<৪,১৭৫,৩৪৮-৩৫১>
অনুবাদকঃ জয়ন্ত সেন আবীর
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৭৫। প্রবাসী বাঙালীদের সংগঠন ‘আমরা’গোষ্ঠী কর্তৃক বাংলাদেশ সরকারকে প্রেরিত ইন্দোনেশীয় প্রচার মাধ্যমের প্রতিক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত বিবরণী | ‘আমরা’ | ২১ মে, ১৯৭১ |
অনুবাদকঃ
জাকার্তা ২১/৫/১৯৭১
এপি এর মে মাসের ২ তারিখের প্রতিবেদন দৈনিক ‘ইন্দোনেশিয়ানঅবজারভার’এ১৫তারিখেপ্রকাশিতহয়।এই প্রতিবেদনটির চুম্বক অংশগুলো হলঃ
ক) মার্চের ২৫ তারিখে গৃহযুদ্ধ শুরু হবার পর থেকে ৪ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
খ) অনেক এলাকার রেল ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গ) মাত্র ৫৫টি পাটকল কেবল ১৫% জনশক্তি নিয়ে কাজ করছে।
ঘ) লাখ লাখ মানুষ অনাহারের সম্মুখীন।
ঙ) ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে ইয়াহিয়া এই বছরের শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না।
চ) সেনাবাহিনী কর্তৃক দোকান লুটের ঘটনা ঘটেছে।
ছ) পশ্চিম পাকিস্তানের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ীর মতানুসারে, তাদের উৎপাদিতপ্রায় ৬০ রকম দ্রব্য ও সেবারএক বিরাট বাজার হাতছাড়া হয়ে গেছে।
জ) পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল হয়ে পড়েছে।
২) রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের একটি তালিকা নিচে দেয়া হল। বর্তমান সংকটের পেছনের কারণ সম্বলিত কাগজপত্র হাতে পেলে হয়তো তারা আমাদের সাহায্য করবেন। তারা নীতির পরিবর্তনেও প্রভাব রাখতে পারেন।
৩) পূর্বের অনুরোধ মোতাবেক ‘জয় বাংলা’ এর একটি কপি নিয়মিতভাবে আমাদের ঠিকানা বরাবর পাঠানো যেতে পারে। আমরা এর সর্বোচ্চ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আশাবাদী। সম্ভব হলে বিতরণের জন্য আরো কিছু কপি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে পাঠানো যেতে পারে।
৪) গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকাগুলো লক্ষণীয়ভাবে আবারো প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু করেছে। সরকার নিশ্চুপ, কিন্তু নৃশংসতা যে ঘটেছে সে ব্যাপারে তাদের কোনো সন্দেহ নেই। সরকার পাকিস্তানী প্রচারণায় পুরোপুরি বিশ্বাসী নয়। এটা নিশ্চিত যে সরকার পাকিস্তানকে কোনো উপকরণ দিয়ে সাহায্য করবে না। এরূপ বহু অনুরোধে তারা কর্ণপাত করে নি।
৫) আইপিইসিসি এর জনাব এম. এ. আজিজের স্ত্রী, জনাবা এম. এ. আজিজ বাংলায় লেখা চিঠিপত্রের যাচাই-বাছাই কাজে নিযুক্ত আছেন। খবর পাওয়া গেছে কিছু চিঠি তাদের ঠিকানায় পৌঁছেনি।
৬) এস ও পরীক্ষায় তার সাফল্য ও মনোনয়ন পাওয়া উদযাপন করতে জনাদ রাং এলাহী (একজন পাঞ্জাবী) স্থানীয় পাকিস্তানীদের (বেশিরভাগই পাঞ্জাবী) নিয়ে এক ডিনার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেখানে জনাব আজিজ ১৯৫৪ সালে ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী এবং ভাসানী কর্তৃক স্বায়ত্বশাসন লাভের লক্ষ্যে নেয়া চেষ্টাসমূহের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেন। জনাব সোহরাওয়ার্দীর গ্রেপ্তার বিষয়ে তিনি বলেন “সেখানে কিছু একটা ছিল”। “ভাসানী সবসময়েই এক ধ্বংসাত্মক শক্তি”। পূর্ব পাকিস্তানে সম্পূর্ণ শান্তি বিরাজ করছে। কিছু অতিথির মনে এসকল মন্তব্য এক তিক্ত অনুভূতি ছড়ায়।
৭) ‘ফার ইস্টার্ণ ইকোনমিক রিভিউ’ তার ১৯ নম্বর সংখ্যায় ‘যুদ্ধের কথামালা’ শীর্ষক এক লেখনী প্রকাশ করেছে। এই লেখাটা ছিল আনন্দ ও হতাশার এক সংমিশ্রণ। এতে বলা হয় বর্তমান পরিস্থিতিতে নুরুল আমিন ক্ষমতা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ইয়াহিয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সদস্যদের নিজের পক্ষে টানার ব্যাপার আশাবাদী। তারা যদি শেখ মুজিবের পক্ষ ত্যাগ করে আইনসভায় স্বতন্ত্র হিসেবে যোগদান করে তবে তাদের স্বায়ত্বশাসনের নিশ্চয়তা দেয়া হবে। পরিদর্শকগণ এই চালের সাফল্য সম্পর্কে সন্দিহান। এতে আরো বলা হয় প্রদেশটি বাস্তবিকপক্ষে সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। মুক্তিবাহিনী নিষ্ক্রিয়।
৮) সরকারী সংবাদ সংস্থা ‘অন্তরা’, ওয়াশিংটন থেকে রয়টার এর উদ্ধৃতি দিয়ে ১৯/৫/৭১ এ জানায় যে আমেরিকা থেকে অর্থনৈতিক সাহায্য লাভের ক্ষেত্রে জনাব এম. এম. আহমেদ তেমন অগ্রসর হতে পারেন নি। পরিস্থিতি পর্যালোচনার পূর্বে আমেরিকা কোনোরূপ প্রতিশ্রুতি দিতে নারাজ। ইয়াহিয়া এর আগে ইউ. থান্ট এর আবেদন অগ্রাহ্য করলেও পাকিস্তান বাংলার জন্য ত্রাণ সাহায্য অবশেষে স্বীকার করেছে। অনুমান করা যায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তারা চাপের মধ্যে ছিল।
৯) স্থানীয় ভাষার পত্রিকাগুলো এখনো মুক্তি বাহিনীর একত্রিকরণ, পুনসংগঠন এবং ট্রেনিং এর উৎসাহব্যঞ্জক খবর প্রকাশ করে যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা ছবিও দেয়।
১০) সরাসরি অগ্রসর হলে ইন্দোনেশীয় সরকার বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান এবং সাহায্য প্রদানের বিষয়টি ভেবে দেখতে পারে। এক সংবর্ধনায় আদাম মালিক এই মন্তব্য করেন।
১১) বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং পত্রিকা মালিকদের পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত এক জাঁকজমকপূর্ণ ডিনার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান। পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে রক্ষণশীল মনোভাব ধারণের জন্য তাদের অনুরোধ জানান হয়। এই প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। সাবেক তথ্যমন্ত্রী বি.এম ডিয়া এই ডিনার অনুষ্ঠানে যোগদান করেন কিন্তু তার পত্রিকা ইন্দোনেশিয়ান অবজারভার এর পরের দিনই পূর্ব পাকিস্তান বিষয়ে এপি এর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
১২)একটি স্থানীয় ভাষার পত্রিকা পিপলস পার্টির অভ্যন্তরে বড়সড় ফাটল ধরার খবর প্রকাশ করেছে। ভুট্টোর বিরুদ্ধে কথা বলায় বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নেতাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয় যে কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সম্ভাব্য মূল্যস্ফীতিই সেখানকারব্যবসায়ী সমাজের বর্তমান প্রধান চিন্তা।
১৩) এপির প্রতিবেদনটি সাথে সংযুক্ত করা হল। এরূপ প্রতিবেদন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমন প্রতিবেদনের মোকাবেলা করা সম্ভব এবং করা উচিত।
‘আমরা’
জালান পেমান্ডআংগান ১১/১০
গুন. সাহারি. আনতজল ডিপান এ১পি
জাকার্তা-উলারা
ইন্দোনেশিয়ান অবজারভার; মে ১৯
সিঙ্গাপুর, মে ১৭ (এপি)
২৩ বছর ধরে মুসলিম ধর্মে বিশ্বাস পাকিস্তানের দুই দূরবর্তী অংশকে সংযুক্ত রেখেছে। এখন সেখানকার নেতারা বুঝতে পারছেন যে একত্রিত থাকতে চাইলে তাদের আরো মজবুত গাঁথুনি দরকার হবে।
মার্চের ২৬ তারিখে পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হওয়া এক ভয়ানক গৃহযুদ্ধ এখন পর্যন্ত সম্ভবত ৫ লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটেছে, অত্যাচারিত হয়েছে আরো অনেকে। তারা ভিন্ন ভাষায় কথা বলে বা ভিন্ন অঞ্চলের মানুষ, কেবলমাত্র এ কারণেই এই নৃশংসতাসংঘটিত হয়।
স্বাধীন পূর্ব বাংলার পক্ষাবলম্বন করা বাঙালিদের হাতে স্বামী, মা, সন্তান হত্যার ঘটনা অবাঙালিরা সহজে ভুলবে না। আর বাঙালিরা সেনাবাহিনীর ভয়ানক এবং ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ দীর্ঘদিন মনে রাখবে।
পাকিস্তানের পূর্ব অংশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। পুনর্নির্মাণের জন্য পশ্চিম অংশকেই এগিয়ে আসতে হবে। দুই অংশের মাঝে দূরত্ব ১,০০০ মাইল বিমান পথে যা অতিক্রম করতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা, কিন্তু ভারত তার উপর দিয়ে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে ভারত এবং পাকিস্তান হবার সময় পূর্ব পাকিস্তানে থেকে যাওয়া ১২ শতাংশ হিন্দুর উপরেই এই অংশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো প্রবলভাবে নির্ভরশীল ছিল।
এখানে বেশ কয়েক লাখ বিহারীও রয়েছে। এরা ছিল দেশভাগের সময় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে বিহার থেকে আসা মুসলিম অধিবাসী। আরো ছিল গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিম পাকিস্তানী ব্যবসায়ী ও ম্যানেজারগণ।
সেনাবাহিনীর হাতে অসংখ্য হিন্দুর মৃত্যু ঘটেছে। হাজার হাজার হিন্দু হয় ভারতে অথবা প্রদেশটির দুর্গম অঞ্চলে পালিয়ে গেছে। একসময়কার ছবির মত সুন্দরঢাকার হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে বাঙালিদের হাতে বিহারী ও পশ্চিম পাকিস্তানীদের হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বেঁচে যাওয়া অনেকেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পালিয়ে গেছে।
উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই হত্যার কোনো সাম্প্রদায়িক ভিত্তি ছিল না। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর শিক্ষাকে তোয়াক্কা না করে মসজিদের ভেতরেই বাঙালি মুসলিমদের হাতে বিহারী মুসলিমদের হত্যা করা হয়েছে।
প্রতিশোধপরায়ণ পাঞ্জাবী এবং পাঠান মুসলিম সৈনিকেরাও বদলা নেবার সময় কে কোন ধর্মে বিশ্বাসী তা যাচাই করার প্রয়োজন বোধ করে নি।
পাকিস্তানের জাতির পিতা, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দেয়া তত্ত্ব অনুযায়ী ভৌগলিক এবং জাতিগত বিশাল ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও ইসলামে বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তান একটি জাতি হিসেবে টিকে থাকবে।
পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সকল সরকারী দপ্তরের দেয়ালেই এখনো জিন্নাহর ছবি ঝুলতে দেখা যায়। কিন্তু অনাগ্রহী নেতৃবৃন্দ এখন বুঝতে পারছেন যে জিন্নাহর দেয়া ধারণায় পরিবর্তন আনা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। তবে সমস্যাটা হচ্ছে কেউই জানেনা সেটা কিভাবে সম্ভব।
বাংলাদেশ বা বাংলা রাষ্ট্রের সুসময়কালীন সংক্ষিপ্ত অবকাশে বাঙালি মুক্তি বাহিনীর মেজর এম এ ওসমান বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন “২৩বছরধরেপশ্চিম পাকিস্তান আমাদের শোষণ করেনিজেরা উন্নত হয়েছে”।
বিদেশী অর্থনীতিবিদদের মতে যেখানেমোট বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ৬৫ শতাংশেরও বেশি আসতোপূর্ব পাকিস্তান থেকে, সেখানে বৈদেশিক সাহায্যের ৬০-৭০ শতাংশই ব্যয় হত পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে।
শুল্ক নির্ধারণ এবং অন্যান্য নীতির ক্ষেত্রেও পশ্চিমাদের প্রাধান্য দেয়া হত। যদিও তাদের উৎপাদিত কৃষিজ ও শিল্পজাত পণ্য পূর্বাংশের দিকে চাপিয়ে দেয়া হত যেখানে দেশের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ বসবাস করে।
পশ্চিমের কেউ কেউ আস্তে আস্তে পূর্ব থেকে সরে এসে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাবার পক্ষপাতী। কিন্তু সামরিক সরকারের মাধ্যমে যেকোনো মূল্যে অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষা করার মনোভাবের সামনে এই প্রক্রিয়া ফলপ্রসূ হবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
অর্থনৈতিক এবং মানবিক দিক দিয়ে ভয়াবহ এই ক্ষয়ক্ষতি সামনেও একই হারে চলবে বলেই মনে হচ্ছে। বাঙালিরা এখন তাদের পোশাকে পাকিস্তানী পতাকা লাগায় এবং বাড়ির ছাদে সে পতাকা উড়ায়, কিন্তু তা শুধুই নিরাপত্তা লাভের জন্য।
একটি শহরে একজন প্রতিবেদককে একজন ছাত্র বলেন “দেখুন সেনাবাহিনী কী করেছে”। তার চোখে ছিল গভীর বিতৃষ্ণা। এরপর একজন কর্মকর্তা এগিয়ে এলে ছাত্রটি হেসে তাকে স্বাগত জানায় এবং দেশপ্রেমিক কিছু বুলি ছুঁড়ে দেয়।
এরূপ প্রতিক্রিয়া এই ভগ্ন, পরাজিত প্রদেশের সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায়। নিজেদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য বাঙালিদের একসময় কাজে ফিরতেই হবে। তারা খুবই খারাপভাবে পরাজিত হয়েছে এবং সশস্ত্র সংগ্রামের তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
কিন্তু পাকিস্তান পুনর্গঠন করতে এই অনিচ্ছুক সাহায্যের চেয়েও আরো বেশি কিছু প্রয়োজন। যুদ্ধাবস্থার আগেও এটি ছিল অর্থনৈতিক দুর্দশা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত একটি দেশ।
মেনে নেবার বা সহ্য করবার বিষয়টি আসলে আবেগের। সামরিক শাসকেরা তাদের গোপনীয়তার জাল ব্যবহার করে পূর্ব পাকিস্তানে চলা সবরকম দুষ্কর্মের খবর পশ্চিম অঞ্চলে পৌঁছা থেকে বিরত রেখেছে।
শেষ পর্যন্ত সত্য অপর পাশের মানুষের কাছে পৌঁছাবেই।
চোখের সামনের বিপদগুলোর মাঝে একটি হল খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে আর ত্রাণ কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত। কিছু বিদেশী পর্যবেক্ষকের মতে এরা মিলিতভাবে এই গ্রীষ্মে একসর্বনাশা মহাদুর্ভিক্ষের জন্ম দিতে পারে।
আরেকটি ভয় হল পাটের ক্রেতারা বিশ্বের অন্যান্য স্থিতিশীল অঞ্চল থেকে অন্য কোনো প্রকার আঁশ কেনার দিকে সরে যেতে পারেন। বিশ্বের মোট পাট উৎপাদনের ৮০ শতাংশ পূর্ব পাকিস্তানে উৎপাদিত হয়, কিন্তু রপ্তানিকারকেরা আশংকা প্রকাশ করেন যে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে এরই মধ্যে ক্রেতারা নতুন কোনো বাজারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
এমন হলে তা পূর্বের অর্থনীতির প্রতি এক চরম আঘাত হিসেবে পরিগণিত হবে এবং পশ্চিমের কাছে একে কম আকর্ষনীয় হিসেবে তুলে ধরবে।
“পরবর্তীতে কী হবে তা এখনই বলা যাবে না” – অর্থনীতি এবং রাজনীতি দুই সম্বন্ধেই ওয়াকিবহাল এক বিদেশীর অভিমত, “তবে এটুকু বলা যায় যে পূর্ব এবং পশ্চিমের মাঝে কোনোকিছুই আর আগের মত থাকবে না”।