই বিমান ও নৌবাহিনী এতে বিদ্যমান আছে।

আধুনিক যুদ্ধাবস্থায় যেটা সম্ভব সেটা লক্ষ করা যাচ্ছে যে, আকাশ থেকে হামলার সময় সাধারন জনগণকে নিশানা করা হচ্ছেনা।

হাউসকে জানানো যাচ্ছে যে, এই বিষয় নিয়ে ৪ ডিসেম্বর এবং গতকাল নিরাপত্তা পরিষদে সভা হয়েছে। এটা শুরু থেকেই পরিষ্কার ছিল, যে কোন প্রকার যুদ্ধবিরতি বা সেনা প্রত্যাহারের আহবানে রাশিয়া তার “ভেটো”(Veto) ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।

স্থানীয় সরকার পক্ষ থেকে বিষয়টি এভাবে দেখা হচ্ছে, এই মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে কোন ব্যর্থ সমাধান উপস্থাপন করে কোন লাভ নেই, যখন এটা জানাই যে সমাধানটি একটি বা অন্য আরেকটি দেশের ভেটো ক্ষমতা দ্বারা নাকচ হয়ে যাবে।

আমরা আমাদের সাধ্যের সমস্ত কিছু দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি এই প্রতিকূলতা সমূহকে অতিক্রম করে যাওয়ার এবং নিদারুণভাবে জটিল এক পরিস্থিতির সমাধান খুঁজে বের করার যে পরিস্থিতির কারণে যুদ্ধের বিস্তার হয়েছে।

এই প্রচেষ্টা সমূহ এখন পর্যন্ত লাভবান হয়নি, কিন্তু আমরা সেগুলো অব্যাহত রাখবো। জাতিসংঘের অবশ্যই এই পরিস্থিতিতে একটা ভূমিকা থাকতে হবে। সেটা শুধু যুদ্ধ বন্ধের জন্য নয়, যুদ্ধ পরবর্তী উন্নয়নের জন্যও।

যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের কিংবা যুক্তরাজ্যের সম্পত্তিতে কোন ক্ষতিসাধন হয়েছে, ভারতে কিংবা পাকিস্তানে এমন কোন প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। যদিও চা বাগানের ক্ষতি অনিবার্য হতে পারে। ২৩ নভেম্বর ইসলামাবাদে অবস্থিত হাই কমিশনার পাকিস্তানের সীমান্ত জেলায় অবস্থিত যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিল। যখন এটা সম্ভবপর ছিলো।

লড়াই এর বিস্তার লাভের পর থেকে আকাশ থেকে আক্রমণের, চলাফেরার উপর আরোপিত বিধিনিষেধ, সাধারণ বিমান পরিবহনের স্থতিকরণ, এসব বিষয় আমলে নিয়ে পরবর্তীতে তিনি স্ব স্বস্থানে অবস্থানের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।

বর্তমানে কোন উদ্ধার কার্যই ভারত বা পাকিস্তানে করা হচ্ছেনা। যদিও আমি পরিস্থিতি পর্যালোচনার মধ্যে রেখেছি এবং প্রয়োজনে যেকোন পদক্ষেপ নেয়া হবে।

উপমহাদেশের জনসাধারনের জন্য যুদ্ধ শুধুমাত্র বিয়োগান্ত ঘটনা। আমি হাউসকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমরা আমাদের ক্ষমতার মধ্যে সবকিছুই করবো। এই উদ্বেগকর পরিস্থিতি সমাধান এবং প্রয়োজনিয় সমঝোতা কাজটি সাধনের জন্য।

(দি টাইমস, ৭ ডিসেম্বর,১৯৭১)

Scroll to Top