প্রবাসী সকল বাঙালী ও প্রতিবেশীদের প্রতি আমেরিকান্থ ইষ্ট পাকিস্তান লীগের বক্তব্য

<৪,১২৯,২৩৭-২৩৮>

অনুবাদকঃ নিগার সুলতানা

শিরোনাম

 

সূত্র

 

তারিখ

 

১২৯। প্রবাসী সকল বাঙালী ও প্রতিবেশীদের প্রতি আমেরিকান্থ ইষ্ট পাকিস্তান লীগের বক্তব্য

 

ইষ্ট পাকিস্তান লীগের দলিলপত্র। ৫এপ্রিল, ১৯৭১।

 

 

বিজ্ঞপ্তি নং:১

                                                             ৫এপ্রিল, ১৯৭১

 

সকল বাঙ্গালীর প্রতি:         

আমাদের দেশের দুর্যোগ ছিল খুবই আকস্মিক এবং দুঃখজনক যে, কিছু সময়ের জন্য আমরা সবাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমরা এখন উপলব্ধি করেছি যে, জয় নিশ্চয়ই আমাদের হবে কিন্তু এই সংগ্রাম দীর্ঘ হবে। প্রথম এবং সর্বাগ্রে মনে রাখার বিষয় এই যে, আমার প্রত্যেককে উদ্যম বজায় রাখতে হবে এবং আমাদের আশাহত হওয়া যাবে না এই সাময়িক বিপরীত অবস্থায়। মনে রাখতে হবে যে বাংগালীরা পৃথিবীর অন্যতম সাহসী জাতি। তারা মেশিনগান, মর্টার এবং ট্যাংকের সাথে লড়াই করেছে লাঠি ও বর্শা দিয়ে। তাদের অপ্রতিরোধ্য শ্রেষ্ঠতার মুখোমুখি হওয়ার সাহস আছে এবং জয়ী হওয়ারও অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে।

 

আমরা কি পারি, যারা বিদেশে আছি, এই পরিস্থিতিতে সাহায্য করতে? কিছু বিষয় আছে, যা আমরা অবিলম্বে করতে পারি।

 

১. আমেরিকার বাংলাদেশ লীগ:

এটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, নিউইয়র্কস্থ আমেরিকান কংগ্রেসের পূর্ব পাকিস্তানলীগ আমেরিকায় অবস্থিত সকল বাংগালী সংস্থার প্রধান কার্যালয় হবে। এটির নাম অতি দ্রুতই আমেরিকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে পরিবর্তিত হবে। আপনাকে সংস্থার অধ্যায়গুলো ভালভাবে জানতে হবে এবং বিজ্ঞপ্তির শেষে প্রদত্ত ঠিকানায় আমাদের তথ্য দিতে হবে। যতদূর সম্ভব আমেরিকান নাগরিকত্ব সহ বাংগালীদের স্থানীয় অধ্যায় গুলোর প্রেসিডেন্ট করতে হবে।এটা তহবিল বৃদ্ধিতে এবং স্থানীয় কংগ্রেসম্যান, স্থানীয় নির্বাচিত কমিটি ও স্থানীয় জনগণের সমর্থন যোগাতে সহায়তা করবে।

 

২. তহবিল সংগ্রহ :

আমাদের দেশের মানুষকে বস্তুগত সাহায্য করতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে ও জাহাজে প্রেরণ করতে অবিলম্বে টাকার প্রয়োজন। সকল বাংগালীকে একটি তহবিল সংগ্রহের অভিযানে যেতে হবে। আমাদের বেশির ভাগ তহবিল আসবে ন্যায়বান আমেরিকানদের কাছ থেকে,

যারা পশ্চিম পাকিস্তানের আর্মিদের বর্বরতায় বিস্মিত হয়েছে। এটা জোরদার করা উচিৎ যে, নৃশংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য, চিকিৎসাসেবা ও ত্রাণ সহায়তার অন্যান্য বিভাগের জন্য প্রচুর পরিমাণ সহায়তার প্রয়োজন হবে। প্রত্যেক শহরে যেখানে বাংগালীরা আছে, বাংলাদেশের আমেরিকান বন্ধুদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ শুরু করবে। এই তহবিল হয়ত অন্তর্ভুক্ত হবে, অথবা হবে না। যেমন সংগঠন ক্যামব্রিজ, ম্যাস, নাশভিল, টেন ও ওয়াশিংটন ডিসিতেপাওয়া গেছে। একজন আমেরিকান নাগরিক আপনাদের লোকাল AFB এর প্রেসিডেন্ট হবে। যখন তহবিলগুলো সংগঠিত হবে, চেকগুলো বাংলাদেশ ফান্ডের জন্য তৈরি করা হবে। এই চেকগুলো প্রত্যেক অধ্যায় সহ পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া পর্যন্ত রাখা হবে। সংগৃহীত প্রকৃত পরিমাণের সাপ্তাহিক তথ্য এক্সপ্রেস ডেলিভারি ডাকযোগে নিচের ঠিকানায় প্রেরণ করতে হবে। আমাদের দীর্ঘ দূরত্বের ফোনকলে সংরক্ষন করা উচিৎ এবং প্রয়োজনীয় সরবরাহ কেনার জন্য ব্যবহার করা উচিৎ। প্রতি অধ্যায়ে থাকা প্রত্যেক বাংগালীর নাম, ঠিকানা ও ফোন নাম্বার বিশেষ ডাক ব্যবস্থায় নিম্নোক্ত ঠিকানায় প্রেরণ করতে হবে।

 

৩. তথ্য সংগ্রহ :

বাংগালীদের বিভিন্ন দল এরই মধ্যে, আমাদের জনগণের উপর অনৈতিক নৃশংসতার সংবাদ প্রকাশে ভাল কাজ করেছে এবং বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পশ্চিম পাকিস্তানের কৃতকর্মের জন্য নিন্দা প্রকাশে অনুপ্রাণিত করেছে। এই কাজ এখন প্রত্যেক বাংগালীকে করতে হবে। ছাত্রসমাজ, একাডেমিক কাউন্সিল ও বিশিষ্ট অধ্যাপকদের উপর বিশেষ নজর দিতে হবে। পাকিস্তানি আর্মিদের কর্তৃক সংগঠিত অপরাধের বিশালতা সম্পর্কে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে অবহিত করতে হবে। গণহত্যা বন্ধে একটি সমাধানের জন্য, এই সংস্থা ও ব্যক্তিদের পাওয়ার চেষ্টা করুন। আমাদের সংঘাতের দৃশ্যগুলো শোনার জন্য বা কথা বলার জন্য আগ্রহী যেকোন দল বা প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করুন। এটা বোঝানো গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা বিদ্রোহী নই যা আমাদের সংবাদ মাধ্যম, টিভি ও রেডিওতে প্রায়ই বলা হচ্ছে। ( আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সাথে এই পরিস্থিতির একদমই তুলনা নেই। বরং আমাদের সংগ্রামকে ১৭৭৬ সালে তাদের কলোনিবাসী শাসকদের বিরুদ্ধে করা স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে তুলনা করা যেতে পারে)।

এটাই সেনাবাহিনী যারা কিনা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দ্বারা যথাযথ ভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে। জোর সত্য এই যে, একনায়ক দ্বারা পরিচালিত আর্মি কর্তৃক একটি বৈধ নির্বাচিত সরকার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ও  সমগ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠনে তাদের নাৎসি স্টাইলে আক্রমণ জোরদার হচ্ছে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করছে। শিক্ষার্থীদের অসৎ ভাবে হত্যা করা হচ্ছে এবং ঠান্ডা মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৫০ জন প্রফেসর ও প্রভাষককে হত্যা করেছে। ( আমরা শুনেছি তাদের মধ্যে ড. শাহ আজিজুর রহমান, ড. জি সি দেব এবং ড. মুস্তাফিজুর আহমেদ চৌধুরীও থাকতে পারেন)। এটা আন্দোলনের জন্য অতীব জরুরী যে, সংবাদমাধ্যম,  টিভি, রেডিও ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের সহানুভূতি জাগ্রত ও জীবিত রাখা।

 

৪. ভারত,  সিংহল, বার্মা:

এই তিনটি দেশকে আমাদের সহযোগীতার জন্য কঠোর চাপ দিতে হবে। সিংহল,  সামরিক অথবা PIA প্লেনগুলোতে অতিরিক্ত জ্বালানী ভরে দেয়ার অনুমতি দিবে না। PIA প্লেনগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনবরত সৈন্য আনছে। বার্মা সামরিক বিমানগুলো চীন হয়ে অতিরিক্ত উড়ে যাওয়ার অনুমতি দিবে না। ভারত অবিলম্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে উপকরণ দিয়ে সাহায্য করবে। বাংগালী ও আমেরিকানদের থেকে প্রাপ্তচিঠি, ভারতীয়, সিংহলী ও বর্মী নাগরিকদের দ্বারা গৃহীত টেলিগ্রাম, ফোনকল, সমাধান এসবই আমাদের প্রচারণায় সহায়তা করবে। নষ্ট করার মত একমুহূর্ত সময়ও নেই। অনুগ্রহ করে, বাংলাদেশের জন্য আপনি আপনার সর্বোচ্চটা দিন।

 

জয় বাংলা

 

                                                      অস্থায়ী ঠিকানা :                                           ৩১১৭, ৭ম স্ট্রীট, এন ই                                                  ওয়াশিংটন ডিসি ২০২১৭                                                  টেলিফোনঃ ৭০৩-৩৫৬-০২৭৭

Scroll to Top