৭.৩০.৭১-৭২
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৩০। পূর্ব পাকিস্তান থেকে নাগরিকদের ইচ্ছাকৃত বহিস্কার প্রসংগে ভারতীয় নোট প্রত্যাখ্যান | পাকিস্তান ওয়াশিংটনের পাকিস্তান দূতাবাস প্রকাশিত সংবাদ বুলেটিনঃ ১ জুন, ১৯৭১ | ২৪ মে, ১৯৭১ |
ভারতের অভিযোগ মিথ্যা
পাকিস্তান প্রত্যাখ্যান করল স্মারকলিপি
এম. এ. মানসুরি
ইসলামাবাদ, মে ২৪: পাকিস্তান সরকার আজ ভারত সরকারের ১৪ই মে এর পূর্ব পাকিস্তানের জনগনকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাসিত’ করার অভিযোগ এবং পাকিস্তানকে ফিরে যাওয়া শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদান ও জঙ্গিবাদমুলক কার্যকলাপ পরিচালনা হতে বিরত হওয়ার দাবিতে প্রদত্ত স্মারকলিপি “সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য” বলে প্রত্যাখ্যান করে।
পাকিস্তানের মন্তব্য নিম্নে লিখিত হল।
পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় পাকিস্তানের ভারত হাই-কমিশনকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছে এবং নয়া দিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনকে পাঠানো ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মে ১৪, ১৯৭১ তারিখের পত্র নং ডি৪৬২২-পিআই/৭১ এর উত্তরে জানায়ঃ
উল্লেখিত স্মারকলিপিতে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে করা দাবির প্রকৃতি অত্যন্ত অস্বাভাবিক। শরণার্থীদের প্রতি উদ্বেগ প্রকাশের ভেতর দিয়ে ভারত সরকার অন্যায়ভাবে পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়ন বিচারে কর্তৃত্ব ফলাবার চেষ্টা করছেন এবং পাকিস্তান সরকারকে কপিতয় বিষয়ে নির্দিষ্ট কর্মকান্ডের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন যেসকল বিষয় একান্তই পাকিস্তানের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
একইভাবে, সন্ত্রাস প্রচারের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ইচ্ছাকৃতভাবে নির্বাসিত করার অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে ভুল, বিদ্বেষপরায়ণ এবং অন্যায্য।
পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগসমূহ এবং ভারতের দাবিসমূহ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপ সৃষ্টি করে। পাকিস্তান সরকার, অতএব, সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য হিসেবে উল্লেখিত স্মারকলিপি প্রত্যাখ্যান করে।
এই সূত্রে, অন্য রাষ্ট্রের ব্যাপারে অযথা মাথা ঘামানো হতে বিরত থেকে সদস্য রাষ্ট্রদের সংঘবদ্ধ থাকার জন্য জাতিসংঘের দলিল এবং আন্তর্জাতিক আইনের নীতিমালার অনুগত হওয়ার জন্য ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হল যা তারা মেনে চলতে বাধ্য ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখিত শরণার্থী সংখ্যা অতিমাত্রায় অতিরঞ্জিত এবং বাস্তবতার সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
পক্ষান্তরে, যত সংখ্যক শরণার্থী ভারতে অবস্থানরত আছে, তার জন্যে ভারত সরকারকে তার বিশাল দায় স্বীকার করতেই হবে। এই সকল মানুষ শিকার হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী অনুপ্রবেশ, ভারতের মিথ্যা ও বিকৃত প্রজ্ঞাপন এবং এআইআর ও ভারতীয় প্রেসের দ্বারা অতিশয় অতিরঞ্জিত সংখ্যক ঘটনার জন্য যেসব ঘটনার সত্যতা এখন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।
অনুপ্রেরণা
ভারতীয় নেতাদের দ্বারা জনগণকে উৎসাহ প্রদান তাও এই জনস্রোতে ভূমিকা রেখেছে। এই সূত্রে, মার্চ ২১, ১৯৭১ এ ভারতীয় প্রধানমমন্ত্রীর বক্তব্য উল্লেখ করা যেতে পারে, যেখানে তাকে বলতে শোনা যায় যে ভারত পূর্ব পাকিস্তানের সাথে তার সীমানা যেকোন আগত শরণার্থীকে বরণ করে নিতে খোলা রাখবে।
এমতাবস্থায়, পাকিস্তান সরকার মনে করে যে শরণার্থী সমস্যাকে ভারতীয় সরকার কিছু নিগূঢ় উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে নির্দিষ্ট মাত্রায় নিতে চেয়েছে।
শরণার্থী সমস্যাকে মানবিক ভিত্তিতে বিবেচনা না করে বরং ভারতের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহানুভূতিহীন প্রচারণা এই ধারনাকে আরও নিশ্চিত করে ।
এই সূত্রে, উল্লেখিত স্মারকলিপি এবং রানীক্ষেতে মে ১৯, ১৯৭১ এ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর শরণার্থী সমস্যা নিয়ে দেয়া বক্তব্যে তাকে লড়াইয়ের (পাকিস্তানের বিরুদ্ধে) কথা বলতে শোনা যায় যদি পরিস্থিতি তাদের বাধ্য করে,” যা অশুভ।
ইয়াহিয়ার প্রস্তাব
এখনো পর্যন্ত পাকিস্তানের দিক থেকে সম্ভ্রান্ত এবং আইন-মান্যকারী নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরা রহিত করা বিষয়ে কখনই কোন প্রশ্নই ওঠেনি। এই সূত্রে, ভারতীয় সরকারকে পাকিস্তানি রাষ্ট্রপতির মে ২১, ১৯৭১ এর বক্তব্যে মনযোগ আকর্ষণ করতে বলা হচ্ছে যেখানে তিনি পাকিস্তানি নাগরিকদের পাকিস্তানে ফিরে যেতে অনুরোধ করেছেন।
অথচ ভারত পাঁচ লক্ষাধিক ভারতীয় নাগরিক যাদের আসাম, ত্রিপুরা এবং পশ্চিম বাংলা থেকে উচ্ছেদ করে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানো হয়েছিল তাদের ফিরিয়ে নিতে অবিরত অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এই শরণার্থীগণ গত দশ বছর ধরে পাকিস্তান সরকারের উপর বিরাট অর্থনৈতিক বোঝা রূপে বিরাজ করছে। পাকিস্তান সরকার দাবি জানাচ্ছে যে তাদের অতি শীঘ্র ফিরে যাওয়া এবং তাদের নিজ সম্পত্তিতে পুনর্নিবার্সনের জরুরি ব্যবস্থা ভারতের নেয়া উচিৎ।
সর্বশেষে, পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানকে অন্য নামে সম্বোধন বরদাশত করবে না। পাকিস্তান সরকার দাবি করছে যে ভবিষ্যতে ভারত সরকার পূর্ব পাকিস্তানকে তার স্বীকৃত নামে সম্বোধন করবে।