প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন

<2.122.544-545>

 

ডিসেম্বরে পেছালো নির্বাচনঃ

কারন বন্যা

 

ঢাকা, আগস্ট১৫:

 

পূর্ব পাকিস্তানের নজিরবিহীন বন্যা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, আজ প্রেসিডেন্ট জেনারেল এ এম ইয়াহিয়া খান ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য দেশব্যাপী সাধারণ নির্বাচন আগামী ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেছেন।জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের নতুন তারিখ ৭ ডিসেম্বর এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

 

প্রেসিডেন্ট তার এক বক্তব্যে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্তকে পূর্ব পাকিস্তানের নজিরবিহীন বন্যা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে উদ্ভুত নানা বিষয় “অতীব সতর্ক বিবেচনার পর” গৃহীত বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচন পাকিস্তানের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ জন্য নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের অংশগ্রহণ বাঞ্ছনীয়। অবস্থাদৃষ্টে, নির্বাচন স্থগিত করা ব্যাতিরেকে এটা নিশ্চিত করা সম্ভবপর ছিল না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

 

জেনারেল ইয়াহিয়া বলেন, নির্বাচনকাজ পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল অংশ এখন বন্যা ত্রান কাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পুরোপুরি ব্যাস্ত থাকবে এবং বাস্তবিকপক্ষেই প্রাদেশিক সরকারের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ের সবাই মাসব্যাপী ত্রাণকাজ পরিচালনায় সম্পৃক্ত থাকবে।কাজেই, প্রশ্ন ছিল ত্রাণকাজ ও নির্বাচনকাজ এদু’য়ের মধ্যে অপেক্ষাকৃত জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বেছে নেয়ার।

 

প্রেসিডেন্ট জানান যে, সিদ্ধান্ত গ্রহনের সময় সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষের দুর্দশা লাঘবের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে তার বিন্দুমাত্র দ্বিধা কাজ করে নি। বন্যার পানি হয়তো অচিরেই নেমে যেতে শুরু করবে কিন্তু সেপ্টেম্বরে ২য় বারের মতো বন্যার সম্ভাবনা থেকেই যাবে। এহেন অনিশ্চয়তাময় পরিস্থিতিতে ৫ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে কিনা, তা ধারনা করাও অসম্ভব ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।এমতাবস্থায়, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে ন্যূনতম প্রতিবন্ধকতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তারিখ এভাবে পেছানো আবশ্যক হয়ে পড়েছিলো।

 

পূর্বনির্ধারিত তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠানে অসুবিধা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে বাস্তবিকপক্ষে রাষ্ট্রযন্ত্রের সমস্ত অংশকে ব্যাবহার করতে হবে। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতে হবে। সাব-ডিভিশনাল অফিসার ও সার্কেল অফিসারদের রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিভিন্ন অঞ্চলে নির্বাচনী কেন্দ্র স্থাপন সহ প্রয়োজনীয় নানা পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। কিন্তু যে অংশ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করার কথা, তারা বর্তমানে খাদ্য ও ত্রাণ প্রদানের অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত।

 

প্রেসিডেন্ট আরও বলেন যে, জনসাধারণের একটি বিশাল অংশকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। এটাও নিশ্চিত নয় যে তারা নির্ধারিত দিনে ভোটদানের জন্য নিজ নির্বাচনী এলাকায় উপস্থিত হতে পারবে কিনা। ব্যাপক মহামারীর প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা বিশাল এবং এটা যাতে ছড়িয়ে না পরে সেজন্য সবকিছু করা হবে।

 

এসবকিছু করতে গেলে ৫ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যায়।

Scroll to Top